হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় [ অনেক কষ্ট করে একটা ভালোবাসার গল্প লিখে ফেললাম। দু'একজন বন্ধু-বান্ধবকে পড়তেও দিলাম। ওরা পড়ে বলল, "দোস্ত দারুণ হইছে। তোর এ গল্প নিয়া নাটক বানাইলে ফাটাফাটি জিনিস হবে!" প্রশংসা শুনতে সবারই ভাল লাগে। আমারও লাগল।
কিন্তু বাস্তব বড়ই নির্মম। আমার মত অখ্যাত লেখকের গল্প নিয়ে নাটক! এ যেন গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল! যা হোক। অনেক আশা নিয়ে একটা পত্রিকায় এ গল্পটি পাঠিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ভালোবাসা দিবস সংখ্যাতে ছাপা হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
যথারীতি তা ছাপা হল না। ভীষণ মন খারাপ হল। খানিকক্ষণ বুকের ভেতর কেমন যেন খালি খালি লাগল। কিন্তু ওই যে তবুও স্বপ্ন দেখি...। ]
ইদানিং বিকেলবেলা রাজিব বেশ একা হয়ে পড়ে।
আশেক, সারোয়ার কাউকেই এখন আর পাওয়া যায় না। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। এই কিছুদিন আগেও ওরা তিনজন একসাথে ঘুরত। বিকেলটা ভার্সিটির মেয়েদের দেখে, চা খেয়ে ভালোই কাটত। হঠাৎ করেই সারোয়ার একটা টিউশনি পেয়ে গেল।
আশেকও একসময় ওর পথ ধরল। প্রতি বিকেলে তাই এখন ওদের আর দেখা পাওয়া যায় না। রাজিবের কিছুই হয়নি। সে না করে প্রেম, না করে টিউশনি। পেপার পড়ে, মোবাইল টিপে কতটাই বা সময় কাটে! তাই আগে যে বিকেলকে তার মনে হত 'এই এলো, এই গেল' টাইপের, এখন মনে হয়, কেউ বোধহয় অযথাই এ সময়টাকে চুইংগামের মত টেনে বড় করে ফেলেছে!
-কিরে কি করস? চল ঘুইরা আসি।
হঠাৎ বিকেলবেলা রাজিবের রুমে এসে হাজির আশেক।
-তুই এ সময়! আজ তোর টিউশনি নাই?
-না। ছাত্রের শরীর খারাপ। তাই ওর ও ছুটি, আমারও ছুটি। তা তোর রুমমেট কই?
-কে? ও রাসেল।
ব্যাটায় হুজুর টাইপের পোলা। কই আর যাইব! নামাজ পড়তে গেছে হয়ত।
-ও। চল মোগলাই খাইয়া আসি।
-ক্যান তুই খাওয়াবি নাকি? নাকি আইজও আমেরিকান ওয়ে-যার যার তার তার?
-আরে না! ঐসব আমেরিকা-টামেরিকার কোন বেল আছে? আমিই খাওয়ামু।
-কী মামু! আজ খুব গরম মনে হয়! টিউশনির টাকা পাইস নাকি?
-এত বগর বগর করস ক্যান? চল না। আশেকের চোখ-মুখে হাসির ঝিলিক।
-বুঝছি। তাইলে মোগলাইয়ে হবে না। চল সুপ খাইয়া আসি।
-ধ্যাত শালা। তোর কোথাও যাওয়া লাগবে না। বিরক্ত আশেক।
খাইছে! সুপ-মোগলাই মনে হয় সবই গেল। রাজিব তাড়াতাড়ি বলল, ঠিক আছে দোস্ত।
তুই যা বলবি তা-ই হবে। আসলে নাই মামার চাইতে কানা মামাই ভাল, তাই না-রে?
-কি?...ও হ্যাঁ...ঠিক। আশেকের চেহারায় তৃপ্তিকর প্রত্যাশিত এক অনুভূতি।
একটু পর দুজনে রিকশায় উঠল। গন্তব্য কোন ভাল হোটেল।
ব্যস্ত শহরে যে যার মত ছুটছে আর ছুটছে। রিকশার পিছনে রিকশা। গাড়ির পিছন গাড়ি। পুরুষের পিছন নারী। নারীর পিছন পুরুষ।
শুধুই ছোটাছুটি। হঠাৎ রাজিব বলল, দোস্ত দ্যাখ জিনিসটা হেভি না?
বিপরীত দিক থেকে রিকশায় একটা মেয়ে আসছে। হ খারাপ না, চলে। বলল আশেক। দূর থেকে মেয়েটাকে ভাল করে না দেখেই আশেক এ মন্তব্য করল।
কিন্তু মেয়েটা কাছে আসতেই ও যেন লাফিয়ে উঠল। দোস্ত টোন করিস না। এইটা আমার ছাত্রের বড় বোন।
-ও তাই নাকি? তা মামা এর সাথে কিছু হয় টয় নাকি?
-দুর শালা। ওর সাথে আমার কথাই হয় নাই।
-কোন ক্লাসে পড়ে?
-ক্লাস মানে? আমাগো চাইতে দুই বছরের ছোট। অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। একটু থেমে আশেক আবার বলল, একবার ওই মেয়েরে নিয়া একটা মজার ঘটনা ঘটছিল।
-কি ঘটছিল? ক না শালা!
-একদিন আমি ছাত্ররে পড়াইতেছিলাম। ছাত্ররে আমি ওদের ড্রইংরুমে পড়াই।
ওই মেয়েটা আশেপাশে ঘুরঘুর করতে ছিল। টেরাইয়া টেরাইয়া দেখতে ছিলাম। হঠাৎ শুনি ও বলল, স্লামালাইকুম। আমি তাড়াতাড়ি উত্তর দিলাম, ওয়ালাইকুম আসসালাম। এরপর ভাল করে তাকাইয়া দেখি ওই মেয়ে আমারে সালাম দেই নাই।
মোবাইলে অন্য একজনরে দিছে। কী যে লজ্জা লাগল। ছাত্রের দিকে তাকাইয়া দেখলাম বিচ্ছুটায় হাসতাছে।
-হা হা হা। রাজিব কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারছিল না।
দোস্ত টিউশনিতে তো বেশ মজা। তবে আমার মনে হয় ছাত্রর চাইতে ছাত্রী পড়াইয়া আরাম বেশি।
-হ আরাম তো হইবোই...যদি লাইগা যায়...রাজকন্যা প্লাস রাজত্ব!
হঠাৎ কে যেন বলে উঠল, ওই রাজিব্বা কল ধর! ওই রাজিব্বা কল ধর! রাজিব তাড়াতাড়ি পকেট থেকে মোবাইল বের করল। আশেক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, এইটা আবার কেমন রিংটোন?
-এক্সক্লুসিভ টোন! দাঁড়া কলটা ধইরা নিই। রাজিব কল রিসিভ করে।
হ্যাঁ ভাই বলেন... আচ্ছা ঠিক আছে...আমি এখনই আসতাছি। লাইন কেটে দিয়ে রাজিব বলল, দোস্ত, মিন্টু ভাই কল দিসে। এখনই যাইতে হইব। চল।
ড্রইংরুম।
শীতকাল বলে ফ্যান ঘুরছিল না। রুমের একপাশের সোফায় বসে আছে রাজিব-আশেক, অন্যপাশে মিন্টু ভাই। তিনি রাজিবকে বললেন, এটা আমার বোনের বাড়ি। এখানেই তোমাকে পড়াতে হবে। তোমার স্টুডেন্ট ইন্টার-ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
একটু চঞ্চল প্রকৃতির। তোমাকে ধৈর্য সহকারে, যত্ন করে পড়াতে হবে। পারবে তো?
-জি ভাইয়া, পারব।
-আচ্ছা তোমরা বসো। আমি একটু আসছি।
মিন্টু ভাই বাসার ভিতরে যেতেই আশেক বলল, দোস্ত স্টুডেন্টটা কি পোলা না মাইয়া?
-জানি না তো! পোলাই হবে হয়ত। মেয়ে স্টুডেন্ট কি আর আমার ভাগ্যে আছে? রাজিব যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
ভিতর থেকে এক কিশোরকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে আশেক বলল, এটাই মনে হয় তোর স্টুডেন্ট।
-হবে হয়ত।
একটু পর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল।
মিন্টু ভাই বললেন, রাজিব, এ হচ্ছে তোমার স্টুডেন্ট।
-ও আচ্ছা। তোমার নাম কি?
-লুসি।
কয়েকদিনের মধ্যেই রাজিবের ছাত্রী পড়ানোর সাধ মিটে গেল। ছাত্রী তার কোন কথাই শুনতে চায় না।
রাজিব যদি বলে, ডানে যাও। সে যেতে চায় বাঁয়ে। যদি বলে, এটা লেখো। সে বলে, না স্যার পড়ি। রাজিব দু'একবার লুসির পরীক্ষাও নিতে চেয়েছে।
কিন্তু পারেনি। পারবে কি করে? যে পড়তেই চায় না, তার কাছে পরীক্ষা দেয়াটা তো ফোর্থ সাবজেক্টের মত গুরুত্বহীন!
একদিন পড়াতে বসে রাজিব বলল, আচ্ছা লুসি, তোমার কোন সাবজেক্ট পড়তে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে?
-স্যার, আমার কিছুই পড়তে ভাল লাগে না।
-কেন?
-জানি না, স্যার।
-আচ্ছা তুমি কি আমার পড়ানো বোঝ না?
-বুঝি স্যার।
-তাহলে পড় না কেন?
-বললাম না স্যার, ভাল লাগে না, তাই।
-তাহলে কি করা যায় বল তো?
-জানি না, স্যার।
-আচ্ছা তুমি সারাদিন কি কর?
-কি করি মানে?
-মানে পড়াশুনা কর না। তো সময় কাটাও কি করে?
-কিছুই করি না স্যার।
-ভারি সমস্যায় পড়লাম তো! আচ্ছা আমার কি করতে হবে বলো? তোমার সাথে কি করলে তুমি পড়বে? তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
-না, না স্যার।
আমার সাথে আপনার কিছুই করতে হবে না।
ঘড়িতে এখন রাত বারটা বাজে। বেশ শীত পড়েছে। তবে তেমন কুয়াশা পড়েনি। এসময় সারক্ষণই লেপের মধ্যে ঢুকে থাকতে ইচ্ছে করে।
রাজিব লেপের মধ্যে শুয়ে পড়ছিল। ওর রুমমেট রাসেল ইতোমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ শোনা গেল, ওই রাজিব্বা কল ধর। ওই রাজিব্বা কল ধর।
-হ্যালো স্লামালাইকুম।
হ্যালো। কোন সাড়াশব্দ নেই। রাজিব আবার বলল, হ্যালো, হ্যালো। ধ্যাত। বিরক্ত হয়ে রাজিব লাইন কেটে দিতে যাচ্ছিল।
কিন্তু পারল না। হঠাৎ মোবাইল কথা বলে উঠল। তাও আবার নারী কন্ঠ! হ্যালো। কি বিরক্ত হচ্ছেন নাকি? আসলে চুপ করে থেকে আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলাম।
-তাই নাকি! কিন্তু আমার পরীক্ষা নেয়ার আপনি কে?
-আমি কে সেটা জানা কি খুব জরুরি?
-হ্যাঁ জরুরি।
অপরিচিত কারো সাথে আমি কথা বলি না।
-আচ্ছা এখন আমরা অপরিচিত, একটু পরেই পরিচিত হব। তাছাড়া কথা না বললে কি পরিচিত হওয়া যায়?
-হ্যাঁ তা ঠিক যায় না। আচ্ছা বলেন তো আপনি কে? আমাকে কেন কল করেছেন? আমার নাম্বারই বা কোত্থকে পেলেন?
-আস্তে বাবা, আস্তে। এতগুলো প্রশ্ন! একবারে তো উত্তর দেয়া যায় না।
ধীরে ধীরে দেই। কন্ঠ শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি একটা মেয়ে। আমার নাম...। নাম বলার আগেই লাইনটা কেটে গেল। তাড়াতাড়ি রাজিব মেয়েটাকে কলব্যাক করল।
কিন্তু কোন লাভ হল না। সে যতবারই কল দিল, ততবারই উত্তর মিলল, আপনার কাংখিত নম্বরে এখন সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহপূর্বক একটু পর আবার চেষ্টা করুন।
লুসির আজকে পরীক্ষা দেয়ার কথা। যদিও রাজিব ধরেই রেখেছে যে সে পরীক্ষা দেবে না।
তবে সে যদি ভুলক্রমে পরীক্ষা দিয়েই ফেলে তাহলে তা হবে 'সূর্য পশ্চিমদিকে উদিত হয়' এমন টাইপের ঘটনা!
লুসি সামনে এসে বসতেই রাজিব জিজ্ঞেস করল, আজকে তো পরীক্ষা, তাই না? নিশ্চয়ই সব পড়া হয়ে গেছে?
মুখ অন্ধকার করে লুসি জবাব দিল, না স্যার কিছুই হয়নি।
-কেন? কি হয়েছে? শরীর খারাপ ছিল নাকি?
-না স্যার। শরীর খারাপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল। তাই অনিবার্যকারণবশত আজ পরীক্ষা হবে না।
-কি সব উল্টাপাল্টা বলছ?
-স্যার আজকে তো হরতাল ছিল।
-তাতে কি?
-স্যার হরতালে তো সাধারণত সবই বন্ধ থাকে, তাই আমার পড়াশুনাও বন্ধ ছিল।
রাজিব কি বলবে বুঝতে পারছিল না। এখন তার মাথায় ছোটবেলায় শেখা একটা কথা যেন ভন্ ভন্ করে ঘুরতে লাগল, 'মাইরের নাম লক্ষীকান্ত, ভূত পালায় যায় ডরে। ' লুসিকে তো আর মারা যাবে না। হালকা শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
এই মেয়ে দাঁড়াও, দাঁড়াও বলছি। রাজিবের হঠাৎ কঠোর কন্ঠে লুসি যেন একটু ভয়ই পেল। সে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল।
-কান ধরো।
-জি স্যার?
-কান ধরতে বলেছি।
ধরো। ধরো বলছি। লুসি বাধ্য হয়ে কান ধরল। এবার দাঁড়িয়ে থাকো।
রাতে রাজিব একটু তাড়িতাড়ি শুয়ে পড়ল।
কাল সকাল আটটায় ক্লাস। তাই আগে আগে উঠতে হবে। কিন্তু তার ঘুম আসছিল না। একবার ডানে কাত হয়ে, আবার বামে ফিরে তার সময় কাটতে লাগল। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল।
এ তো সেই মেয়েটার নম্বর যে গতরাতে নাম বলেনি।
-হ্যালো, ভাল আছেন? বলল রাজিব।
-হ্যাঁ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
-খুব একটা ভাল নেই। আসলে আজ মনটা বেশ খারাপ।
-মন খারাপের কারণ কি? প্রেমঘটিত নাকি?
-আরে নাহ। ওসব কিছু না। স্টুডেন্টকে বকা দিয়েছি তো তাই। আসলে একটু বেশিই বকেছি। এতটা করা ঠিক হয়নি।
-বাহ স্টুডেন্টের জন্য তো আপনার দারুণ টান! নিশ্চয়ই আপনার স্টুডেন্ট সুন্দরী এক মেয়ে?
-হ্যাঁ মেয়ে। তবে সুন্দর কিনা বলতে পারব না। কখনো ওভাবে খেয়াল করে দেখা হয়নি।
-আচ্ছা এরপর দেখে এসে বলবেন।
-তা না হয় বললাম।
এখন আপনার নামটা বলুন।
-ও তাই তো আমার নামই বলা হয়নি। আমার নাম...। আবার লাইন কেটে গেল। রাজিব আবার কলব্যাক করল।
আবার শোনা গেল, আপনার কাংখিত নম্বরে এখন সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না...।
মেয়েটি এখন প্রায়ই রাজিবকে কল করে। ধীরে ধীরে ওদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সম্বোধন 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে নেমে আসে। আস্তে আস্তে ওদের কথা বলার সময়সীমাও বাড়তে থাকে...পাঁচ মিনিট...দশ মিনিট...আধ ঘন্টা...এক ঘন্টা...।
এখন মাঝে মাঝে রাজিবও কল করে। কথা হয়। তবে পুরনো সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। মেয়েটি তার নাম বলে না। নাম জিজ্ঞেস করলেই লাইন কেটে দেয়।
তারপর সেট বন্ধ করে রাখে।
-হ্যালো রাজিব কি করছ?
-কিছু না। গান শুনছিলাম।
-কি গান?
-ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তোমায় করেছে রাণী...।
-হঠাৎ ভালোবাসার গান? কারো প্রেমে পড়েছ নাকি?
-আমি তো প্রেমে পড়েই আছি।
-কার?
-কার আবার! তোমার।
-আমার!
-হ্যাঁ তোমার।
-প্রমাণ দাও।
-এই যে নাম জিজ্ঞেস করলেই তুমি লাইন কেটে দাও। তারপরও আমি ঘন্টার ঘন্টা রাগ না করে তোমার সাথে ধৈর্য সহকারে কথা বলে যাচ্ছি।
এটা কি প্রেম না?
-কি জানি! আচ্ছা বল তো ভালোবাসা কি?
-আসলে ভালোবাসা একেকজনের দৃষ্টিতে একেকরকম। এই যেমন ধর আমার এক ফ্রেন্ড সারোয়ার। ওর ভালোবাসা হচ্ছে প্রতি মাসের এক তারিখ।
-কেন?
-কারণ এ দিন ও টিউশনির টাকা পায়। হা হা হা।
-তুমি তো মজা করছ। আমি কিন্তু সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করেছি।
-সিরিয়াসলি?
-হ্যাঁ, সিরিয়াসলি।
-তাহলে আজ না, ১৪ ফেব্রুয়ারি বলব।
-সামনাসামনি বলতে পারবে?
-হ্যাঁ পারব।
অফকোর্স পারব। বল কোথায়, কখন বলব। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ বল, এই বল না প্লিজ।
-পিজাহাটে। বিকেল চারটা।
-ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোমাকে চিনব কি করে? আজ তোমার নামটা বল না পি-ল-ল-জ।
-ও হ্যাঁ তাই তো। আমার নাম...। লাইনটা যথারীতি কেটে গেল।
কিন্তু রাজিবের মনের লাইন কাটল না। তা যেন মনের জমিতে নতুন নতুন পিলার বসিয়ে আরও বিস্তৃত হতে লাগল!
আজ এখানে এসে যে লুসির সাথে দেখা হবে তা রাজিব ভাবতেও পারেনি। রাজিবকে দেখেই লুসি বলল, স্লামালাইকুম স্যার। স্যার আপনি এখানে?
-হ্যাঁ মানে এখানে আমার এক ফ্রেন্ড আসবে তো, তাই?
-ও আচ্ছা।
-কিন্তু তুমি?
-স্যার আমারও এক ফ্রেন্ড আসবে।
আসি স্যার।
-ঠিক আছে। লুসি আজ শাড়ি পড়েছে। বেশ সুন্দর লাগছে। অনেক পূর্ণ মনে হচ্ছে।
বাসায় ওকে এত বড় লাগে না। আসলে সবই শাড়ির অবদান। কিন্তু ও আসছে না কেন? রাজিব কয়েকবার মোবাইলে চেষ্টা করল। কিন্তু ওর সেট বন্ধ। কি করা যায়? নাম জানা নেই, চেহারাও অচেনা।
কিভাবে যে ওকে ভালোবাসার সংজ্ঞা শোনাব? রাজিব ঘড়ি দেখে। প্রায় পাঁচটা বাজে। ধ্যাত ভাল লাগছে না। চলে যাব নাকি? ভাবতে ভাবতে রাজিব রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। গাড়ি আসে, গাড়ি যায়।
মানুষ আসে, বাড়ি যায়। শুধু সে আসে না। শেষ একটা চেষ্টা করি। এটায় ফেল হলে চলে যাব। রাজিব মোবাইল হাতে নেয়।
হ্যাঁ এবার রিং হচ্ছে। হ্যালো, হ্যালো।
-হ্যাঁ হ্যালো বলো।
-তুমি কোথায়?
-এই তো কাছেই।
-আচ্ছা এখানে এত ভীড়ে তোমাকে চিনব কি করে?
-দেখলেই চিনতে পারবে।
-যার নামই জানি না, তাকে দেখে চিনব কিভাবে?
-ও নাম! আচ্ছা শোন। আমার নাম লুসি।
-লু-লুসি! রাজিবের মনে হল কে যেন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখল লুসি, হাতে মোবাইল সেট। তুমি! রাজিবের চোখ-মুখে যেন পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময় এসে ভর করে।
-হ্যাঁ আমি। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!
-ওহ...হ্যাঁ... হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!
[ বছর পাঁচেক আগে লেখা আমার একটা সস্তা প্রেমের গল্প! পড়ার সময় নিজ দায়িত্বে পড়বেন। কারো মেজাজ খারাপ হলে আমাকে দায়ি করা যাবে না!]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।