আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনের মানুষ: অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিষাদে

আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী! বলল, তারা তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না! প্রথমত, এই মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালন সাঁইজিকে যেভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা হয়েছে তা সুনীল বাবুর পুরনো স্বভাব। স্ক্রিপ্টরাইটার থেকেই শুরু করি। তিনি খুব আগ্রহী প্রতিজন সেলিব্রেটি, বিশেষ করে যারা প্রায় মহামানব হিসাবে বাংলায় থেকে গেছেন তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনার চেষ্টায়। হয়ত তিনি একধরনের অবচেতন ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতেন 'মহামানব' দের সাথে তুলনার সময়।

আমরা দেখতে পাই, রবীন্দ্র থেকে শুরু করে মধুসূদন বা সোহরাওয়ার্দী হয়ে শেরেবাংলা পর্যন্ত সবার ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে তিনি উৎসাহে কমতি দেখাননি এবং সবকিছুতেই সেখানে উঠে এসেছে নেতিবাচকতা। দ্বিতীয়ত, তাঁর মানসিকতার প্যাটার্ন দেথতে পাই ধর্মের ক্ষেত্রেও। ধর্মহীনতা তাঁর ব্যক্তিগত বৃত্ত হলেও যথাসম্ভব যে কাউকে সে বৃত্তে টেনে আনার মুন্সিয়ানা সাহিত্যকর্মে দেখিয়েছেন যেটা গর্হিত। তেমনি ধর্মশ্লেষ ব্যক্তিগত হলেও তাতে তাঁর যেন সামগ্রিকতা আনতেই হবে। লালন চরিত্রে যে কালি তিনি লেপেছেন এবং গৌতম ঘোষ সেটাকে দুই বাংলার সবগুলো মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নিছক বাণিজ্যিক বিনোদনকে সঙ্গী করে, সেটা অনেক বড় বিষয়।

তৃতীয়ত, লালন মনের মানুষ বলতে আত্মা বুঝিয়েছেন একটায় একশো ভাগ সহমত। তবে, মনের মানুষ বলতে আত্মাই বোঝানো হলেও আবার সেই আত্মা পরিচিতি পায় তাঁদের কাছে 'সাঁই' রূপে, অথচ সাঁই যে গুরু, ব্যক্তি তিনি রয়েই গেছেন। এই নিজস্ব আত্মা, সাঁই গুরুর অবস্থিতি ও ঈশ্বর- এই ত্রিবিধের একত্রিকরণ আমরা পাই লালনের শুরুতে। লালনের গুরুলতিকায় দেখি, সাবের বা সাবরে পাক ফরিদ বা দাতা গঞ্জেবখশে ফানা। ফরিদ আবার কোথায়? 'আয়িনায়ে ফারিদ মে শাকলে নিযাম হ্যায়'।

আর নিযামের অবস্থিতিও একই কথা বয়ান করে, আমি আমার আত্মা বই কিছু নই। আর আমার আত্মা আমার শাইখ বা সাঁই বই কিছু নয় আর আমার সাঁই বা শাইখ আল্লাহ বই কিছু নয়। যে কথাটা নিযামউদ্দিন আউলিয়ার উর্দ্ধতন রাংরেজ বলে গেছেন, 'ইয়া হাসান মুঈনুদ্দীন, ই'য়া কা না'বুদু ওয়া ই'য়া কা নাস্তাঈন। ' হে হাসান, মুঈনুদ্দীন, আমি শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থণা করি। আবার এই সমস্ত কথার প্রতিফলন সেই লালন সুরেই, যিনি আল্লাহ তিনিই রাসূল দ. মুর্শিদও সে হয়, এ কথা কয় না লালন, কোরানেতে কয়।

এ কারণেই এই সেই মনের মানুষ বলে ধারণা করি। আত্মার অবিচ্ছিন্নতাকে তাঁরা কোন একটা ধারণার অধিভূক্ত করে নিয়েছিলেন। আর অমাবস্যা পূর্ণিমার মহাযোগ নিছক শারীরিক ও রিপ্রোডাক্টিভ বিষয় নয়। এ নিয়ে কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম এই লিঙ্কে, Click This Link লালন সাঁইজির মতবাদের উত্থান বিষয়ে শুরু করার ইচ্ছা ছিল এই পোস্ট দিয়ে, http://www.amarblog.com/Qadri/posts/146200 চতুর্থত, সাধনার কাল্টগুলোর সাথে পরিচিতি থাকায়, “আপন ভজন-কথা না কহিবে যথা-তথা, আপনাতে আপনি হইবে সাবধান। ” এই কথার অর্থ এভাবে করি না যে, সাধকদের আচরণ ভয়ানক, সুতরাং তা গুপ্ত রাখো।

বরং এভাবে করি, অবচেতন মনে প্রভাব পড়ে, আমিত্ব চলে আসে ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়ে নিজের সাধনপদ্ধতি জনে জনে বলে বেড়ালে। তাই তা আড়ালে রাখো। যেন সাধনচিন্তার সাথে ও সাধনকর্মের সাখে ওইসব বাহ্যিকতার স্পর্শ আসে না। পঞ্চমত, ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের আকুতির সাথে তাঁর আকুতির অমিল না থাকাও স্বাভাবিক। তিনি নিছক হিন্দু ধর্মের জন্য কিছু, মুসলিম ধর্মের জন্য কিছু এবং সাধকদের জন্য কিছু লিখে কিছুটা মানুষের বিনোদনের জন্য আর বাকিটা মানবতার জন্য লিখেছিলেন- বিষয়টা এমন নয় তাতো আমরা সবাই জানি।

একজন বাউল যখন টোটালিটারিয়ান ভিউ পরিগ্রহণ করেন, তখন তাঁর উপলব্ধি ও আমাদের উপলব্ধির অণ্বয় হয়ে পড়ে শুধুই অসম্ভব নয়, বরং সাংঘর্ষিক। সবশেষে, বিশেষ করে, লালনের শেষ জীবনের যে একেবারে ব্যর্থতার হাহাকার তিনি দেখান, তা ফিনিশিং হিসাবে তাঁরই নিজস্ব শূণ্যতার মতবাদ ছাড়া আর কিছুকেই প্রতিষ্ঠিত করে না। অথচ বিষয়টা এতো সরল নয়। পূর্ণ ও পরিণত লালনের আর যাই থাক, শূণ্যতা ছিল না কোনদিনও। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.