আমি কিছুই লিখব না।
বসতবাড়ির নিচে কারখানা আর রাসায়নিক দ্রব্যের দোকানের কারণে আগুনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন পুরান ঢাকার লাখো মানুষ।
লালবাগ, আরমানিটোলা, নয়াবাজার এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিচে কারখানা অথবা রাসায়নিক দ্রব্যের দোকান রয়েছে। গত দেড় বছরে এসব এলাকায় কমপক্ষে ১০টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে।
গত বছরের ৩ আগস্ট মধ্যরাতে নিচতলার রাসায়নিক দ্রব্যের দোকান থেকে সৃষ্ট আগুনে আগা সাদেক রোডের একটি বাড়িতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে লালবাগে জুতার তলা তৈরির কারখানা থেকে সৃষ্ট আগুনে একটি বাড়ির অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
পুরান ঢাকায় গত সাত বছর ধরে অগ্নিনির্বাপণের কাজ করছেন দমকল বাহিনীর ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ।
তার মতে, বাসার নিচে কারখানার কারণে এই এলাকার মানুষের অগ্নি ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ এলাকার রাস্তাগুলো প্রচণ্ড সরু ও ঘিঞ্জি। আগুন লাগলে দমকল বাহিনীর বড় পানিবাহী বা মইবাহী গাড়িগুলো ভেতরে ঢুকতে পারে না।
এখানকার ভবনগুলোও একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো। বাড়ির ভেতরেও ঢোকার বা বের হওয়ার রাস্তা খুবই চিকন, আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা একেবারেই কম। তারপর প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় একটি করে কারখানা বা রাসায়নিক দ্রব্যাদির দোকান রয়েছে। "
তাই এসব এলাকায় ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।
দিলীপ ঘোষ জানান, লালবাগ, আরমানিটোলা, বকশিবাজার, নয়াবাজার এলাকায় এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের প্রকোপ বেশি।
তিনি বলেন, "এসব এলাকায় একবার আগুন লাগলে প্লাস্টিক কারখানা আর রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ভরে যায় পুরো বাড়ি। বাড়িগুলোর ভেতরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় ধোঁয়া বেরোতে পারে না।
"প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে বাড়ির ভেতরের মানুষগুলোর দমবন্ধ হয়ে আসে। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ফলে হতাহতের ঘটনা বেড়ে যায়।
"
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডেও বাড়ির ভেতর এবং সিঁড়িতে অনেকে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে উদ্ধারকারীরা তাদের ওই ভবনের ছাদে তুলে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে যায়।
এই এলাকার মানুষকে বসতবাড়ির নিচে কারখানা না বসানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলেও জানান দিলীপ কুমার।
এলাকার বাসিন্দা এবং ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি শাহীন আক্তার বলেন, "একে তো বাড়ির নিচে রাসায়নিক দ্রব্যের দোকান আর কারখানা, তার ওপর কারখানা মালিকরা অনেক ক্ষেত্রেই চুরি করে বিদ্যুৎ আর গ্যাসের সংযোগ নিয়ে থাকেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকগুণ।
"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক জানান, কারখানা দিলে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ব্যবসায়ী বা কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কারখানার কর্মী। ফলে কারখানা ভাড়া না দিয়ে অনেকক্ষেত্রেই উপায় থাকে না।
এই এলাকায় গত দেড় বছরের উল্লেখযোগ্য অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে-
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি লালবাগের আবুল হাসনাত রোডের একটি তিনতলা ভবনের প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে ১০ জন আহত।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পূর্ব ইসলামবাগে একটি জুতা কারখানা থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩০টি বাড়ি পুড়ে যায়।
গত বছরের ২০ মে আরমানিটোলার একটি ১০ তলা ভবনের ভূগর্ভস্থ গুদামে আগুন লেগে যায়। রাসায়নিক দ্রব্যাদি থাকায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল কর্মীরা।
গত বছরের ৯ মে কোতোয়ালি থানার আলী নেকীর দেউড়ী এলাকায় একটি বাতি তৈরির কারখানার গ্যাস সঞ্চালন সংযোগ ফেটে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।