"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
সভ্যতা
“তুমি একটা অসভ্য”-বহুবার শুনেছি এই কথাটা। বিশ্বাসও করি। কারণ, আমি এখনো সেই কেতাদুরস্ত গোছের সভ্য হতে উঠতে পারিনি। না পারার কারণ- আমি আমার জীবসত্ত্বার আদিম ও অকৃত্রিম বৈশিষ্ট্যকে কোনভাবেই পাল্টাতে পারিনি । সত্যি কথা বলতে কী, তুমিও আমাকে কোনকালে সভ্য হয়ে উঠতে দাওনি।
আবার অসভ্য ভেবে দূরে চলে যাবে- সেটাও করোনি। মূল কথা হলো, সভ্যতা আর অসভ্যতা নিয়ে আমাদের দুজনের মাঝে তেমন কোন দ্বন্দ্ব নেই, যেটুকু দ্বন্দ্ব সেটা মনের- বহ্যিক ভাবনার, অন্তরের কিছু নয়।
সভ্যতার ইতিহাস বলে আমাদের পূর্বপুরুষেরা অসভ্য ছিল- ব্যখাটা আমার একদমই পছন্দ নয়। আর যদি তা’ই হয়, তবে তাদের ঔরসজাত হয়ে আমরা আর কতটুকুইবা সভ্য হতে পারি। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সাহিত্য-দর্শনে, চিন্তা-চেতনায় ও আধুনিক সুযোগ সুবিধায় আজ আমরা সভ্য বলে নিজেদের দাবী করি।
এমন সুযোগ পেলে তারাও সভ্য হয়ে উঠতে পারতো। আর তারা সবসময়ই সভ্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল বলেই আজ আমাদের এই বর্তমান অবস্থান। এর পরেও আমরা কী ততটাই সভ্য- যতটা তারা এগিয়ে নিতে পেরেছিল? আসলে আমরা সভ্যতাকে বাজেভাবে ব্যবহার করেছি। নইলে চারিদিকে এতো যুদ্ধ কেন? অস্তিত্বের লড়াই নিয়ে মানুষের এতো রক্তপাত কেন? শোষন আর নিপীড়নের মাঝে পড়ে আজ বিপন্ন কেন অজস্র জনপদ? হিরোসিমা-নাগাসাকিতে কেন মরণঘাতি বোমা পড়েছিল? ইরাক-আফগানিস্তানে কেন আজ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। প্যালেস্টাইনে কেন নারী-শিশু মারা যাচ্ছে বিমান হামালায়, বোমায়, মর্টারে? ফিলিস্তিনিরা কেন আজো লড়াই করে যাচ্ছে? তাহলে সেই সভ্যতা আজ কোথায় গেল? ওদের থেকে আমরা একটু আলাদা- যুদ্ধ না হলেও প্রতিনিয়ত আমরা প্রকৃতির কাছে আত্ম সমর্পণ করছি।
আজ আমি ততটাই অসভ্য যতটা তুমি আমাকে প্রশ্রয় দাও। আর প্রশ্রয় দাও বলেই আমি ততটাই অসভ্য যতটা তোমাকে ভাবতে শেখায়- আমি একজন মানুষ। জৈবিক কারণে যে মানুষটা শুধু সাময়িকভাবেই তার খোলস বদলায়। এমনি করে সবাই যার যার মতো খোলস পাল্টায়। স্বার্থ, লোভ, শক্তি, প্রাচুর্য আর ক্ষমতার দাপটে তারা খোলস পাল্টাতে পছন্দ করে, অসভ্য হতে পারে- কিন্তু সভ্যতা ফিরিয়ে দিতে পারেনা।
তুমি সভ্য বলেই বার বার আমার অসভ্যতাকে মেনে নিয়ে আমাকে সভ্য করে তোলো। অন্য সবাই সেটা পারেনা। আদিমতার ঔরসেই নাকি সভ্যতার জন্ম। তাই প্রতিরাতে আমরা নতুন নতুন সভ্যতা সৃষ্টি করি সেই সভ্যতাকে ধ্বংশ করার জন্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।