মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...
কালিদাস এবং ... - ১
কালিদাস এবং ... - ২
কৃতজ্ঞতাঃ
জাফর উল্লাহ্ এবং জোয়ানা কির্কপ্যাট্রিক অনূদিত “An Illustrated Meghaduta by Mahakavi Kalidas” থেকে মেঘদূত কবিতার বাংলা পংক্তি এবং ছবিগুলো নেয়া, প্রকারন্তরে যা নরেন্দ্র দেবের “মেঘদূত” (দে প্রকাশনী, কলকাতা, ইন্ডিয়া; ১৯৯৮; ISBN 81-7612-145-2) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংগৃহীত। লিঙ্কগুলো এবং মাঝে মাঝে স্তবকের নীচের তথ্য গুলো আমার সংযোজন।
পূর্ব মেঘ
----
১
***
বধূ-প্রেমমধুমত্ত যক্ষ হেলা করি নিজ কাজে,
কুবেরের শাপে বর্ষ যাপে সে নির্বাসনের মাঝে।
প্রিয়ার বিরহে ব্যাথাতুর প্রাণ, হয়েছে মহিমা হারা,
জনকতনয়া* স্নানে যে তটিনী বহিছে পূণ্য ধারা
তরু ছায়া ঘেরা স্নিগ্ধ সে তটে - রামগির** আশ্রমে
রহিয়া একাকী, বিচ্ছেদ-তাপদুঃসহ তার ক্রমে।
* - জনকতনয়া দিয়ে মিথিলার বীর রাজা জনক এর কন্যা সীতাকে বুঝানো হয়েছে।
** - রামগিরি হচ্ছে অধুনা রামটেক। নাগপুরে।
২
***
সেই গিরিবনে ফেরে আনমনে, প্রিয়া নাহি সাথে হায়,
অভাগা যক্ষবিরহ-ব্যাকুল উদাস নয়নে চায়।
খসেছে স্বর্ণবলয়* শীর্ণ প্রকোষ্ঠ হ'তে ধীরে,
নব আষাঢ়ের প্রথম দিবসে, শৈল সানুটি ঘিরে
হেরে প্রমত্ত মাতঙ্গসম অতিকায় কালো মেঘে
মাতিয়া উঠেছে বপ্র-ক্রীড়ায় অধীর উতল বেগে!
* - যক্ষদের অলৌকিক কিছু ক্ষমতা থাকত।
চাইলেই তারা যখন তখন উধাও হয়ে যেতে পারত। অভিশাপের কারণে এই যক্ষের স্বর্ণবলয় খসে পড়ে যায়, তাই চাইলেই এখন সে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না।
৩
***
ক্ষণেক তাকায়ে সেই মেঘপানে যক্ষ ভাবিছে মনে,
কে না চাহে হেন জলদ-মেলায় মিলিতে প্রিয়ার সনে?
কার অন্তর হেন জলধার না-করে উতল বলো,
কন্ঠ জড়ায়ে আছে প্রিয়া যার সেজনও যে চঞ্চল!
কান্তা যাহার বহুদূরে আজ, সে প্রবাসী কিসে হায়,
বিরহ-কাতর চিত্তে তাহার সান্ত্বনা কিছু পায়?
৪
***
আসিছে বরষা, হেরি মেঘদলে জাগে শুধু তার মনে,
আমারে ছাড়িয়া কেমনে সে প্রিয়া বাঁচিবে প্রাবৃট্ ক্ষণে
সহসা কেমন মনে হল তার - বাঁচাইতে পারা যায়,
যদি কোন মতে মেঘের মুখে সে আমার বারতা পায়!
এত ভাবি ত্বরা কুটজ* কুসুমে অর্ঘ রচিয়া আনি
মধুর বচনে স্তুতি করি মেঘে কহিছে জুড়িয়া পাণি
* - কুটুজ (Holarrhena antidysentrica) হচ্ছে এক ধরনের সাদা ফুল যেটি জুলাই-আগষ্ট মাসে বর্ষাকালে ফুটে।
৫
***
ধূম-জ্যোতি আর সলিল-মরুতে রচিত যাহার কায়া,
দূত কাজের সে নহে যোগ্য, প্রাণহীন সেত' ছায়া!
বার্তাবহ তো হতে পারে শুধু জীবন্ত প্রাণী যারা;
এ সকল কথা ভাবিলনা কিছু, যক্ষ পাগল পারা-
করজোড়ে হায়, মেঘের সকাশে জানায় সে নিবেদন;
কি বুঝিবে ভেদ জড় চেতনের-কামার্ত যার মন।
৬
***
ভুবন বিদিত পুষ্কর কূলে তোমার জন্ম জানি,
তুমি কামরুপী প্রকৃত-পুরুষ, পৌরুষ তব মানি।
বিধির বিপাকে বধূ আজি মোর রহিয়াছে বহু দূরে,
তাইত, তোমায় জানায় হে মেঘ, কামনা যেন হে পুরে।
বিমুখ হলেও প্রার্থনা মোর, কি লাজ মানীর পাশে?
অধমের কাছে পেলেও কিছু গো তবু যে লজ্জা আসে।
৭
***
সন্তপ্তের তুমিই শরণ, সুশীতল তব বারি;
ধনপতি* ক্রোধে দহি' যে বিরহে, সহিতে আর না পারি।
লয়ে যাও মোর সন্দেশ বহি, কৃপাগুণে ভরি হৃদি,
যক্ষরাজের অলকা যেথায়; হে মেঘ, করুণা নিধি!
রম্য প্রাসাদ-উদ্যানে শোভে মহেশ মূর্তি যার,
হর-শির-চাঁদে ধৌত হর্ম্য - উজ্জ্বল চারিধার।
* - কুবের
৮
***
হেরিয়া তোমার পবন-আরুড়, বিরহিনী নারী যারা,
ছুটিয়া আসিবে পথমাঝে সবে' তোমারে হেরিতে তারা,
প্রবাসী বঁধূর প্রত্যাগমের লগ্ন নিকট জানি,
আশা চঞ্চল অন্তরভরা প্রীতি তারা দিবে আনি;
তোমার উদয় দেখে বলো কেবা প্রিয়া হতে দূরে রবে,
আমি পরাধীন, আমার এদিন তবে কি ব্যর্থ হবে?
* - স্বামীর অনুপস্থিতিতে সাধারণত স্ত্রীরা তাদের চুল অপরিপাটি করে রাখত।
৯
***
অনুকূল বায়ু বহিয়া তোমারে ল'য়ে যাবে ধীরে ধীরে,
তোমার বামেতে চাতক-নিনাদ ধ্বনিবে আকাশ চিরে;
নয়নাভিরাম বলাকার পাঁতি কন্ঠে দুলাবে মালা,
গর্ভাধানের ক্ষণপরিচয় জানাবে কত বালা!
১০
***
অবিরাম গতি গেলে দিবারাতি প্রেয়সীর দেখা পাবে
পতিপ্রাণা তব ভ্রাতৃজায়াটি বিরহ-ব্যাকুল ভাবে
বিরলে বসিয়া গণিতেছে দিন, বিষাদে মলিন মুখ,
কোনমতে আছে পরাণ ধরিয়া লভিতে মিলন-সুখ।
কুসুম সমান সুকোমল তনু কি যেন বেদনাহত,
আশার শীর্ন বৃন্তে ঝুলিছে শিথিল ফুলের মত!
১১
***
শ্রাবণ-মধুর গরজনে তব আকাশ শিহরি' ওঠে,
তোমার সজল স্নিগ্ধ পরশে ভূঁইচাপা ফুল ফোটে,
বন্ধ্যা ধরণী হবে ফলবতী, জাগাতে সে আশা প্রাণে
শুরুগম্ভীর মৃদঙ্গ হেন মেঘের ডমরু গানে
কৈলাস* পথে উড়ে চলে শুনি, হংসরাজের দল,
চঞ্চু-অগ্রে মৃণালখন্ড করে ওঠে ঝল্মল!
* - কৈলাস পর্বত
১২
***
রঘুপতি-পদ-চিহ্নিত* যার শৈল-মেখলা, প্রিয়,
আলিঙ্গিয়া সে তুঙ্গ শৃঙ্গে মধুর সম্ভাষিও।
ক্বচিত কখনো উভয়ের দেখা, নহে সে অধিকক্ষণ,
বিরহ ব্যাথার বাষ্প তাহার স্নেহে কোরো নিবারণ।
* - রামের পদচিহ্ন
১৩
***
শোনো তবে বলি, পথের খবর, আমার প্রিয়ার কথা,
শ্রবণ মধুর সন্দেশ তুমি ল'য়ে যাবে বহি যথা।
শ্রান্ত হইলে শূন্যমার্গে গিরি শিরে শিরে ধীরে
বিশ্রাম করি তৃষিত কন্ঠ ভরি নিও স্রোত-নীরে।
১৪
***
'ঝঞ্ঝাবেগে কি শৈলশৃঙ্গ পবনে উড়িয়া যায়?'
ভাবিয়া মুগ্ধ সিদ্ধাঙ্গনা* চকিত নয়নে চায়!
সরস বেতস কুঞ্জে বন্ধু না-রহি অধিক্ষণ,
দিঙ্নাগের** স্থুল হস্তের বাঁচাও অবলেপন।
* - সিদ্ধা-রা হচ্ছে আধা-স্বর্গীয় প্রাণী যারা সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝামাঝি বাস করতো এবং পবিত্রতা এবং বিশুদ্ধতার জন্য খ্যাত ছিল।
** - হস্তী
১৫
***
হের বল্মীক্ চূড়া হ'তে ওই উঠিতেছে রামধনু,
ইন্দ্রচাপের সপ্ত বর্ণে রাঙা তব শ্যাম তনু;
রত্ন-ছায়ার কিরণ কান্তি অঙ্গে মাখিয়া যেন,
ময়ূরপুচ্ছধারী গোপ বেশে সাজিবে বিষ্ণু হেন!
১৬
***
ক্ষেত্র-দেবতা তুমি ফসলের, তুমিই শস্যদাতা,
হেরিবে তোমারে জনপদবধূ আনন্দে তুলি মাথা।
জানেনা তাহারা ভ্রুবিলাস কেহ, আখিঁ দুটি প্রীতিভরা
তাদের সদ্য কর্ষিত ভূমে, সুরভি উদাস-করা--
নবজল ধারা বর্ষণে পাবে; সিক্ত করিয়া মাটি
যেও লঘুপদে উত্তরে তুমি, কিছু পথ পিছু হাঁটি
১৭
***
সজল তোমার গরজনে করি দাবানল প্রশমিত,
আম্রকুটের* উচ্চশিখরে অবতরি' হবে প্রীত।
শ্রান্ত হেরিয়া তোমারে সে জানি, যত্নে করিবে সেবা,
উপকার তব ভুলে যাবে, বল এহেন অধম কেবা?
ক্ষুদ্র হলেও মিত্রজনেরে আশ্রয় দেয় তারা,
বন্ধুরে কভু বিমুখ কোর না, দিও তব প্রাণধারা।
* - আম্রকুট হচ্ছে অধুনা উমরকুট, বিন্ধ্যাপর্বত মালার পূব-অংশ যেখানে নির্বিন্ধ্যা এবং অন্যান্য নদীর উৎপত্তি।
১৮
***
পরিণত-ফল-আম্রকাননে আবৃত শৈল যেথা,
স্নিগ্ধ চিকণবেণী হেন কালো তুমি সখা গেলে সেথা,
পাণ্ডুবরণ প্রসারিত মূল, শ্যামচূড়া গিরিবর
দেব-দম্পতি নিরখি' ভাবিবে ধরণীর পয়োধর!
১৯
***
বনচরবধূ-বিহারকুঞ্জে মুহূর্ত থেক' তুমি
লাঘব করিয়া জলভার তব ত্বরায় ছেড়' সে ভূমি।
দেখা পাবে পথে বিশীর্ণা রেবা* ব্যথিত উপল দলে,
শোভা পায় যেন চিত্রিত-করী বিন্ধ্য চরণ তলে।
* - একটি নদীর নাম
২০
***
বনগজমদ-সুবাসসিক্ত জম্বুকুঞ্জ বুকে,
জমে গেছে যেথা নদীজল ধারা, তুমি সেথা নেমো সুখে,
পান করে নিও সুশীতল বারি, হবে বল সঞ্চার,
পারিবে না বায়ু বহিতে পৃষ্ঠে তোমার সে দেহ ভার।
লঘু যে ধরায়, রিক্ত সে জেনো, নাহি কোন বৈভব,
পূর্ণ যে জন সেই লভে হেথা যাহা কিছু গৌরব!
২১
***
হরিৎ কপিশ কদম কেশর দেখিবে কেমন ফোটে,
ভুঁইচাঁপাদের প্রথম মুকুল মুঞ্জরি' প্রায় ওঠে!
মাটির গন্ধে লুব্ধ হরিণ ছুটিবে সদল বলে,
হেরিয়া তাদের বুঝিবে তখন, পথটি কোথায় চলে?
২২
***
তোমার উদয়ে সিদ্ধা-সখিরা, সখা সাথে চেয়ে রবে;
চাতক কেমনে পান করে বারি হেরিতে ব্যাকুল সবে।
আকাশে বলাকা উড়ে চলে দেখে করিবে গণিতে শুরু,
তারই মাঝে তুমি সহসা যদি সে ডেকে ওঠো গুরু গুরু
চমকি তাহারা ধরিবে জড়ায়ে সখারে আলিঙ্গনে,
সিদ্ধ-যুবারা তোমার উপরে খুশী হবে মনে মনে।
২৩
***
বুঝিতেছি, তুমি প্রিয়াপাশে মোর পারিবে না দ্রুত যেতে
শৈলে শৈলে কুটুজ-কুসুম-সৌরভে রবে মেতে।
কেকার শুভ্র কটাক্ষ আব সজল আখিঁর টানে
বাধাঁ না পড়িয়া আসিবে চলিয়া কোন সে নিঠুর প্রাণে?
* - ছবির ফুলের নাম কাকুবা ফুল
২৪
***
পান্ডু ছায়ায় ঘেরা উপবনে কেতকী* মেলিছে আখিঁ,
গ্রামের প্রান্তে নীড় রচনায় ব্যস্ত হয়েছে পাখী,
পরিণত-ফল জম্বু কাননে শ্যামল যেথায় ভূমি
হেন দশার্ণে, হংস-সাথী হে, কিছুদিন থেক' তুমি।
* - কেতকী হচ্ছে সুগন্ধিফুলযুক্ত একধরণের গুল্ম। এর পাতাগুলো লম্বা এবং তীক্ষ্ণ।
২৫
***
প্রথিত বিদিশা, রাজধানী যার দশার্ণ খ্যাত গ্রাম,
সদ্য সেথায় গেলে জলধর পুরিবে মনস্কাম।
খরস্রোতা নদী বেত্রবতীর গুঞ্জন কলতানে
ভ্রুভঙ্গ আর তরঙ্গ রসে খুশী হবে মনে প্রাণে।
২৬
***
নীচে গিরির* উচ্চ উরসে বিশ্রাম নিও সুখে,
তোমার পরশে জাগিবে হরষে কদম্ব হাসিমুখে।
সেথা নাগরিকে শৈলগুহায় সম্ভোগ-সুখে লীন!
বারবধূ-রতি-পরিমলে বলে-যৌবন বাধাহীন।
* - নীচে (Nichai) সম্ভবত বিদিশার কাছাকাছি উদয়গিরি পর্বতের প্রাচীন নাম, যেখানে গুপ্তা আমলের অনেক প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শন পাওয়া যায়।
২৭
***
বিশ্রামান্তে নবজলকণা সিঞ্চিয়া যূথী দলে
যেও নদীতটে ফুলবনে, যেথা পুষ্প-চয়ন ছলে
ক্লান্তকামিনী গন্ডের স্বেদ মুছি' ক্ষণে ক্ষণে
মলিন করেছে কোর্ণৎপল-কুসুম আভরণে;
ছায়া দানে তুমি তাহাদের সনে কোরো ক্ষণ-পরিচয়
ফুল-বিলাসিনী রুপসীরা তব অযোগ্যা কেহ নয়।
২৮
***
যাত্রা তোমার উত্তরে জানি, তবু কিছু বাঁকা পথে,
উজ্জয়িনীরে* দেখে যেও সখা, ভুলনা এ কোনো মতে
সৌধ-লগ্ন থেক' ক্ষণকাল, করিও না হেলা ওকে,
বিদ্যুৎদাম-স্ফুরিত নয়ন, চকিত চাহনি চোখে;
সেথা পুরনারী সুন্দরী ধরে ভ্রুধনুটি অবহেলে,
বৃথা হবে তব জন্ম জীবন তাদের না-দেখে গেলে।
* - উজ্জয়িনী ছিল কুশান সাম্রাজ্যের (খ্রীষ্টাব্ধ ২৫-৩২০) নজরকারা রাজধানী, যেটি বাণিজ্য এবং শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। গুপ্তা আমলে শহরটি ক্ষয় হতে থাকে কিন্তু এখনো এটি তার মন্দির এবং পাহাড়ের জন্য অনেক পর্যটকদের কাছে সমাদৃত।
২৯
***
তরঙ্গময়ী নির্বিন্ধ্যার দেখা পাবে তুমি পথে
স্খলিত উপলে ব্যথিত-চরণা বহিতেছে কোনো মতে;
বীচি বিক্ষোভ উঠে আবর্ত, দেখায় সে নাভি যেন,
মরাল-মালিকা দোলে নিতম্বে মেখলা-কাঞ্চী হেন!
সুখী কোরো তারে, প্রেমরসভরে ভরি' দিও দেহ মন,
নারীর প্রথম প্রণয়-ভাষণে প্রীতি লভে প্রিয়জন।
* - নির্বিন্ধ্যা উৎপত্তি বিন্ধ্যা পর্বতমালা থেকে। এটি এখন নেভুজ নামে জানা হয়। বেতয়া এবং কালিসিন্ধ নদীর মাঝামাঝি চম্বলে এই নদী প্রবাহমান।
৩০
***
স্বল্প-সলিলা শীর্ণা সিন্ধু বিরহিণী-বেণী প্রায়,
তীর-তরুশাখে জীর্ণপর্ণ, মলিন পান্ডুছায়;
দেখে মনে হয়, দুরের পথিক! ভাগ্য তোমার ভাল,
বুকে নিয়ে তারে প্রণয় রসে আনন্দ-দীপ জ্বালো।
৩১
***
আবন্তীপুরে* আসিলে শুনিবে গ্রামের বৃদ্ধ তথা,
কোবিদের মতো উদয়ন-গীতি** কহিছে বৃহৎকথা
যে পথের কথা বলেছি পূর্বে, তুমি তারে অনুসরি'
শ্রীবিশালাপুরী উজ্জয়িনীতে যেও সেই পথ ধরি’
দেখে মনে হবে স্বর্গখানিক পুণ্য অন্তে তার-
বুঝিবা সহসা নামিয়া এসেছে মর্তে সে আবার!
* - আবন্তী এখন মালওয়া বা পশ্চিম মধ্য প্রদেশ।
* - উদয়ন চন্দ্রবংশীয় রাজপুত্র এবং তার গল্পগুলো রুপকথায় জায়গা করে নেয়।
৩২
***
প্রভাতে ফুটেছে যে কমল কলি, হরি' তার পরিমল,
করে সমীরণ সারস কূজনে শিপ্রারে চঞ্চল!
গত নিশীথের সুরত-ক্লান্তি আদরে করিতে দূর
চাটুকার সম যাচে প্রিয়তম, মিনতি-করুন সুর!
* - শিপ্রা নদী চম্বলে প্রবাহমান। এই নদীর উপরেই প্রাচীন শহন উজ্জয়িনী অবস্থিত।
৩৩
***
সেথা সুন্দরী ধূপের ধোঁয়ায় সুবাস ছোঁয়ায় কেশে,
গবাক্ষ ভেদী সে ধূম তোমারে পুষ্ট করিবে এসে!
লভিবে সেথায় ভবনশিখীর নৃত্যের উপহার,
পুষ্পগন্ধে মোদিত হর্ম্য হেরিবে চমৎকার!
ললিতা বণিতা-পদরাগে যেথা লক্ষ্মীমন্ত দেশ
যাপিও সেথায় কিছুদিন সখা, সে পুরী লাগিবে বেশ!
৩৪
***
চন্ডীনাথের পুণ্য দেউল, ত্রিলোক-তীর্থ ধাম*,
যেও তুমি সেথা নীলকন্ঠের ধরিয়া বরণ শ্যাম।
তোমারে হেরিয়া সম্ভ্রমে যত প্রমথ হইবে স্থির,
পদ্ম-পরাগ সুরভিত সেথা গন্ধাবতীর নীর;
তরুণী দলের স্নানের লীলায় উচ্ছল সদা নদী,
নদীর বাতাস ছড়ায়ে সুবাস ফুলবনে নিরবধি।
* - ত্রিলোকের অধিপতি শিবের পুণ্যভুমি চণ্ডিশ্বর ঘুরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে
** - গন্ধাবতী, মহাকাল মন্ধিরের বাগান কে ঘিড়ে রাখা ছোট্ট একটা নদী। এই মন্দির উজ্জয়িনীর অনেক বিখ্যাত মন্দিরগুলোর একটি যেটি শিবের উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হত।
৩৫
***
সন্ধ্যা না হ'তে এসে পড়ো যদি মহাকাল মন্দিরে,
রহিও সেথায় প্রতীক্ষা করি ধৈর্যধরিয়া ধীরে-
দিবসের শেষে সূর্য যাবৎ না-যায় অস্তাচলে;
শুরু হ'লে সেথা শিবের আরতি, দেখো এসে কুতূহলে।
অম্বর তলে ডম্বরু তালে কোরো তুমি গর্জন
শুনি সে মন্ত্র সুফল দেবেন ত্রিলোচন প্রীতমন।
৩৬
***
মহেশ্বরের নিত্যপূজায় নৃত্য করেন যাঁরা
বাজে মঞ্জীর চরণভঙ্গে, সুরতরঙ্গে হারা!
রত্নখচিত চামর ব্যজনে ক্লান্ত তাদের কর,
তব স্নেহকণা পরশনে হবে প্রশান্ত অন্তর।
জুড়াবে তাদের গত রজনীর রতিজ নখ-ক্ষত,
কালো নয়নের হানিবে দৃষ্টি ভ্রমর শ্রেণীর মতো।
৩৭
***
সন্ধ্যায় যবে নৃত্য করিবে পশুপতি বাহু তুলে,
হরভুজ-তরু কম্পনঘন হেরিও আপনা ভুলে;
রক্তজবার রক্তিম রাগে আরক্ত গজাজিন
উৎক্ষেপি' যবে নাচিবে নটেশ, হ'য়ো তাহে সমাসীন
শান্ত স্তিমিত উদ্বেগহীন আখিঁ মেলি' পার্বতী-
ভিক্তি নেহারি' ভক্ত জনের তুষ্ট হবেন অতি।
৩৮
***
নিবিড় নিশার আধাঁরে যখন আবৃত সকল পথ,
অভিসারে নারী চলিবে গোপনে পুরাইতে মনোরথ,
বিজলি চমকে ক্ষণ-বিভা যেন - নিকষে কনক রেখা;
তুমি সেথা আর গরজি' বরষি' রচিও না ভয়-লেখা।
৩৯
***
গৃহবলভীতে রয়েছে যেমন সুপ্ত কপোত সুখে,
একটি রজনী থেকে যেও সেথা, আদরে ধরিয়া বুকে
ঘন বিলসনে ক্লান্ত তোমার তড়িৎ বধূরে প্রিয়
নিশান্তে পুন সমুদিলে ভানু, তুমি এসে দেখা দিও
বন্ধুজনের কার্যের ভার নিয়েছে যে মাথা পাতি
বিলম্ব করা সাজে কি তাহার? তুমি যে জীবন-সাথী।
৪০
***
কাঁদিছে কমলখন্ডিতা-নারী, সূর্য আসেনি কাছে,
হায়, অভাগীর নলিন-নয়ন আখিঁজলে ভরিয়াছে।
আসিবে তপন কপট প্রণয়ী মুছাইতে আখিঁজল,
ছেড়ো ত্বরাপথ, রুধিও না তারে করিয়া কুটিল ছল।
৪১
***
স্বচ্ছ সলিল গম্ভীরা নদী, নির্মল বুকে তার,
তোমার ছায়াটি পড়িবে যখন ল'য়ে প্রীতি সমাচার,
চটুল সফরী নর্তনে সে যে হানিবে নয়ন-বাণ,--
বিফল কোরনা কটাক্ষ তার, সার্থক কোরো প্রাণ।
৪২
***
বেতস লতিকা লতায়ে নেমেছে লুটায়ে স্রোতের বুকে
দেখে মনে হয় শিথিল বসন সম্বরে যেন ঝুকে
তট-নিতম্ব হ'তে নীল শাড়ী খসিয়া পড়িছে যেন,
কঠিন জানি হে ছেড়ে যাওয়া পথে বিবসনা নারী হেন!
রস-সম্ভোগে অভিজ্ঞ যেবা কেমনে এ হেন জন,
বিবৃত-জঘনা অঙ্গনা হেরি করে দূরে পলায়ন?
৪৩
***
তোমার প্রথম বর্ষণে ভেজা মাটির সুবাস পেয়ে
নিদাঘের জ্বালা জুড়াতে আসিবে শীতল পবন ধেয়ে,
ছোঁয়া লেগে তার পরিণত হবে কাননে উদুম্বর,
সজল বাতাস টানিবে সরবে গজেরা শুন্ডধর!
দেবগিরিগামী তোমারে ব্যজন করিবে হে সমীরণে,
নিঃশেষ কোরো ভান্ডার সেথা অবিরত বরিষণে।
* - দেবগিরির আর্থিক অর্থ হচ্ছে দেবতার পর্বত। এটি অধুনা দৌলতাবাদে গম্ভীরা নদীর পাশে অবস্থিত
৪৪
***
কার্ত্তিকেয়র নিবাস নিয়ত দেবগিরি মন্দিরে,
ফুল হ'য়ে মেঘ পোড়ো গিয়ে তাঁর চরণপ্রান্তে ধীরে,
মন্দাকিনীর পূণ্য-সলিলে অঙ্গ সিক্ত করি',
পুষ্প-অর্ঘ্য স্নানোদক প্রায় পোড়ো তুমি ঝরি' ঝরি'।
জন্ম যে তাঁর রুদ্রের তেজে, বহ্নির বরদানে,
সূর্যের চেয়ে জ্যোতির্দীপ্ত, আগত ইন্দ্রত্রাণে।
৪৫
***
কুমার-বাহন শিখীর পুচ্ছ পড়িলে একটি খুলে,
পার্বতী লয় পুত্রের স্নেহে সেটিকে কর্ণে তুলে।
গর্জিলে তব গভীর নিনাদ দেবগিরি কন্দরে,
শুনিয়া সে ধ্বনি নাচিয়া উঠিবে ময়ূর কেকাস্বরে।
হলললাটের ইন্দুকিরণে উজল হেরি' সে আখিঁ,
জ্যোতি লেখায় মনে হবে যেন অপরুপ শিখী পাখি।
৪৬
***
শরবননাথে আরাধানা সারি লঙ্ঘিও সেই গিরি,
কুমারে পূজিতে বীণা হাতে যবে আসিবে সে বন ঘিরি'
সিদ্ধ যুগল, পথ ছেড়ে দিও; জলকণা তব পাছে
বীণার তন্ত্রী নষ্ট বা করে, আসিবে না ভয়ে কাছে।
রন্তীদেবের* গোধন-নিধন-যজ্ঞ-কীর্তিসম
বহে খরস্রোতা চর্মন্বতী, যেও সেথা সখা মম!
* - রাজা রন্তীদেব ছিল অত্যাধিক ধনী এবং ধার্মিক। তিনি দিন এক হাজার করে গরু বলি দিতেন। রক্তের সেই ধারা ধারণা করা হয় ক্রমান্বয়ে চম্বল নদীত পরিণত হয়।
৪৭
***
সিন্ধু সলিলে নামিবে যখন শ্যামের বরণ হরি'
গগনগামীরা হেরিবে নিম্নে আখিঁ দুটি নত করি'
বহুদূর হতে মনে হবে দেখে বিশাল সে নদী ক্ষীণ;
মুক্তামালার মাঝে যেন তুমি নীলমণিসম লীন!
৪৮
***
উত্তরি' সেই সিন্ধু যখন দশপুর পথে যাবে,
দশপুরনারী আয়ত লোচনে তব মুখ পানে চাবে।
সেথা তরুণীর ভুরুর নাচন কালো কুরঙ্গ চোখে,
অসিত শুভ্র কটাক্ষ হানে আনন্দ প্রাণলোকে।
চপল-আখিঁতে গাঢ় রসাবেশে কেলি কুতূহল ফোটে
যেন ধাবমান কুন্দ-কলিরে ধরিতে ভ্রমর ছোটে!
* - দশপুর রন্তীদেবের রাজ্যের নাম।
৪৯
***
যেও তারপর ব্রক্ষ্মাবর্তে বিস্তারি' তব ছায়া,
বিজড়িত যেথা কুরুক্ষেত্রে কৌরব-স্মৃতি-মায়া!
তব বর্ষণ-ধারাঘাতে যথা ছিন্ন সরোজ জাল,
সেই মতো সেথা গাণ্ডীব-হত শত নৃপ-কঙ্কাল!
৫০
***
বন্ধু-প্রীতির মর্যাদা রাখি যুদ্ধ-বিরত রাম
সরস্বতীর তীরে বসি যেথা' করি'ছেন বিশ্রাম,
রেবতী-লোচন-সন্নিভ সুরা-আস্বাদ সুমধুর--
ত্যাজি অনায়াসে নদীজলে তিনি তৃষ্ণা করেন দূর।
সেই পূতবারি করো গিয়ে পান, তোমারও হবেই ভালো,
পাবে নির্মল শুদ্ধ চিত্ত-হ'লেও বরণ কালো।
* - বলরাম ছিল রামের ভাই। যদিও সে ছিল একজন যোদ্ধা এবং মদ্যপ তথাপি সে মহাভারতের যুদ্ধের সময় মদ ছেড়ে দেয়।
যুদ্ধে সে কারো কোনো পক্ষ নেয় না। বলরাম ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী এবং একদা যমুনা নদীর উপর লাঙল টেনে তার গতিপথ সে পালটে দিয়েছিল। সুন্দরী রেবতী ছিল তার স্ত্রী।
৫১
***
কুরুক্ষেত্র পশ্চাতে রাখি এসো তুমি কনখলে,
শৈল ত্যজিয়া গঙ্গা যেথায় নেমে এল কুতূহলে;
সগরসুতের উদ্ধারে রচি' স্বর্গ সোপানাবলী,
হরজটাজাল দু'হাত টানিয়া আনন্দে যায় গলি'!
টলে ওঠে চাঁদ শম্ভু ললাটে, গঙ্গা অট্টহাসে
তুচ্ছ করিয়া উমার ভ্রুকুটি নাচিছে কলোচ্ছ্বাসে।
৫২
***
সুর-গজবেশে গগন হইতে প্রলম্বি' যদি তুমি
পান করো সেই স্ফটিক প্রবাহ পরশি' পার্শ্বভূমি,
প্রতিবিম্বিত হবে তুমি তাহে, ভাবিবে সবাই ভ্রমে,
গঙ্গা যমুনা মিলিছে এ কোন অভিনব সঙ্গমে!
৫৩
***
তুষারশুভ্র গিরিশিলা যেথা মৃগনাভি সুরভিত,
সেথায় ক্ষণেক বিশ্রাম নিলে জানি তুমি হবে প্রীত।
হেরিয়া তোমারে মনে হবে যেন-শম্ভু-বাহন বৃষ,
উৎক্ষেপি' তার শৃঙ্গে পঙ্ক খেলিছে অম্বরীষ।
৫৪
***
বায়ুর তাড়নে দেবদারু বনে ঘন ঘর্ষণ ফলে,
যদি দাবাগ্নি লেগে যায়, আর চমরীপুচ্ছ জ্বলে;
সে অনল তুমি শীতল করিও হিমজলধারা দানি',
মহতেরা সদা আর্তজনেরে বিপদে বাঁচান জানি।
৫৫
***
তোমারে হেরিয়া হরষিত মনে ছুটিবে শরভ দল,
সরে যেও পাশে, নতুবা মরিবে মৃগযূথ চঞ্চল!
রেগে যদি তারা যেতে চায় বেগে করি' মেঘে' লঙ্ঘন
চূর্ণ হবে যে অঙ্গ, একথা হবে গো বিস্মরণ;
নামায়ে তুমুল করকা--বৃষ্টি কোরো সবে উদ্ধার,
নির্বোধে ছোটে অসাধ্য কাজে-ব্যর্থতা শুধু সার।
৫৬
***
চন্দ্রচূড়ের চরণ-চিহ্ন শিলাপরে আঁকা যেথা,
সেবিতে সেপদ সিদ্ধজনেরা নিত্য আসেন সেথা
তুমি নত শিরে শ্রদ্ধা-অর্ঘ্যে কোরো তাঁর অর্চন
পূজিলে তাঁহারে জীবন-অন্তে লভিবে মোক্ষধন।
৫৭
***
বনুবনতলে ব্যাকুল বাতাস বাঁশরী বাজায় যবে
গাহে সঙ্গীত ত্রিপুর-বিজয়* কিন্নরী গণে নভে,
গিরি-কন্দরে মুরজ** মন্ত্রে হে মেঘ গরজি' উঠো,
পশুপতি গীতি নিতি প্রীতিভরে অন্তরগেহে লুটো।
* - ত্রিপুরা হচ্ছে তিনটা দানবপুরী বা শহর যা শিব ধ্বংস করে দেয়।
** - মুরজ হচ্ছে লম্বা ঢ্রাম আকৃতির বাদ্যযন্ত্রবিশেষ
৫৮
***
মহা হিমগিরিতট উত্তরি' দেখে নিও যাহা বাকি,
ক্রৌঞ্চ-শৈল-রন্ধে দাড়াঁবে যখন অঙ্গ রাখি'
দেখিবে সে দ্বারে হংস-বলাকা মানস সাগরে চলে,
সেথা ভৃগুমুনি কীর্তি-স্মরণি ধরণীতলে।
বলিরে** ছলিতে বিষ্ণু চরণ যেমন ভঙ্গী ধরে
তেমনি হেলিয়া আপনারে তুমি নিও আরও উত্তরে।
* - ক্রৌঞ্চ হচ্ছে ইন্ডিয়া থেকে তিব্বত যেতে পরা একটা গিরিপাসের নাম এখন ডাকা হয়ে নিতিপাস নাম। ধারণা করা হয় এটি দুঃসাহসী ব্রাক্ষ্মণ যোদ্ধা প্রশুমারার তীরের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে।
** - বলি হচ্ছে এক দানব। বিষ্ণু তাকে বামন বেশে ছলের মাধ্যমে বদ করে।
৫৯
***
রাবণ প্রতাপে কৈলাস যেথা হ'য়েছে শিথিলমূল*,
সেথা দেখো গিরি-সুরনারীদের দর্পণ সমতুল!
কুমুদ-শুভ্র তুষারে আবৃত শ্বেতচুড়া-কুট্টিমে-
যেন মহেশের অট্টহাস্য জমিয়ে রয়েছে হিমে!
* - রাবণ হচ্ছে রামায়ণের দানব রাম যাকে বদ করে। কৈলাস পর্বত সরাতে যেয়ে রাবণ পাহাড়টার শিকড় শিথিল করে দেয়।
৬০
***
হেরি তব রুপ চেয়ে রবে সবে মুগ্ধ নয়নে প্রিয়
মনে হবে তুমি বলদেব দেহে শ্যামল উত্তরীয়;
উজ্জ্বল নব কজ্জ্বল প্রায় তোমার বরণ কালো
সদ্য ছিন্ন গজরদ সম শ্বেত চূড়ে শোভে ভালো!
৬১
***
মনিবন্ধের ফণীর বলয় শম্ভু খুলিয়া যবে
আদরে ধরিয়া পার্বতীকর শৈল-বিহারে রবে,
বারি রোধ করি এসো রুপ ধরি রত্ন-সোপান হেন
রাখি তাহে পদ আরামে গৌরী শিখরে ওঠেন যেন।
৬২
***
তব দেহ হ'তে সুর-তরুণীরা কঙ্কণ-সঙ্ঘাতে
মোচন করিবে জলধারা যবে যন্ত্রধারা সাথে
নিদাঘ-দহন শীতল করিতে যদি কেহ ধ'রে রাখে,
শ্রবণ-পীড়ন গর্জনে তব শঙ্কিত কোরো তাকে।
৬৩
***
বিকশিত যেথা স্বর্ণ-সরোজ স্বচ্ছ মানস সরে,
সেথা গজেন্দ্র ক্ষণ-মুখপটে ভরি দিও প্রীতিভরে
কল্পতরুর কিশলয়গুলি চিকন মলয় বাসে
স্পন্দিত কোরো নন্দিত নগেন্দ্র কৈলাসে।
৬৪
***
দেখো কোলে তার প্রণয়িণী সম বিরাজে অলকা মম,
জাহ্নবী যেন শ্লথকটিবাস-কাঁপে ধীরে মনোরম;
হেরিবামাত্র চিনে লবে জানি, তুমি যেহে কামাচারী!
গগনচুম্বী রম্য নিলয়ে ঝরাবে যখন বারি
সৌধ শিখরে বিন্দু বিন্দু সলিল কণিকা যেন
মনে হবে দোলে কামিনী অলকে মুক্তা-মালিকা হেন।
কালিদাস এবং ... - শেষ পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।