মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...
কালিদাস ভারতবর্ষের সংস্কৃত ভাষার অন্যতম কবি এবং নাট্যকার। তাঁর উত্তানের সঠিক সন নিয়ে যদিও দ্বন্ধ আছে কিন্তু অধুনা পন্ডিতদের ধারণা সময়টি খ্রীষ্টাব্দ চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দে, চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয় বিক্রামাধিত্য এবং পরবর্তীতে কুমারাগুপ্তার শাসনামলে। তাঁর লেখায় নানা ভৌগলিক জায়গার সূক্ষ্মাতিক্ষ্ম বর্ণনা ধারণা দেয় যে কালিদাস তৎকালীন ভারতবর্ষের প্রসিদ্ধ জায়গাগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতেন। মহার্ঘ সংস্কৃত সাহিত্যে তিনি স্বতন্ত্র এবং দ্যুতিময় অবদান রেখে গেছেন।
তাঁর লেখনীতে তিনি জীবনের সৌন্দর্য এবং সহৃদয় ও মাধুর্যময় ব্যবহারের ধারা কিভাবে অন্যকে তুষ্ট করা যায় সে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর উপস্থাপনা জীবন্ত এবং হৃদয়ে আলোড়ন তুলে। তাঁর শব্দশৈলী অনন্যসাধারণ। কয়েকটি মাত্র শব্দের ধারা তিনি অভিপ্রেত অর্থ তুলে ধরার ক্ষমতা রাখতেন। তাঁর লেখনী জীবনের এক মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে মানুষকে প্রেরণা দেয়।
তাঁর কাজ একি সাথে সাধারণ পাঠক এবং মনীষীদের চিন্তার খোড়াক যোগায়। অসাধারণ কবি হওয়ার যা যা গুণাবলী দরকার কালিদাস সেই সব ব্যতিক্রমী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাজগুলো তাঁর অসাধারণ কাব্যিক প্রতিভা এবং পান্ডিত্যকেই ফুটিয়ে তুলে। সাথে সাথে তা জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য এবং মানুষের জন্য যা কল্যাণকর সে প্রত্যয়েও অঙ্কিত। তিনি ধনী এবং প্রাসাদের আভিজাত্য মোড়ানো জীবন এবং আশ্রমের সাধাসিদে, শান্ত জীবনকে সমান ভাবে বর্ণনা করেছেন।
বিবাহিত জীবনের আনন্দ এবং বিরহব্যথাও তিনি তার লেখনীতে সমানভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির রুদ্র এবং গম্ভীর মূর্তির ভেতর থেকে তিনি রসাত্মক দিকটি বের করে আনতে পারতেন। তাঁর লেখনী সাহিত্য-সচেতনতা, অতুলনীয় শব্দশৈলী এবং অপ্রতিদ্বন্ধী ক্ষমতার জীবন্ত উদাহারণ।
ধারণা করা হয় কালিদাস রাজা বিক্রামাধিত্যের রাজসভায় সভাকবি ছিলেন। এই রাজার রাজ্য বা শাসনকাল ও সুনির্দিষ্ট নয়।
কিন্তু এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে কালিদাস এর উত্তানের কাল খ্রিষ্টাব্দ ছয় শতাব্দীর আগে, আজ থেকে চৌদ্দশ বছর পূর্বে। কালিদাসের সর্বমোট সাতটি সাহিত্যকর্মের সন্ধান পাওয়া যায়। 'Kumarasambhava','Raghuvamsha' তাঁর দুইটি মহাকবিতা। 'Malavikagnimitra','Vikramoravashiya (উর্বশী এবং বিক্রমা)' এবং 'অভিজ্ঞান শকুন্তলা ' তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিনটি নাটক। 'মেঘদূত ' এবং 'Ritusamhara' ও তাঁর স্বতন্ত্র্য কাব্যিক প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে।
কালিদাস বরাবরি এমন জ্ঞানী এবং সুশিক্ষিত ছিলেন না। বরঞ্ছ এক সময়ে তাকে রাজ্যের সবচে বোকা মানুষদের একজন টাহর করা হত। কথিত আছে যে, তিনি এক ব্রাক্ষণের সন্তান ছিলেন এবং ছয় মাসের বয়সকালেই পিতৃমাতৃহারা হন। এক রাখাল তাকে লালন পালন করেন। কালিদাসের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।
সে সময় ভীমশুকলা নামে একজন কাশী (বেনারাস) শাসন করত। ভীমশুকলা চেয়েছিল তার কন্যা বাসন্তীর বিয়ে রাজসভার পন্ডিত ভারারুচি-র সাথে হোক। কিন্তু বাসন্তী সেই প্রস্তাব এই বলে প্রত্যাখান করে যে, সে নিজে ভারারুচির চাইতে অনেক বড় পন্ডিত। ভারারুচিতো রেগেমেগে আগুন। একদিন রাজার এক মন্ত্রীর সাথে হঠাৎ করে রাখাল-বালক কালিদাসের সাথে দেখা।
যে কিনা গাছের চূড়ায় চড়ে তার গোড়ায় কুঠারাঘাত করছিল গাছটাকে কেটে ফেলবে বলে। 'কি নির্বোধ! বাসন্তীর জন্য এ উপযুক্ত স্বামী হবে!' এই ভেবে মন্ত্রী সেই রাখাল-বালককে রাজধানীতে নিয়ে আসে। সেই মন্ত্রী এবং ভারারুচি মিলে বালককে বলে প্রাসাদে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে যেনো সে শুধু 'ওম শান্তি' বলে। তাকে মূল্যবান পোশাক পড়িয়ে রাজার সামনে নিয়ে হাজির করে। বালক দেখতে সুশ্রী ছিল এবং তারা বাসন্তীকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করলো যে সে অনেক বড় একজন পন্ডিত।
বাসন্তী তাকে বিবাহ করে এবং পরে সত্যটা বুঝতে পেরে শোকে মূহ্যমান হয়ে পরে। বাসন্তী দেবী-কালীর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন এবং তার পতিকেও কালীকে ভক্তি করতে শেখালেন। কিন্তু কোনো ভক্তিপূজায় দেবীর মন টলাতে না পেরে সে(কালিদাস) শেষে সিদ্ধান্ত নেয় দেবী যদি তাকে আর্শীবাদ না করে তবে সে তার জীবন বিসর্জন দিবে। দেবী দয়াপরায়ণ হয়ে তাঁর জিহবায় কিছু অক্ষর লিখে দিলেন এবং পরে সে একজন বিরাট পন্ডিত বনে যান। যেহেতু তিনি দেবী কালীর আর্শীবাদপুষ্ট, তাই অনুমান করা হয় তাঁর নাম কালীদাস (কালীর সেবক)।
বিশ্বাস করা হয় কালীদাস বিক্রামাধিত্যের রাজসভার সভাকবি এবং নবরত্নের একজন ছিলেন। অন্যরা হলেন ধন্বন্তরি (Dhanvantari), কাহ্নপা (Ksapanaka), অমরসিংহ (Amarasimha), শঙ্কু (Sanku), বেতালভট্ট (Vetalabhatta), ঘটকর্পর (ghatakarapara), বরাহমিহির (varahamihira) এবং বররুচি (vararuci) । (বন্ধু তায়েফ এবং ম্যভেরিককে ধন্যবাদ নামগুলো বাংলা করে দেয়ার জন্য। )
কথিত আছে, অনেককাল আগে যখন কবিদের নাম হাতে হাতে গণনা করা হত, তখন কালিদাসের নাম অনামিকা থেকে শুরু হতো। কারণ তখন থেকে এমন কেও জন্মায় নি যে কিনা কালিদাসের পাশে জায়গা করে নেওয়ার মতো যোগ্য।
সূত্রঃ "Kabir and Kalidas" এর ভাবানুবাদ
কালিদাস এবং ... - ২
কালিদাস এবং ... - ৩
কালিদাস এবং ... - শেষ পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।