ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের অফুরান সম্ভাবনাময়ী শিল্পের মধ্যে পোল্ট্রি অন্যতম। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে না হলেও প্রাচীন কাল থেকেই নিজেদের প্রয়োজন মটোতে মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে সচতেন বা অবচতেন ভাবেই। শুরুতেই পোল্ট্রির একটি সংজ্ঞা প্রদান করা যেতে পারে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রনালয় র্কতৃক জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, পাখী জাতীয় যে সকল প্রজাতি মানুষের তত্ত্বাবধানে থেকে বংশ বিস্তার করে এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বর্পূন ভূমিকা রাখে তাকে পোল্ট্রি বলে। নৃতাত্বিকগনের মতে, র্ববর যুগের মধ্য দশা থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ছে।
একসময় নিজেদের চাহিদার জন্য এবং পরবর্তীতে চাহিদা মিটিয়ে যখন অন্যের প্রয়োজন মেটাতে বিনিমিয় হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে তখনই এটি একটি লাভজনক ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভাব হতে শুরু করে। হাঁস, মুরগী, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি এই শিল্পের অর্ন্তগত।
ব্যবসা-বানিজ্যের প্রাচীন ঐতিহ্যবহনকারী বরিশাল আবহাওয়ার দিক থেকে পোল্ট্রি শিল্পের একটি অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে গরম বা শীতের আধক্যি ততোটা নয়। অন্যান্য জায়গার মতো বরিশালেও দুই ধরনের পোল্ট্রি পালন পদ্ধতি রয়েছে।
একটি এতিহ্যগতভাবে পরিচালিত পারিবারিক পদ্ধতি, অন্যটি বানিজ্যিক পোল্ট্রি পালন পদ্ধতি। প্লোট্রি ভ্যালু চেইনে জীব-নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকা একান্ত গুরুত্ত্বর্পূন। গুনগত মান সম্পন্ন খাবার, ঔষধ, বাচ্চা এবং রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রন নিশ্চিত রাখাও একটি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বানিজ্য্যিকভাবে বরিশাল জেলায় প্রায় ৫৮৩টি নিবন্ধনকৃত এবং ১৫০০ থেকে ২০০০টি অনিবন্ধনকৃত পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এ অঞ্চলের সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাহিদা, মূল্য, নতুন পন্য, খাবার, ঔষধ, সরবরাহকারী বা প্রস্তুতকারক (বাচ্চা, খাবার, ঔষধ ও ভেকসিন) এ সব সর্ম্পকে যথাযথ তথ্য সংরক্ষন এবং তা খামারী র্পযায়ে পৌছে দেয়া সবচেয়ে জরুরী।
তা ছাড়াও খামারী র্পযায়ে র্বাড ফ্লু এবং জীব নিরাপত্তা বিষয়ক জ্ঞানের স্বল্পতা, র্পযাপ্ত ল্যবরেটরী সুবিধার অভাব, জীবানু চিন্হিত করতে দীর্ঘসূত্রীতা বরিশালের পোল্ট্রি শিল্পের প্রসারকে বিঘ্নিত করছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনকৃত খামারগুলো সরকারী সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পেলেও অনিবন্ধনকৃত খামারগুলো দুর্যোগ এবং মহামারীর সময় সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধাদি যেমন : প্রশিক্ষন, ক্ষতিপূরন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রীতা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতাজনিত ভীতির কারনে অধিকাংশ খামারী রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে।
অথচ, পশু সম্পদ বিভাগকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য কোন ফি প্রদানের প্রয়োজন নেই। যে কোন খামারী সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে একটি র্ফম সংগ্রহ করে তাতে থাকা নাম, ঠিকানা, ফার্মের আকার, জীবনিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ইত্যাদি পূরন করে জমা প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন-এর কাজ শুরু করতে পারে।
র্ফম জমা প্রদানের পর পশু সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ফার্ম পরিদর্শনের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয়। পোল্ট্রি ফার্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রয়োজনের তুলনায় ধীর গতীর। কারণ, উপজেলা পশূসম্পদ র্কমর্কতাকে পূরনকৃত নিবন্ধন র্ফমসমূহ সংগ্রহ করে খামার পরিদর্শন পূর্বক নিবন্ধন প্রদানের জন্য জেলা পশূসম্পদ কর্মকর্তার কাছে সুপারিশসহ প্রদান করতে হয়। জেলা পশূসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে খামারীর নিবন্ধন পেতে ক্ষেত্রভেদে ৬ মাসেরও বেশী সময় লাগে বলে কোন কোন খামারীরা জানান। এর কারন হিসাবে সরকারের সীমিত লোকবল, অপ্রতুল বরাদ্দ, অপর্যাপ্ত প্রচার এবং খামারীদের অসচেতনতাকে দায়ী করা যায়।
মূলত: নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে পোল্ট্রি খামারীদের একটি তথ্য ভান্ডার গঠন করা সম্ভব। যার উপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকার খুব সহজেই প্রয়োজনীয় সম্পদ বরাদ্দের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করতে সক্ষম হবে এবং বরাদ্দকৃত সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও ন্যায় সঙ্গত বিতরনও নিশ্চিত করতে পারবে। উপকরন সরবরাহকারীদের জন্য তথ্য ভান্ডার ব্যাবহার করে সহজেই গুনগত উপকরনের চাহিদা নির্নয় ও তার সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হবে। পোল্ট্রি খামারীদের তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য উপজেলা র্পযায়ের পোল্ট্রি খামারীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া উপজেলা পর্যায়ের পশুসম্পদকার্যালয়ে সম্পন্ন করার বিধান করা যেতে পারে। এছাড়া, পোল্ট্রি সমিতির মাধ্যমে খামারী র্পযায়ে সরকারী জারীকৃত নিবন্ধন সংক্রান্ত পরিপত্রের ব্যাপক প্রচার করলেও ইতিবাচক পরিবর্তীত ফলাফল চোখে পড়ার মতো হবে বলে ধারণা করা যায়।
জেলা পশু সম্পদ র্কায্যালয়ে তথ্য কন্দ্রে স্থাপন এবং নিবন্ধন তথ্য কনিকা/পোষ্টার/লিফলেট/ষ্টীকার ইত্যাদি প্রস্তুত ও বিতরন করে খামারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরী করা, একই সাথে র্কমীদের যথাযথ কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষনের মাধ্যমে খামারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা এই শিল্পের প্রসারের জন্য একান্ত জরুরী।
র্বতমানে পশু সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ার তথ্য প্রচার সংক্রান্ত তেমন কোন কার্যক্রম নাই। কেবল পোল্ট্রি সর্ম্পকীত বিভিন্ন সভা সেমিনার, প্রশিক্ষনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে বক্তব্য প্রদান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রি এসোসিয়েশন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার প্রচার দ্রুত সম্পন্ন করতে র্কাযকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর পোল্ট্রি মালিকদের এসোসিয়েশনের সাথে চক্তির মাধ্যমে র্বতমানে বহুল আলোচিত পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ ধরনরে কৌশলের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।
পোল্ট্রি সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি হালনাগাদ তথ্যভান্ডারের প্রয়োজনীয়তা সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায়ে আলোচিত ও স্বীকৃত একটি বিষয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ তথ্যভান্ডার তৈরী ও হালনাগাদ করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সহযোগিত সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে। প্রয়োজন বিবেচনা করে পোল্ট্রির ক্ষেত্রে এজাতীয় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকারি বেসরকারী অংশীদারিত্বমূলক র্কাযক্রমের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সুযোগ রয়েছে যা স্থানীয় অর্থনৈতীক সুশাসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।