আমি তোমায় বুঝেছি সমগ্র বুঝহীনতার ভেতর দিয়ে।
বনসাই যুগপৎ হতাশা, ক্রোধ ও ঘৃনা নিয়ে আসে।
ছোট্ট একটা কুঠুরীতে বন্দী প্রাণ ভোমরা। শিল্পের নামে সৌন্দর্যের নামে বাণিজ্যের নামে এই আজব লীলা। ...৩৭ বছর বয়সী বনসাইয়ের দাম ৫৫ লাখ টাকা।
একটা বৃক্ষ শিশুকে বছরের পর বছর অগুনিত অত্যাচার করে তার নাম দিই শিল্প। জানি না এই শিল্পের কি মূল্য। শিল্পের মূল্য এতোই টুনকো.... অপর একটি প্রাণের অস্তিত্ব , বিকাশকে ধ্বংস করে দেয়। শিল্পের জন্য শিল্প- এর কোন মূল্যই হতে পারে না। সে অর্থহীন।
মানুষের এই বর্বরতার মধ্য সে তার জঘন্য প্রবৃত্তিগুলোকে চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া 'চীন জাপানের শিশু' লেখাটি। মেয়েদের পায়ের আকার ছোট হলেই নাকি সৌন্দর্য, তাই লোহার জুতো পড়িয়ে রাখা হতো। অনেক আগে রহস্যপত্রিকায় কোন এক উপজাতি গোষ্টির উপর একটা লেখায় পড়েছিলাম, তারা মেয়েদের গলা লোহার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিত। একসময় গলাটা লম্বা হয়ে যেতো।
এই হলো সৌন্দর্য। এই সকল সৌন্দর্য কলা না নির্যাতন ! যখন আমাদের দেশের শিশুরা উটের জকি হয়ে বাজারে বিক্রি হয় তখন কেন তা আর শিল্প হয়ে উঠে না।
বিকৃতিতে আমাদের পরিবেশ প্রাণ বৈচিত্র্য থমকে গেছে। ঝরাগ্রস্থ পৃথিবীতে আমরা হাজারো শংকা নিয়ে বসবাস করছি। ধর্মগ্রন্থ অথবা মানবিক জ্ঞান সবাই মানুষকে বসায় শ্রেষ্টত্বের আসনে।
এই মানুষ কোন মানুষ আমরা কি খেয়াল রাখি। মনে হয় রাখি না। ব্যক্তি স্বাধীনতা বা আপন বুঝাপড়ার শূন্যতায় জগত ভেসে যায়- তখন মানুষ নিজেও হয়ে অন্য কোন নিয়তির হাতে গড়া পুতুল। সে জানে না আপনাকে চিনতে তার নিজের ভূমিকা কি।
আমাদের কোন আচরনই অনর্থক নয়।
তা কোন না কোন ফল উৎপাদন করে এবঙ বিচারযোগ্য। ভালো বা মন্দ সকল কিছু চর্চার বিষয়। আপনি যখন একটা প্রানের উপর অত্যাচার করেন, একই সাথে সে অত্যাচারের চর্চা করছেন, যা মানুষের উপরও করতে পারেন। ভালো বা মন্দ যেকোন আচরন অভ্যাসের ভেতর এমন স্থানে পৌছে, যখন আপনাকে ভালো বা মন্দ কাছের ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে না। আপনার অবচেতনই সে কাজটির দিকে নিয়ে যাবে।
কিছু গল্প শোনা যাক..
হযরত মুসা (আঃ) একটা জলাশয়ের পাশ দিয়ে যেতে খেয়াল করলেন, জলাশয়ের পানি কালো বর্ণ ধারন করেছে। তিনি আল্লাহর কাছে এর কারন জানতে চাইলে আসমান থেকে উত্তর আসল, " এই জলাশয়ের পানি দ্বারা একজন পাপিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে ধৌত করেছে। "
মুসা অবাক হয়ে বললেন," একলোকের কারনে সকলের ক্ষতি। "
এটি তার কাছে নায্য মনে হলো না।
মুসা (আঃ) গাছের চায়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, হঠাৎ পিপড়ের কামড়ে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
তিনি দেখলেন এক ঝাক পিপড়ে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। রেগে গিয়ে তিনি পুরো দলটাকে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেললেন। তখন আসমান থেকে বলা হলো," হে মুসা, তোমাকে একটা পিপড়ে কামড়িয়েছে আর তুমি সবগুলোকে মেরে ফেললে। "
সম্ভবত হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রাঃ)'র কাহিনী।
তিনি একবার কোথা যেন যাচ্ছিলেন।
অনেক পথ চলার পর খেয়াল করলেন তার জামার মধ্যে একটা পিপড়ে আটকে আছে।
তিনি যেদিক হতে এসেছিলেন সেদিকে হাটা শুরু করলেন। কয়েক ক্রোশ আসার পর দেখতে পেলেন পিপড়ের সারি, তখন তিনি পিপড়েটাকে সেই সারিতে রেখে পুনরায় গন্তব্যে রওয়ানা দিলেন।
কোন এক সাধুর গল্প।
তিনি দেখতে পেলেন একটা বৃশ্চিক যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে পানি জলাশয়।
অর্থ্যাৎ বৃশ্চিকটার বিপদ। তিনি বৃশ্চিকটাকে হাতে নিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেন। কিন্তু বৃশ্চিকটা তার হাতে কামড় দিলো, আবার আগের পথে রওয়ানা দিলো। তিনি আবার একই কাজ করলেন।
তার শিষ্য বলল," আপনাকে কাপড় দেয়া সত্ত্বেও আপনি আবার একই কাজ করলেন।
"
সাধু বললেন," বৃশ্চিকের ধর্ম কামড় দেয়া। সে তার ধর্ম পালন করেছে, আমি আমারটা। "
এবার নিজের কথা বলি।
আমার একটা নদী ছিলো।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা যেকোন নাম দিতে পারেন।
আপনারা শুধু বৃক্ষের বনসাই দেখেছেন।
আমি নদীকে বনসাই বানাচ্ছি।
চমৎকার সব শিল্পকর্ম।
"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে..."
শিশুটি আমাকে বলল," নদী কি?"
" বাবা তোকে তো আসল নদী দেখাতে পারব না। নদীর বনসাই দেখ।
"
শিশুটি নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে অপলক তাকিয়ে রইল।
সে বিস্মিত।
আমি জানি সকল কিছু কেড়ে নিলেও শৈশবের এই মুগ্ধতা, বিস্ময় কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আপন নিয়মেই সে জগতে প্রাণ প্রতিষ্টা করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।