এবার বিদায়ের পালা ...
প্রথম দর্শনে প্রেম যাকে বলে,সেটাই হল ছেলেটির। শ্বেতশুভ্র বসনের মেয়েটিকে দেখে সে চোখ ফেরাতেই পারছিলনা। মেয়েটির সাথে একটু কথা বলার জন্য ছেলেটি তাই তক্কে তক্কে রইল। কিন্তু,বিধিবাম চারপাশের আরো অনেক মুগ্ধ দৃষ্টির আনাগোনা ছিল যে!
কিন্তু ভাগ্য বোধহয় সেদিন তার সুপ্রসন্নই ছিল। আচমকা মেয়েটির সাথে কথা বলার ফুরসত পেয়ে গেল ছেলেটি।
দ্বিধান্বিত ছেলেটি শুধাল,”তুমি কি আমার সাথে এক কাপ কফি খাবে?”
স্বাভাবিক সৌজন্যতা বশত মেয়েটি না করতে পারলনা। এবার ছেলেটি খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়ল,বলার মত কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলনা সে। অপ্রস্তুত মেয়েটিও কিছুটা উশখুশ করতে লাগল।
হঠাৎ ছেলেটি বলল,”কিছু মনে না করলে আমার জন্য কফিতে খানিকটা লবণ দেবে?”
এবার মেয়েটি চমকে উঠল। একটি দোনোমোনো করে মেয়েটি জানতে চাইল,”তুমি কফির লবণ নাও কেন জানতে পারি?”
“সাগর পাড়ের ছেলে আমি,সাগর তীরেই আমার বেড়ে ওঠা।
সাগরের সেই নোনা স্বাদ আমাকে সবসময় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই এই নোনতা কফিতে চুমুক দিয়ে আমি শৈশবের সেইসব স্মৃতি,সেই প্রিয় শহর আর প্রিয় মানুষগুলোকে খুঁজে ফিরি। ”কথা গুলো বলার সময় ছেলেটির কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়ল।
আমরা জানিনা,ছেলেটির চোখের কোণায় চিকচিক করা অশ্রুকণা মেয়েটি দেখেছিল কিনা। হয়তো দেখেছিল, নয়তো সেই মুহুর্তে চার চক্ষুর আরক্তিম মিলন হবেই বা কেন।
এবার মেয়েটির কথা বলার পালা। স্বপ্নালু চোখে মেয়েটি তার নিজের শৈশবের,নিজের স্মৃতির কথা বলতে লাগল। আর ছেলেটি! ছেলেটি তখন তন্ময় হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
এরপর কি হল,সেটা আপনারা সবাই জানেন। রুপকথার সেই গল্পের মতই রাজপুত্র-রাজকন্যের দুটি হৃদয় এক হয়ে গেল।
এবং বলাই বাহুল্য,এরপর একটি ছোট্ট সুখের নীড় রচিত হল,অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকল।
কিন্তু,গল্পের শেষ এখানেই নয়। সময় গড়াল। দেখতে দেখতে কেটে গেল চল্লিশটি বছর। দুজনেই তখন বয়সের ভারে ন্যুজ্ব,কিন্তু প্রথম দেখার সেই মুগ্ধতার খানিকটা তখনও অবশিষ্ট ছিল বৈকি।
তাইতো,এই সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের প্রতিটি বিকেলেই মেয়েটি ছেলেটির জন্য কফি বানিয়ে আনত। হ্যাঁ পাঠক,ঠিকই ধরেছেন,সেই কফিতে কিন্তু চিনির লেশমাত্র থাকতনা,বরং সেই নোনতা কফিই হয়ে থাকত তাদের প্রথম ভালবাসার স্মারক।
এরপর,একদিন ছেলেটি হঠাৎ জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মৃত্যুশয্যায় সে তার প্রিয়ার কাছে একটি চিঠি দিয়ে যায় এবং অনুরোধ করে তার মৃত্যুর পর যেন চিঠিটি পড়া হয়। তারপর ছেলেটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
এক বুক শুণ্যতা নিয়ে মেয়েটি চিঠিটি হাতে নিল।
প্রিয়তমা আমার ,
এই চিঠি যখন তুমি পড়বে তখন আমি তোমার পাশে থাকবনা। । মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখার কথা? আমি তোমার কাছে খানিকটা লবন চেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার কি জান,আমি কিন্তু তোমার কাছে চিনিই চাইতে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আমি এতটাই শংকিত ছিলাম,ভুল করে চেয়ে বসেছিলাম লবণ। কে ভাবতে পেরেছিল,আমাদের এই দীর্ঘ যাত্রার শুরুটা এভাবেই হবে? আমার কিন্তু তখন ফেরার আর কোন উপায় ছিলনা। আমি পরে তোমাকে অনেকবারই বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু আমরা দুজন শপথ নিয়েছিলাম,কেউ কারো কাছে কখনো মিথ্যে বলবনা। তাই মুখ ফুটে আর কখনোই তা বলা হয়নি। তাই তো সারাজীবন এই বিস্বাদ নোনতা কফি আমাকে খেতে হয়েছে।
তবে তুমি জেনে রেখো,এটিই তোমার কাছে বলা আমার প্রথম ও শেষ মিথ্যে। এই একটি ভ্রান্তির জন্য তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবেনা?
তোমার প্রিয়তম।
(পাদটীকাঃ বলাই বাহুল্য,গল্পটি আমার লেখা নয়,নেটেই পড়েছিলাম।
গল্পটিকে তাই ছায়া অবলম্বনে বলাটাই সমীচীন হবে। আর কেউ আগেই পাঠ করে থাকলে বিরক্তি উদ্রেকের জন্য দুঃখিত।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।