রাজশাহী যাবার কথা ছিলো জুনের প্রথম সপ্তাহে। আমার সহযাত্রী বললেন, তাহলে তিনি যেতে পারবেন না...। ইনি আবার আমার বন্ধু এবং ছোট বোনের সোয়ামী। অগত্যা তার জন্য ট্যুর এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিলাম। ঠিক হলো ১১ জুন রাতের বাসে যাবো আর ১৩ জুন রাতের বাসে ফিরবো।
১১ তারিখ সহযাত্রী জানালেন, তিনি ১২ তারিখ বিকালের আগে ঢাকা ছাড়তে পারবেন না। অনেক কষ্টে মেজাজ ঠান্ডা রাখলাম। ১৪ তারিখে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে যাবার কথা ! কীসের ড্রাইভিং পরীক্ষা, আমি ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। রোদ্দুর আর তার মা মুখ গোমড়া করে আছে। অবশেষে ১২ তারিখ বিকাল ৫ টার হানিফে রওয়ানা করে রাত ১১ টায় রাজশাহী পৌঁছলাম।
পরদিন শনিবার নাস্তা সারতে সারতে সাড়ে ১১ টা। আমার সহযাত্রী আবার নবাব কী না ! ১১ টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারেন না। তো নাস্তা সেরে ১২ টায় মাইক্রোতে ছুটলাম চাঁপাইয়ের পথে। গন্তব্য আম বাগান। গরমে জান যাবার দশা।
আমার উনি আর তার ছেলে আবার এসি গাড়ীতে চড়তে পারে না। বমি হয় (ভাববেন না, উনি পোয়াতি নন !!)। বাধ্য হয়ে নন এসি মাইক্রোতে। চাঁপাই শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলো দুরে বেগুলা এলাকায় হাজী সাহেবের আম বাগানে যখন পৌঁছলাম, তখন ঠিক দুপুর বেলা। নির্মলেন্দু গুনের বিখ্যাত হুলিয়া কবিতাটা মনে পড়লো।
....তখন দুপুর। চারিদিকে চিক চিক করছে রোদ্দুর। শোঁ শোঁ করছে করছে হাওয়া...।
কোথায় হাওয়া ? চারদিকে আম গাছ। গাছে হাজার হাজার আম।
একটা পাতাও নড়ছে না। যা নড়ছে, তা হলো গাছের আম। আমাদের সাথে আসা ৩ শিশু হাতের নাগালে আম দেখে অবাক বিস্ময়ে আম নিয়ে খেলছে। পকেটের রুমাল, গায়ের গেঞ্জি সব ভিজে একাকার। এদিকে আমরা যে বাগানে গেলাম তার মালিক আমাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছেন।
আমরাতো অবাক ! আলু ভর্তা, রাজ হাঁসের গোশত আর সাদা ভাত...। ভীষন রকোম তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। সারা বাগান ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছবি তুললাম অজস্র। ৫ টা নাগাদ রওয়ানা হলাম কানসাটের পথে।
কানসাট এলাকাটা দুই কারণে বিখ্যাত। মনে আছে পাঠক, সেই যে পল্লী বিদ্যুতের দাবীতে পুলিশের গুলি খেয়ে পাখীর মতো মানুষ মরেছে...!! এই সেই এলাকা কানসাট। অন্য কারনটি হচ্ছে- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো পাইকারী আমের বাজার। কানসাট বাজার থেকে আমাদের খাবারের জন্য ৫ কেজি আম কিনে আবার রওয়ানা হলাম। এবারের গন্তব্য ছোট সোনা মসজিদ।
ঘুরে ফিরে দেখলাম। কী অসাধারণ শিল্পকর্ম ! যার সামনের চত্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত দুইজন বীর যো™ধার সমাধি। পাশে দিঘী। একটু এগিয়ে গেলেই ভারতের সীমান্ত...। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা।
এবার ফেরার পালা। রাজশাহী হোটেল সুকর্নাতে যখোন এলাম তখোন রাত নয়টা।
আজ রবিবার। দুপুর নাগাদ কেউ হোটেলের রুম থেকে বেরুতে রাজি হলো না। বাইরে তীব্র দাবদাহ।
ভেতরে ঠান্ডা। দুপুরের পর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে হোটেল চিলিস এ খেতে গেলাম। ভর্তা, ডাল, সর্ষে ইলিশ আর সাদা ভাত...। এই হচ্ছে আমাদের দুপুরের খাবার। বিকালে বিসিক এর পথে।
টার্গেট : সপুরা সিল্ক মিলস। অনেক সময় ধরে ঘুরে ফিরে আমাদের সাথে থাকা দুই ভদ্র মহিলা শাড়ী, থ্রি পিস ইত্যাদি দেখলেন। বেরিয়ে যাবার সময় তাদের প্রাপ্তী ৭/৮ টি প্যাকেট, আর আমাদের (পুরুষ দুজনের) অবস্থা হচ্ছে- একটেলের বিজ্ঞাপনের মতো... বাবা, আমি কি শুধু দিয়েই যাবো ? কিছুই কি পাবো না ??
এরপরের গন্তব্য : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রিকশা ছেড়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে ঘুরলাম। শিশুরা গরমে কাহিল, বড়োরাও।
জুবেরী ভবনে নাস্তা খাওয়ালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ফারুক ভাই। একটু পর আমাদের সাথে যোগ দিলেন অরেক টিচার এবং আমাদের এক বন্ধুর দুলাভাই। বাইরে সন্ধ্যা হয়ে এলো। দুলাভাই তার ক্যাম্পাসের বাসায় নিয়ে আম খাওয়ালেন। কী মজার সে আম ! রাত আটটার সময় ফারুক ভাইয়ের বাসায়।
জম্পেস আড্ডা আর বিভিন্ন আইটেম দিয়ে রাতের খাবার। ক্যাম্পাস ছেড়ে যখোন হোটেলের পথে তখোন রাত প্রায় এগারোটা।
সোমবার এগারোটা নাগাদ পদ্মার পাড়ে। জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা বসে আছে। দু চার জনকে দেখলাম- ছাতা মেলে তার নিচে বসে আছে।
বেশ মজার দৃশ্য। ক্ষাণিক সময় পদ্মার পাড়ে কাটিয়েই গরমে হাঁপিয়ে উঠলাম। শিশুদের অবস্থা বেশি খারাপ। এরপর বরেন্দ্র যাদুঘর। বিভিন্ন রকোম পুরাকীর্তিতে ঠাঁসা এ যাদুঘরটি।
হাতির দাঁতের ওপর আঁকা সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের ছবি, খুব ছোট আকারের হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরীফসহ দু®প্রাপ্য কিছু জিনিস দেখলাম। অভিভূত হলাম। ঘন্টাখানেক কাটিয়ে হেটেলে। দুপুরের খাবার সারতে সারতে বেলা তিনটা। চারটার সময় আমার ফেরার ট্রেন।
রেল স্টেশনে এলাম চারটার কিছু আগে। ঠিক সময়ে ছাড়লো পদ্মা ট্রেনটি। ট্রেনের ভেতরেও অসহ্য গরম। আস্তে আস্তে রাজশাহী ছাড়ছি আমরা। পেছনে পড়ে রইলেন মালেক ভাই (দেশ টিভির চাঁপাই প্রতিনিধি), দিলু ভাই (প্রথম আলো চাঁপাই প্রতিনিধি), সুমন (ব্লগার এবং দেশ টিভির রাজশাহী পতিনিধি), সাইদুর ভাই (ভোরের কাগজ রাজশাহী প্রতিনিধি), শিবলী (ব্লগার এবং সমকাল রাজশাহী প্রতিনিধি), সুজন (ব্লগার এবং সমকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি), কাজিন হাসান।
ট্রেন ছুটছে ঢাকার পথে...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।