আপনারা অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে চ্যানেল ওয়ানের নির্বাচিত খবরে সাবেক সচিব বাংলাদেশ টুডের সাবেক সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আসাফউদদৌলার বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কন্ঠ শুনে থাকবেন।
আজ সেই আলোচনাটি sonarbangladesh.com - এ পড়ে ভাবতে খুবই ভাল লাগছে যে, আমাদেরও প্রতিবাদ করার শক্তি এখনো আছে, আছে রুখে দাঁড়াবার সাহস আছে। প্রতিবাদের ভাষা আমাদের এখনো সেষ হয়ে যায়নি। আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব যে হুমকির মুখে রয়েছে, সেই হুমকি মোকাবেলার জন্য আমাদের এমন হাজারো দেশপ্রেমিক বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কন্ঠ ও জনতার খুবই প্রয়োজন।
আলোচনার বিস্তারিত জানতে নীচের অংশটুকু পড়ুন।
খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন অকার্যকর রাস্ট্রের উপাদান।
প্রসঙ্গ অকার্যকর রাস্ট্র
চ্যানেল ওয়ানের নির্বাচিত খবরে সাবেক সচিব, বাংলাদেশ টুডের সাবেক সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আসাফউদদৌলা রাজনিতবিদদের কড়া সমালোচনা করেন। উপস্থাপনায় ছিলেন শামীম আল আমীন। নির্বাচিত খবরের নাম শুনলে কেন জানিনা উপস্থাপক হিসাবে নাজমুল আশরাফের নামটাই বেশী মনে পড়ে। এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল �বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাবার ষড়যন্ত্র চলছে� : খালেদা জিয়া।
উপস্থাপক শামীম আল আমীন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের মূল্যায়ন করতে বললে জনাব আসাফউদদৌলা বলেন, একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসাবে এটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। তবে উনি অকার্যকর রাষ্ট্রের কথা ইঙ্গিত করেছেন। এটা একটা খুব বড় ধরনের অভিযোগ। দেখুন একটি রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে এগুচ্ছে কিনা তা জানার কতগুলি উপাদান আছে। তার মধ্যে প্রথম উপাদান হচ্ছে আইনের শাসনের অভাব।
আইনের শাসন না থাকার যে সমস্ত ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি তার মধ্যে আছে র�্যাব ও পুলিশের দ্বারা একের পর এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়া। বিনা বিচারে এভাবে হত্যার কথা আমাদের rule of law � এর কোথাও লেখা নাই। অকার্যকর রাষ্ট্র করতে চাইলে এটা চালিয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু তা না চাইলে অতি সত্ত্বর এইগুলি বন্ধ করা উচিত। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, র�্যাব ও পুলিশের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা আছে। একটা elected young ছেলে কিভাবে এ কথা বলে আমি জানিনা।
উনার কথা শুনে উনাকে আমার �একজন কৃতি পিতার অকৃতি সন্তান� বলে মনে হলো। জনগণ উনাকে নির্বাচিত করেছে জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য। উনিতো নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ মানুষের ভোটে, র�্যাব পুলিশের ভোটে নয়। র�্যাব পুলিশকে defend করার জন্য উনাকে ঐ জায়গায় রাখা হয় নাই। তাদেরকে prosecute করার জন্য রাখা হয়েছে।
এইগুলি বন্ধ করতে হলেতো মাত্র একটি অর্ডার লাগে। এদিকে আমাদের ফরেইন মিনিষ্টার আরেকজন শিক্ষানবীশ বললেন, �এটা একদিনে হয় নাই তাই একদিনে যাবে না�। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে আমিওতো কাজ করেছি। মাত্র ১ লাইনের একটা অর্ডারে এটা বন্ধ করা যায়।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উপাদান হচ্ছে সার্বভৌমত্ব।
আমি বুঝিনা সরকারের পক্ষ হয়ে যারা কথা বলেন তাদের কি বিবেক বুদ্ধি বলে কিছুই নেই। বলা হচ্ছে গভীর সমুদ্র ( Deep Seaport) বন্দর নাকি বাংলাদেশের regional facility develop করবে। বাংলাদেশ নিজেকে আগে বাঁচাক। তারপর region কে বাঁচাবার দায়িত্ব নিক। Deep Seaport (গভীর সমুদ্র) যদি আমাদের কোনো কাজে না লাগে তাহলে এই port আমাদের কোনো দরকার নেই।
এরপর দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টিপাইমুখী বাঁধ প্রসঙ্গে আমার simple logic হলো বাংলাদেশে এসে গঙ্গার নাম হয়েছে পদ্মা আর বরাক নদীর নাম হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া এখানে কেউ কোনো বাঁধ দিতে পারে না। অথচ সেখানে এই বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইন্ডিয়া এবং এক বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী যিনি বাণিজ্য ছাড়া আর সব বিষয়েই কথা বলেন তিনি এবং পররাষ্টমন্ত্রী � এরা দুজনে মিলে বলছেন আমাদের দলতো যাবে সেখানে। দল যাবে মানে কি? এটা কি পিকনিকে যাচ্ছেন তারা।
আসামে কি কোনো পিকনিক হবে? প্রবাহমান বিশাল একটা নদীর উৎস মুখে আপনারা একটি বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করছেন। আমার এই প্রাপ্য পানিটা আপনি ধরে রাখছেন। টিপাইমুখী বাঁধ থেকে বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে আপনি আবার দুইটি ব্যারেজ নির্মাণ করেছেন যাতে সামান্য যা পানি ছাড়বেন তা যেন অন্য শাখা দিয়ে চলে যায়। একটা Dam� ও পানি প্রবাহকে বন্ধ করে দিতে পারে। আর যত বেশী মেগাওয়াট উৎপন্ন করবেন ততবেশী wall-টা high করতে হবে।
আর এই যে আমাদের ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার তাকে একদিন আমার অফিসে দাওয়াত দিয়ে ও Dam ও Barrage � এর তফাৎটা একটু শিখিয়ে দিতে হবে।
আসাফউদদৌলা আরও বলেন, আপনাদের এই জাতীয় ছলাকলা ফারাক্কা থেকে তিস্তা থেকে দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। এটা কি কোনো বন্ধুরাষ্ট্রের কাজ হলো? ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে তিন কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করা হয়েছে আর এখন সিলেটের বরাক নদীর টিপাইমুখী বাঁধ দিয়ে আরো তিন কোটি মানুষকে বিপন্ন করা হবে। যাদেরকে বিপন্ন করা হচ্ছে তারাতো এই দেশেরই লোক। এদের ভালমন্দ নিয়ে কেন সরকার কোনো চিন্তা করবে না।
এটা নিয়ে কেন অন্যেরা কথা বলবেন অথচ সরকার কোনো কথা বলবেন না। এই পর্যায়ে জনৈক দর্শক ফোনে প্রশ্ন করেন, সরকারের এখন কি করা উচিত? তিনি উত্তরে বলেন, দেখুন এশিয়ান হাইওয়ে, টিপাইমুখী বাঁধ, গভীর সমুদ্রবন্দর এইগুলি হচ্ছে আমাদের সার্বজনীন সমস্যা। এইগুলি সম্বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ম্যান্ডেট জনগণ এই সরকারকে দেয় নাই। আপনি কি নির্বাচনী ইশতিহারে এইগুলির কথা লিখেছিলেন। কাজেই এইসব ব্যাপারে হয় referendum� এ যেতে হবে নতুবা জাতীয় সংসদে উন্মুক্ত আলোচনা করতে হবে।
আমাদের সমস্যা হলো আমরা গণতন্ত্রের নামে elect করি একজন রাজা বা রাণী। তিনি মনে করেন তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, পার্লামেন্টে নয়।
এরপর আরেকজন দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন ১৯৭৪ সালের ২৬ শে মে নিউ দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভি,ভি, গিরির দেওয়া এক পার্টিতে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমিও গিয়েছিলাম। সেখানে আমি মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে দুটো প্রশ্ন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, �আপনি ফারাক্কা ব্যারেজ যেভাবে চালাচ্ছেন সেভাবে কি চালাতে পারতেন যদি বাংলাদেশ এখন পূর্ব পাকিস্তানে থাকতো? উনি আমাকে ইংরেজীতে উত্তর দেন, move on to the next question. অত্যন্ত intelligent উত্তর।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো �যদি বাংলাদেশ ভারতের অংশ হতো তাহলে কি এভাবে পানি বন্ধ করতে পারতেন? উনি হেঁটে চলে গেলেন। উনার এই উত্তর না দেওয়ার মধ্যেই কিন্তু এক ধরনের উত্তর লুকিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু কি এই কাজ করতে পারে? কাজেই এখন আর নীরব থাকার সময় নয়। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে অনুরোধ করার মনোবৃত্তি বা প্রতিবাদ করার সাহস বাংলাদেশের থাকতে হবে। কারণ আমি তো ভারতের বিরুদ্ধে মিলিটারী action নিতে পারি না।
এই পদক্ষেপ গুলি যদি ব্যর্থ হয় তখন বিশ্বদরবারে যেতে হবে। ম্যাক্সিকো, ক্যানাডা অনেকেই গেছে সেখানে। কিন্তু কথা হলো আমাদের তো অনুরোধ করার মত মনোবৃত্তি বা প্রতিবাদ করার মত সাহস নেই। কাজেই এ ক্ষেত্রে আমরা নিজেদেরকে স্বাধীন বলতে পারি কিন্তু সার্বভৌম বলতে পারিনা। অকার্যকর রাষ্ট্রের তৃতীয় উপাদান হচ্ছে অর্থনীতি।
2.5 GDP হচ্ছে tremendously high figure তার উপর এডিপির মাত্র 50% বাস্তবায়ন, গার্মেন্টস সেক্টরে অশান্তি, বিশ্বমন্দা সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতি খুব একটা prosperous না।
সরকারের চারমাসের ভালমন্দ কাজকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? উত্তরে আসাফউদদৌলা বলেন, দেখুন রাষ্ট্র সুন্দরভাবে ও সঠিকভাবে পরিচালিত না করার কতগুলি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে � জুট ধ্বংস হয়ে যাওয়া, গার্মেন্টস সেক্টরে অশান্তি বৃদ্ধি, এডিপির 50% বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক অস্থিরতা, জনমনে বিদ্যুৎ গ্যাস পানি এবং ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে অশান্তি, আইনের শাসনের অভাব ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানের কোন ইঙ্গিত আমরা এখনও পর্যন্ত এই চার মাসে পাই নাই। একটি ভাল সরকারের sign হচ্ছে সুসমন্বয়। এই মন্ত্রীসভার নতুন ও অনভিজ্ঞ সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে।
এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে কাজেই দেখেন এখন তাদের দলের কেইসগুলি সব solve হয়ে যাচ্ছে আর বিরোধী দলের কেইসগুলি আরো জোরদার হচ্ছে। BDR- এর দুটো রিপোর্ট নিয়ে মানুষ সন্তুষ্ট নয় কিন্তু সরকার সন্তুষ্ট। এতোদিন পার করার পর এই ধরনের রিপোর্ট কোনো রিপোর্টই নয়। BDR - এর মহাপরিচালক চাকরী বজায় রাখতে আর সরকারকে খুশী রাখতে কি বোঝান তা আমি জানি না তবে আমরা এখন worried অরক্ষিত সীমানা নিয়ে।
দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে আমরা কিভাবে উত্তরণ করবো � উপস্থাপকের এই প্রশ্নের উত্তরে আসাফউদদৌলা বলেন, আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ না হয়ে ৯ বছরের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলে বোধ হয় আমরা দারুণ দেশপ্রেমিক হতাম।
কবিতা লিখে আর গান গেয়ে আমরা যে দেশপ্রেম দেখাচ্ছি সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা সেই দেশপ্রেম দেখাতে পারছি না। শুধু গান গেয়ে আর কবিতা লিখে একটা দেশের স্বাধীনতাকে ধরে রাখা যায় না। একে ধরে রাখতে হলে যারা রাজনীতিতে আছেন তাদের মধ্যে অকাট্য দেশপ্রেম ,অটুট ন্যয়নিষ্ঠতা, এই দেশের স্বাধীনতায় যে রক্ত ঝরেছে তার প্রতি দায়বদ্ধতা, এই দেশের মানুষের চোখের পানির প্রতি দায়বদ্ধতা, এই দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। কিন্তু আমি এখনও পূর্ণাঙ্গ দেশপ্রেমে আপ্লুত সেরকম সরকার দেখি নাই যেই সরকার সমস্ত মানুষের ঐক্যকে সংগঠিত করে তাদেরকে বুকে টেনে ধরবে। ইনি আসেন তো প্রতিহিংসায় উনার পিছনে লাগেন।
আবার উনি আসেনতো ইনার পিছনে লাগেন। এইভাবে প্রতিহিংসার আগুনে দেশকে বিভক্ত করলে লাভবান হবে আপনার শত্রু, বন্ধু নয়। এতো কথা বলার পর সেই শত্রুটি কে আশা করি তা আমাকে নতুন করে বলে বোঝাতে হবে না। আমরা ৭১ সালে এক অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো অত্যাচারের অধীনে যাবার জন্য নয়।
ধন্যবাদ আসাফউদদৌলা সাহেবকে।
আপনার মত সাহস করে এবং স্পষ্ট করে সত্যি কথা বলার মত মানুষ এ দেশে যদি আরো থাকতো তাহলে হয়তো এ দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে যেতো।
লিংকটিও দেওয়া হোল। অকার্যকর রাস্ট্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।