আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরে দেখা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি-১৯৭৪

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
রাজ্যসভায় স্থল সীমানা চুক্তি উত্থাপন করতে এবারও ভারতীয় ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার ব্যর্থ হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে। শুধু তৃণমূল নয় আসামের অসম গণপরিষদের বিরোধিতায় সোচ্চার। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বললেন, 'ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেছেন বিয়ে তো হয়ে গেছে। শুধু ছবিটা তোলা হয়নি।

দুই প্রধানমন্ত্রীর করা চুক্তিতো আর বাতিল হয়ে যাবে না। ' পররাষ্ট্র উপদেষ্টার না জানার কথা নয়_ এ বিয়েটা ১৯৭৪ এ-ই হয়েছিল। তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ মে ১৯৭৪ ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমানা চুক্তি সাড়ম্বরে সই করেছিলেন কিন্তু ৪২ বছরেও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ কনেকে উঠিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। ২০১৩-তে এসে না হয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় সীমান্ত বিল ভারতের রাজ্যসভায় উত্থাপন করা গেল না।

কিন্তু ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভারত যখন প্রস্তাব দিয়েছিল মাঠপর্যায়ে সব কাজ শেষ করে যতদ্রুত সম্ভব চুক্তি বাস্তবায়ন করতে তখন কেন বিলম্ব হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনীহার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ছিটমহলবাসী আর অপদখলীয় এলাকায় বসবাসরত লোকজনের দুর্ভোগের সমাপ্তির দীর্ঘদিনের লালিত প্রত্যাশা। আর তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি প্রশ্ন তুলছে এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ১০ হাজার একরের মতো ভূমি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তারা তা মেনে নিতে পারে না। ১৯৭৪-এ যখন দুই প্রধানমন্ত্রী স্থল সীমানা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তখনো ভূমির পরিমাণ এ রকমই ছিল। তখন তো প্রশ্ন ওঠেনি।

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে তিস্তা চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য। ফিরে তাকানো যাক ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের সরকার সময়কালীন ঘটনাপ্রবহের দিকে। ১৯৯২-এ ভারত সরকার প্রস্তাব দিয়েছিল ছিটমহল ও অপদখলীয় এলাকার পরিমাপ করে একসঙ্গে পুরো চুক্তিটি রেটিফিকেশনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে যাতে তোলা যায় তার ব্যবস্থা করে নিতে। বাংলাদেশের তখনকার সরকার বলেছিল ছিটমহল অপদখলীয় এলাকা পরিমাপ করার কোন প্রয়োজন নেই। অযথা সমস্যা বাড়বে।

প্রশ্ন তোলা হয় স্থল সীমানা চুক্তি ১৯৭৪ বাংলাদেশ অনেক আগেই অর্থাৎ '৭৪ সালে রেটিফাই করা সত্ত্বেও ভারত তখন পর্যন্ত রেটিফাই করেনি। রেটিফাই না করা পর্যন্ত পরিমাপ করার কোন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯৬-এর শেষের দিকেই স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ জোরেশোরে শুরু করা হয়। মাঠপর্যায়ে তখন কাজ বাকি ছিল মাত্র ৬.৫০ কিলোমিটার, সীমানা লাইন চিহ্নিতকরণ, সিংপাড়া, খুদিপাড়া, বেরুবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত অপদখলীয় এলাকার ৩৫ কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য পরিমাপ করা, ছিটমহল ও অপদখলীয় এলাকা বিনিময়ের জন্য পরিমাপ ও চূড়ান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করা। মজার ব্যাপার হলো ১৯৯৬-এ অচিহ্নিত সীমানার মাত্র ৬.৫০ কিমি. সীমানা লাইন চিহ্নিত করার মাঠপর্যায়ে কাজ বাকি ছিল।

তার মধ্যে ১.৫ কিমি. দইখাতা মৌজায় ৩.০০ কিমি. লাঠি টিলায় এবং ২ কিলোমিটার ফেনী মুহুরী নদীতে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ২.০০ কিমি. সীমানা ছাড়া বাকি ৪.৫০ কিমি. ব্যাপারে মোটামুটি উভয়পক্ষই সম্মত ছিল সীমানা নির্ধারণে। ২.০০ কিমি. নদী সীমানা মুহুরী নদীর মধ্য স্রোত বরাবর চিহ্নিত হবে এ কথা চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বিভিন্ন অজুহাতে এই ২.০০ কিমি. সীমানা চিহ্নিতকরণে গড়িমসি করেন। এমনও বলা হয়, ফেনী নদী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা_ এখানে ভারতকে কোন ছাড় দিলে রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। ২.০০ কিমি. মুহুরী নদীর সীমানা ভারতের বিলুনিয়া শহর সংলগ্ন।

মুহুরী নদী বিলুনিয়া এলাকায় রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী পুরোটাই তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ ভূখ-ের মধ্যে পড়ে। পাকিস্তানের ২৪ বছর এই ২.০০ কিমি. সীমানা লাইন চিহ্নিত করা যায়নি ভারতীয় বিরোধিতার কারণে। অনেকবার এখানে ২ পক্ষের গুলিবিনিময়ও হয়েছে। ভারতের যুক্তি ছিল নদী তীরে অবস্থিত বিলুনিয়া শহরের মানুষের যাতে নদীতে প্রবেশাধিকার থাকে এবং নদীর পাড়ে গড়ে উঠা শ্মশানঘাটে যাতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়_ মানবিক এ সুযোগ রেখে যেন সীমানা চিহ্নিত করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ শুজিবুর রহমান এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে অনুষ্ঠিত সামিট বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপিত হলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যদিও এ এলাকায় রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী পুরো মুহুরী নদী বাংলাদেশের ভূখ-ে পড়ে যায় তথাপি বেলুনিয়া শহরের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে বেলুনিয়া সেক্টরে ২ কিলোমিটার নদী সীমানা চুক্তি সইকালীন সময়ে নদীর মধ্য স্রোত বরাবর চিহ্নিত হবে।

'৯৬-এ এসে যখন চুক্তি বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলল_ ৬.০০ কিমি. অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিতকরণ নিয়ে যখন বৈঠক বসল, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ৩টি মোক্ষম প্রশ্ন তুললেন_১। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে স্থল সীমানা চুক্তি রেটিফাই করেছে_ ভারত এখনও রেটিফাই করেনি। তাই চুক্তি রেটিফাই না করা পর্যন্ত সীমানা চিহ্নিতকরণে কোন কাজ হাতে নেয়া যাবে না। ২। মুহুরী নদী বিলুনিয়া সেক্টরে ২ কিলোমিটার সীমানা নদীর মধ্য স্রোত বরাবর চিহ্নিত করার কথা চুক্তিতে থাকলেও কোন পয়েন্ট থেকে তা শুরু হবে_ কোন পয়েন্টে শেষ হবে তা লেখা নেই।

এ বিষয়টি আগে ফয়সালা করতে হবে। ৩। অপদখলীয় এলাকা স্ব-স্ব দেশের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ রেডক্লিপ রোয়েদাদ অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিত হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বুঝাতে চেষ্টা করেছে মাঠপর্যায়ে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি রেটিফিকেশনের জন্য পার্লামেন্টে তোলা যাবে না।

মাঠপর্যায়ে কাজ যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে ভারতীয় পার্লামেন্টে তত তাড়াতাড়ি চুক্তিটি রেটিফাই করা সম্ভব হবে। নদী সীমানার ব্যাপারে তারা চুক্তিতে যে সিদ্ধান্ত আছে তাই তুলে ধরলো এখানে কোন পয়েন্ট থেকে শুরু হবে কোথায় শেষ হবে তাদের ভাষায় প্রশ্নটি ছিল অবান্তর। কারণ চুক্তিতে বিলুনিয়া সেক্টর নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে নতুন করে বলার কিছু নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় মিটিং হয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অবস্থান পরিবর্তন করা যায়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় কি জানেন '৯৬-৯৭ এ ভারত লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল।

মৌখিকভাবেও বারবার অনুরোধ করেছিল মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি যেভাবে আছে_ পরিবর্তন না করে মাঠপর্যায়ে কাজ শেষ করে নিতে যাতে ভারতীয় পাল্টামেন্টে চুক্তি রেটিফাই করার জন্য উপস্থাপন করা যায়। ৬.৫০ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা কেন চিহ্নিত করা গেল না_ ২০১১ তে এসে যা করতে কোন অসুবিধাই হলো না? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি পুরনো নথি ঘেঁটে দেখবে '৯৭-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়া পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব কে কে ছিলেন_ স্থল সীমানা চুক্তির মাঠপর্যায়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে ছিলেন? বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের এলোকেশন অফ বিজনেসে থাকা সত্ত্বেও কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (রাজনৈতিক) বাংলাদেশ পক্ষে দলনেতা করা হয়? ২০০০-০১-এর দিকে ভারত-বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সভায় অহেতুক বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত কেন করা হয়েছিল ভারতের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও? কেন দু-দুটি বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয় স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের ম্যাথডলজি ঠিক করার জন্য?'৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দুই দেশের যে সভাগুলো হয়েছে তা মিনিট্স দেখলে দেখা যাবে ভারত বারবার বলছে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি হুবহু বাস্তবায়ন ছাড়া তাদের পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। অথচ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ৬.৫০ কিমি. অচিহ্নিত সীমানার মধ্যে মুহুরী নদীর ২ কিমি. সীমানা চিহ্নিতকরণ নিয়ে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাইরে কত রকমের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার একটিও উল্টিয়ে দেখার প্রয়োজন হয়নি ২০১১-তে ড. মনমোহন সিং-শেখ হাসিনা প্রটোকল স্বাক্ষরের সময়। ৪১৭ কিলোমিটার বিরোধপূর্ণ সীমানার মধ্যে ৪১০.৫০ কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করা গেল_ সীমানা পিলার বসানো গেল_ স্ট্রিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা গেল_ ভারত চুক্তি রেটিফাই করেনি বলে তা আটকে থাকেনি_ ৬.৫০ কিমি. বেলায় কেন রেটিফিকিশেনের প্রশ্ন তুলে চুক্তি বাস্তবায়ন আটকিয়ে দেয়া হলো? '৯৬-২০০১ ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব যিনি পালন করেন তার জ্ঞান-গরিমা সম্বন্ধে মন্তব্য না করাই ভালো। তিনি এখন প্রয়াত।

সচিবের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের একজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় স্বরাষ্ট্র সচিব হিসাবে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন_ পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নূন-নেহেরু এগ্রিমেন্ট ১৯৫৮ ভারতীয় সংসদ রেটিফাই করেছে, সুতরাং মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ১৯৭৪ রেটিফাই করার দরকার নেই এরকম অকূটনৈতিক সুলভ প্রস্তাবও সভায় তোলা হয়, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি। এখনও অনেকে লিখেন [ডেইলি স্টার ২৬.০৮.২০১৩] নূন-নেহেরু চুক্তি ১৯৫৮ ভারতীয় সংসদ কর্তৃক রেটিফাই করায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ১৯৭৪ রেটিফাই করার প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ভারত চুক্তি রেটিফাই করার নামে বাস্তবায়ন বিলম্বিত করে। করুণা হয় এ রকম বুদ্ধিজীবী আর কলাম লেখকের জন্য যারা ভারত বিরোধিতার নামে নিজের দেশের স্বার্থও বিকিয়ে দিতে পিছ পা হন না। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি যদি রেটিফাই নাই করতে হতো ২০১৩-তে কেন রেটিফিকেশনের জন্য বাংলাদেশ তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় আছে।

৪২ বছরের কুকর্মের ফিরিস্তি তো তাই দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। ছিটমহল ও অপদখলীয় এলাকা বিনিময় নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস আজ যে অতিরিক্ত ভূমি বাংলাদেশ পেয়ে যাচ্ছে বলে চুক্তি বাস্তবায়নে অসম্মতি প্রকাশ করছে_ '৯৬-২০০১ এ পরিসংখ্যানটি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনে শুধুমাত্র ছিটমহল বিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছিল। আজ এ পরিসংখ্যানই মমতা ব্যানার্জি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। পাকিস্তান-ভারত সীমানা মি. রেডক্লিফ নির্ধারণ করেন। তখন সীমানা ঘেঁষে কিছু কিছু অপদখলীয় এলাকা সৃষ্টি হয় ঐতিহাসিক কারণে।

কিছু এলাকায় ভারতীয় লোকজন পড়ে যায় বাংলাদেশ ভূখ-ের মধ্যে_ আবার পূর্ব পাকিস্তানের কিছু এলাকার জনগণ পড়ে যায় ভারতীয় ভূখ-ের মধ্যে। রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী কিছু ভূমি ভারতের সীমানার ভিতরে অথচ এ ভূমি দখলে আছে পাকিস্তানি জনগণের। কিছু জমি পাকিস্তান সীমানার ভিতরে আছে, দখলে আছে ভারতীয় লোকজন। এ দখল এভাবেই থেকে যায় পাকিস্তানে ২৪ বছর। এটাই অপদখল।

আবার কিছু কিছু ছিটমহল আছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যার মালিকানা ভারতের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভিতরে কিছু ছিটমহল আছে যার মালিকানা বাংলাদেশের। এরকম ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আছে, যার আয়তন ১৭১৫৮.১৩ একর। ভারতের ভিতরে বাংলাদেশের ছিটমহাল আছে ৫১টি। যার আয়তন ৭১১০ একর।

মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হলো। বাংলাদেশের ভিতরে ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাবে_ পশ্চিমবঙ্গের ভিতরে ছিটমহালবাসী ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে। জমির পরিমাণ নিয়ে বলা হয় জমি বেশি বা কম এর জন্য কোন ক্ষতিপূরণ কোন দেশ দাবি করবে না। ছিটমহল এবং অপদখলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষ যারা পূর্বপুরুষের কাল হতে বসবাস করে আসছে ব্যক্তি হিসাবে জমির মালিকানা তাদের। রাষ্ট্র আলাদা হয়ে গেছে বিধায় তাদের উচ্ছেদ করে ১৯৭৪-এ আবার '৪৭-এর মতো উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করে মানুষগুলোকে অমানবেতর অনিশ্চিত জীবন-যাপনের দিকে ঠেলে না দেয়ার জন্যই চুক্তি করা হয়, যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, শুধু মালিকানা বিনিময় হয়ে যাবে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে।

এ কারণেই অতিরিক্ত জমির জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের প্রয়োজন হয়নি। বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন আমলা এ সুন্দর ব্যবস্থাকে ভ-ুল করে দেয় '৯৬-২০০১-এ সরকারকে বিভিন্ন কুপরামর্শ দিয়ে। ১৯৯৬-০১-এ চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের একশ্রেণীর আমলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুযোগ করে দিয়েছে সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে অচল অবস্থা সৃষ্টি করতে। যতক্ষণ পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত কোন ভুল সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য অবসরে যাওয়ার পরে আমলাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা না হবে ততদিন আওয়ামী লীগের আমলারা বিএনপি সরকারের সময় ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করবে_ বিএনপির আমলারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও একই কাজ করবেন। শুধু মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নয় একশ্রেণীর আমলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং সংক্রান্ত আইন ১৯৭২, জটিলতা সৃষ্টি করে তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে শত্রু সম্পত্তি রহিতকরণ আইন ১৯৭৪।

অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নেও। প্রার্থনা করি আমাদের রাজনীতিবিদরা আরও সচেতন হবেন। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি, শত্রু সম্পত্তি আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ইত্যাদি যাতে চুক্তি অনুযায়ী বাস্তবায়ন ও নিষ্পন্ন হয় আমলারা যাতে কোন বাদ সাধতে না পারে এদিকে রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি থাকবে। সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.