২০০৭ এর সিডরের স্মৃতি মুছতে না মুছতেই ২০০৮ নার্গিসের হুমকি! তাও ভাল যে নার্গিস শুধু ঝাড়ি দিয়েই ভাগছে। না হলে এই আইলার তান্ডবে সব আউলা ঝাউলা হয়ে যেত। মানুষের নিরন্তর দুঃখ দেখে খোদ আইলাও সহ্য করতে পারত না। তারপরও কি কিছু আছে, কিছু কি রেখছে? উপকূলের সবই তো আইলা রাক্ষসের মত গ্রাস করেছে।
আইলা তুমি ক্যান আইলা?
গত ২৫ মে ২০০৯ দুপুর ১২ টার দিকে আকস্মিকভাবে এই যম আইলা বাংলাদেশের উপকূলীয় ১০ টি জেলায় আঘাত হানে যার গতি বেগ ছিল ৮০-৯০ কিঃমিঃ।
প্রাথমিকভাবে যে ক্ষয়-ক্ষতি ধারণা করা হচ্ছিল পরবর্তীতে তা বেড়ে কয়েকগুন হয়ে যায়। ঘর বাড়ি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন, মাথা গোজেন খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্ধাহারে। ত্রাণের জন্য তাতক্ষনিক অনেকেই উদ্যোগ নিলেও পৌছাতে পৌছাতে অনেকের কাম সারা, বলা যায় মরণ দসা। বিশেষকরে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের অবস্থা ছিল বর্ননাতীত যা কেবল ভুক্তভুগীরাই উপলব্দি করতে সক্ষম হযেছেন। আমার কথা তা নয়, কারণ সিডর-নার্গিস-আইলা এক একটা যমের নাম যার সম্পর্কে আমরা সবাই মোটামুটি অবগত হয়েছি এবং এর ক্ষয় ক্ষতি ও তান্ডব সম্পর্কেও জেনেছি।
কিন্তু সামনে যেগুলো আসবে তারপর কি হবে?
দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে নজর দেয়া যাক:
আমরা যদি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে একটু নজর দেই তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশ কেন সারা পৃথিবীর মধ্যে এ অঞ্চল ঝুকিপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা সামান্য ঝড়ে, সামান্য পানির তোড়ে এবং সামান্য বৃষ্টিতেও এই এলাকার মানুষ বিপন্ন হয়, যেটা আমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে। সিডর-আইলা'র কথা বাদ দিলাম আমরা যদি ২০০০ সালের বন্যার ছোবল থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মরণ বাধের দিকে অলাভজনক এবং নেক নজরে তাকাতাম তাহলে ২০০৪ উচু জোয়ারের খুলনার কয়রা, বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন উপজেলা পানিতে নিমজ্জিত হতোনা। আমরা যদি দেখি দক্ষিণের অধিকাংশ বন্যা এবং বিপন্নতা'র জন্য দায়ী পাউবোর মরণ বাধ। কেন, সম্প্রতি (২০০৮) কপোতাক্ষের আশপাশে যে বন্যা হয়ে গেলো তারওতো একই কারণ ছিল।
এবারের আইলার কথাও যদি আমরা বিচার করি তাহলেও দেখা যাবে বাধ ভাঙ্গার কারণে এলাকার বিশাল ক্ষতি হলো। কিছুদিন আগে যখন ৬নং কয়রার সীমান্তে দাড়িয়ে সুন্দরবনের প্রাকৃকিত শোভা দেখছিলাম, বেশকিছু স্থানীয় লোককে দেখতে পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি? সমস্বরে সবাই বললেন "আপনি যে বাধের উপর দাড়িয়ে ঐ জঙ্গল দেখতিছেন এইটা" কেন? জিজ্ঞেস করতেই উত্তর পেলাম, সামান্য জোয়ারে এই বাধ ভেঙ্গে যায়, আর বাধ ভেঙ্গে পানি একবার ঢুকে পড়লে তাদের সর্বস্ব বিলীন হয়। যার বাস্তবতা আমরা আইলা'র আঘাতের সময় দেখতে পেলাম। শুধুমাত্র বেড়িবাধগুলো যদি মজবুত করে তৈরী করা যেত তাহলে যে কোন বন্যা জলোচ্ছ্বাস ঘুর্ণিঝড় থেকে মানুষের ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসত।
আর ছোটখাট বন্যায় তেমন ক্ষতি হতোনা বললেই চলে।
মাঝে মাঝে অবাক হই:
সত্যিই অবাক হওয়ার বিষয় যে, আমরা একটা ভাল বাধ তৈরী পর্যন্ত করতে পারিনা। আমরা না হয় বিজ্ঞান বুঝিনা কিন্তু আমাদের দেশে এত এত বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী তারাওকি পারেন না? নাকি যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরই অবহেলা? নাকি ভাল করে বাধ দিলে কারো টাকার বস্তায়ও বাধ পড়ে যাবে? কারণ যত ভাঙ্গবে তত আসবে এইতো চলছে আমাদের দেশে। তাহলে এই ঝুকিপুর্ণ দূর্গত মানুষদের নিয়ে কারা ভাববে? আমাদের সরকারকি ঝুকিমুক্ত বাধ তৈরী করতে চানানা, অবশ্যই চান। সরকারের কি অঢেল টাকা ছড়াতে প্রতিনিয়ত ইচ্ছে হয়, মোটেই না।
তাহলে কেন এমন হবে?
শিক্ষা নিতে হবে অতীত থেকে:
আমরা কেউই অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চাই না, কারণ আমরা সবাই শিক্ষক। যার কারণে দেশের বড় বড় ক্ষতি গুলো হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুর্যোগগুলো থেকে আমরা তেমন কোন শিক্ষা নিচ্ছিনা। নিলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত হতো, উদ্ধার কার্যক্রমগুলো তড়িত হতো, ত্রাণগুলোর সুসম বন্টন হতো, তথ্য আদান প্রদানের ও সতর্ক সংকেতের ব্যাপারটা ভাল হতো, সবসময় ঝুকি মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকতো, সর্বোপরি বাধগুলোর একটা সুরাহা হতো।
কি করা দরকার:
১. আন্তর্জাতিক অঙ্গন/সংগঠন থেকে আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে যারা ত্রাণ ততপরাতা চালাচ্ছেন তাদের উচিত হবে স্থানীয় ব্যক্তি/সংগঠনসমূহের মাধ্যমে সেগুলো করা;
২. এই মহুর্তে পর্যাপ্ত চিকিতসা সেবার ব্যবস্থা রাখা, ইতিমধ্যে বিরাট সংখ্যক নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন;
৩. পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত সাহায্য অব্যাহত রাখা
৪. পরবর্তীতে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর সুব্যবস্থা করা
৫. আগামী সিজনে দূর্গতদের মাঝে ফ্রি সার বিজ প্রদান করা
৬. ঝুকিপূর্ণ বাধগলো উচূ এবং মজবুত করে গড়ে তোলা
৭. আশ্রয়কেন্দ্র'র সংখ্যা বাড়ানো
৮. উদ্ধার ততপরতা বৃদ্ধিসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা
৯. বিপদ সংকেতগুলো পৌছানোর দ্রুত ব্যবস্থা করা এবং বিপদের আগেই তাদেরকে সরিয়ে ফেলা
১০. ঝুকি্ মোকাবেলায় আরো ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করা
১১. সকল কাজের সঠিক তদারকি ও জবাবদিহিতি নিশ্চিত করা
আমার মনে হয় উপরোক্ত কাজগুলো করতে পারলে সিডর আইলা বা নার্গিসের হাত থেকে অনেক ক্ষতি কমিয়ে বেচে থাকা যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।