জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
০১.
আমাদের মহল্লার মোড়ে একটা হারবাল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গজিয়েছে। নাম কবিরাজ ঘর মাদ্রাজ। তিনি কেবল গোপন চিকিৎসা করে থাকেন।
ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে তার চেম্বারের দিকে চোখ চলে যায়। দেখি, এক ভদ্রলোক একা বসে আছেন।
কোন লোকজন আশেপাশে নাই। তারপর দিন কাটতে লাগল। দেখি, ভদ্রলোক একাই বসে আছেন। একদিন সময় সুযোগ করে উৎসুক মন নিয়ে ঢুকে পড়লাম ওখানে। ঢুকে তার কাছে আমার পরিচয় দিলাম না, মানে রিস্ক নিলাম না।
শুনেছি, এদের কাছে নাম বলাও নাকি রিস্কি। পরে নাম ধরে বলে পাঠায়, আপনার গোপন রোগ আছে আমি জানি, পত্রিকায় দিয়া দেব আপনার রোগের বর্ণনা।
যাই হোক, নিতান্ত ভালো মানুষের মতো তার সামনে গিয়া বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা ডায়াবেটিকের চিকিৎসা করেন। "
ভদ্রলোক বললেন, না।
"
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা হার্ট এটাক হলে চিকিৎসা করেন ?
ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন, না, ক্যান বলেন তো ? "
আমি কাচুমাচু হয়ে জানতে চাইলাম, আপনারা কি কেবল গোপন রোগের চিকিৎসাই করেন ?
ভদ্রলোক চড়া গলায় জানতে চাইলেন, আপনার কি রোগ ?
আমি নিরীহ গলায় বললাম, আমার কোন রোগ নাই।
তিনি জানতে চাইলেন, তাইলে এইখানে আইসেন ক্যান ?
এমনি আপনাদের সম্পর্কে জানতে এলাম।
আমরা কি কি চিকিৎসা তা আমাদের লিফলেটে লেখা আছে। লিফলেট নিয়া যান।
আমি লিফলেট নিয়ে বের হয়ে এলাম।
লিফলেটে যেসব বর্ণনা আছে তা এখানে লিখলে মডুরা মাইন্ড খাইবে এটা নিশ্চিত। ভদ্র সমাজে বলার মতো না।
০২.
আমার এক বন্ধু একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক। তার পত্রিকায় এক হারবাল সেন্টারের বিজ্ঞাপন যায়। সেই বিজ্ঞাপনের ভাষাও ভয়াবহ।
আমার সম্পাদক বন্ধুকে অনেকবার বলেছি, এই সব কেন ছাপান ভাই ?
সম্পাদক সাহেব বলেন, পয়সা দেয়া তাই ছাপাই।
আমি জিজ্ঞাসা করি, এই সব আজেবাজে জিনিস কি ছাপানো ঠিক ?
সম্পাদক সাহেব রাখঢাক না করেই বলেন, আমার কি ? আমি পয়সা পাই, তাই ছাপাই।
তারপর আমি আর কথা বাড়াই না। তার মতো জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ মানুষকে বোঝানোর সাধ্য আমার নাই।
তবে একদিন ঘটনাচক্রে সেই পত্রিকা অফিসে হারবাল চিকিৎসককে পেয়ে গেলাম।
কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কেবল গোপন চিকিৎসা কেন করেন ?
তিনি মুচকি হাসলেন, বললেন, ভাই, ওইটাতে লাভ বেশি।
আমি আবারও জানতে চাইলাম, আপনাদের চিকিৎসায় কি রোগ ভালো হয় ?
সেইটা তো আল্লাহর হাতে। আমরা তো উসিলা।
আমি তাকে চেপে ধরলাম, মানুষের তো আরও অনেক অনেক রোগ হয়, সেগুলোর চিকিৎসা কি হারবাল পদ্ধতিতে হয় না ?
তিনি জানালেন, হয়, তবে করি না। কারণ অন্য চিকিৎসায় লাভ নাই।
আমি বললাম, চিকিৎসা তো কেবল ব্যবসা নয়, এটা তো মানব সেবা। তাহলে কেবল ব্যবসার চিন্তা করা কি ঠিক ?
তিনি তাচ্ছিল্য করে বললেন, ওই সব কিতাবি কথা কয়া লাভ নাই। আমরা ব্যবসা ছাড়া কিছু বুঝি না।
০৩.
ঢাকা শহরের প্রতিটি বাসে উঠলে দেখা যাবে এই সব হারবাল প্রতিষ্ঠানের কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন। সবার সামনে এই ধরনের বিজ্ঞাপন থাকাটাও আমাদের জন্য লজ্জার।
আর ট্রাফিক সিগনেলের সামনে লিফলেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক বোরকা পরা মহিলা বা অল্প বয়স্ক পুরুষ । সুযোগ পেলেই গাড়িতে ছুড়ে দিচ্ছে অকথ্য ভাষার এ সব লিফলেট। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের নোংরা বিজ্ঞাপন। তাদের বিজ্ঞাপন পড়লে মনে হয় হারবাল চিকিৎসার উৎপত্তি কেবল গোপন রোগের জন্যই। আর বাংলাদেশের মানুষের প্রধান সমস্যা গোপন রোগ।
০৪.
আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা অনিয়ম ও প্রতারণা আছে। তার সাথে এই সব হারবাল চিকিৎসার নামে কতগুলো প্রতারক সাধারণ অসহায় মানুষের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চিকিৎসা তো হচ্ছেই না বরং সাধারণ মানুষ হচ্ছে হয়রানির শিকার। এই সব লোকের সাথে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীরও হাত রয়েছে। তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর কেউ যদি টাকা ফেরত চায়, তাকে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দেয় তারা।
আবার কাউকে কাউকে গোপন রোগের কথা পত্রিকায় প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখায়। ফলে অসহায় প্রতারিত লোকজন আর কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।