ভারতের আসাম রাজ্যে টিপাইমুখ ড্যাম নির্মিত হলে বাংলাদেশ ক্ষতির শিকার হবে। ভারত যদি শুধু ড্যাম এবং রিজার্ভার নির্মাণ করে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি হবে জলাবদ্ধতার কারণে। আর ড্যাম এবং রিজার্ভারের সঙ্গে যদি ভারত ব্যারাজ তৈরি করে তবে ক্ষয়ক্ষতি হবে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে।
বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড.আইনুন নিশাত বলেন, শব্দটা আমি ড্যাম ব্যবহার করছি, বাঁধ নয়। বাঁধের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Enbankment।
বাঁধ হচ্ছে নদীর সমান্তরাল একটা স্ট্রাকচার, আর ড্যাম হচ্ছে একটা নদীর আড়াআড়ি স্ট্রাকচার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ক্ষতির ধরনটা বুঝতে পারবো তখন, যখন ভারত প্রকৃত অর্থে কী করছে তার তথ্য উপাত্ত পাবো। সেটার জন্য দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বসে তথ্যের আদান প্রদান হওয়া উচিৎ। এই ড্যাম ভারত তাদের পরিবেশের প্রভাব সংক্রান্ত সমীক্ষা চালিয়েই নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করি। আমার ধারণা তা সম্পূর্ণভাবে হয়নি।
কারণ যে কোনো ধরনের পরিবেশের প্রভাব বিষয়ক সমীক্ষা করতে গেলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া কতদুর গিয়ে পড়বে সে হিসাবটাও করতে হবে। সে হিসাব যদি সীমান্তে এসে থেমে যায় তাহলে তো হবে না। তাই পরিবেশের প্রভাব সংক্রান্ত সমীক্ষা আন্তর্জান্তিক মান সম্পন্ন হওয়া উচিৎ। আমরা যে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছি, সরকারের উচিৎ হবে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বসে তা নিরূপন করা।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ড্যামের সঙ্গে একটা করে স্পিলওয়ে থাকে যেমন আছে আমাদের কাপ্তাইয়ে।
এটি হলো বর্ষায় যদি বেশি পানি আসে তা ছেড়ে দেয়ার পদ্ধতি। আমাদের কাপ্তাইতে ড্যাম আছে- কর্ণফুলীর পানি ধরে রাখে। একইভাবে টিপাইমুখ ড্যাম কাপ্তাই থেকে বড় আকৃতির হলেও মূলত দেখতে একই রকম হবে, সামনে বিরাট একটা জলাধার থাকবে। এটি হলে তিনটা ঘটনা ঘটবে।
প্রথমত, বর্ষার প্রথম দিকে পানির পরিমান কিছুটা কমে যাবে।
দ্বিতীয়ত, বর্ষার শেষের দিকে যখন জলাধারটা কানায় কানায় পূর্ণ, তখন যদি কোনো কারণে স্পিলওয়ে খুলতে হয়, তাহলে বর্ষার শেষে ভারি বন্যার প্রকোপটা বাড়বে। তৃতীয়ত, শীতকালে পানির পরিমানটা বেড়ে যাবে। এখন শীতের মৌসুমে যে পরিমান পানি আছে, তার থেকে পানি বেশি হবে। কারণ বর্ষার অতিরিক্ত পানি সারাবছর সমানভাবে ছাড়তে গেলে দেখা যাবে শীতকালে পানির স্তরটা বেড়ে গেছে। জলাধারে পানির স্তরটা বাড়লে নদীতেও পানির স্তরটা বাড়বে।
যেমন কাপ্তাইতে যেখানে হালদা নদী এসে পড়েছে সেখানে উজানে ৬২ সনের আগে হাটুতো দুরের কথা গোড়ালি পরিমান পানি ছিল। এখন একটা লঞ্চ নিয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত যাওয়া যায়। টিপাইমুখেও সেই ঘটনা ঘটবে, পানির উচ্চতাটা অনেক বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ, ক্ষতির কারণ। কারণ প্রথমত, ওই পাহাড়ি নদীটা এসে যখন আমাদের সুরমা কুশিয়ারা ভ্যালিতে প্রবেশ করবে তখন হাওর অঞ্চলের পানি নেমে যাওয়া কমে যাবে, বোরো ধান উৎপাদন কমে যাবে, কমে যাবে ধানী জমির পরিমান, খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
এটা যদি শুধুমাত্র ড্যাম, রিজার্ভার, জলাধার এবং স্পিলওয়ে অর্থাৎ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজটা করে তবেই এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটবে আমাদের দেশের।
এগুলো সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় যেটি হতে পারে তা হলো ব্যারাজ। ব্যারাজে জলাধার নির্মাণ হয় না, ব্যারাজের কাজ হচ্ছে শীতকালে যখন নদীর পানি নিচে নেমে যাচ্ছে সেটাকে উপরে তোলা। নদীর সেই পানি একটা ক্যানেলের মাধ্যমে ডাইভার্ট করা হয়। ওই ক্যানেলের ক্যাপাসিটির উপরে নির্ভর করে কতোটা পানি ডাইভার্ট হচ্ছে।
টিপাইমুখের এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমি জানি না। বাংলাদেশ সরকারকেই এ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যদি ভারতের প্রকৌশলী এমন ক্যাপাসিটির ক্যানেল তৈরি করলেন যেখানে বরাকের পুরো পানিই তারা নিয়ে নিলেন, তাহলে তখন আমাদের সুরমা কুশিয়ারা শুকিয়ে যাবে। এটি না করে যদি অর্ধেক পানি নেয়, তখন আমরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখে বুঝতে পারবো।
সূত্রঃ Click This Link
পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ার ছবি ব্লগ (ভবিষ্যতের টিপাইমুখ বাঁধ এর পরিণতি কী হবে তার সামান্য চিত্র) : ( সৌজন্যেঃ শামসীরের ব্লগ)
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।