গত ২৮ মে ২০০৯ দেমের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র মাঝারী কৃষক, ক্ষেতমুজুর ঢাকার প্রাণ কেণ্দ্র মুক্তাঙ্গনে সমবেত হয়েছিল নিজেদের দুঃখ দুর্দশা আর বঞ্চনা কথা জানাতে। বিশেষজ্ঞ আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, `বিশ্ব মন্দার কবলে যখন বিশ্বের তাবৎ দন্ডমুন্ডের কর্তারা ধরাশীল , তখন দেশের উপরতালার মানুষদের সকল শংকা মিথ্যা প্রমান করে বাংরাদেশের অর্থনীতি যে তার সদা নাজুক কাঠামো নিয়ে প্রায় আগে অবস্থায় টিকে রয়েছে , তা পিছনে রয়েছে এ দেশের কৃষক - ক্ষেতমুজুর আর গ্রামীন শ্রমজীবি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম আর কর্মনিষ্ঠা। এক কথা কোন রকম সরকারী প্রাতিষ্ঠানিক সাহায়্য সহযোগীতা ছাড়াই এদেশের কৃষিজীবি জনগোষ্ঠী ১৪ কোটি মুখের আহারের প্রায় সম্পূর্ণাংশ জুগিয়ে যাচ্ছে। অথচ, এদের প্রতে্যক জীবনের প্রতি পদখ্ষেফে রয়েছে বঞ্চনা আর শোষনের অশ্রু গাঁথা। চাঁদপুরের হাইমচর থানার নিউচর থেখে ক'দিন আঘে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীন কৃষক শরীরের দগদগে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে এসে ছিল , খাস জমিতে ভূমিহীন কৃষকের অধিকারের দাবি নিয়ে।
সিরাজগেন্ঞর দুগ্ধ কৃষক শোনাতে এছিল, কোর্পরেট চক্রান্তের স্বীকার হয়ে তাঁরা কেন এতো পরিশ্রমের দুধ প্রিয় সন্তানের মুখে না তুলে কেন রাজপথে ঢেরে পেরতে বাধ্য হলো। উত্তর বঙ্গের সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টি স্বাধীন দেশে কি বাবে কচুরির পানার মত ভেসে চলেছে আর ক্ষমতাবানরা পিতৃপুরুষের শতবর্ষের জমি কে কি ভাবে গ্রাস করে চলেছে। কৃষকরা এসেছিল কষ্ট -ঘামে উৎপাদিত ফসলের নায্য মুল্যে প্রাপ্তির শ্রোগান নিয়ে। ফরিয়া-দালাল আর মধ্য সত্তভুগিদের দৌরত্ব থেখে রক্ষার দাবি জানাতে।
আসন্ন জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দসহ সার, বিদ্যুৎ, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল (কৃষি উৎপাদন উপকরণে) ভর্তুকী, কৃষি শুমারীর ভিত্তিতে কৃষকদের জমির পরিমাণ নির্ধারণ পূর্বক শ্রেণী বিন্যাস এবং রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ও প্রত্যড়্গ ভর্তুকী চালু করা, দুর্নীতি রোধ করা, ভূমিহীন ড়্গেতমজুর-দরিদ্র চাষীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিয়ে সারা বছরের কাজ এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান, আর্মি রেটে পূর্ণ গ্রামীণ রেশনিং চালু করা, উৎপাদন খরচের ৪০% মূল্য সহায়তার মাধ্যমে খোদ কৃষকদের কাছ থেকে হাটে হাটে ক্রয় কেন্দ্র খুলে ধানসহ প্রধান প্রধান কৃষি পণ্য ক্রয় করা, অভাবী বিক্রয় ও দাদন চক্রের হাত থেকে কৃষককে রক্ষা করা, মহাজনী ঋণ ও এনজিও ঋণের সুদী কারবার আইন করে নিষিদ্ধ করে সহজ শর্তে সরল সুদে দরিদ্র-মাঝারী কৃষকসহ গ্রামীণ শ্রমজীবীদের ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা, কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে বেকার সমস্যার সমাধান করা, আদমজী সহ বন্ধ সকল পাটকল ও চিনিকল চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সমাজতান্ত্রিক ড়্গেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের উদ্যোগে আজ ২৮ মে ২০০৯ সকাল ১১টায় ঢাকার মুক্তাঙ্গনে কৃষক-ড়্গেতমজুর সমাবেশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ ক্ষেমজুর সমিতির সভাপতি সামছুজ্জামান সেলিম, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম, কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হাবীব সাঈদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসিনুর রহমান, দুগ্ধ চাষী আন্দোলনের নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, আদিবাসী নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঙ্গল কিসকু। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সমাবেশে কমরেড খালেকুজ্জামান ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র আঘাতে ড়্গতিগ্রস্তô উপকূলীয় অঞ্চলের জেলাসমূহকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি কৃষক ফ্রন্টের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। একই সাথে ঐক্যবদ্ধ কৃষক-ক্ষেতমজুর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি বাস্তôবায়নে সরকারকে বাধ্য করার জন্য সারা দেশের কৃষক-ক্ষেতমজুরদেরকে কৃষক ফ্রন্টের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ক্ষেতমজুর কৃষকদের সমস্যা শোষণমূলক পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সৃষ্ট। ফলে এ শোষণমূলক ব্যবস্থা উচ্ছেদের বিপ্লবী সংগ্রামে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের যুক্ত হতে হবে, সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সাইফুল হক কৃষক ফ্রন্টের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে ঐক্যবদ্ধ কৃষক-ক্ষেতমজুর আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায় ও সরকারের ভাওতাবাজী প্রতারণা উন্মোচনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সামছুজ্জামান সেলিম বলেন, গ্রামে গ্রামে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করে দাবি আদায় করতে হবে। জিডিপিতে ৩০% কৃষি থেকে আসলেও বরাদ্দ মাত্র ৫%।
এটা মেনে নেয়া যায় না। শুধু দাবি নয় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
বদরম্নল আলম বলেন, কৃষক একবার কিনতে আর একবার বেঁচতে ঠকে। তাই হাটে হাটে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরাসরি খোদ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে এবং শ্রমজীবী মানুষদের বেঁচে থাকার তাগিদেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির ভাষণে শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, গ্রামীণ মানুষকে বাঁচাতে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং সামরিক বাহিনীর রেটে তা দিতে হবে।
তিনি খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দের দাবি করেন এবং হাইমচরের নিউচরে ভূমিহীনদের ওপর হামলাকারী জোতদার-লাঠিয়ালদের গ্রেফতার-বিচারের দাবি করেন। তিনি কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায়ে বাম-প্রগতিশীল কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল মুক্তাঙ্গন থেকে শুরম্ন হয়ে নূরহোসেন স্কোয়ার, গুলিস্তôান, স্টেডিয়াম, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম ঘুরে নগর ভবনের সামনে দিয়ে চানখারপুল, মেডিকেল হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে সংগঠনের সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী ও সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে সচিবালয়স্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে কৃষি খাতে বাজেটের ৪০% বরাদ্দ সহ উপরোক্ত দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেয়া হয়। মন্ত্রী ন্যায়সংগত দাবি সমূহ বাস্তôবায়নের আশ্বাস দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।