আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধন্য মা -সন্তানকে কোমল বানিয়েছো।



যেকোনো আদর্শিক সংঘবদ্ধতা শেষ পর্যন্ত এক ধরণের সংকীর্ণতার চর্চাই হয়ে যায়। রাজনৈতিক মতবাদ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ মানুষ সংঘবদ্ধ হয় কোনো এক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, তাদের সংঘবদ্ধতা সহিংস হয়ে উঠে, এবং দু পক্ষের ভেতরে শব্দ ও সংজ্ঞার পার্থক্য ঘটে, একদল বলে এটা নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, যা রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা এবং অস্তিত্বের জন্য হুমকি, এবং অন্য পক্ষের জন্য বিষয়টা অধিকার আদায়ের সশস্ত্র সংগ্রাম, রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভবনা নেই বলেই এটা করতে তারা বাধ্য হয়েছে। এমন উদাহরণ কিংবা সহিংস অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বাইরেও আরও কিছু সশস্ত্র দল বিভিন্ন রাষ্ট্রেই বিদ্যমান, তারা নির্দিষ্ট একটি আদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে, সেটা আরও ৪০ বছর আগে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধরত বাম-মতাদর্শিক যুবা হতে পারে কিংবা বর্তমানে ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত প্রাণ যুবাও হতে পারে। আদর্শ এবং আদর্শের কারণে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে চাওয়া হয়তো দোষণীয় নয়, তবে যেকোনো অধিকার আদায়ের সশস্ত্র নৈরাজ্য কিংবা অস্ত্রবাজী শেষ পর্যন্ত নিরীহ ও বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করেই সহিংস হয়ে উঠে, যাদের সাথে কোনো বৈরিতা নেই, তাদের উপরে ক্রমাগত সহিংস হামলা চালিয়ে, তাদের আহত নিহত করে নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠার এই লড়াইকে আমার বর্বর মনে হয়। দীর্ঘ দিনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো কোনো স্থানের মানুষ বাধ্য হয়েই মেনে নিতে চায় ,লড়াই অবসানের জন্য তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়, এই বাধ্য হয়ে উঠবার কারণ তাদের আদর্শের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে না মোটেও, বরং একটা অসহনীয় নিরাপত্তাহীন পরিবেশকেই চিহ্নিত করে।

এইসব লড়াই যতক্ষণ চলছে, যারা বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছে এবং বোমা ছুড়ছে তাদের আদর্শ এটা সমর্থন করলেও আমার কাছে এটা অন্যায় মনে হয়, মনে হয় নেহায়েত আদর্শের ভ্রান্তি এবং এটা যেকোনো বিচারেই যুদ্ধাপরাধ। গেরিলা যোদ্ধারা ঠিক নিয়মিত সেনাবাহিনীর পর্যায়ে পড়ে না, সুতরাং তাদের অপরাধ যুদ্ধাপরাধ হলেও তাদের কি কেতায় বিচার করতে হবে এটা আমার জানা নেই। দুদল সেনাবাহিনী, প্রশিক্ষিত এবং বেতনভোগী যখন নিজেদের রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করে, সেই লড়াইয়ে যদি বেসামরিক মানুষ হতাহত হয় কিংবা বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটা যুদ্ধাপরাধ গণ্য হলেও, ইসলামী জঙ্গীদের বোমা হামলায় নিহত বেসামরিক মানুষদের হত্যার বিচার যুদ্ধাপরাধ হয়ে উঠতে পারে না সব সময়। পাকিস্তানে তালেবান সেনাবাহিনী যুদ্ধা চলছে, সেই যুদ্ধে ধৃত এক তালেবান যোদ্ধা জানালো, মাসিক ২০ হাজার রুপীর বিনিময়ে সে যুদ্ধ করতে এসেছে এখানে। তারা ভাড়াটে সৈনিক, এবং বিশ্বজুড়ে এমন ভাড়াটে সৈনিকের সংখ্যা কম নয়।

ডিক চেনীর প্রতিষ্ঠান হ্যালী বার্টন, ইরাকে বাৎসরিক ১২০ হাজার ডলার পারিশ্রমিকে ভাড়াটে সৈনিক নিয়োগ দিয়েছিলো। ভাড়াটে সৈনিকের জীবনে আদর্শ নেই, তারা নেহায়েত খুনী, পয়সা পেলে মানুষ খুন করবে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাবে, তারা পুলিশ চৌকিতে বোমা হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশদের উপরে হামলা চালিয়েছে, নিহত হয়েছে ৩০ জন বেসামরিক মানুষ। একটা শহর পরিত্যাক্ত হয়েছে, সেখানকার সকল বাসিন্দাই জীবনের নিরাপত্তার খোঁজে পালিয়েছেন আবাসস্থল ছেড়ে, এইসব আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিয়ে বিব্রত একটি দেশ, এবং এই যোদ্ধারা কেউই তালেবান আদর্শে বিশ্বাস করে বলে লড়ছে না, বরং আফগানিস্তান থেকে তারা পেশোয়ার, লাহোর, সোয়াতে এসেছে যুদ্ধ করতে, এইসব ভাড়াটে সৈনিকের জবানবন্দী শুনে তেমন অবাক হলাম না। সন্ত্রাসের অর্থনীতি চলমান একটি বাস্তবতা। নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্যই কিছু ভাড়াটে সৈনিক পোষা হচ্ছে।

তাদের কাজ নিয়োগকর্তাদের নির্দেশে যেকোনো স্থানে সশস্ত্র হামলা চালানো। প্রভাকরণের গেরিলা বাহিনী, হামাসের লড়াকু যোদ্ধা, এদের ভেতরে অনেকেই নিয়মিত মাসোহারা পায় যুদ্ধ করবার জন্য। এইসব যোদ্ধাদের আমরা কি বলে চিহ্নিত করবো? বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে, এখানে ২৪ থেকে ১২০টি বিভিন্ন নামের জঙ্গী ও ইসলামী দলের কার্যক্রম চালু আছে। এবং তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। সেটা ৫০০০ টাকা ন্যুনতম থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা মাসিক পারিশ্রমিকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার যোদ্ধা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক পাচ্ছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা, তাও নিয়মিত নয়, একজন মাদ্রাসা পাশ ছেলে গ্রামের মসজিদে ইমামতি করে পায় ১৫০০ টাকা , ঘৃণা কিংবা সম্মান, অবজ্ঞা এবং সামাজিক প্রতিপত্তি, নিজের বিকৃত কামনা চরিতার্থ করবার সুযোগ কিংবা যৌনবঞ্চনা, এরা যদি ৫০০০ টাকার বিনিময়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যোগ দেয়, অর্থনীতি বিবেচনা করলে তাদের অপরাধী বলা সুবিচার হবে না। কেউ না কেউ এই অর্থ ছড়াচ্ছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে যে পরিমাণ অর্থ সরবরাহ হচ্ছে তা কোনো না কোনো উৎস থেকে বাংলাদেশে আসছে এবং সেটা মাসিক মাসোহারা ভিত্তিতে যেহেতু বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সুতরাং কোনো না কোনো তালিকা মেনেই এটা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একজন সৎ শিক্ষক সারা মাস শিক্ষা প্রদান করে পাচ্ছেন ১০ হাজার টাকা, এবং একজন বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে পাচ্ছে মাসিক ২৫ হাজার টাকা। মাসোহারা ব্যপক ব্যবধান থাকলেও বাংলাদেশী মানুষেরা যে শান্তিপ্রিয় এবং আইন মেনে চলে এটার প্রমাণ হলো বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার থাকলেও এবং তারা ন্যুনতম মাসিক ২০০০ টাকা উপার্জন না করলেও বাংলাদেশে ব্যপক হারে জঙ্গি তৈরী হচ্ছে না। ধন্য মা , তোমার সন্তানকে কোমল বানিয়েছো বলে, নইলে পথে ঘাটে ভিখারীর হাত নয় বরং আমরা সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গীবাদী উড়্থান দেখতাম, দেখতাম পঙ্গু ফকির বাদ দিয়ে সবাই হাতে অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম উদ্ধারে ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রামে ন্যস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ।

আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ রয়েছে বলেই এখনও জঙ্গীর সংখ্যা ২৫০০০ এর নীচেই আছে, সেটা কোটির অঙ্ক ছোঁয় নি এখনও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.