আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটা খরগোস অথবা নির্বোদ অলসের

আমাদের ছড়া গুলো সমাজের আয়না,যার কাছে কোন কিছু ঢেকে রাখা যায়না!

ছেলেটা বড্ড অলস, যদিও কাজ করার মতো যতেষ্ঠ শক্তি তার আছে কিন্তু কাজ তার খুব অনাগ্রহের বিষয় তার বুড়ো বাপটাও হয়ে পড়েছে প্রায় কর্ম অক্ষম আর মা নিজেদের ছোট আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে কোন এক ভাবে টিকিয়ে রেখেছে সংসার টাকে । অলস ছেলটার কাজ করার গুন না থাকলেও একটা গুন অবশ্য ছিল তা হলো পশু পাখিদের প্রতি অক্রিত্তিম ভালোবাসা, কয়দিন যাবত ও একটা খরগোশ পুশছে যেটাকে ও একটা সাপের মুখ থেকে বাঁচিয়ে এনেছে মারক্তক জখম ছিলো খরগোশটার শরীরে ছেলেটা খুব যত্ন নিয়ে সারিয়ে তুলেছে তা, অলস যুবক ছেলেটা যখন দেখলো খরগোশ টাকে সুস্থ্য বলা যায় তখন ও খরগোশটাকে ছেড়ে দিলো বনের ভেতর । রাতে ওদের ভাঙ্গা ঝুপরি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো ওরা, আর বাইরে ঝর বইছিলো প্রচন্ড গতিতে এই ঝরের রাতে কোন এক অচেনা নারী কন্ঠ বাইরে থেকে ডাকতে থাকে, প্রথম অলস ছেলেটার মা এর ঘুম ভাঙ্গে দরজা খুলে দিলে হুরমুর করে ভেতরে ঢোকে অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে ক্রিম রংয়ের শাড়ি পরা মেয়েটাকে পরি অথবা তার চেয়েও সুন্দর মনে হচ্ছিলো, মেয়েটা বলল- আমি আমার ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি আমাকে তোমরা আশ্রয় দাও ততক্ষনে জেগে উঠেছে অলস ছেলেটা এবং ওর বুড়ো বাপ । বাপ বলল- কিন্তু আমার ঘরে যুবক ছেলে আছে তোমাকে এখানে আশ্রয় দেয়া শোভনিয় নয় তাছাড়া তুমি খুব সুন্দর মেয়ে মানুষ আমার ভাঙ্গা ঘর তুমি চাইলে খুব ভালো বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারো, মেয়েটা বলল- কিন্তু আমার ইচ্ছে আমি তোমাদের এখানেই থাকি তোমার চাইলে আমি তোমাদের অলস ছেলের সাথে বিয়ে বসতেও রাজি আছি তাতে করে আললাহ হয়তো তোমাদের অবস্থার উন্নতি করবেন । সুন্দর মেয়েটার কথায় ওরা আপত্তি করলোনা বিয়ে হয়ে গেল ওদের ।

বিয়ের দুদিন পরে মেয়েটা ওর স্বামি অলস ছেলেটাকে বলল- তুমি আমাকে একটা চিকন সুঁই এনে দাও আর দাও সেলাই করার জন্য একটা কাঠের ফ্রেম, আমি তোমাকে একটা চাদর বুনে দেবো যা হবে খুব মুল্যবান আর সেটা বিক্রি করে ঘুচে যাবে তোমাদের অভাব । ছেলেটা যদিও অলস তবু তার সুন্দর বউয়ের চাওয়া টা সে পূরন করলো সুঁই আর ফ্রেম নিয়ে মেয়েটা ঢুকলো ওদের শোবার ঘরে আর বলে গেল আজ সারাদিন এবং সারা রাত যতক্ষ ন না সে নিজে কাজ শেষ করে বের হয় ততক্ষন কেউ যেন তাকে না বিরক্ত করে ও কেউ ঠিক বুঝতে পারলোনা কি ঘটছে, যতক্ষন না সুন্দর মেয়েটা ঘর থেকে বের হলো, মেয়েটার হাতে অত্যন্ত মিহি কারুকাজ করা একটা চাদর যা ওরা সারা জীবনেও দেখেনি এতটাই কারুকাজ করা ছিলো তাতে মেয়েটা ওর অলস স্বামির হাতে তুলে দিলো চাদরটা, বলল- এটা বাজারে নিয়ে যাও আর বিক্রি করো খুব বেশি দামে যা দিয়ে তোমাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায় আর হ্যা, এটা যার কাছেই বিক্রি করো তাকে বলে দিও সে যেন এমন চাদর দিতিয়টা আশা না করে কারন আমি এমন চাদর সুধু একটাই বুনতে পারি । অলস ছেলেটা বাজারে গেল সেই চাঁদর নিয়ে তার চাঁদরটা কিনতে চাইলো অনেকে কিন্তু সেই ধনি ব্যাবসায়িটাই পেল যে দিলো সবার চেয়ে বেশি দাম একটা মাত্র চাঁদর বিক্রি করে ঘুচে গেল ওদের অভাব ওরা হয়ে উঠলো গ্রামের বিত্তশালি পরিবার । চাঁদর কিনে নেয়া ধনী ব্যাবসায়িকে যদিও বলেছিলো যে এমন চাঁদর আর হবেনা তবু সে বারবার আসতে থাকলো সেই অলস ছেলেটার কাছে এমন আরও চাঁদর এর জন্য আর সেই অলস নির্বোদ ছেলেটাও হয়ে উঠলো লোভি । তাই বারেবারে তার সুন্দর বউকে বলতে থাকলো এমন আরও চাঁদর বানিয়ে দিতে, তার বউ একরকম বাধ্য হয়েই বানিয়ে দিলো আরও একটি চাঁদর কারন এটা না করলে তাকে তার অলস নির্বোদ স্বামির অত্যাচার সইতে হবে, এমন করে কেটে গেল আরও কিছুদিন তৈরি হলো আরও কিছু চাঁদর ওরা হতে থাকলো আরও ধনী কিন্তু কেউ দেখলোনা তার সুন্দর বউ ধিরে ধিরে হয়ে যাচ্ছে রুপহীন রষহীন মলিন একজন মানুষ সুন্দর মেয়েটার সৌন্দর্য কমে যাওয়াতে আকর্ষনও কমে গেল সবার এবং অলস নির্বোদ ছেলেটা ওকে আরও চাঁদর বুনতে বলল ।

তোমরা খুব লোভি চাওয়াটা সীমাহীন খুব তারতারি হয়তো এ লোভ তোমাকে ছাড়তে হবে এই বলে মেয়েটা সুঁই আর ফ্রেম নিয়ে ঢুকলো ঘরে একে একে কেটে গেলো তিনটা দিন ও বের না হওয়াতে অলস ছেলেটা কিছুটা ঘাবরে গেল মেয়েটা চাঁদর তৈরি করার সময় কাউকে বিরক্ত করতে না করে যায় তাই বলে কখনও এত দেরি হয়না অলস ছেলেটা ওর বুড়ো বাপ আর মা কে নিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলো আর দেখলো ওর সেই বনে ফিরিয়ে দেয়া খরগোসটা শরীরের শেষ পশম টেনে তুলে তা দিয়ে চাঁদর বুনছে চাঁদর বোনা শেষ হতেই শরীর ফুটো করে রক্ত বের করে চাঁদরে দিতেই সেটা সুন্দর কারুকাজে ছেয়ে গেল , এরপর খরগোশটা ছুটে গেল বনের দিকে, অলস ছেলেটা চেয়ে দেখলো ওর সর্বশেষ পষম আর সর্বশেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে তৈরি করা চাঁদর রেখে চলে যাচ্ছে লোমহীন রক্তহীন খরগোশটা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।