আমার মাঝে তোমার আমি
১৬০৫ সালে জমিদাররা (জমি বা ভূমির মালিক) গানপাউডার দিয়ে পার্লামেন্ট ভবন পুড়িয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের রাজা জেমস ১ কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। ১৭৫৪ সালে পেনসিলভানিয়ার করাত ব্যবসায়ীরা সেখানকার আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের কম্বল বিতরণ করেছিল যা মধ্যে পক্স এর ভাইরাস ছিল এবং তা ছড়িয়ে পরে মহামারী আকার ধারণ করে। ১৯৯২ সালে লন্ডনে ৩ বার বোমা হামলা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে Aum Shinrikyo টোকিও সাবওয়েতে সরিন গ্যাস দিয়ে হামলা করেছিল এবং সার ও নাইট্রোমিথেন এর মিশ্রণে তৈরী ২৩০০ কেজি ওজনের বোমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা শহরের সরকারী ভবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। সবচাইতে কুখ্যাত হচ্ছে ২০০১ সালে ১৯ জন সন্ত্রাসী ৪টি বাণিজ্যিক বিমান দখল করে টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগনে হামলা করেছিল।
এছাড়াও আছে বাংলাদেশে জঙ্গীদের বোমা ও গ্রনেড হামল ও পাকিস্তানে তালেবানদের বর্তমান তন্ডব।
অনেকের মতে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার কারণ ছিল দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নতুন নতুন প্রাযুক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন ভবিষ্যতে এই ধরণের হামলা থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু এই সব প্রযুক্তি কি সন্ত্রাসীদের আটকে রাখতে যথেষ্ট? এই সব প্রযুক্তি কি পারবে সন্ত্রাস পুরোপুরি দমন করতে?
প্রযুক্তির নতুন এক উদ্ভাবন হল মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকে আলাদা ভাবে শনাক্তকরণ। প্রতিটি মানুষের শারিরীক গঠন প্রকৃতি আলাদা যেমন - আঙ্গুলের ছাপ, চেহারা, জিন, ডি এন এ ইত্যাদি। আচরণগত পার্থক্যও আছে যেমন - হস্তাক্ষর, স্বাক্ষর, হাঁটার ধরণ, উচ্চারণ, অঙ্গভঙ্গি, কন্ঠস্বর ইত্যাদি।
আচরণগত বৈশিষ্ট এখনকার সময়ে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিটি মানুষকে সনাক্ত করার জন্য। আমেরিকার সীমন্ত রক্ষীরা প্রতিটি মানুষকে তাদের দেশে ঢুকতে ও বের হতে দেয়ার সময় আঙ্গুলের ছাপ ও অন্যান্য আচরণগত পরীক্ষা করে থাকে এবং পাসপোর্ট পরীক্ষ করা হয় বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে। ব্রিটিশদের পাসপোর্ট এ বিশেষ ধরনের চিপ বসানো থাকে যা থেকে পাসপোর্ট এর ব্যাবহারকারীকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এতসব আয়োজন দেখে নিশ্চই খুশি হচ্ছেন এই ভেবে যে যাক তাহলেতো সন্ত্রাসীদের খবর আছে। উল্টা পাল্টা কিছু করলেই তো ধরা পড়বে।
সমস্যা হলো যত প্রযুক্তি আছে তা দিয়ে একজন মানুষকে সনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু সেই মানুষটি সন্ত্রাসী নাকি নিরীহ মানুষ তা কি করে সনাক্ত করা হবে? অর্থাৎ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা শুধু জানতে পারছি একজন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি সত্য নাকি মিথ্যা পরিচয় পত্র বহন করছে। কিন্তু তার মনের খবর আমরা কি জানতে পারছি? অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ইলেকট্রনিক চিপ সমৃদ্ধ পাসপোর্ট নিরাপদ। কিন্তু এটাও দেখার বিষয় যে কম্পিউটার হ্যাকাররা কিন্তু ওই চিপের ডাটা পরিবর্তন করতে পারবে এবং পাশাপাশি যদি মূল ডাটাবেজও হ্যাক করতে পারে সেক্ষেত্রে এই পাসপোর্ট কতোটা নিরাপদ। আর আমরা এটা সবাই জানি প্রতিটি দেশেই দুর্নীতি কম বেশি আছেই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলা হয় তবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আমাদের জন্য কতটা কাজে আসবে এটাই প্রশ্ন। কারণ দুর্নীতি এখানে এতই প্রকট যে, যে কোন ব্যাক্তি বিভিন্ন নামে ও ঠিকানায় পাসপোর্ট বানাতে পারবে। পাসপোর্ট এর আবেদন করলে ইনকোয়ারী করতে আসে পুলিসের লোক। আপনারা যারা পাসপোর্ট বানিয়েছেন তারা সবাই জানেন পুলিশকে ইনকোয়ারীর সময় মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা দিলেই হয়। আপনার পাসপোর্ট কনফার্ম।
আর আমাদের দেশের জনগণের ডাটাবেজ ও নেই যে যার মাধ্যমে জানা যাবে কতজনের কাছে পাসপোর্ট আছে বা পাসপোর্ট পাওয়ার উপযুক্ত লোকের চাইতে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট এর সংখ্যা বেশী নাকি কম ইত্যাদি ইত্যাদি। অভ্যন্তরীন সুযোগ সুবিধা ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়াই এই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আমাদের দেশের নিরাপত্তায় কতটা কাজে আসবে তা দেখার বিষয়।
(পাসপোর্ট রিডার)
(পোর্টেবল মেটাল ডিটেক্টর)
(ড্রাগ ডিটেক্টর)
তবে প্রযুক্তির কিছু ভাল দিকও আছে। এখন আর কেউ কাস্টমস কে ফাঁকি দিয়ে বোমা বা মাদক দ্রব্য পাচার করতে পারছেনা। কারণ অত্যাধনিক স্ক্যানারের কল্যাণে খুব সহজেই বোমা বা মাদক দ্রব্য সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
বোমা বা মাদক দ্রব্যের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট আছে যা অত্যাধুনিক যন্ত্রের রিডং এ ধরা পড়ে। যেহেতু এই যন্ত্র সমূহ হাতে বহন যোগ্য তাই সব জনবহুল জায়গা যেমন- রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট, নৌ বন্দর, সমুদ্র বন্দর এ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। তবে আমাদের দেশে যদিও মেটাল ডিটেক্টর বহুল ব্যবহৃত হয় যদিও মেটাল ডিটেক্টর গুলোর বেশির ভাগই অচল। আর অত্যাধুনিক স্ক্যানারের অপ্রতুলতার কথা না বললেই নয়। সুতরাং আমাদের দেশ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে খুব একটা অত্যাধুনিক নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এত এত প্রযুক্তির ব্যবহার এর পরও বলতে হয় সন্ত্রসের হত থেকে আমরা পুরোপুরি নিরাপদ নই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।