গাজীপুর ,বাংলাদেশ
14.10.2008
গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ ইরানের প্রেসিডেন্ট ডক্টর মাহমুদ আহমাদিনেজাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৩ তম অধিবেশনে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংকটের বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এ নিয়ে চারবার তিনি এই পরিষদে ভাষণ দিলেন। তার ঐ ভাষণের পূর্ণ বিবরণ আমরা এখানে তুলে ধরছি:
জনাব প্রেসিডেন্ট,
মহানুভব ব্যক্তিবৃন্দ,
এই বিশ্ব সভায় আরো একবার উপস্থিত হবার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। গত তিন বছরে আমি মানবজাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বড় আশাগুলো সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলেছি। এ ছাড়াও আপনাদের সামনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ভালবাসা, দয়া ও সহযোগিতা বিস্তারের উপায় সম্পর্কে কথা বলেছি।
বিশ্বে বিরাজমান অন্যায্য ব্যবস্থাগুলোর কর্তৃত্ব, অন্য জাতিগুলোর অধিকার পদদলিত করার জন্য কোনো কোনো শক্তির চাপ প্রয়োগ, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া জুলুম, বিশেষ করে ইরাক, ফিলিস্তিন, লেবানন, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া জুলুম, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ- যেমন, পরিবারগুলোর পবিত্রতা নড়বড়ে করার চেষ্টা, সংস্কৃতিগুলোর ধ্বংস সাধন, উচ্চতর মূল্যবোধগুলোর অবমাননা, প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকারগুলোর প্রতি অবহেলা, হুমকির অপচ্ছায়া বিস্তৃত করা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, অসাম্য এবং বিশ্বে বিরাজমান অচলাবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাগুলোর ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার বিষয়েও আমি কথা বলেছিলাম। এরিমধ্যে বিশ্বে আরো অনেক নতুন ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় প্রচলিত ব্যবস্থাগুলোর অযোগ্যতা বা দূর্বলতা আরো ব্যাপক মাত্রায় প্রকাশ হয়ে পড়েছে। অবশ্য, একইসাথে একটি উৎসাহব্যাঞ্জক প্রবণতাও ক্রমেই বিকশিত ও জোরদার হচ্ছে। এ প্রবণতা উৎসারিত হয়েছে জনগণের চিন্তা ও বিশ্বাসগুলো থেকে।
নতুন ঘটনাগুলোর ফলে সৃষ্ট হতাশাগুলোর বিপরীতে এ নতুন প্রবণতা এক সুন্দর, আকাংক্ষিত ও প্রজ্জ্বোল ভবিষ্যতের আলোকচ্ছটা মানুষের অন্তরে প্রজ্জ্বলিত করেছে।
ভদ্র মহোদয় ও ভদ্র মহিলাগণ,
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,
বর্তমান বিশ্বের সংকটগুলোর কারণ এবং সেসব মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে আজ আমি কথা বলবো। আমি কী বলতে যাচ্ছি, সে বিষয়ে আপনারা এরিমধ্যে অবশ্যই সচেতন হয়েছেন, কিন্তু আমি মনে করি আমাদের নিজের জন্য তা আবারও স্মরণ করা জরুরী।
বিশ্বজগৎ ও মানবজাতি এবং একইসাথে স্বাধীনতা, মহান স্রষ্টা ও ন্যায় বিচারের প্রতি সম্মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে কারা কিভাবে দেখছেন ও উপলব্ধি করছেন সেটার মধ্যেই রয়েছে বিশ্বের সমস্যাগুলোর শেকড়। বিশ্বজগৎ ও মানবজাতি, স্বাধীনতা, মহান স্রষ্টা ও ন্যায় বিচারের প্রতি সম্মান ছিল ইতিহাসের সব যুগেই মানবজাতির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক. বিশ্বজগৎ
:মহান আল্লাহ বা স্রষ্টা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। এ বিশ্বজগৎ হচ্ছে মানবজাতির উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্র। আর এ সৃষ্টিজগতের নিয়মাবলী এবং অন্য সব সৃষ্টিকে মানুষের উন্নয়নের প্রচেষ্টার সহায়তার জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা বিশ্বের দায়িত্ব। কোনো কিছুই বৃথা সৃষ্টি করা হয় নি।
আর এ সব কিছুই এক জটিল ও উদ্দেশ্যপূর্ণ পদ্ধতিতে মানুষের বিকাশের পথ সুগম করে এবং এসবের প্রত্যেকটি বিষয়ই মহান আল্লাহর এক একটি নিদর্শন। এসবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি এবং তিনিই হচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা ও শাসনকর্তা। ক্ষমতা, জ্ঞান ও সম্পদসহ সমস্ত সৃষ্টি বা অস্তিত্ব তাঁর কাছ থেকেই আসে।
দুই. মানবজাতি:
মহান আল্লাহ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির জন্য এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজের জন্য। তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন কাদা ও মাটি থেকে, কিন্তু মানুষ মাটিতে পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ে পড়ে থাকবে-এটা তিনি চান না।
তিনি মানুষের অন্তরে হেদায়াত বা সুপথের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। একইসাথে তিনি জ্ঞান, নবী-রাসূল এবং আদর্শ মানব বা মহাপুরুষদের সহায়তা তথা দিক-নির্দেশনা নিয়ে মানুষকে মর্তলোক থেকে উর্দ্ধলোক বা বেহেশতে ও তাঁর কাছে আসার আহ্বান জানিয়েছেন । এ পৃথিবী বা বিশ্ব একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন চিরকালের জন্য এবং তিনি মানুষকে বানিয়েছেন তাঁর নিজের প্রকাশের নিদর্শন বা তাজাল্লি স্বরূপ । সৃষ্টিশীলতা, দয়া, করুণা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আগ্রহ বা অনুসন্ধিৎসা, পাপ মোচন, ন্যায়বিচার, মহত্ত্ব, ভালবাসা, মর্যাদা, ক্ষমাশীলতা, ত্যাগ, দূরদর্শিতা, ভ্রাতৃত্ব এবং এ ধরনের অনেক ভালো গুণ ও সৌন্দর্য মহান আল্লাহরই গুণাবলী।
মহান আল্লাহ মানুষকে আগ্রাসন বা হামলা, রক্তপাত, ঘৃণা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য সৃষ্টি করেন নি।
তিনি মানুষকে পৃথিবীতে তার খলিফা বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি একদিকে আল্লাহ-প্রদত্ত যোগ্যতাগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করতে এবং সব মানুষের মধ্যে স্বর্গীয় বা খোদায়ী গুণাবলী বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ও একইসাথে তাদের সবাইকে সৌন্দর্য, ভালবাসা, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও মহত্ত্বে পরিপূর্ণ জীবন উপহার দিতে বলেছেন। আর অন্যদিকে তিনি মানুষকে এই পথের অন্বেষণে আল্লাহর অনুগ্রহে-ভরা অনন্তের সমৃদ্ধ জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতেও বলেছেন। মহান আল্লাহ মানুষকে ঐশী ও সামাজিক জীবন যাপনের দায়িত্ব দিয়েছেন, কারণ শুধু সামাজিক জীবন ও অন্যদের সাথে মেলা-মেশা বা আদান-প্রদানের মাধ্যমেই খোদায়ী গুণাবলী অর্জন করা যায়।
তিন. মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা:
মানুষের পূর্ণতা ও সত্যিকারের স্বাধীনতা মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বা অনুরাগ ও আনুগত্যের ওপরই নির্ভরশীল।
এ দুটি বিষয় আসলে একই মুদ্রার দুই পিঠ । মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা এবং তাঁর নিদের্শগুলো মেনে চলা ও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত বা উপাসনা না করা। মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধার অর্থ হচ্ছে চরম সত্যকে মেনে নেয়া, পরম সৌন্দর্য্য ও পরম আলোকে মেনে নেয়া। মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা বলতে বোঝায়,
স্বার্থপরতা ও পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো ত্যাগ করা, আগ্রাসন ও ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করা এবং সততা বা ন্যায়পরায়নতা, ন্যায়বিচার, ভালবাসা ও পূর্ণতার কাছে আত্মসমর্পন করা। আর এভাবেই মানুষ তার প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে এবং নিজেকে বিকশিত করতে পারে।
এভাবেই তাদের মধ্যে জন্ম নিতে পারে ও প্রকাশিত হতে পারে খোদায়ী গুণাবলী। অন্যদের জন্য ভালোবাসা, ন্যায়বিচারের জন্য জেগে-ওঠা, কোনো শক্তি বা হুমকিকে ভয় না পাওয়া এবং মজলুমের পক্ষে কাজ করার মতো গুণগুলো এভাবেই অর্জিত হতে পারে। এ ধরনের পরিবেশেই একজনের স্বাধীনতা অন্যের স্বাধীনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বিরোধ ও সংঘাত বস্তুবাদী স্বাধীনতা ও পাশবিক প্রবৃত্তির বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি খোদায়ী ধর্মের মূল সারসত্তা, মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালবাসা এবং সত্যিকারের স্বাধীনতা হচ্ছে জালেম বা অত্যাচারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার পাশাপাশি আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী বা দাসত্ব করা ও আল্লাহকে মেনে চলা।
কারণ, :
- আল্লাহ গোপন ও প্রকাশিত সব কিছু জানেন। একইসাথে তিনি দয়ালু ও করুণাময়।
- সকল সৃষ্টি তাঁর কাছে আনত এবং তাঁর ইচ্ছার কাছে নতজানু।
- মহান আল্লাহ জীবন্ত এবং তিনি বিশ্ব-জগতসহ সমস্ত সৃষ্টি ও প্রাণের স্রষ্টা।
- মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে ভালবাসেন এবং তিনি তাদের কল্যাণ, মঙ্গল ও পূর্ণতা কামনা করেন।
তিনি বলদর্পীতা বা ভয়-ভীতি দেখানো ও অবিচার, স্বার্থপরতা ও আধিপত্যকামীতার বিরোধী।
চার. ন্যায়বিচার:
মানবজাতি ও গোটা বিশ্ব-জগৎ সৃষ্টির মূল ভিত্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার । ন্যায়বিচার হলো প্রতিটি বিষয় তার উপযুক্ত স্থানে রাখার সমতুল্য এবং একইসাথে মানুষের সমস্ত ঐশী যোগ্যতা ও গুণাবলী বিকাশের ব্যবস্থা করা। ন্যায়বিচার ছাড়া বিশ্বজগতের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে এবং পূর্ণতা অর্জনের সুযোগগুলো বিলীন হয়। যদি ন্যায়বিচার না থাকে তাহলে প্রকৃত শান্তি, সৌন্দয্য ও আনন্দের আস্বাদ অনুভব করা মানবজাতির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
সমাজ-জীবনের মূল স্তম্ভই হচ্ছে ন্যায়বিচার এবং এ ছাড়া সমাজ-জীবন অব্যাহত রাখা বা বিকশিত করা সম্ভব নয়।
এ পৃথিবীতে সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা ও পরলোকের সুন্দর অনন্ত জীবনের অধিকারী হবার জন্য আল্লাহকে জানা মানুষের জন্য জরুরী। আর এ জন্য মানুষকে প্রথমে তার নিজ সম্পর্কে জানতে হবে এবং নিজেকে ও সমাজকে উন্নত করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। কিন্তু :
-বিশ্বকে যতদিন আবদ্ধ, সিমীত ও লক্ষ্যহীন বলে দেখা হবে,
-যতদিন পারলৌকিক বা অনন্ত জীবনকে কল্পনা বলে ভাবা হবে এবং বিচার দিবসে শাস্তি ও পুরস্কারকে অবাস্তব ও কল্পকাহিনী ভাবা হবে,
- নীতি-নৈতিকতা ও সেসবের প্রতি অঙ্গীকারকে যতদিন পশ্চাদকামীতা হিসেবে দেখা হবে এবং অনৈতিকতা, মিথ্যাচার, প্রতারণা ও স্বার্থপরতাকে আকাঙ্ক্ষিত বলা হবে, আর মানুষকে এ বিশ্বের বস্তুবাদী জীবনেই সিমীত বলে মনে করা হবে,
- যে পর্যন্ত মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁর নবী-রাসূলগণের অনুসরণ ও সত্যিকারের স্বাধীনতার পরিবর্তে বস্তুবাদী প্রবণতা, পাশবিক প্রবৃত্তি, মানুষের ওপর জুলুম ও চরম সংঘাত বা বিবাদের দাসত্বকে বেছে নেয়ার চেষ্টা চালানো হবে,
- যতদিন আগ্রাসীরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রচারণার শক্তির বলে শাস্তি তো এড়িয়ে যাবেই বরং নিজেদেরকে সৎ বলে দাবী করবে,
- যতদিন নির্বাচনে জেতার জন্য যুদ্ধ শুরু করা হবে এবং জাতিগুলোকে দাস বানিয়ে রাখা হবে,
ততদিন পর্যন্ত বিশ্ব-সম্প্রদায়ের সংকটগুলোর সুরাহা হবে না, বরং এসব সংকট আরো শোচনীয় রূপ নেবে।
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ ও বন্ধুরা,
আসুন আমরা বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করি:
গণবিধ্বংসী অস্ত্র উদ্ধার ও সেখানকার একজন একনায়ককে উৎখাতের অজুহাত দেখিয়ে ইরাকে আক্রমণ করা হয়েছিল।
সেই একনায়ক ক্ষমতাচ্যুত হন, কিন্তু গণবিধ্বংসী অস্ত্র বা WMD পাওয়া যায় নি। জনগণের ভোটে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ছয় বছর পরও দখলদাররা দেশটি ত্যাগ করছে না। তারা জাতিসংঘ সনদের সাত নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় ইরাকী জনগণের ওপর উপনিবেশবাদী চুক্তি চাপিয়ে দেয়ার জন্য জোরাজুরি করছে। বিশ-ত্রিশ লক্ষ ইরাকী জনগণ নিহত ও শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে, অথচ দখলদাররা এখনও নির্লজ্জভাবে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক-ভূগোলে নিজ অবস্থান জোরদারের চেষ্টা করছে এবং তেল সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইরাকী জনগণের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই এবং তারা ইরাকী জনগণের সম্মান ও অধিকারকে অবজ্ঞা করছে।
জাতিসংঘ এসব আগ্রাসন, দখলদারিত্ব ও বলদর্পীতা মোকাবেলাসহ অন্য সংকটগুলোর সমাধানে জন্য যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী নয় ।
ফিলিস্তিনে একদল অপরাধী ও দখলদার ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ষাট বছর ধরে-চলা গণহত্যা ও হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তারা সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লোককে ফিলিস্তিনে এনে একটি অবৈধ সরকার কায়েম করেছে। তারা একটি ভিন্ন দেশে এসে সেখানকার প্রকৃত অধিবাসী ও ভূমির মালিকদের তাড়িয়ে দিয়ে, আটক করে ও হত্যা করে এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা আগাম ঘোষণা দিয়ে হামলা চালাচ্ছে, হত্যা করছে এবং খাদ্য ও ওষুধের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, অথচ কোনো কোনো আধিপত্যকামী ও বলদর্পী বা হুমকীবাজ সরকার তাদের সমর্থন করছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কিছুই করতে পারছে না এবং কয়েকটি দাম্ভিক শক্তির চাপে এই পরিষদ এই ইহুদিবাদী ঘাতকদের সমর্থনের পথ প্রশস্ত করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনী জনগণের দুঃখ-দূর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে প্রণীত জাতিসংঘের কিছু প্রস্তাব পরিত্যাক্ত ফাইলের গুদামে পড়ে আছে অবহেলিত অবস্থায়।
আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েনের পর থেকে মাদক দ্রব্যের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাত অব্যাহত রয়েছে এবং সেখানে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার এবং বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে।
আফগান জনগণ ভারত, চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার পাশে অবস্থিত অঞ্চলের ওপর ন্যাটো জোটের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে বা লক্ষ্যের শিকার। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারছে না। কারণ, ন্যাটো জোটের কোনো কোনো সদস্য নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী।
আফ্রিকা মহাদেশে ঔপনিবেশিক যুগের অবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কয়েকটি অপরাধী শক্তি নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সুদানসহ আফ্রিকার বৃহৎ দেশগুলোকে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র করেছে।
সুদানের গৃহযুদ্ধ এ ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ধরনের ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলে, প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের ওপর ঐ অসৎ বা অপরাধী শক্তিগুলোর গড়ে তোলা আইন বা বিচার-কাঠামোর মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ল্যাটিন আমেরিকায় জনগণের নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ এবং সংস্কৃতি আধিপত্যকামী বিজাতীয় শক্তিগুলো এবং এমনকি কোনো কোনো সাম্রাজ্যের দূতাবাসগুলোর ভয়ানক ছায়া বিস্তারের মাধ্যমে মারাত্মক হুমকীগ্রস্ত করা হয়েছে।
জর্জিয়া, ওশেটিয়া ও আবখাজিয়ার জনগণের জীবন, সম্পদ এবং অধিকার ন্যাটো জোটসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের উস্কানী ও আধিপত্যকামীতার শিকার। একই সাথে জর্জিয়ান, ওশেটিয়ান ও আবখাজিয় জনগণের জীবন, সম্পদ ও অধিকার ইহুদিবাদীদের গোপন ষড়যন্ত্র বা কারসাজিরও শিকার হয়েছে।
বিরামহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা, অস্ত্রের বিস্তার, পরমাণু অস্ত্রসহ অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলা এবং সেগুলো ব্যবহারের হুমকি দেয়া ও ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপগুলো পরিস্থিতিকে আরো শোচনীয় করেছে।
ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচী:
শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু জ্বালানী উৎপাদন করা ইরানী জাতিসহ প্রত্যেক জাতিরই অকাট্য অধিকার। এক্ষেত্রে ইরানীদের সমস্ত তৎপরতা স্বচ্ছ বা স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আই.এ.ই.এ'র পরিদর্শকদের সাথে ইরানের পরিপূর্ণ সহযোগিতা ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ বলে আই.এ.ই.এ'র পক্ষ থেকে বার বার রিপোর্ট প্রকাশের পরও কয়েকটি বলদর্পী শক্তি ইরানী জাতির শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচীর পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই সরকারগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে এবং আই.এ.ই.এ-কে হুমকি ও চাপ দিয়ে এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ এই শক্তিগুলোই নতুন ধরনের ধ্বংসাত্মক পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে এবং কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাই তাদের পরমাণু অস্ত্রের মজুদ ও পারমাণবিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে না।
এই শক্তিগুলোরই একটি শক্তি হিরোশিমা ও নাগাসাকির ট্র্যাজেডি ঘটিয়েছিল।
আসলে তারা পারমাণবিক শক্তির বিরোধী নয়, তারা অন্য জাতিগুলোর উন্নতির বিরোধী। তারা প্রযুক্তির ওপর একচেটিয়া কর্তৃত্ব আরোপ করতে চায় এবং এভাবে প্রযুক্তির ওপর একচেটিয়া কর্তৃত্ব আরোপের মাধ্যমে তারা অন্য জাতিগুলোর ওপর নিজ ইচ্ছে চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু মহান ইরানী জাতি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, দৃঢ় ইচ্ছা, অবিচলতা এবং তার বন্ধুদের সহায়তায় বলদর্পী শক্তিগুলোকে প্রতিরোধ করবে। ইরানী জাতি এরিমধ্যে নিজ অধিকার রক্ষা করেছে এবং ভবিষ্যতেও নিজ অধিকার রক্ষা করবে।
ইরানী জাতি সংলাপে প্রস্তুত। কিন্তু ইরানের মুসলিম জাতি কোনো অবৈধ দাবী মেনে নেয় নি এবং ভবিষ্যতেও কোনো অবৈধ দাবী মেনে নেবে না। আজ পারমাণবিক শক্তিগুলোর নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া ও তাদের পরমাণু তৎপরতার ব্যাপারে বিশ্ব সমাজের কাছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আই.এ.ই.এ'র স্পষ্ট রিপোর্ট প্রদানের সময় এসেছে এবং পারমাণবিক শক্তিগুলোর নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য স্বতন্ত্র বা নিরপেক্ষ দেশগুলোকে নিয়ে নিরস্ত্রীকরণ কমিটি গঠনেরও সময় হয়েছে।
তথাকথিত উন্নয়ন তত্ত্ব:
আধিপত্যকামী ব্যবস্থার অনুকূলে ও মানব জাতির চাহিদার সাথে মিল না রেখে প্রনীত উন্নয়ন তত্ত্বগুলো অর্থনীতিগুলোকে অভিন্নতা দেয়ার এবং আধিপত্যকামীতা বিস্তারের, পরিবেশ ধ্বংসের ও জাতিগুলোর সামাজিক সংহতি নস্যাতের পুনঃপৌনিক ও সহজ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তাদের এ প্রক্রিয়ার কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
ফলে দারিদ্র, ক্ষুধা ও বঞ্চনা বিশ্বের একশ কোটিরও বেশী মানুষকে আঘাত হেনেছে এবং মানুষের স্বচ্ছল জীবন যাপনের স্বপ্ন-সাধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন ও ইউরোপীয় জনগণের ওপর ইহুদিবাদীদের আধিপত্য:
মার্কিন ও ইউরোপীয় জনগণের মান-সম্মান, নৈতিক মনোবল এবং অধিকারগুলো স্বল্প সংখ্যক অথচ প্রতারক একটি গোষ্ঠীর খেলার সামগ্রীতে পরিনত হয়েছে। প্রতারক এই গোষ্ঠীটি ইহুদিবাদী নামে পরিচিত। তারা অতি ক্ষুদ্র একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী কেন্দ্রগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশের ওপর কর্তৃত্ব করে আসছে। প্রতারণামূলক, জটিল এবং চোরা উপায়ে তারা এ কর্তৃত্ব করে আসছে।
এটা দেখা খুবই বিপর্যয়মূলক যে কোনো কোনো বড় দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী এই লোকদের কাছে ধর্না দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা আর্থিক সহায়তা ও গণমাধ্যমের সমর্থন পাবার জন্য এই লোকগুলোর সমাবেশে যেতে, এই লোকগুলোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন জাতি একদল আগ্রাসী ও স্বার্থান্ধ বা লোভী লোকের দাবী বা ইচ্ছেগুলো মেনে নিতে বাধ্য। আর এভাবে এই জাতিগুলো তাদের মর্যাদা ও সম্পদকে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপরাধ, দখলদারিত্ব এবং ইহুদিবাদী চক্রগুলোর হুমকীর জন্য ব্যয় করছেন।
প্রিয় বন্ধু ও সহকর্মীবৃন্দ,
আসলে এসব সংকটের জন্য দায়ী বিশ্ব-জগৎ, মানব জাতি, স্বাধীনতা, মহান আল্লাহ বা স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ন্যায় বিচারের ব্যাপারে শক্তিমানদের অনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।
এই লোকগুলো মনে করে তারা অন্যদের চেয়ে বড় এবং অন্যরা দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বা নিম্ন শ্রেণীর লোক। তারা আল্লাহর রাজত্বের বাইরে আছে বলে মনে করে। তারা নিজের বস্তুবাদী ও স্বার্থান্ধ প্রবৃত্তির পরিপূর্ণ দাস এবং এই লোকেরা নিজের আগ্রাসী ও আধিপত্যকামী স্বভাব ছড়িয়ে দিতে চায়। এ ধরনের লোকদের চিন্তাধারা ও তৎপরতাই বর্তমানে মানবজাতির সমস্যাগুলোর মূল কারণ। এরাই বিশ্বের জনগণের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং জাতিগুলোর মধ্যে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে।
আমি স্পষ্টভাবে এটা ঘোষণা করছি যে, ইরানী জনগণসহ বিশ্বের জনসংখ্যার নিরঙ্কুশ ভাগ ও অধিকাংশ সরকার আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর এ ধরনের তৎপরতা ও নীতির বিরোধী।
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন এমন সব লোক যারা নিজে উন্নত চরিত্রের অধিকারী এবং যারা নিজের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন, যারা তাদের কর্তৃত্বকামী মনোভাবকে দমন করতে পেরেছেন, আত্মত্যাগের গুণাবলীকে বাস্তবে প্রদর্শন করতে পেরেছেন ও একইসাথে যারা মানবতার সেবায় নিয়েজিত রয়েছেন। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ মাত্রায় কেবল ন্যায়পরায়ন ও আদর্শ মানবের শাসনের আওতায় অর্জিত হতে পারে। আর ঐ শাসনকর্তা মহান আল্লাহর প্রতি অনুগত এবং খোদায়ী প্রেরিত পুরুষ বা নবী-রাসূলগণ তাঁর আগমনের ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন।
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,
অবশ্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগ্রহে মানব সমাজ ও মানুষের অন্তরে আশাব্যাঞ্জক প্রবণতা বিকশিত হচ্ছে।
ন্যায়বিচার, সততা, অন্যের প্রতি ভালবাসা, একত্ববাদ এবং পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য মানুষের বিশ্বজনীন আগ্রহ স্পষ্টভাবে বেড়েই চলেছে। বলদর্পী শক্তিগুলোর বস্তুগত লালসা তথা অর্থ ও বস্তুবাদী সুবিধার প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ বা লোভ, আগ্রাসন এবং স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে বিশ্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বিশ্বের জাতি ও সরকারগুলো বলদর্পী শক্তিগুলোর চিন্তাধারা, রীতি বা প্রথা এবং কৌশলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন মানবীয় সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছেন এবং এই সম্পর্কের আওতায় সমৃদ্ধি, পরিপূর্ণতা, নিরাপত্তা ও টেকসই সুযোগ-সুবিধা বা কল্যাণ অর্জনের আশা করছেন। এটা সেই শুভ প্রপঞ্চ বা বিষয় যার ওপর বিশ্বজগতের সমস্ত বিধান এবং ঐতিহ্যগত সৃষ্টির ধারা গুরুত্ব আরোপ করছে ও সমর্থন দিচ্ছে।
বর্তমানে ইহুদিবাদী ইসরাইলী শাসকগোষ্ঠী সুনিশ্চিত পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যে মরণ-ফাঁদ সে নিজেই ও তার পৃষ্ঠপোষক বা সমর্থকরা তৈরি করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতিরোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ঘোষণা করছে এবং ফিলিস্তিনে একটি অবাধ গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গোটা ফিলিস্তিন অঞ্চলের রাষ্ট্রের ধরণ নির্ধারণের মানবীয় সমাধান জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে পেশ করছে।
বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্য তার পথের শেষ প্রান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তি শাসনকর্তাদেরকে অবশ্যই তাদের হস্তক্ষেপ নিজ দেশের ভেতরেই সিমীত রাখতে হবে। বর্তমানে আধিপত্যকামীতা বা একক কর্তৃত্বের চিন্তা খুব কম সময়েই দূর্বলতা বা ক্ষতিকারক বিষয়ে রুপান্তরিত হচ্ছে।
এবারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কর্তৃত্বকারী আধিপত্যকামী সরকারগুলোর উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো:
আপনাদের মনে রাখা উচিত মহান স্রষ্টা বা আল্লাহর প্রতি অনুগত হলে এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চললে, জনগণকে ভালবাসলে ও একইসাথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে তা আপনাদের জন্যই লাভজনক হবে।
আমি আপনাদেরকে মহান স্রষ্টার, নবীগণের ও বিশ্বের জনগণের পথের দিকে এবং সত্য ও ন্যায়ের দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ঐশী বা খোদায়ী সরল পথই মুক্তির একমাত্র পথ। অন্যথায় মহান আল্লাহর ক্ষমতার হাত মজলুম জাতিগুলোর আস্তিন থেকে উত্থিত হবে এবং আপনাদের জীবনকে সংকটাপন্ন করবে ও আপনাদের কর্তৃত্বকামীতার অবসান ঘটাবে।
আসুন বিশ্বের জনগণকে ভালবাসি এবং তাদের অধিকারকে সম্মান করি। অতীতের আচরণকে সংশোধন করি।
এতে আপনারাও লাভবান হবেন এবং মানবজাতিও উপকৃত হবে। অন্যান্য জাতির মতো ইরানী জাতিও আপনাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।
প্রিয় বন্ধুরা,
সৌভাগ্যক্রমে অনেক সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগ্রহে তাগুতি বা অন্যায় ব্যবস্থাগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। মানবজাতির অনুকূলে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটছে এবং তাদের সত্যিকারের অধিকার বাস্তবায়নের পথ খুলে যাচ্ছে।
মানবজাতির সামনে রয়েছে এক স্বর্ণোজ্বল ভবিষ্যৎ। এখন খুব শিগগিরই ন্যায়বিচার, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং কল্যাণকামীতায় পরিপূর্ণ এক বিশ্ব সমাজ গঠিত হতে যাচ্ছে। এ সমাজ ন্যায়পরায়ন ও আদর্শ মানবের শাসনের আওতায় ভালবাসা ও সৌন্দয্যের পথে চলবে। এই আদর্শ মানবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন সকল নবী-রাসূল এবং এই আদর্শ মানব (হযরত ইমাম মাহদী-আঃ) মানবতার প্রকৃত প্রেমিক। এই সমাজ হবে ভয়, হতাশা ও বঞ্চনা-মুক্ত।
খুব শিগগিরই এই সমাজই হবে আমাদের সমাজ। এই সমাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন মহান ঐশী-নবী হযরত নূহ-আঃ, হযরত ইব্রাহীম-আঃ, হযরত মূসা-আঃ, হযরত ঈসা-আঃ এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। তাই এ সমাজ অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে অশুভ ইচ্ছার ধারক ও মন্দকে প্রতিরোধের চিন্তা ছড়িয়ে দেই। অশুভ ইচ্ছার ধারকরা সংখ্যালঘিষ্ট।
আসুন আমরা ন্যায়পরায়নতা বা ভালো বিষয়গুলোকে এবং বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভালো লোকদের সমর্থন করি এবং সমর্থন জানাই চরম ভালোর বহিঃপ্রকাশ তথা বর্তমান যুগের ইমাম বা ইমাম মাহদী-আঃ'কে। প্রতিশ্রুত এই মহামানব যখন আসবেন তখন হযরত হযরত ঈসা-আঃ তাঁর সহযোগী হবেন এবং তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জাতি ও সরকারগুলোর মধ্যে গঠনমূলক সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য মানবীয় কাঠামো গড়ে তুলবেন। হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ, জাতিগুলোর ত্রাণকর্তাকে পাঠিয়ে দিন যাতে মানবজাতির দূর্ভোগের অবসান ঘটে এবং ন্যায়বিচার, সৌন্দয্য ও ভালো ভরে ওঠে পৃথিবী। বন্ধুরা, আসুন সেই আলোকোজ্জ্বল ও প্রতিশ্রুত ঐশী যুগ গড়ে তোলার কাজে আমরা সবাই সমানভাবে অংশ নেই। #
তথ্য সুত্র : http://bangla.irib.ir
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।