নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর এবং উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারিকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ ঘটনার পর দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে বিষয়টি অবহিত করেন উপাচার্য ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। এদিকে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা বলছে এটি অরাজনৈতিক ক্যাম্পাস হিসাবে নোবিপ্রবি’র যে ইমেজ গড়ে উঠেছে তা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকাল ১১টায় ৫টি মাইক্রোবাস ও ১২/১৩টি মটরসাইকেলযোগে শতাধিক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যায়। পরবর্তীতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল করিম তারেক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন ভট্ট এবং সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক বিপ্লবের নেতৃত্বে একটি দল কোন প্রকার পূর্বানুমতি ছাড়াই উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে।
এসময় তারা বিগত বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ের সকল অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং গত ৯ মার্চ ক্যাম্পাসে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য উপাচার্য ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারির কাছে দাবি জানায়। উপাচার্যের সাথে তাদের আলোচনা চলাকালে হঠাৎ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানকারী কর্মী-সমর্থকেরা ভিসির কক্ষ ও অন্যান্য কক্ষ লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে ভিসির কক্ষ ছাড়াও প্রশাসনিক ভবনের চারটি কক্ষের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এসময় উপাচার্যের কক্ষে অবস্থানকারী নেতৃবৃন্দ হামলাকারীদের মৌখিকভাবে ধমক দিয়ে নিবৃত্ত করে এবং উপাচার্যের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। একই সময়ে অপর একটি গ্র“প ভিসির ব্যাক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমানকে মারধর করে এবং কক্ষের টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা ক্যাম্পাস থেকে সরে যায়।
এনিয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন ভট্ট জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬জন ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তারা জানতে পারেন। ছাত্রলীগ সমর্থিত ছাত্ররা তাদেরকে বিষয়টি জানানোর পর এনিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলতে ক্যাম্পাসে গেছেন। তবে হামলাকারীরা কেউ ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ কর্মী নয়। এরা বহিরাগত; কেনো কি কারণে তারা হমলা করেছে তা বোধগম্য নয়।
উপাচার্য সঞ্জয় কুমার অধিকারির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ক্যাম্পাসে অনেকগুলো মাইক্রোবাস ও মটরসাইকেল দেখে তিনি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে দেখতে পান যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতৃবৃদে তাঁর কক্ষে আসে এবং স্বাভাবিক পরিবেশেই তাদের সাথে কথা হয়েছে। তিনি তাদের দাবির বিষয়টিও শুনেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বিষয়টি তিনি আবার পুলিশ সুপারকে জানালে সুধারাম থানা পুলিশ ক্যাম্পাসে যায়।
তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর কথা স্বীকার করে বলেন আমার ষ্টাফদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। তিনি জানান, ৯ মার্চের ঘটনায় ১৯জনকে কারণ দর্শাণের নোটিশ দেয়া হয়েছে ছাত্ররাও নোটিশের জবাব দিয়েছে। আগামি ১৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এনিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন ভাঙচুরের কথা স্বীকার করে জানান, খবর পেয়ে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু তাঁরা যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা ক্যাম্পাস থেকে চলে যায়।
এই ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ বিকালে ক্যাম্পাসের ভাষা শহীদ সালাম হলের সামনে ছাত্র সংঘর্ষের জের ধরে ঐ হল প্রভোষ্ট জাবেদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি উপচার্যের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ছাত্র সংঘর্ষে জড়িত ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে জড়িত হিসাবে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিল সেই ১৯ ছাত্রকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেন প্রক্টর এসএম আরিফুর রহমান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।