স্বচ্ছ মডারেশন চাই
কবিতা মানে দু এক ছিলিমের সুখটান। লিখতে শ্রম নেই, ভাবতে 'কর'। আমি কেন কবিতা লিখি ! সাত লাইনের একুশখানা শব্দে কমেন্টশতী যদি উঠতি কবিকে একটু ভাবাতুর করেই তোলে --সে কি কবির দোষ? পদার্থবিদ্যায় বলেছে বস্তু সর্বদা সাম্যাবস্থায় থিতু হতে চায়, উচ্চশক্তির দশা থেকে নিম্নশক্তিতে আয়েশের খায়েশ করে। তো আমি কেন কবি ---মানে গদ্য লিখি না কেন ? কেন সেটা নিজেই বুঝে নিন না , আমার অত পরিশ্রম পোষায় না।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ দার্শনিক ভাবে থাকি।
এই যে পৃথিবী ---- সবই নশ্বর! কেন মানুষ অফিস যায় কেনই বা ফেরে। এই যে স্বর্গীয় লেপতোষক। এই যে বেলা বেড়ে বেড়ে ওঠার সাথে ঘুমের গভীরতা। তাকে তুচ্ছ করে, তুচ্ছাতিতুচ্ছ জাগতিক কর্মকোলাহল ! কেন এই ভ্রম । মায়া ! মায়া ! সমস্তই মায়া !
তা এই মায়াদয়া করতে করতে বেলা বুড়ো হয়।
কায়িক বা মানসিক কোন প্রকার শ্রমেই বিশেষ কোন উৎসাহ পাই না। দশ মিনিটের পথ হাঁটব না বলে বিশ মিনিট বাসস্টপে দাড়াই। জননী আদর করে বলতেন 'রাজার আলসে ' বন্ধুরা ভালবেসে নাম দিয়েছে 'পি-পু-ফি-শু' । প্রতিবাদ যে করব তেমন বোকা আমি নই ।
বাসস্টপে--সে এক অপূর্ব সময়! মহান অলসেশ্বর তাল হয়ে কানের পাশে ভোঁ ভোঁ করে।
শুধু সুর নেই! খানিকক্ষণ লতাজিকে ডাকি, খানিকক্ষণ রবীন্দ্রনাথ। কাউকে অবহেলা তো করতে পারিনা । যা মনে আসে -- রিমিক্স হয়ে যায়। নিজের গলা শুনে নিজেই অবাক। মনে হয় আমি চিড়িয়াখানায় -একটা নতুন প্রজাতির জীব তারস্বরে কেঁদে উঠছে।
এর ফাঁকে আবার শব্দের উপদ্রব। একজন নিশ্চিত জীবনানন্দা এই সময়ে আবার ফিরে এলো বলে। এমনতো হবেই। চলতে ফিরতে কবিতা মাথায়। হুট হাট করে একটা দুটো লাইন।
গজিয়ে উঠছে, তলিয়ে যাচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে ভাব নিয়ে ল্যাবে ঢুকি। হ্যাট কোট খুলি। কবি মানুষ! বেশি হাসি তামাশায় যাই না । পাছে ভাব উবে যায় ।
মওকা খুঁজি। এদিক ওদিক তাকিয়েই কাগজ কলমটা টেনে বসি । বিশেষ করে লাঞ্চ ব্রেকে । আধাঘুমে ঢুলতে ঢুলতে সকালের দুলাইনের সাথে দুলাইন জুড়ে দিই, বাকি দুলাইন বাসায় ফিরেই জুতা মোজা না খুলেই ..
চটপট লাইনগুলো ভেঙ্গে দিই। আধুনিক কবিতায় কবিরা বলেছেন কোন মিল তাল হবে না ।
পড়ে যদি সবই বোঝা গেল তো কবিতা হল কিসের । মাঝে মাঝে শূন্যতা --'স্পেস'আর 'এন্টার' ...যেন মা সরস্বতীর সাদা হাঁসের পালকেরা । আর অতি অবশ্যই যতিচিহ্ন বাদ -তারা হল অসুর। দৈর্ঘ্যটার মধ্যে একটু কবিতা কবিতা ভাব । পাঁচ থেকে সাত লাইন জুড়ে গেলেই 'পোস্ট করুন' ।
এই হল আমার কবিতার জন্ম ইতিহাস , এই আমার অতলান্তের পাড়ের দিনকাল --এই আমার সামুর পোস্ট -----
আজ সামুর কথা বলি- আমার প্রিয় পাঠকেরা ! নানাবিধ কমেন্টে আমায় যারা কবি করে ফেলেছেন
-----ইহা একটি রঙ্গপোস্ট । রাগ করলে কবিতা লিখব না আর বলে রাখলাম।
তো অদ্য আমার কমেন্ট কাহিনী বলি । 'জীবিত বা মৃত কোন ব্লগারের সাথে উহার সাদৃশ্য থাকিলে পাঠক নিজ দায়িত্বে বিস্মরণ হইবেন'
আমার পাঠকেরা সামুর ব্লগার। লেখক থেকে পাঠক, শিশু থেকে বৃদ্ধ, হিমালয়ের মত জ্ঞানী থেকে আমার মত মূর্খ।
মোটামুটি বিস্তৃতই বলা যায় - সামুর স্থানাঙ্কে। কমেন্টের জোরে তিন মাসের ব্লগীয় নবজাতকটি বেশ তাগড়া হয়ে উঠেছে। বলতে নেই কি, ভেতরে ভেতরে বেশ একটু পাড়ার মোড়ল ভাবও এসেছে । সে আমার দোষ নয় , কমেন্টের প্রশ্রয় । অবশ্য শাসনও আছে।
সামুতে আমার বালখিল্যতায় বিরক্ত হলে দোষ দেয়া যাবে না ।
গুরুজনের কমেন্টে আমি বেশ ভাগ্যবান। নিয়মিত সমালোচকেরা সযত্নেই আমায় শাসন করছেন। পোস্ট না পেস্টাতেই ত্বরিত কমেন্ট । 'মান নেমে গেছে', লেখায় যত্নের ছাপ নেই' , 'আগেরগুলোর সাথে কোন তূলনায়ই চলে না' , 'হতাশ হলাম ' ইত্যাদি প্রভৃতি বামবিধি ।
এই কমেন্ট আমায় নস্টালজিক করে ফেলে। সেই ইস্কুলের দিদিমণি , ঘরের জননী আর পিউরিটান পাঠক ! আমায় চিরকালই বলে আসছে । সেই 'ইদানীং'-----ইদানীং আমি বখে যাচ্ছি। মান পড়ে যাচ্ছে। মেদ জমছে-স্মৃতি কমছে- ঘুম বাড়ছে।
অধঃপতনের সবকটা লক্ষণ নিয়ে মনে মনে শুধু ভাবি- আহা ! আমি কবে যেন আদর্শ ছিলাম - কই তখন তো কেউ বলেনি
পরের কথা বলতে গেলেই আসে বির্মূত ধারা। নিন্দুকেরা বলেন এই ধারার কমেন্টের সাথে উত্তরাধুনিক কবিতার সম্পর্ক নিবিড়। আমি বলি শূ ন্য তা ... প্রায় মহাশূণ্যের মত খানিকটা স্পেস ছেড়ে দেওয়া কমেন্ট। কবিতার পোস্টে শব্দবহুল কমেন্ট করেন না , নমস্য কবিরা------এর অর্থ যিনি কমেন্ট করলেন তিনি একজন কাব্যজন, যিনি পেলেন তিনিও ইন্টেলেক্ট। প্রত্যুত্তরে 'ভাল থাকুন' , 'ধন্যবাদ' বলতে নেই।
রিপ্লাই দিতে স্বয়ং কবির আর সাহসে কুলায় না। কি জানি কিসে বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল ! নীরবতাই উত্তম ---'মানে আমি বুঝিলাম, সকলই বুঝিলাম'
আজ থাক --পাঠকের অভিযোগ মরুভূমিতে কাঁটাগাছের মত আমার গদ্যরা নাকি যন্ত্রণাদীর্ঘ -----শত হোক সামুর পাঠক ! লেখক বলে আমায় মান দিয়েছে তাই বাকিটা পরের পোস্টেই ...
চলুক ... যদি শ্রমঘন না হয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।