বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস বা স্বাধীন সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে নোয়াখালী সাংবাদিক ইউনিটি প্রতিবারের মতো এবারো বিশেষ প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার এই সম্মাননা স্মারক প্রকাশ হয়তো অতি নগন্য একটি প্রয়াস; কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকতার পাদপীঠে দাঁিড়য়ে এই চিন্তার বারংবার সফল প্রকাশ এই সংগঠনের সদস্যদের মনন, চেতনা, উন্নত কৃষ্টি ও পেশার প্রতি কঠোর শ্রদ্ধাবোধের পরিশীলতার পরিচায়ক। এবারের প্রকাশনার নামকরণ হয়েছে “অধিকার”। মুক্ত সাংবাদিকতা মানে মাত্রাতিরোক্ত স্বাধীনতা নয় বরং সঠিক ও নির্ভুল সংবাদ প্রকাশ বা স¤প্রচারের নির্বিঘœ ও পরিপূর্ণ অধিকারের প্রতিফলন । ‘স্বাধীন’ শব্দটি নিজেই বরং স্বাধীন নয়,বরং কিছু নিয়মের একটি বৃত্তে অন্তরীণ।
অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে বা অপরের অধিকার ভুলুণ্ঠিত না করে স্ব-ইচ্ছার অধীন চলার অধিকার ভোগ করাই হচ্ছে স্বাধীনতা । এ কথাটি আবার স্বাধীন বা মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ততটা প্রযোজ্য নয় বরং অনেকটা বিপরীত । ম্ক্তু সাংবাদিকতা কথাটি প্রকাশনা ও স¤প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যতটা প্রযোজ্য তার চেয়ে বেশি প্রযোজ্য একজন সৎ ও পেশার প্রতি পূর্ণ অনুগত বা কমিটেড সাংবাদিক কাজ করার ক্ষেত্রে পুরো অধিকারের কতটুকু ভোগ করতে পারছে তার ওপর। সত্য,ন্যায় ও দায়িত্বের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল ও দায়বদ্ধ সাংবাদিকরাই মুক্ত সাংবাদিকতার দাবীদার। সাংবাদিক মাত্রই অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে ‘স্বাধীন’শব্দটিকে, তার অর্থকে এক ধরণের আঘাত করে।
কেননা অনুসন্ধান বা অপরাধ জাতীয় সংবাদ এক বা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের স্বেচ্ছাচারে আঘাত করে ,কেউ কেউ তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপও মনে করে, প্রভাবশালী অনেকে মানহানির মামলা করে, স্যুয়োমোটো রুলও জারি করা হয় । কিছু ব্যক্তি,নিদির্ষ্ট পেশাজীবী ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের সব কিছুর উর্দ্ধে উঠিয়ে রেখে চরম স্বাধীনতা ভোগের চেষ্টা করেন আর সঠিক সংবাদ প্রকাশ করেও একজন সাংবাদিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে জেলে যেতে হয়,কিংবা নাজেহাল হতে হয়। কিন্তু একজন অপরাধী, স্বার্থান্ধ ব্যক্তি, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কিংবা বিচ্যুত ব্যক্তির অপরাধের প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক ও আইনতগত শাস্তিই বরং অসংখ্য বা সামগ্রিক মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে । একজন সাংবাদিক প্রতিনিয়ত তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যতটা সচেষ্ট থাকে,নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ততটা সফল হননা। সংবাদমাধ্যমকে ‘‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ” হিসেবে অভিহিত করে যতই বাহারি করার চেষ্টাই করা হোক না কেন, এই স্তম্ভ বা পিলারটিকে মজবুত,টেকসই ও কার্যকরী করার চেষ্টা কেউই করেনা ।
স্বার্থের দ্বন্দ্বে প্রথমেই এই চর্তুথ স্তম্ভের প্রতি আঘাত হানা হয়। তাইতো দেখা যায় ক্ষমতাসীনরা সুযোগ পেলেই সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনের প্রতি হামলে পড়ে। আবার বিরোধী দলে গেলে সংবাদমাধ্যমকে আকড়েঁ ধরে নিজেদের টিকিয়ে রাখার অবিরত চেষ্টা করে । অতীতের জন্য মাফ চায় এবং পুনরায় ক্ষমতায় গিয়ে আগের চেয়ে ন্যাক্কারজনক ভাবে হামলা করে,কটাক্ষ করে,সাংবাদিকদের অধিকার পা দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অতি বাড়াবাড়ি, অপসাংবাদিকতা,লেজুরবৃত্তিও দায়ী থাকে।
পেশার প্রতি প্রচন্ড দায়বোধ সম্পন্ন মুক্ত সাংবাদিকের প্রয়োজন দারিদ্র মুক্ত আর্থিক স্বচ্ছলতাও টিকে থেকে লড়াই করা শক্তির। এর দায়িত্ব প্রথমত রাষ্ট্রের এবং দ্বিতীয়ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের । কেননা সংবাদমাধ্যম শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল হলেই সুশাসন ,সুখী-সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব । তবে বর্তমানে ক্ষমতার বৃত্তের ভিতরে ও বাইরে থাকা প্রভাবশালী এবং অপরাধী মানুষগুলো রাষ্ট্রের বিবেক ও অতি বাড়াবাড়ির নিয়ন্ত্রক সংবাদমাধ্যমকে অকার্যকর করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে । এর সাথে যোগ হয়েছে কিছু ধান্ধাবাজ ও প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসায়ীর সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে ব্যবসা করার হীন তৎপরতা ।
কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম ও কতিপয় সাংবাদিক এখন প্রভাবশালী ও অপরাধাীদের গৃহকে নিরাপদ রাখার জন্য বেঁেধ রাখা পোষা কুকুরের মতো আচরণ করছে, দলীয় প্রচার মাধ্যমে পরিচিত হচ্ছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের যথাযথ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেনা । দলীয় ক্যাডার ও ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকতায় দলে দলে ভিড়ছে, যাদের দেশ-দশ-পেশার প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই, বিবেক যাদের অনেকটাই মরা, তারা নিজেদের জন্য হাজারো মানুষের অধিকার ভুলুণ্ঠিত করছে, প্রকৃত সাংবাদিকদের সৎ হিসেবে টিকে থাকার অধিকারটুকুও হায়নার মতো খাবলে ধরছে এবং পুরো সংবাদমাধ্যমকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলছে । এদের হাত হতে সংবাদ মাধ্যমকে বাচাঁনো দরকার, দরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা, লাখো লাখো মানুষের বেচেঁ থাকার আশা জাগিয়ে রাখা,প্রকৃত সাংবাদিকরা যেন মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করতে পারে, তাদের বঞ্চনা দূর করে হৃত গৌরব ফিরিয়ে এনে পরিপূর্ণ ‘অধিকার’ প্রতিষ্ঠায় সকলের ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার ও কর্ম তৎপড়তা এখনই শুরু করা দরকার ।
‘অধিকার’ সফলভাবে প্রকাশ করার জন্য প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়কসহ সকল সদস্য, নোয়াখালী সাংবাদিক ইউনিটির সকল সদস্য,প্রকাশনায় যাদের লেখা ছাপা হয়েছে, যাদেরলেখা ছাপা হয়নি, বিজ্ঞাপনদাতা,শুভানুধ্যায়ী,মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানসহ সকলকেই আমার ও নোয়াখালী সাংবাদিক ইউনিটির পক্ষ হতে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
তাদের এই সহযোগিতা আমাদের জন্য সব সময় অবারিত থাকবে এই আমার বিশ্বাস ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।