সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের ইতিহাসকে আলাদাভাবে উপস্থাপনের সুযোগ নেই। দুটোই পরস্পরের সম্পুরক এবং পরিপুরক। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রস্ফুটিত এ দল কালের পরিক্রমায় বাংলার মাটি, মানুষের দলে পরিনত হয়েছে তা বলা চলে নির্দিধায়। তা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠা, সততা, প্রজ্ঞা এবং ত্যাগের কারণে। জীবনের স্বর্ণালী সময়গুলো তিনি কাটিয়েছেন শোষকের কারাগারে।
তবু আপোষ করেননি। দেশের মানুষের প্রতি তার এই ত্যাগ, নিষ্ঠা এবং সততার উপর ভর করেই মাত্র দুই যুগেরও কম সময়ে আওয়ামী লীগ বিশাল মহীরুহে পরিনত হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে এমন একটি ঐতিহ্যবাহী দলের সদ্স্য হতে পারা খুব কষ্টের এবং সাধনার ফল বলেই মনে হয়। কিন্তু গত তিন মাসের অভিজ্ঞতায় দেখছি আওয়ামী লীগার হওয়াটা আসলে খুবই সোজা। কোন সাধনা বা অভিজ্ঞতার দরকার হয়না।
শুধু একটি কালো মুজিব কোট গায়ে চড়ালেই আওয়ামী লীগার হওয়া যায়। আর তাই সবদিকেই এখন শুধু বাহারী মুজিব কোট আর মুজিব কোট।
এই বাহারী মুজিব কোটধারী নব্য আওয়ামী লীগারদের দৌরাত্মে দেশের সরকারী কর্মকর্তা থেকে সাধারণ জনগণ, ফলবিক্রেতা, মুদি দোকানদার সবাই তদস্থ। এই পোষাক গায়ে থাকলে আপনাকে মুখে বলার প্রয়োজন নেই আপনি কে। পোশাকই আপনার পরিচয়।
এই পোশাক পরে সরকারি ভূমি দখল করতে গেলে আপনাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। কারণ পরিধেয় পোশাকই সব জাগতিক বাধা দূর করে দেয়। সরকারি অফিসে তদবির বা ঠিকাদারী কাজে এই পোষাক মন্ত্রের মতো কাজ করে। পোষাকের গুণে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পোশাকধারীর পরিচয় না জানা সত্ত্বেও তার সাথে হিসাব করে কথা বলেন। থানা থেকে আসামী ছাড়াতে গেলেও এই পোষাক ত্রাতার ভূমিকা পালন করে।
অচিরে অবস্থা হয়তো এমন পর্যায়ে পৌছে যাবে যে, মা দুর্গার মতো এই পোষাকটিকেও দেবী মনে করে মানুষ পুজা করবে।
ছেলেবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম। স্মৃতি হন্তারক সময়ের প্রভাবে গল্পটার নাম এবং রচয়িতার নাম ভুলে গেছি। তবে গল্পের বিষয়বস্তুটা এখনও ভাসা ভাসা মনে আছে। কোন এক সময়ে এক বিলাসী, অলস রাজাকে চমৎকার এক পোষাক তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই তাতী তার কাছ থেকে অনেক টাকা আদায় করল।
তারা রাজাকে বুঝাল চমৎকার এই পোষাকের মাধ্যমে তিনি তার রাজ্যে কারা বোকা তা নির্ণয় করতে পারবেন। কারণ যারা বোকা তারা এই পোশাক চোখে দেখবেনা। বিশেষ উৎসবের দিনে রাজাকে এই পোশাক পরানো হল। রাজা চোখে কিছু দেখলেননা (কিছু পরালেইতো দেখবেন)। তবুও তিনি চেপে গেলেন।
বললের দারুণ পোশাক। কারণ তিনি যদি বলেন তিনি পোশাক চোখে দেখছেননা তাহলে সবার সামনে তিনি বোকা বনে যাবেন। একই কারণে মন্ত্রী, রাজ-কর্মচারীরা সবাই বলল দারুণ পোশাক, মহারাজকে দারুণ মানিয়েছে। মহারাজ এই দারুণ পোশাক পরেই রাজপথ দিয়ে হেটে গেলেন। প্রজারা সবাই পোশাকবিহীন নেংটা রাজাকে দেখলেন।
তবুও সাহস করে বলতে পারলেননা যে রাজার পরনে কোন পোশাক নেই। কারণ তারা কেউই বোকা হতে চায়নি।
ছেলেবেলায় পড়া পোশাক সম্পর্কিত আরও একটি গল্প সঙ্গত কারণে এখন মনে পড়ছে। এই গল্পটি অবশ্য বহুশ্রুত। ইরানের কবি শেখসাদী রাজার সাথে দেখা করবার পথে এক আমীরের বাড়িতে রাত কাটালেন।
সাধারন পোশাকের কারণে আমীর তার কোন খাতির করলেননা। খেতে দিলেন সাধারন খাবার। রাজার সাথে দেখা করে ফিরার পথে সাদী সেই আমীরের বাড়িতে পুনরায় মেহমান হলেন। এবার তার পরনে দামী পোষাক। আমীর এবার তার খুব খাতির করলেন, দামী খাবার খেতে দিলেন।
সাদী বুঝলেন, পোষাকের কারণেই তাকে দামী খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। ঠিক সে কারণেই তিনি নিজে না খেয়ে খাবারগুলো পোষাককে খাওয়াতে উদ্যোগী হলেন। পরে অবশ্য আমীর তার ভুল বুঝে কবির কাছে ক্ষমা চান।
বর্তমানের মুজিব কোটের ব্যাপক প্রভাব দেখে গল্প দুটোর কথা প্রতিদিনই মনে পড়ে। আমরা জানি পোশাকের অন্তরালের মানুষটি অন্তসারশূন্য।
তবুও পোশাকটির ভয়ে আমরা তাকে সমীহ করে চলছি। আর এই সুযোগে সে তার অন্যায় কর্ম বিনা বাধায় চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা আর কতদিন?
এই সরকার ব্যর্থ হোক তা অন্তত সাধারণ মানুষ চাইবেনা। কারণ সরকার ব্যর্থ হলে সরকার এবং রাজনীতিবিদদের চাইতে সাধারণ মানুষকে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয়। গত সরকারগুলোর ব্যর্থতার কারণে দেশে বিগত দুই বছর যে স্ট্রিমরোলার চালানো হয়েছে তার ফল রাজনীতিবিদদের চেয়ে দেশের সাধারন মানুষকে বেশি ভোগ করতে হয়েছে।
তাই মাননীয় নেত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে তার কাছে আবেদন থাকবে এই পোশাকটি অন্তত আগামী পাঁচবছর নিষিদ্ধ রাখুন। এতে এই পোশাকটির অপব্যবহার যেমন কমবে তেমনি আপনার দলও বদনামের হাত হতে রক্ষা পাবে। এতে করে আপনার ও আপনার দলের গ্রহণযোগ্যতা মোটেও কমবেনা বরং বাড়বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।