বর্তমান স্ট্যাটাস: নির্বচনে কাজে আছি। আমাদের সু- পুত্র সজীব ওয়াযেদ জয় এর থিসিস এর লিফলেট পাবলিসিটি করার চিন্তায় আছি।
জঙ্গী দমনে বাংলাদেশের সাফল্য থেকে শিক্ষা
------------------------------------
2001 সালের এগারই সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা এবং তার জের ধরে আফগানিস্থান ও ইরাক দখল করা হলে সারা বিশ্বে মহামারীর মত জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গীবাদের কবল থেকে আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রান্সের মত দেশ যেমন বাঁচতে পারেনি, তেমনি এর থেকে দূরে থাকতে পারেনি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সউদী আরব কিংবা পাকিস্থান। অবশ্য এ উপমহাদেশে জঙ্গীবাদ নতুন কিছু ছিল না।
ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গীবাদে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আসছে। তার মধ্যে আবার ভারতের দুর্নাম রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে জঙ্গীবাদ রফতানী করার। কিন্তু বাংলাদেশ এ যাবত জঙ্গীবাদ থেকে একরকম মুক্তই ছিল। এক বছর আগে জাতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়ে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটলেও অতি দ্রুত আমরা তা মোকাবেলা করি। জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য থেকে একদিকে যেমন এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশসমূহ এমনকি সারা বিশ্ব শিক্ষা নিতে পারে তেমনি এখানে আবার যেন জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করতেও এ শিক্ষা কাজে লাগানো যেতে পারে।
এক বছর আগে যখন বাংলাদেশের একটি বাদে সকল জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা হয় তখন হতভম্ব হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। জঙ্গীবাদীদের একটি চ্#956; যে বিতরে ভিতরে বেড়ে উঠেছে তা এই প্রথম সকলে টের পায়। এর পূর্বে জঙ্গীবাদের উত্থানের বিষয়ে যে কেউ কিছু বলেনি তা নয়। কিন্তু তীব্র রাজনৈতিক বিভক্তি, দলীয় স্বার্থ তাড়িত মিডিয়া ও সকল কিছুতে দোষারোপের খেলার দেশে সে সকল অভিযোগ বা উদ্বেগকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার প্রচেষ্টা হিসাবেই অনেকে দেখেছেন। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে উদীচি ও রমনা সহ বেশ কয়েকটি সমাবেশে রক্তক্ষয়ী বোমা হামলা ঘটে।
তৎকালীন সরকার এ সকল কিছুর জন্যই জঙ্গীবাদকে দায়ী করলেও তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী নেতাদেরকে দোষী করে মামলাগুলো সাজায়। উদীচি বোমা হামলার মামলার রায়ে বিচারকও একই কথা বলেছেন। ঘটনাগুলোকে অতি মাত্রায় রাজনীতিকরণের কারণে অনেকে এমন ধারণাও করতেন যে এ গুলোর পিছনে স্বয়ং তৎকালীন ক্ষমতাশীন দলের হাত ছিল। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও তার রিপোর্টে এ ধরণের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
17ই আগস্টের সিরিজ হামলার রেশ কাটতে না কাটতে একের পর এক আত্মঘাতি বোমা হামলা শুরু হলে জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের জন্য সময়টা ছিল জাতির ইতিহাসের সবথেকে ্#956;ান্তিকাল। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর না আছে আধুনিক সরঞ্জাম, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর না আছে নৈতিক মান। পুলিশ বিভাগ সরকারের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্থ অঙ্গগুলোর একটি। তাদের দুর্নীতি এতো বেশী প্রকাশ্য ও বিস্তৃত এবং দুর্নীতির শিকড় এতো বেশী গভীরে প্রোথিত যে প্রায়শঃ এ বাহিনীর সদস্যদেরকে চুরি ডাকাতিতে লিপ্ত হতে দেখা যায়। অপরদিকে পনের কোটি অনুপাতে তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম।
নাগরিক পরিচয়পত্রের মত কোন কিছু না থাকার কারণে অপরাধ সংঘঠিত করে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে লুকিয়ে থাকা সম্ভব। এরকম একটি পরিস্থিতিতে যখন একদল লোক নিজেদেরে শরীরে বোমা বেঁধে বিচারকের এজলাস, জনাকীর্ণ প্রশাসনিক দফতর ইত্যাদিতে ঝাপিয়ে পড়তে শুরু করলো তখন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বললেন যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে আত্মঘাতি হামলা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সরকার এতো অসহার মধ্যে পড়লো যে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিরোধী দলকে সংলাপে আহবান জানালো। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারী ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলাপ আলোচনার বিষয়টি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অতি প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশে তা নিতান্তই অকল্পনীয়। এখানে প্রধান দুটি দলের নেত্রীদ্বয় পরসঙ্রের সাথে কুশল বিনিময়কেও বিষপানতূল্য মনে করেন।
জঙ্গীবাদ দমনে সংলাপের প্রধানমন্ত্রীর আহবান বিরোধী দল যে শুধু অত্যন্ত রূঢ়ভাবে প্রত্যাখান করে তাই নয়, তারা সরকারকেই জঙ্গীবাদের মদদদাতা হিসাবে দায়ী করে। তারা সরকারের অংশীদার ইসলামি দলগুলোকে নিষেদ্ধ করার দাবী জানায়। শুধু বিরোধী দল ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি ও মিডিয়া নয়, সরকারের কোন কোন মন্ত্রীও এ দাবী তুলতে থাকেন। এর পিছনে একদিকে যেমন ছিল আদর্শিক দ্বন্দ্ব, তেমনি ছিল জাতির চরম দুর্দিনে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টা। বিগত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলটি এককভাবে সবথেকে বেশী ভোট পেলেও আসন পায় মাত্র এক পঞ্চমাংশ কেননা প্রায় সবগুলো আসনেই ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট ব্যাংক রয়েছে যার সহায়তায় ক্ষমতাশীন দল দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী আসন লাভ করে।
তাই ক্ষমতাশীন জোটকে পরবর্তী নির্বাচনে পরাজিত করতে তাদের থেকে ইসলামি দলগুলোকে আলাদা করার বিকল্প নেই বলে সকলেই বলে আসছিলেন। প্রধান ইসলামি দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত হওয়ার কারণে বিরোধী দলের রাজপথের আন্দেলন মোকাবেলার ক্ষেত্রে দলটি সরকারের প্রচুর সাহায্য করে থাকে। এ কারণে জঙ্গীবাদের উত্থানের সুযোগে সরকার বিরোধীরা জোট ভাঙ্গার চেষ্টা জোরদার করে। বাহির-ভিতরের চাপের মুখে সরকার সে সময় যদি ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোন পদক্ষেপ নিতো, তাহলে তা দেশের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারতো। তাতে জঙ্গীবাদীরা প্রমাণ করতে পারতো যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
তা ছাড়া শতকরা পনের শতাংশ জনসমর্থনপুষ্ট ইসলামি দলগুলোর অনেক কর্মী সমর্থককে জঙ্গীদের পক্ষে তাদের দলে ভেড়ানো সম্ভব হতো। জঙ্গীবাদকে দমনের বদলে বরং তাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হতো। আলজেরিয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। স্বাধীনতার পরপরই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একাংশকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে মোকাবেলা করার ফলও হয়েছিল মারাত্মক। সে সময় সশস্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের সমর্থক মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবিরা যখন জঙ্গীবাদ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় রত ছিল, তখন সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসে। অল্পদিনের মধ্যে আটক হয় জঙ্গীদের সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানি। একে একে ধরা পড়ে তাদের শীর্ষ নেতারা।
এতো দ্রুত জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের পিছনে যে সকল বিষয়গুলো কাজ করেছে তা হচ্ছেঃ
1. এদেশে জঙ্গীবাদের পুরোটাই ছিল আরোপিত। বর্তমান সময়ে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মূলে রয়েছে ফিলিস্থিনের উপর ইসরাইলী দখলদারিত্ব ও তার প্রতি পাশ্চাত্যের অন্ধ সমর্থন।
ইরাক আ্#956;মণের পর ইরাক ইসূ্যও তার সাথে যোগ হয়েছে। কিন্তু এসকল এলাকা থেকে বাংলাদেশ বহুদূরে অবস্থান করার কারণে এ দেশের জনগণের উপর ইসূ্যগুলো তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। তাছাড়া আবহাওয়ার কারণেও এদেশের মানুষ সকল সময়েই শান্তি প্রিয়তার পরিচয় দিয়ে থাকে। জঙ্গীবাদীদের কথিত দাবী - ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা - এর জন্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাজ করার কোন বাধা এ দেশে নেই। এই একই এজেন্ডা নিয়ে অর্ধ শতাব্দীর বেশী সময় ধরে এ দেশে বেশ কয়েকটি সংগঠন রাজনীতি করে আসছে, অন্যান্য দলের সাথে জোট বেঁধে রাজপথে আন্দোলন করেছ, নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং সংসদে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।
স্বাধীনতার পর যখন দেশে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় তখনও এ সকল দলগুলো হাতে অস্ত্র তুলে নেয়নি বা কেন বেঅইনী পথে পা বাড়ায় নি। এমনকি সত্তরের মাঝামাঝি কু্য - পাল্টা কু্যর সময়েও তারা এ সকল কিছু থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেছে। যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনকারী দলগুলোর বৃহদাংশ এই প্রথমবার সরকারে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং আমেরিকার মত পাশ্চাত্য শক্তির নিকট থেকে অমৌলবাদী ও গণতানিত্রক দল হিসাবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে তখন জঙ্গীবাদের উত্থান যে রোপিত বা আরোপিত তা বুঝতে কষ্ট হয় না।
2. আত্মঘাতি বোমা হামলা শুরু হলে সরকার যে আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে জঙ্গীবাদ দমনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সে সময়ে যদি তারা বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করতো তাহলে জাতির জন্য তা অতি মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারতো।
বিরোধী দলের উপরে দোষ চাপানোর মত কিছু উপাদান যে ছিল না তা নয়। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের মূল নায়ক শায়খ আব্দুর রহমান হচ্ছেন বিরোধী দলের যুব সংগঠনের সাধারণ সমঙ্াদক মীর্যা আযমের আপন দুলাভাই। উলে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।