সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!
এই পোস্টের বক্তব্য পূর্বের দুটি পোস্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ধারাবাহিকতার সুবিধার্থে লেখা দুটি ( Click This Link এবং Click This Link) এইখানে।
----------------------------------------------------------------------------------
সিংহাসনের জন্য সম্রাট অশোক তার সমস্ত সৎ ভাইদের হত্যা করেন। নিষ্ঠুরতা ও বর্বতার জন্য তাকে চন্ডাশোক নামে ডাকা হত। অবাধ্যদের শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি এক বিশেষ স্থাপনা নির্মাণ করেন।
ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত এই স্থাপনাটি এখনো টিকে আছে। সেখানকার মানুষ এখনো এটিকে পৃথিবীর দোজখ নামে ডাকে। অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার নেশায় তিনি বহু যুদ্ধ চালান এবং অগণিত মানুষকে হত্যা করেন। অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার নেশায়ই হোক কিংবা সৎভাই সুগুপ্তকে আশ্রয় দেয়ার কারণেই হোক তিনি কলিঙ্গ (বর্তমান উরিষ্যা) রাজ্য আক্রমণ করেন। সে সময় কলিঙ্গ ছিল ভারতের সবচেয়ে সভ্য, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভাবধারায় চালিত রাষ্ট্র।
অশোকের আক্রমণে এই সমৃদ্ধ ও সভ্য জনপদটি সমূলে বিনাশ হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধে তিনি প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ হত্যা করেন। পরবর্তীতে যুদ্ধের বিভীষিকার কারণেই হোক অথবা পাপবোধের কারণেই হোক অথবা বয়সের ভারের কারণেই হোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং মানবপ্রেমিকে পরিনত হন। বৌদ্ধধর্মকে তিনি ভারতের রাষ্ট্রধর্মে পরিনত করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দূত পাঠিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
অশোকের ছেলে রাজকুমার মহেন্দ্র এবং মেয়ে রাজকুমারী শংখমৈত্রা সিংহল অর্থাৎ বর্তমানের শ্রীলংকায় গমণ করেন। আজকের শ্রীলংকায় বৌদ্ধদের যে সংখাগরিষ্ঠতা তা তাদেরই প্রচেষ্টার ফসল।
শুধু শ্রীলংকা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পিছনে অন্য যেকারো চেয়ে অশোকের ভূমিকা অনেক বেশি। স্বভাবতই বৌদ্ধ সন্যাসী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টরা অশোকের নিকট কৃতজ্ঞ। অনেকের কাছে ভগবান বুদ্ধের পরেই তার স্থান।
বৌদ্ধপন্ডিতদের বিশ্বাস অনুসারে অশোকের আগমনের ভবিষ্যৎবাণী স্বয়ং ভগবান বুদ্ধের। যদি তাই হয় তবে অশোকের এ আগমন এবং প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রকৃতি বা পরমাত্মার নির্দেশ বা ইচ্ছানুসারে এবং তা পূর্বনির্ধারিত। প্রকৃতি বা পরমাত্মা অশোককে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে বা তাকে মানবপ্রেমিক করতে গিয়ে যে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করল তার দায়ভার কার? এই মানুষগুলোর প্রাণের কোন মূল্যই কি প্রকৃতির কাছে নেই? যে মানুষ হত্যা করে, যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে শেষ বয়সে ধর্মকর্ম পালনেই সে মহৎ হয়ে যায়? কিংবা তার মুক্তি মেলে?
যীশূর জন্মটাকে এতো বিতর্কিত করার কি প্রয়োজন ছিল ইশ্বরের? যীশুর আগেও তিনি পৃথিবীতে নবী পাঠিয়েছিলেন। ডেভিড, সলোমন, আব্রাহামরা কেউ পিতৃ-পরিচয়হীন ছিলেন না। তবে কেন যীশূকে পিতৃ-পরিচয়হীন থাকতে হবে? কেন পিতৃ-পরিচয় না থাকার কারণে সাধারণের কাছে তাকে ঈশ্বরের পুত্র সাজতে হবে।
লুই পাস্তুর নামে একজন ফরাসী বৈজ্ঞানীক প্রমাণ করেছেন কেবল মাত্র জীব থেকেই জীবের জন্ম হয়। শুধুমাত্র কিছু আদি-এককোষী প্রাণী ব্যতিত মানুষ এবং বেশিরভাগ জীবই বংশবৃদ্ধি করে যৌন প্রজনন প্রকিয়ার মাধ্যমে। যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র ডিম্বানুর (স্ত্রীর জনন কোষ) মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি অসম্ভব। প্রয়োজন ডিম্বানু ও শুক্রানুর (পুরুষের জনন কোষ) মিলন। কাজেই শুধুমাত্র ডিম্বানুর গুণে যীশূ জন্মগ্রহন করেছেন এটা বিজ্ঞান স্বীকার করেনা।
যেমনটা স্বীকার করেনা ইহুদীরাও। অতিমাত্রায় অলৌকিকতা দেখাতে গিয়ে তার পুত্রের জন্মকে জগতের কাছে এমন বিতর্কিত করার কি প্রয়োজন ছিল ইশ্বরের?
বাইবেলের বর্ণনামতে যীশূ মৃতকে জীবিত করেছেন, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করেছেন, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, কেবলমাত্র দুটো রুটি এবং দুটো মাছ দিয়ে সমবেত হাজার হাজার মানুষকে খাইয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ তা অবলোকনও করেছে। একজন অতিবোকা মানুষও এই দৃশ্য দেখার পর তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার কথা নয়। বরং সবসময়ই তাকে অনুসরণ করার কথা।
তার জন্য জীবন দেয়া তুচ্ছ ব্যাপার মাত্র। অথচ এই লোকটিকেই তার কোন শত্রু নয় বরং তার একজন শিষ্যই সামান্য ঘুষের লোভে ধরিয়ে দিল। ক্যামন অবিশ্বাস্য কাজ? তার প্রিয় শিষ্য কিভাবে এটা করল? কথিত স্বর্গরাজ্যের পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে সে ক্যামন করে এ জঘন্য কাজটি করল? তার কি একবারও মনে পড়েনি এই লোকটিই মৃতকে জীবিত করেছেন, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করেছেন, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, কেবলমাত্র দুটো রুটি এবং দুটো মাছ দিয়ে সমবেত শত শত মানুষকে খাইয়েছেন? তার হাত ধরেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে হবে? আসলেই আচরণটা ক্যামন খাপছাড়া লাগে। আমার মনে হয় নাটকের এ অংকটাকে আরো বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে উপস্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ ঈশ্বরের ছিল।
যীশূর একজন অতিপ্রিয় ও অনুগত শিষ্য ছিল পিতর।
অথচ এই পিতরই গ্রেফতারের পর বিচারাধীন যীশূকে পরপর তিনবার অস্বীকার করেন। সমবেত জনতাদের অনেকেই পিতরকে যীশূর শিষ্য এবং কাছের লোক হিসেবে চিহ্নিত করলেও সে তা অস্বীকার করে এবং সে যীশূকে চিনেনা বলে জানায়। এখানেও সেই একই প্রশ্ন। ক্যামন সে করে যীশূকে অস্বীকার করল? তার কি একবারও মনে পড়েনি এই লোকটিই মৃতকে জীবিত করেছেন, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করেছেন, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, কেবলমাত্র দুটো রুটি এবং দুটো মাছ দিয়ে সমবেত শত শত মানুষকে খাইয়েছেন? সেতো এসব কর্মকান্ড নিজের চোখে দেখেছে। এমন একজন ধর্মাত্মা ও ক্ষমতাবানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করাটাতো ভাগ্যের ব্যাপার।
নাটকের এই দৃশ্যটাও ক্যামন খাপছাড়া লাগে। এটাকেও আরো বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে উপস্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ অবশ্যই ঈশ্বরের ছিল।
সে সময়ে জেরুজালেমে রোম সম্রাটের প্রতিনিধি ছিলেন পিলাত। সে ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির শাসক। এই নিষ্ঠুর পিলাতও যীশূকে মুত্যুদন্ড দিতে বিশেষ উৎসাহী ছিলেননা।
যীশূর অপরাধকে তার কাছে রাষ্ট্রদ্রোহীতা বা ধর্মদ্রোহীতার মতো মনে হয়নি। সমবেত জনতা এবং ধর্মগুরুরা যীশূকে মৃত্যুদন্ড দিতে পিলাতকে একপ্রকার বাধ্যই করেন। অথচ এই জনতা, এই ধর্মগুরুরাই যীশূকে মৃতকে জীবিত করতে, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতে, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করতে, কেবলমাত্র দুটো রুটি এবং দুটো মাছ দিয়ে সমবেত শত শত মানুষকে খাওয়াতে দেখেছেন। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখার পরও তারা কিভাবে এই ধর্মাত্মার মৃত্যুদন্ড দাবি করল। নাটকের এই অংকটিও কিন্তু প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়।
কবর থেকে ওঠে যীশূ তার প্রিয় শিষ্যদের দেখা দিয়েছিলেন। প্রিয় শিষ্যরাতো তার অনুগতই ছিল। তিনি যে ধর্মাত্মা বা ঈশ্বরের পুত্র সেটা তার প্রিয় শিষ্যদের কাছে প্রমাণের কিছু ছিলনা। তাছাড়া প্রিয় শিষ্যরা নিজের অবস্থান শক্ত বা নিজেদেরকে সত্যপথগামী প্রমাণ করার জন্য এটা প্রচার করবেই। আমার কাছের লোকরা আমার গুণগান করবে এটাই স্বাভাবিক।
সে হিসেবে তারতো দেখা দেওয়া উচিত ছিল পিলাত বা ইহুদি ধর্মগুরুদের কাছে যারা তার উপর অত্যচার করেছে, তাকে শূলে চড়িয়েছে। তাদের কাছেইতো তার বলা উচিত ছিল "দেখ তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করেছে, শাস্তি দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে। অথচ আমিই সেই ঈশ্বরের পুত্র। দেখ নিজের চোখে আমাকে দেখ। আমি মরিনি।
" কিন্তু তিনি তা করেননি। এক্ষেত্রে যীশূর পুনরায় জিবীত হওয়ার এই নাটকটাও কি প্রশ্নসাপেক্ষ নয়?
কোন বিশেষ ধর্মকে খাটো করার উদ্দেশ্যে আমার এ লেখা নয়। আমি শুধু পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর আলোকে ঈশ্বরের কিছু কিছু কর্মকান্ড এবং এর যথাযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। এগুলোর উত্তরে বিশ্বাসীরা যা বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে, ঈশ্বর হচ্ছেন সার্বভৌম শক্তির উৎস এবং সার্বভৌম শক্তি কোন প্রকার জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তিনি শুধু সার্বভৌম শক্তিরই অধিকারী নন সেইসাথে স্বেচ্ছাচারীও বটে।
আমরা জানি পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী ও স্বেচ্ছাচারী শাসককে আম-জনতা সিংহাসন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। । কিন্তু ঈশ্বর নামক চির রহস্যময়, অদৃশ্য এই স্বেচ্ছাচারী, সার্বভৌম শক্তিকে কে ক্ষমতাচ্যুত করবে? নিঃসন্দেহে বিজ্ঞান। আমি নিশ্চিত বিজ্ঞানই একদিন এই স্বেচ্ছাচারীর তখত চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিবে। সেইদিনের প্রতিক্ষায় থাকলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।