জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
প্রথম পর্ব এখানে
উদাহরণ -০২ (এক্স রে রুম সমাচার) :
দুর্ঘটনা ঘটার পর আমার ভাইয়ের বা পায়ের ৩টি আঙ্গূল পড়ে যায়। তাকে জরুরী ভিত্তিতে এক্স রে করানোর কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পঙ্গু হাসপাতালেই এক্স রে করার ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালের কর্মচারী মনে করে যেই লোকটির সাহায্য নিচ্ছিলাম, তিনি ও আমি মিলে আমার ভাইয়ের স্টেচার ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাই এক্স রে রুমে।
আমার ধারণা ছিল এক্স রে করার আগে এক্স রে ফি পরিশোধ করতে হবে।
এত কাল সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স রে করার বা যে কোন টেস্ট করানোর আগে টাকা দিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই প্রথমে খোঁজ নিলাম কোন কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হবে। এক্স রে রুম সংলগ্ন একটা কাউন্টার আছে কিন্তু সেখানে কোন লোক নাই। বাধ্য হয়ে ভিতরে ঢুকলাম। এক্স রে যিনি করাবেন তিনি বললেন, টাকা দেওয়ার দরকার নাই।
আপনে বাইরে অপেক্ষা করেন। তার আচরণে আমি খুশি হলাম।
কিছু ক্ষণ পর আমার ভাইয়ের ডাক পড়ল। নিয়ে গেলাম ভাইকে। এক্স রে হল।
ভাইকে এক্স রে রুম থেকে বের করলাম। এক্স রে রুমের দায়িত্বরত লোকটি আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। অপেক্ষা করার জন্য ক্যাশ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। টাকা দেব কাকে তাই ভাবছি। কাউন্টারের ও পাশ থেকে সেই লোকটি ভেতরে যেতে বললেন।
এক্সরে রুমের ভেতরে গেলাম। তিনি এক্স রে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। টাকার কথা জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন, দেন। বুজ কইরা দেন।
আমি উল্টো জিজ্ঞেস করলাম, এক্স রে করানোর বিল কত ?
উনি উত্তরে বললেন, সেইটা তো বলে লাভ নাই।
আপনে দেন।
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, কত দেব ?
আমাদের কিছু খরচাপাতি আছে। বুজ কইরা দেন।
সেটা কত ?
দুই তিনশ যা পারেন।
আমি দু শ টাকা বের করলাম।
বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলাম, এক্স রে করার সরকারী রেট কত ?
এক শ দশ টাকা।
ঠিক আছে আপনি কিছু রেখে বাকিটা দেন।
লোকটি বিগলিত হাসি দিল। বলল, আর চাইয়েন না। অনেকে খুশি হয়া এর চেয়ে বেশিও দিয়া যায়।
তিনি পুরো দুশ টাকা পকেটে রেখে দিলেন। কেবল ভদ্রতা করে বললেন, খুশি হয়া দিছেন তো ?
আমি বোকা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমার মাথায় তখন ঘুরছে আমার ভাইয়ের কথা। এই দুই একশ টাকা নিয়া মাথা ঘামানোর সময় নাই। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে আমার ভাইকে নিয়ে জরুরী বিভাগের দিকে রওয়ানা হলাম।
পরে খেয়াল হল উনি যে সরকারী বিল ১১০ টাকা বললেন সেটার তো কোন জমা রশিদ আমাকে দেননি। তার মানে পুরো ২০০ টাকা উনি ইচ্ছে করলেই পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে পারবেন।
প্রতিদিন শত শত মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ে এখানে এক্সরে করতে আসছে। এই এক্স রে রুমের লোকটি খরচাপাতি বাবদ প্রতিদিন কত হাজার টাকা কামায় কে জানে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।