আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগ নেতারা মন্ত্রীত্ব পেয়েছে, ক্ষমতা পায় নি; ঘরের শত্রুরাই তাদের বড় শত্রু



“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” এ অবিস্মরণীয় গানের স্রষ্টা, নির্ভীক কলম সৈনিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক, বরেণ্য সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় বসেছে ঠিকই, কিন' এখনো বাঙালি জাতির কাঙিক্ষত মুক্তি মিলেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা ওঁৎ পেতে আছে সর্বত্র। তার প্রমাণ ২৫ ফেব্রুয়ারির বিডিআর ট্র্যাজেডি। সেদিন ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল দেশে একটা গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় বসাতে। তিনি বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছে।

তাঁকে মনে রাখতে হবে ঘরে বাইরে শত্রুরা ঘাপটি মেরে আছে। ঘরের শত্রুরাই আওয়ামী লীগের বড় শত্রু। শেখ হাসিনার আশপাশের ধেঁড়ে ইঁদুরগুলো ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। তিনি ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, আমি নিজে এক সময় ছাত্রলীগ করতাম। আজ সে পরিচয় দিতে লজ্জা পাই।

এ ছাত্রলীগের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার পাপের বোঝা ভারি হয়ে গেছে। জিয়া পরিবারের হাতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত লেগে আছে। জাতীয় চার নেতা, কর্নেল তাহের, ১৩০০ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা, আইভি রহমান, কিবরিয়া সাহেবের রক্ত লেগে আছে। এ পাপের বোঝার কারণেই খালেদা জিয়ার দিন শেষ।

বিএনপি হয়তো টিকবে, তবে তার জন্য নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সাপ্তাহিক ‘সাহসী ঠিকানা’ আয়োজিত পৃথক দুটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন। নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাপ্তাহিক সাহসী ঠিকানার নবম বর্ষপূর্তি ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাফ্‌ফার চৌধুরী আরো বলেন, চট্টগ্রামের সাথে আমার সম্পর্ক নিবিড়। প্রাকৃতিক সম্পদে, মানসিক ঐশ্বর্যে অনন্য এ চট্টগ্রাম।

একুশের প্রথম প্রহরে লেখা “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতার স্রষ্টা মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী এ চট্টগ্রামের সন্তান। ৬০’র দশকে বছর খানেক ছিলাম চট্টগ্রাম। বোস ব্রাদার্সের রসমালাই, কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস, শ্মশ্রু মণ্ডিত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের সাহচর্য পেয়েছি, দৈনিক আজাদী সম্পাদক প্রফেসর খালেদ সাহেব, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক কেজি মোস্তফা কিংবা দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের আবুল মোমেন এদের সকলের সাথে আমার সম্পর্কটা এখনো প্রেরণা যোগায়। আমি বিশ্বাস করি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত কাগজগুলো প্রচারে না হলেও মান ও মননে অদ্বিতীয়। চট্টগ্রাম তাই সব সময় আমার কাছে প্রেরণাদাত্রী।

কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী প্রসঙ্গে বলেন, মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি তার অমরত্ব লাভের কাজটি করেছেন। দুই বাংলা মিলে আমি মনে করি শ্রেষ্ঠ কলামিস্ট তিনি। তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেন না। চাবুক মেরে হলেও জাতিকে তিনি জাগিয়ে রাখেন। ইতিহাসের প্রতি তাঁর যে দায়িত্ববোধ তা তিনি পালন করে চলেছেন।

আজীবনের একজন মুক্তিসংগ্রামী আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। একটা জাতির যে যাত্রাপথ, তাকে পরিচালিত করতে করতে তিনি কিংবদন্তি। সাহসী ঠিকানা সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাক আহমদ এবং লন্ডনস' বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টারের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা পারভিন সুলতানা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, এস এম জামাল উদ্দিন, কাউন্সিলার এড. রেহানা বেগম রানু, কমরেড শাহ আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংবর্ধেয় অতিথি আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীকে সাহসী ঠিকানার পক্ষ থেকে সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।

বিকেলে লালদীঘির মাঠে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বর্তমান সময়কে অত্যন্ত কঠিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ১৯৫৪ সালে শেরে বাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করলেও তিন মাসের মধ্যে বন্দুকের নলের মুখে সে সরকারকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। তাই মনে রাখা উচিৎ সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আসল মিত্রদের খুঁজে নিতে হবে, তাদের উপর আস্থা রাখতে হবে। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়, অথচ মাত্র ৩ দিন পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক জামায়াত নেতাকে আটক করে জামাই আদরে রাখা হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা মন্ত্রীত্ব পেয়েছে, কিন্তু ক্ষমতা পায়নি।

ক্ষমতা রয়ে গেছে আমলাদের হাতে। এরা যে কোন মুহূর্তে সরকারকে ধাক্কা দিতে পারে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে বলেন, কখন কাকে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে তা বঙ্গবন্ধু জানতেন। তাই তিনি যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা প্রথম দিকে অহিংস থাকলেও সময়ের প্রয়োজনে সহিংস রূপ নেয়। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চক্রান্ত কখনো সফল হবে না।

বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্ট বাড়ি প্রসঙ্গে গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেন, বাড়িটা তাঁর কেনা নয়। যিনি তাঁকে দান করেছেন সেই এরশাদ সাহেব আজ বলছেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনীতি করবেন জানলে বাড়িটা তাঁকে দিতেন না। ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনীতি করলে জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, এ পুণ্যভূমিতে আসতে পেরে তিনি গৌরববোধ করছেন। অতীতে বারে বারে চট্টগ্রাম নেতৃত্ব দিয়েছে আগামীতেও সে দায়িত্ব পালন করে যাবে।

সিটি মেয়র আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ আলম, কবি আসাদ চৌধুরী, সিটি মেয়র পত্নী হাসিনা মহিউদ্দিন, ড. গাজী সালেহউদ্দিন, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার প্রমুখ। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আলহাজ্ব এ. বি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী সিনেমা প্যালেস থেকে অপর্ণা চরণ স্কুল পর্যন্ত সড়কটি আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর নামে নামকরণের ঘোষণা দেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর উপর চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ৫ কোটি টাকা তুলে দেয়া এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশের সকল ব্যয় বহনের প্রতিশ্রুতি দেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.