১ম পর্ব: Click This Link
২য় পর্ব: Click This Link
৩য় পর্ব: Click This Link
কিছু অব দ্য রেকর্ড
আমার শৈশবের উল্লেখযোগ্য স্মৃতিগুলোর একটা হচ্ছে, অপ্রাপ্ত বয়সে প্রাপ্ত প্রেমিকার পত্র। আমি তখন কাস থ্রিতে উঠেছি। নতুন ক্লাসে বসেছি। দেখলাম এক মেয়েকে সে ক্লাস ফোরের ছাত্রী। তার ফোরে ক্লাস করার কথা।
সে তান না করে থ্রি-তে আমাদের সঙ্গে ক্লাস করছে। স্যারকে সে জানাল তার বাবা তাকে থ্রিতেই নাকি আবারো পড়তে বলেছে। সে দেখতে খুবই সুন্দরী ছিল। কোন দৃষ্টিতে দেখতাম তা না বুঝলেও তাকিয়ে থাকতাম। আমার ধারণা হতো সেও আমাকে অপছন্দ করত না।
একদিন তার পছন্দের লিখিত প্রমাণ পেলাম। সে আমাকে একখানা চিঠি পাঠিয়েছে। প্রেমের চিঠি। তখন সেটা প্রায় নিষিদ্ধ জিনিসের পর্যায়ের। আমার এক আত্মীয় সেটা আমার কাছে পৌছে দিয়েছে।
প্রেমের চিঠি হাতে পেয়ে আমার প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি হাতে ধরে আছি অবৈধ কোনো অস্ত্র। চিঠিতে কি লেখা ছিল তা খুব ভালো করে পড়া হয়নি আমার। তার আগেই পাশের খালে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিয়েছি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা নষ্ট হয়নি ততক্ষণ দাঁড়িয়ে পাহারা দিয়েছি।
কেউ আবার দেখে ফেলে কিনা। কেউ পড়ে ফেলে কিনা? এই আতঙ্ক অনেকদিন বয়ে বেড়িয়েছি। প্রায়ই মনে হতো কেউ বুঝি এসে বলবে, এই তোমার একটা চিঠি দেখলাম।
এছাড়া এরকম আরেকটি প্রায় নিষিদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। মানে, ঘটিয়েছিলাম।
আমি আর আমার এক বন্ধু ক্লাসের একটা সুন্দরী মেয়ের প্রতি চরম বিরক্ত। সে তার কি এক ভাইয়ের সাথেই সারাদিন থাকে। তার সাথেই সকল খাতির। আমরা এ ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে মহা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললাম। তাদের উদ্দেশ্যে একটা প্রতিবাদী চিরকুট পাঠালাম।
আমার হাতের লেখা ভালো হওয়ায় আমার বন্ধু আমাকে সেটা লিখতে বলল। আমি লিখলাম, আর সেটাই কাল হলো। চিরকুটে তাদর নাম উল্লেখ করে লিখলাম, অমুক অমুকেকে ভালোবাসে। ওইটা তাদের হাতে পৌছানো মাত্র মুর্হূতেই কিছু অঘটন ঘটে ঘটে গেল। মেয়েটা সে চিরকুট নিয়ে দ্রুত হেড স্যারের রুমে চলে গেল।
জীবনের শুরুতে একটা শিক্ষা নিয়ে নিলাম। জানলাম, সুন্দরী মেয়েরা নিষ্ঠুর হয়। সেই নিষ্ঠুরতায় আমি আর আমার সেই বন্ধু এই মারটুকু খেয়ে বেঁচে গেলেও আমার বাঁচা হয়ে ওঠেনি। সুন্দরীর সে নিষ্ঠুরতা আমার বাসা অবধি গড়াল। সেখানে পুরোই বলি হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার মা ছেলের এমন অপরাধের কথা শুনে দা হাতে তুলে নিলেন, লক্ষ্য এমন ছেলে তিনি রাখবেন না। সেখানেও সেই দাদুর আগমন। আবারো উদ্ধার করলেন। হয়তো যার কারণেই শৈশব লেখা হয়তো সম্ভব হচ্ছে।
কিছু প্রিয় মুখ
আমার শৈশবের প্রিয় মুকের তালিকা বেশ দীর্ঘ।
এদের মধ্যে দু তিনজনের কথা উল্লেখ করলে প্রথমেই আসে সেই দাদুর নাম। কত বিপদে যে দাদু আমাকে উদ্ধার করেছেন। আর যে দুয়েকজনের কথা না বললেই নয়। একজন পার্থ, আরেকজন মিজান। দুজনেই আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।
এই দুজনের সাথে আমার শৈশবের যে স্মৃতি তা কখনোই ভুলে যাবার নয়। ভুলে যাবার নয় তাদের মুখগুলো। এই দুজনেই অনেকটা অকালেই ছেড়ে গিয়েছিল এই পৃথিবী। যে স্মৃতি আমার রঙচঙে শৈশবকে মুর্হূতেই গাঢ় আঁধারে ঢেকে দেয়। শৈশবের সেই কষ্ট এখনো আমাকে বেদনায় ডোবায়।
অদ্ভুত শূন্যতায় হাহাকার করে ওঠে ভেতরে আমার।
প্রাণময় অপ্রকাশিত দিন
শৈশবের বিস্তর বর্ণনা করা সম্ভব না। রঙচঙে শৈশবের বর্ণাঢ্য রঙগুলো আসলে কালো কালিতে বেধে রাখার চেষ্টা অর্থহীণ। আমি কীভাবে বোঝাব শৈশবের সে সময়, যে সময়ে প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতাই নতুন। কীভাবে লিখে বোঝাব চাঁদের আলোয় গ্রামের মাঠে দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলার কী অনুভূতি! লিখে কীভাবে বোঝাব, সেই, শৈশব সময়, মাকে না বলে সাইকেল ভাড়া নিয়ে সাইকেল চালানো শেখার কী ভয়ংকর আনন্দ! আমার পে বলে বোঝানো সম্ভব না প্রথম শৈশবের কথা।
বাবার হাত ধরে বিকেলবেলায় বাজারে চা খেতে যাওয়ার কি আনন্দ অনুভূতি!
তাই হয়তো শৈশবের ঘটনাগুলোই প্রাণহীন কালিতে আনা সম্ভব হয়। কখনো আনাও যায় না শৈশবের প্রাণময় ব্যাপারগুলো।
প্রাণময় অপ্রকাশিত দিন
শৈশবের বিস্তর বর্ণণা করা সম্ভব না। রঙচঙে শৈশবের বর্ণাঢ্য রঙগুলোকে আসলে কালো কালিতে বেধে রাখার চেষ্টা অর্থহীন। আমি কিভাবে বোঝাবো শৈশবের সেসময়? যে সময়ের প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতাই নতুন।
কীভাবে বোঝাবো চাঁদের আলোয় গ্রামের মাঠে দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলার কি অনুভূতি? লিখে কিভাবে বোঝাবো সেই শৈশব সময়ে মাকে না বলে ভাড়া নিয়ে সাইকেল চালানো শেখার কি আনন্দ? আমার পক্ষে বলে বোঝানো সম্ভব না প্রথম শৈশবের কথা। বাবার হাত ধরে বিকেলবেলায় চা খেতে যাওয়ার কি আনন্দ অনুভুতি! তাই হয়তো শৈশবের ঘটনাগুলো এই প্রাণহীন কালিতে আনা সম্ভব হয় না। কখনো আনা যায়না শৈশবের প্রাণময় ব্যাপারগুলো।
হেঁটে যাই বয়সের পথে
এখন আমি যেখানে থাকি সে ঘরটাও বেশ বড়। শুধু বড় না, ভালো রকমের বড়।
আগের মতো সেখানেও লাইট আছে। আছে ফ্যান। আগের সেই বিশাল ঘরে যা ছিল তার চেয়ে এখন বেশিই সুবিধা আছে। বেড়েছে অনেক নাগরিক সুবিধাও। এখনো অনেক অনুভুতি দোলা দেয়।
এখনো আনন্দ হয়। সবই ঠিক আছে শুধু প্রাণময় এবং অকৃত্রিমতার ব্যাপরটা নেই। আজকের সবই যেন কৃত্রিম জীবন যাত্রা, ব্যবহার, ভালোবাসা এমনকি সবুজ গাছপালা, নদী এবং সেই চাঁদটাকেও বড় বেশি কৃত্রিম মনে হয়। যে কৃত্রিমতায় অতিষ্ট হয়ে যাই দিনের পর দিন। প্রচন্ড ইচ্ছে করে ফিরে যাই সেই শৈশবে।
যা হবার নয়। তাই একরকম হতাশা নিয়ে হেটে হেটে যাই বয়সের পথ ধরে..।
আর প্রতিদিনই তাকিয়ে থাকি বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার দিকে, আক্ষেপ করি ইস কবে একটা টাইম মেশিন আবিস্কৃত হবে? আরেকবার ঘুরে আসবো আমার চেনা ঘ্রাণের শৈশবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।