আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা শৈশব অথবা একটা টাইম মেশিনের আক্ষেপ নিয়ে বড় হচ্ছি প্রতিদিন



আমার আমি ঘরটা বেশ বড়। শুধু বড় না, ভালো রকমের বড়। মাঝখানে হার্ডবোর্ড দিয়ে একটিকে দুটো ঘর বানানো হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মানুষকে এই ঘরে বাস করতে দেখা গেলেও মূলত তিন ধরনের প্রাণীর বাস এই ঘরটায়। প্রাণী হিসেবে মানুষগুলো ঘরের মূল বাসিন্দা।

অন্য দুই শ্রেণীর প্রাণী যারা থাকে, তারা পাখি। এক শ্রেণী কবুতর, অন্যরা চড়ুই। সাধারণ হিসেবে বলা যায়, পাখিগুলো সাবলেট থাকে। তবে ভাড়া দেয় না। বিশাল ঘরটার উপরের দিকে কিছু খোপ খোপ অংশ আছে।

সেখানেই পাখিগুলো থাকে। ঘরটা মানুষের হলেও পাখিদের প্রভাব-প্রতিপত্তিই এখানে বেশি। দিনভর চিৎকার চেচামেচি, যেখানে সেখানে খড়কুটো ফেলে রাখাসহ নানা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে এই ঘরের মানুষদের উপর। পাখিদের মধ্যে চড়ুইগুলো একটু বেশি উশৃঙ্খল। তবে শান্ত ধীরস্থির কবুতরগুলোও কম বিরক্ত করে না।

খড়কুটো ফেলে দেয়া, যেখানে সেখানে বাথরুম কর দেয়া এবং বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুত অদ্ভুতভাবে ঢেকে তারাও সমানতালে ঘরের মানুষকে বিরক্ত করে যায়। ঘরের মানুষগুলো সবাই বিরক্ত হয় কিনা কে জানে? তবে এটা নিশ্চিত কেউ পাখিদের এই বিষয়গুলোতে আনন্দ পায় না। এত বিরক্ত কাদের ভালো লাগে? তবে ঘরের ছোট্ট ছেলেটার আচরণ কিছুটা সন্দেহজনক। সে বোধহয় কিছুটা পছন্দ করে। ঠিক করে বলা না গেলেও, মনে হয় করে।

কারণ, ঘরে পাখি ঢুকলেই তার চোখ চকচক করে ওঠে। খুশি হয়। তাদের নিয়ে তার সামান্য ভাবনা চিন্তাও করে। তারা কীভাবে থাকে? কী খায়? তাই ভাঙা বিস্কুট, রুটির ছেড়া অংশ ঢিল মেরে পাখির বাসায় দেয়ার চেষ্টা করে। এই খাবার পেলে পাখিদের কি আনন্দ হবে? ভেবে সে-ই পাখিদের চেয়ে বেশি আনন্দিত হয়।

ছোট্ট ওই ছেলেটার নাম ইশতিয়াক। এই আমি। রাজরাজাদের কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা এবং পরে কলেজের বোর্ডিং হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে শেষ পর্যন্ত আবাসিক এরিয়া হয়ে ওঠা। ওইখানে বাস ছিল আমার। আমাদের।

আইন পেশায় নিযুক্ত বাবা, মা গৃহিণী আর ছোট্ট একটা বোন নিয়েই মুড়াপাড়া কলেজ বোর্ডিংই মূলত আমার বাসস্থান হিসেবে শৈশবকালের অস্পষ্ট স্মৃতি জুড়ে আছে। আমার পরিবেশ আমার জন্ম নারায়ণগঞ্জে হলেও বাবার কাজের সূত্রে রূপগঞ্জে চলে যেতে হয়। প্রথম এক বছর কাটে গ্রামের বাড়ি নগরপাড়াতে। তারপরের পুরোটা সময়ই মুড়াপাড়ার কলেজ বোর্ডিংয়ের সেই বিশাল ঘরটায়। সে সময়ের মুড়াপাড়া মোটামুটি অনুন্নত এক মফস্বল এলাকা।

উন্নত অনুন্নতের হিসেব পরে করলেও সে সময় সেটাই ছিল আমার সমৃদ্ধ রাজ্য। আমার নিজেকে ছড়িয়ে দেবার প্রাণপ্রিয় ভূমি। ব্যাপক শাসনে আমার শৈশব শুরু হয়। ঘরের ভেতরই থাকতে হতো ভালো একটা সময়। আমার চারপাশের পরিবেশে আমি শৈশবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছিলাম।

ঘরের সামনে উঠান, পাশে ছোট্ট খাল, খালের ওপাশে বিশাল মাঠ। আবার বাড়ির এরিয়া থেকে বের হলে রাস্তার পাশে বিশাল দিঘী। সবই যেন মন ভালো রাখার আয়োজন। মনে হতো যেন ওসব আমার জন্যই ছিল। এদের নিয়ে শুরু হয় আমার জীবনের পথ ধরে হাটা।

(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.