১ম পর্ব: Click This Link
২য় পর্ব: Click This Link
বন্ধুবান্ধব
আমার জীবনে বন্ধুদের অভাব ছিল না কোনোকালেই। যেটা শুরু হয়েছিল স্কুল থেকেই। আমার প্রায়ই একটা নাম মনে আসে, আমার ধারনা সেই প্রথম যার সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। নাম ছিল, প্রিন্স। সে খুব সম্ভবত আমার সাথে স্কুলে দুয়েক বছর লেখাপড়া করেছিল।
বন্ধুত্ব ভালোভাবে বোঝার আগেই তাকে আর দেখিনি। আজ এ সময়ে কোনোভাবেই মনে করা যাচ্ছে না সেই প্রিন্সের চেহারাটা। জীবনে দেশে বিদেশের বহু প্রিন্সের নাম শুনেছি, কখনো কাউকে দেখার ইচ্ছে হয়নি। যতটা আগ্রহ নিয়ে আছি প্রথম বন্ধুত্বের হাত নিয়ে আসা প্রিন্সকে দেখব কোনো একদিন। তারপর আমার শৈশবের নানা সময়ে নানা ধরনের ছেলেদের সাথে পরিচয় ঘটে, বন্ধুত্ব হয়।
সেই তালিকায় স্কুলের বন্ধুদের সারিটা যেমন দীর্ঘ, তেমনি দীর্ঘ স্কুলের বাইরের বন্ধুরাও।
আমার গৃহশিক্ষক্ক ও লেখাপড়ার ইতিহাস
ছাত্র হিসেবে আমার যতটুকুই গৌরবের ইতিহাস আছে, সেটা আমার শৈশব সময়েরই। সে সময়টা যত মাঠে ঘাটে ঘুরেছি, খেলেছি তেমনি প্রচুর পড়াশোনাও করেছি। ইচ্ছে করেই যে লেখাপড়া করতাম বিষয়টা সে রকম না। লেখাপড়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আমার ফ্যামিলি।
বাসা থেকেই আমার চারপাশে বেধে দিয়েছিল গৃহশিক্ষকদের একটা বিশাল দেয়াল। যে দেয়ালটা ভেঙে সহজেই বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই চাপে হোক আর যেভাবেই হোক আমি মোটামুটি ভালো ছাত্র হয়ে উঠেছিলাম। স্যারদের এই দেয়ালের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেয়ালটির নাম ছিল শাখাওয়াত। এত কঠিন মানুষ! একটা সন্ত্রাসী, মানুষের কতটা আতঙ্কের বিষয় হয়? তার চেয়ে শাখাওয়াত স্যার আমার কাছে বড় আতঙ্কের নাম ছিল।
আমার একটা সময়ের সকল আনন্দ বিনাশ করে দিয়েছিলেন। আমার স্বপ্নময় ভূমিতে তোলা ভূবন তিনি প্রতিদিন ভেঙে দিতেন লেখাপড়া নামের বুলড্রোজার চালিয়ে। এখন ঠিক করে বলতে না পারলেও মনে হয় আমার শৈশবের বহু রাত হয়তো তার আতঙ্কে ঘুম ভেঙে গেছে। যে 'মার' তিনি আমাকে মেরেছেন, সে পরিমাণ মার একজীবনে কোনো ছাত্রের 'দুর্ভাগ্যে' হয়তো জোটে না। যে মারের সময় আমার মা বাবাও কখনো আসার সাহস করেনি।
তবে একজন প্রতিদিনই সেই মারের সময় আমাকে এসে জড়িয়ে রাখতেন, বাঁচাতে চেষ্টা করতেন তিনি এক শিক্ষকের মা। আমরা দাদু ডাকতাম। স্যারের ভয় আমার সবকিছুতেই জড়িয়ে ছিল। মনে পড়ে স্যারের ভয়ে আত্মীয়স্বজনদের সাথে সিনেমা দেখতে গিয়ে অর্ধেকের আগেই একা একা বের হয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম। তবে এই স্যারের জন্য আমার লেখাপড়ার ভিত্তি দাঁড়িয়েছিল।
তার তত্ত্বাবধানে আমিই জীবনে প্রথম কোনো সাফল্যের মুখ দেখি। বুঝে না বুঝে পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি পেয়ে যাই। তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তৈরি করে দিয়েছিলেন আমার লেখাপড়ার ভিত্তি। যার কারণে বৃত্তি পরীক্ষায় শেষ দুটো পরীক্ষা কোনো প্রকার না পড়েই হলে যাওয়ার সাহস করেছিলাম। আমার এখনো মনে পড়ে দ্বিতীয় পরীক্ষার আগের রাত।
গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। সে সময় শাখাওয়াত স্যারের সাথে আরেকজন ছিলেন, খলিল স্যার। জ্বরের কারণে আমার বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। খলিল স্যার আমাকে লেপ মুড়ি দিয়ে ধরে আছেন। সামনে শাখাওয়াত স্যার অঙ্ক করছেন।
আমি তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে, আমিই স্যার। তো তারপরেও আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বৃত্তি পাওয়া। তবে আমার মনে হয়, ওই বৃত্তিটা আসলে আমি পাইনি, পেয়েছিলেন শাখাওয়াত স্যার।
আমার জগৎ
আমার শৈশবের কোনো পর্বে আমি খুব একটা অন্যরকম ছিলাম না।
খুব স্বাভাবিক, সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। যখন যার সাথে ভালো লেগেছে, চলেছি। যেখানে ইচ্ছে হয়েছে ঘুরেছি। তবে যেকোন খেলাধুলার প্রতি ছিল অন্যরকম আকর্ষণ। সারাদিনই ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার পোকা মাথায় ঘুরত।
মায়ের কঠিন বারণে তা সম্ভব হত না। তবে বিকেলে মায়ের চোখ ফাকি দেয়া ছাড়া আর বিকল্প উপায় ছিল না। যেভাবে পারতাম বেরিয়ে যেতাম। সন্ধ্যায় আসলে কি হবে সেটা পড়ে ভাবা যাবে। শৈশবে আমার সবচেয়ে আনন্দের দিনগুলো ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরের দিনগুলো।
এর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, এ এক অন্য আনন্দের ছুটি। স্কুলে যেতে হতো কিন্তু পড়াশোনা ছিল না। সারাদিন স্যারেরা আমাদের নিয়ে ঘুরতেন। এই খুশির আরেকটা বড় কারণ ছিল, আমার প্রাইমারি স্কুলজীবনে কখনো দুই টাকার বেশি আমাকে দেয়া হতো না। কিন্তু এই দিনগুলোতে আমি পেতাম ১০ টাকা।
আমার কাছে সে সময় বিশাল একটা নোট। আগের দিন রাতে আমি এজন্য ঘুমাতে পারতাম না। এত টাকা আমি কিভাবে খরচ করব এই ভাবনায়। আমার জন্য আরেকটা খুশির সময় ছিল পুঁজার সময়। পূজোর পর পরই রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মেলা হতো।
যে মেলা যাওয়াটা আমার তখনকার পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় কাজের একটা ছিল। আত্মীয় কোনো বড় ভাই, অথবা বাবার কোনো কর্মচারীকে দিয়ে আমাদের মেলায় ঘুরে আসতাম। সঙ্গে খেলনা। ওই রাতগুলোও আমি ঘুমাতে পারিনি আনন্দে।
আজ আমার বারবার ইচ্ছে হয় যদি আরেকবারের জন্য ফিরে যাওয়া যেত সে সময়ে!
(আগামী পর্বে সমাপ্য )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।