মধুপুর বন আগুনে জ্বলছে নেভানোর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বন, শালবন খ্যাত মধুপুর বনে আগুন লেগেছে। গত ৪ মার্চ প্রথম মধুপুর বনের বেড়িবাইদ বিটে আগুন লাগে। এরই মধ্যে বনাঞ্চলের শত শত একর প্রাকৃতিক বন ভস্মীভূত হয়ে গেছে। আগুন নেভানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষে থেকে। এলাকাবাসী জানান, আগুন নেভানোর কোনো উদ্যোগ না থাকায় মধুপুর বনের বিভিন্ন বিটের প্লটগুলোতে আগুন জ্বলছেই।
এতে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধনসহ পুড়ে যাচ্ছে এ বনের দুষ্প্রাপ্য ভেষজ চিকিৎসার প্রধান উপাদান বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ।
বন পুড়ে খাবার সংকট হওয়ায় বন্যপ্রাণীরা বেরিয়ে আসছে লোকালয়ে। আশপাশের ফসলের ক্ষেতে নেমে আসছে বানরের দল। আগুনের লেলিহান শিখায় অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে সাপ, গুঁইসাপসহ সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীসহ নানা রকম পোকামাকড়। এদিকে আগুনের লেলিহান শিখায় মধুপুর বনের অরণ্য পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বনের প্রায় দেড় হাজার একর এলাকা এখন সবুজপাতাহীন বিবর্ণ। সাপ, খরগোশ, সজারুসহ অন্য প্রাণী এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। মুক্তবনে রয়েছে কয়েকশত বানর আর ১০/১২ জোড়া হনুমান। এ ছাড়া কাঁঠবিড়ালীর দাপাদাপি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
এটি আজ একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ।
এই সংবাদে আমাদের কিংবা কর্তৃপক্ষকে আজ ১৭মার্চ পযর্ন্ত কতটা নাড়া দিয়েছে বুঝতে পারছি না। আমাদের অনুভূতিগুলো কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। আমরা বড় বড় বিপর্যয়গুলো এত অল্প সময়ে দেখছি যে কোন বিপর্যয়ই এখন আর বিপর্যয় মনে হয় না। অথবা পরিবেশ বিষয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার সময় নেই। তা না হলে যে বনভূমি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে তার প্রতি এত অনীহা বা অবহেলা কেন? কথাটি এজন্য বলতে হচ্ছে আমরা দেখেছি ১৩ মার্চ ২০০৯ ঢাকার একটি বহুতল বানিজ্যিক ভবনে অগি্নকান্ড সংঘটিত হওয়ার সংবাদে সকলেই কেমন উদ্বিগ্ন ছিলেন।
অগ্নি নির্বাপনের জন্য সামরিক ও বেসামরিক সংস্থা কিভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কারণ অনুসন্ধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন আমাদের আরো বড় সম্পদ। এটি যত তাড়াতাড়ি আমরা অনুধাবন করতে পারব ততই মঙ্গল।
বিগত কয়েক বছর যাবত মধুপুর বনে কথিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের অন্তরালে স্বার্থান্বেষী মহলের বিরামহীন লুটপাটের ফলে ৪৫ হাজার ৬০০ একরের মধুপুর প্রাকৃতিক বন এখন মাত্র সাড়ে ৭ হাজার একরে চলে এসেছে।
এই প্রক্রিয়ায় বন সংকোচন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রাকৃতিক এই বনে উন্নয়নের কথা বলে শিল্প, বনায়ন, পূনর্বাসন, কৃষি প্রভৃতির দোহাই দিয়ে বনভূমির জীববৈচিত্রের উপর ব্যাপক হত্যাকান্ড চলেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ও আদিবাসীদের বনের জন্য হুমকি স্বরূপ প্রমাণ করার চেষ্টাও চলেছে। বৈদেশিক ঋণ বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো জীববৈচিত্র রক্ষার নামে তাদের বানিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি চালিয়েছে বিদেশি কিংবা ভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ। তারা বন উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নামে বিভিন্ন সময়ে সভা সেমিনার করে থাকে।
অথচ আজ ১০-১২দিন যাবত বন পুড়লেও তাদের কোন উচ্চবাচ নেই। এই শহরের সুউচ্চ ভবনের আগুন লাগার খবরে দেশে তুলফার হচ্ছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দেশের সকল পদস্থ কর্মকতা-কর্মচারী পদচারনায় মুখরিত আক্রান্ত এলাকা। বিজ্ঞজনের মুখে হাজারো প্রশ্ন উত্তরে ছাড়াছড়ি। আগুন নিবানোর জন্য হেলিকপ্টার দরকার, আরো আধুনিক করা দরকার আমাদের দমকল বাহিনী।
কিন্তু আজ ১২দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণীকুল, পুরো বন আজ হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু নিশ্চুপ আমরা সকল সচেতন গোষ্ঠী এ থেকে আমরা কি ধারণা করব আমাদের প্রতি যে, আমরা বনের ব্যাপক ক্ষতির অপেক্ষায় আছি। যেন এই আগুন আর একটু বিস্তৃত হয় এবং বন আরও সংকুচিত তারপর আন্দোলন চলবে। সরকারের দোষ ত্রুটি, জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা, বিদেশি সংস্থার যোগসূত্র সবই খোজা হবে।
হাসি হাসি মুখ একদল আলোচকের ভীড় পড়বে দেশের সবকটি টিভি চ্যানেলে। কেউ কেউ অস্টেলিয়ার দাবানলের অভিজ্ঞাতার কথা বলবেন, কেউ আগুনের সাথে আমাদের দূর্নীতির একটা যোগসূত্র খুজে পাবেন।
দূভাগ্য বলতেই হয় আমরা এই প্রাকৃতি সম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছি না। শুধুমাত্র টাকার হিসেব করলেও এই বনের শত শত হেক্টর ঝলসিত বনভূমির ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল গোষ্ঠীর এই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি অবহেলার কারণ কী?
বর্তমানে বেড়িবাইদ বিটসহ গাছাবাড়ী বিট, লহড়িয়া বিট, জাতীয় উদ্যান বিটসহ প্রায় সব বিটেই আগুন জ্বলছে।
জানা যায়, মধুপুর ফায়ার ব্রিগেডের সহায়তায় অগ্নিনির্বাপক দল গত বৃহস্পতিবার দিনভর চেষ্টা চালিয়ে কয়েকটি স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। যোগাযোগের অসুবিধা থাকায় পানি সংকটের কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়। কিন্তু ঢাকা থেকে কিংবা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কোন দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কিনা তার খবর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হতে পারে ঢাকা কতদূরে, কতদিন লাগে ঢাকা থেকে লোকবল আসার?
অনতিবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী মধুপুর বনের আগুন নেভাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। বন বিভাগ জানায়, তারা সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই চেষ্টায় আমাদের সকলেরই অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের অগ্নিনির্বাপণে সামর্থ্যের স্বল্পতা আছে সত্যি এবং তা বসুন্ধরা সিটির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু মধূপুরের বনভূমিতে যে আগুন নেভানোর ক্ষমতা নেই তা প্রমাণ করতে চাই না।
গত দশ বার দিনে বনের এই পশু বৃক্ষ, লতাগুল্মের পক্ষে রাস্তায় দাড়ানোর যৌক্তিকতা এখনো দেশের বুদ্ধিজীবিরা অনুধাবন করতে পারেনি কিংবা ভোঁতা হয়ে গেছে তাদের অনুভূতিগুলো। আর তাই তারা এখনো রাস্তায় নামতে পারেনি অন্যসব আন্দোলনের মত ।
আমরা সেই জড়বুদ্ধির দলে যোগ দিতে চাই না । বনের পশুগুলো আমাদের সভ্যসমাজের প্রেসক্লাব কিংবা শাহবাগে এসে মানবন্ধন করতে পারছে না সত্যি। জানাতে পারছে না আগুনে দ্রুত বিপন্ন বসতির কথা। আর তাই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নিরবে পার করছে ১২টি দিন। এই প্রকৃতি অনেক দিয়েছে আমাদের আসুন তাদের পক্ষে দাড়াই নিজেদেরই স্বার্থে।
একটা ফোন করি, একটা ইমেইল কর্তৃপক্ষের কাছে, দেশের প্রতি মিডিয়া হাউজে ফোন, ফ্যাক্স, ইমেইলের মাধ্যমে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাই।
এই নাগরিক ব্যস্তার মধ্যেও আসুন আগামীকাল ১৮মার্চ আমরা ঘর থেকে বের হয়ে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও শাহবাগ মোড়ে দাড়িয়ে আমাদের প্রকৃতি রক্ষার জন্য সোচ্চার হই।
প্রধান মন্ত্রীসহ সব মন্ত্রণালয়ের ফোন ফ্যাক্স ইমেইল নাম্বার আছে
Click This Link
কিছু পত্রিকার ফোনও ফ্যাক্স নাম্বার
আমার দেশ ফোন ৮১৫৯৫৭৫-৮০ ফ্যাক্স ৮১৫৯৫৮১-২
আমাদের সময় ৯৬৬৯১০৭, ৮৬১৮৩৩৮, ৮৬১৭৭৮২ফ্যাক্স ৯৬৬৭৬৫৪
ইত্তেফাক ফোন৭১২২৬৬০, ৭১২২৮৮৮ ফ্যাক্স৭১২২৬৫১-৫৩
ইনকিলাব ফোন৭১২২৭৭১ ফ্যাক্স ৭১২২৭৮৮
ভোরের কাগজ ফোন ৯৩৬০২৮৫ ফ্যাক্স ৯৩৬২৭৩৪
জনতা ফোন ৯৩৪৭৭৮০-৯৯ফ্যাক্স ৯৩৫১৭০৪
সংবাদ ফোন ৯৫৬২৫২৫ ফ্যাক্স ৯৫৫৩৪০৯, ৯৫৫৮৯০০
প্রথম আলো ফোন৮১১০০৭৮-৮১, ৮১২৪৭৩২ ফ্যাক্স ৯১৩০৪৯৬
যুগান্তর ফোন ৭১০২৭০১-৫, ৭১০১৯৪০, ফ্যাক্স ৭১০১৯১৭-৯৪০৯৭০
সংগ্রাম ফোন ৯৩৪৬৪৪৮, ৮৩১৮১২৮, ফ্যাক্স ৯৩৩৭১২৭,৮৩১৫০৯৪
যায়যায়দিন ফোন ৮৮৩২২২২,ফ্যাক্স ৮৮৩২২৩৩
নয়াদিগন্ত ফোন ৭১০১৩৮৩-৪, ৭১০১৯৫৬ফ্যাক্স ৭১০১৮৭৪,৭১০১৮৭৭
ডেসটিনি ফোন৯৫৬৯৭৯৮, ৯৫৫৯০০৬ ফ্যাক্স ৭১৬৮২৭৪, ৭১৭০২৮০
ইংরেজী
ডেইলি স্টার ফোন ৮১২৪৯৪৪, ৮১২৪৯৫৫, ফ্যাক্স ৮১২৫১৫৫, ৮১২৬১৫৪
নিউ এইজ ফোন ৮১১৩২৯৭, ৮১১৪১৬৭ ফ্যাক্স ৮১১২২৪৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।