আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু অনুগল্পঃ বিভ্রমের মাঝেই দিনরাত্রি



১. নিলপাড়া রেল স্টেশন। যদিও এখন একটু খালি। কমে গেছে হকারের চিৎকার, নেই কালোবাজারির টিকেট নিয়ে হট্টগোল। অন্য সময়ের মত ভিড়ও নেই। কারণ এই মাত্র সর্বশেষ ইন্টার-সিটি ট্রেনটি চলে গেছে।

জন ধীরে ধীরে স্টেশন ধরে হাঁটছে। তার মেজাজ মর্জি বেশি ভাল নেই। এমনিতেই তার মেজাজ রুক্ষ। অল্পতেই ক্ষেপে যায়। তার উপর আজকে আরও বেশি খারাপ।

অনেক ঘুরে ফিরেও আজকে শুকনা পাওয়া হয়নি। যদিও পকেট খালি। আছেই মাত্র ৩০ টাকা। অবশ্য টাকা থাকার কথাও না। কারণ শুকনা খাবার অভ্যাস থাকলে পকেটে আর যাই হোক টাকা থাকবে না।

আর সে কোন ধনীর আদরের দুলালও না। সুজন হারামজাদার দিকে আর ও বেশি করে রাগ উঠছে। সে জানে যে তার কাছে টাকা নেই। তবু সে বাকিতে বিক্রি করবে না। তার এক কথা।

এ লাইনে বাকি বলে কিছু নেই। যা হবে সব নগদ। আর নেশাও আজকে যেন করে বেশি চেপে বসেছে। সেই থেকে অনেকটা উদ্ভ্রান্তের মত হাঁটছে সে। যদি একটু সুখটান(!) দেয়া যেত? হঠাৎ করে তার সেই পরিচিত গন্ধ নাকে গেল জনের।

যে গন্ধ তার খুব ভাল করেই চেনা। এদিক ওদিক তাকায় জন। গন্ধের উৎস খুঁজে বেড়ায়। অবশেষে গন্ধের উৎস খুঁজে পায় সে। রেল স্টেশনের শেষ প্রান্তে দুই জন মধ্যবয়স্ক পুরুষ সুখটান দিচ্ছে।

একজনকেও জন চিনে না। সে ধীরে ধীরে তাদের পাশে দিয়ে দাঁড়ায়। কিছু বলতেও হয়না। কারণ এটি একটি অলিখিত নিয়ম। দুই টান দিয়ে তারা সিগারেট টি জনের দিকে এগিয়ে দেয়।

সিগারেট টা একটু অন্যরকম। কারণ তার মধ্যে নিকোটিনের সাথে অন্য কিছুও মেশানো আছে। জন প্রাণ ভরে সুখটান দেয়। আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ। মাথাটা যেন কেমন ঝিম মেরে উঠে জনের।

নিজেকে এ পৃথিবীর বাদশাহ মনে হয় তার। ধীরে ধীরে সে বাড়ির পথ ধরে হাটতে থাকে। হাঁটতেই থাকে। গাজা ২. দূর, আর কত টিভি দেখা যায়? একি প্রোগ্রাম বার বার দেখায়। আর ভাল লাগে না শুভর।

নিজের বিছানায় শুয়ে এবার মোবাইলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সে। কতক্ষণ গেম খেলে সে। না, তাও ভাল লাগে না। আসলে যখন ৬ ইঞ্চির নেশা চাপে তখন কিছু কি ভাল লাগে? না। কারণ তখন ৬ ইঞ্চির স্বাদ না পেলে শরীর বিদ্রোহ করে বসে।

অবশ্য গাজা টাজা খায় না সে। ওসব ফকিরদের । যাদের হাতে টাকা পয়সা কম, গাজা তাদের। তার মত বড়লোকদের গাজা খাওয়া মানায় না। তাদের জন্য পারফেক্ট হচ্ছে ৬ ইঞ্চি।

আরও একবার মায়ের ঘরে উকি দেয় শুভ। না, বাবা এখন বাইরে যায় নি। কখন যে বাইরে যাবে? মেজাজ পুরা বিল্লা হয়ে যায় তার। অবশেষে প্রায় ২ ঘণ্টা পর বাইরে যায় তার বাবা। তার পর আস্তে আস্তে সে বাবার ঘরে ঢুকে পরে সে।

চেস্ট অফ ড্রয়ার খুলে টাকার বাণ্ডিলের দিকে হাত বাড়ায় সে। একটি লাল ১০০০ টাকার নোট নিয়ে নেয় সে। জানে, ধরা পরার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ ওই লাখ লাখ টাকার ভিড়ে একটি নোট কম আছে, তা বাবা কোনদিনও জানতে পারবে না। আর জানলেই কি? ঘুষের টাকা! চাইলেও কিছু বলতে পারবে না।

এখন তার গন্তব্য পাশের বস্তি। যেখানে ৬ ইঞ্চি পাওয়া যায়। খুব সহজেই। ধীরে ধীরে সেদিকে পা বাড়ায় সে। ফেন্সিডিল ৩. রাত তিনটা।

রাতুলের ঘর থেকে ভেসে আসছে উচ্চ শব্দের লাউড মিউজিক। মা বাবা কেও বাসায় নেই। বাবা দেশের বাইরে। একটি কনফারেন্স এ যোগ দিতে। আর সমাজসেবক মা গেছেন child rights এর পার্টিতে।

হা, child rights ই বটে! নিজের বাচ্চার রাইট নিয়ে মা যদি কোনদিন একটু চিন্তা করতেন? নিজেকে গুলশানের এ বিশাল ফ্লাটেও একা মনে হয়। বড় একা। মাথাটা একটু ঝিম মেরে উঠে। সারা শরীর ঘামতে থাকে। শরীর কাঁপতে থাকে।

তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একসময় তা ভয়ানক আকার ধারণ করে। সারা শরীর চুলকাতে থাকে। রাতুল খুব ভাল করেই জানে কেন তার এ অবস্থা? কারণ তার এখন নেশা চেপেছে, মরণ নেশা। ইঞ্জেকশানের নেশা।

একসময় রাতুল গোংরাতে থাকে। রাতুল আর সহ্য করতে পারে না। সহ্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে সে তার ড্রয়ারের দিকে হাত বাড়ায়। যেখানে রাখা আছে তার সেই ইঞ্জেকশান।

বাম হাতের শার্ট এর আস্তিন গুটিয়ে নেই সে। যে হাত তার সব সময় গুটানো থাকে। কারণ তা যে ক্ষতবিক্ষত ইঞ্জেকশানের আঘাতে। সেই ক্ষতবিক্ষত হাতে যোগ হয় আরও একটি ক্ষত। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায় রাতুল।

বিছানায় শুয়ে পরে। ধীরে ধীরে অনন্ত যাত্রার পথে আরেকটু এগিয়ে যায়। পেথেড্রিন ৪. গুলশান ২, রোড নং ১৫৮। যেখানে রাইয়ান তার বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে তার প্রিয় Audi convertible . যেটি আয়রন ম্যান কার নামেই পরিচিত।

গত বার্থডেতে তার dad তাকে গিফট করেছিল। সাথে তার দুই বন্ধু মিল্টন আর ফুয়াদও আছে। তারাও কম যায় না। একজনের আছে porches আর আরেকজনের BMW 5 SERIES. তারা সবাই টিনএজার। এমন একটি স্কুলে পড়ে যেখানে অনেক ধনী মানুষও তার বাচ্চাদের পড়াতে সাহস করেনা।

গভীর রাত। রাস্তায় মানুষজন খুব একটা নেই। তিন ডুডের হাতে তিনটি বিয়ারের ক্যান। চুমুকে চুমুকে গিলে খাচ্ছে। শরীর মন দুটোই খুব চাঙ্গা।

ফুয়াদ তো রীতিমত উড়ছে। কারণ তাদের পেটে একটু আগে যে “বাবা” পড়েছে। বলা বাহুল্য, তারা বাংলা খুব একটা ভাল পারেনা। This fucking thing is amazing. What amazing. This is like a......like a.......... Sleep with a exotic girl like mila. Son of a bitch, don’t forget, she is my ex. So, what? Now I share my bed with her. She is quite a dish. সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দে তিনটি কার গুলশান ১ এর দিকে ছুটছে.........তো ছুটছেই।

হঠাৎ রাইয়ামের Audi convertible তি ফুটপাথে ঘুমানো কয়েকজন garbage এর দিকে ছুটছে.........তো ছুটছেই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।