আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃ থাপ্পড়

রুদ্রনীল

-কিরে গালে হাত দিয়ে আছিস কেন? -এমনিই দাঁতে ব্যথা। -দাঁতে ব্যথা? কি হইছে দেখি দেখি। হাত সরা। -কিছু না কাল আইসক্রিম খেয়ে পানি খাইছিলাম তাই ব্যথা। -দেখি দেখি ইয়া আল্লাহ গালে হাতের দাগ কেন? কে মারছে তোকে।

-কোথায়...কোথায়? -এই যে স্পষ্ট পাঁচ আঙ্গুলের দাগ। -কে আমাকে মারবে? এমনেই বন্ধুদের সাথে দুষ্টামি করতে গিয়ে একটু লাগছে। -একবার বলিস আইসক্রিম খেয়ে হইছে,একবার বলোছ দুষ্টামি করতে গিয়ে হইছে। কি ব্যাপার বল তো বাবা.. -কিছু হয়নাই মা। এতো ত্যানা পেচাইয়ো নাতো।

এই বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল ইফতি। মাকে বড়রকমের মিথ্যে কথা বলে ফেলেছে। এই দাগ আইসক্রিম বা বন্ধুদের দুষ্টামির ফল না। গতকাল তানিয়ার থাপ্পড়ের ফল। এতো জোরে থাপ্পড় মেরেছে যে গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।

এখন কিছু খাওয়া তো দূরে থাক,সারাদিন গালে হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই। তানিয়া মেয়েটা দেখতে সুন্দর। অতিরিক্ত সুন্দর যেটাকে বোঝায়। অনেক দিনের পরিচয়,সে তো সহজে রাগে না তাহলে হঠাত এরকম থাপ্পড়ের দিলো কেন। সমস্যাটা কোথায়? প্রপোজ করাতেও তো কোন ভুল ছিল না।

মামুনীয় স্টাইলে প্রপোজ করেছে। মামুন ভাই এলাকার কুখ্যাত বড় ভাই কাম লাভ গুরু। ছোট ভাইদের প্রেম বিষয়ক সকল সমস্যা, এক কাপ চা ও দুইটা বেনসনের বিনিময়ে সমাধান করে দেন। তার তত্ত্ব অনুযায়ী, ৭টা তরতাজা লাল গোলাপ দিয়ে আর কবিতার দুচার লাইন বুলি আউড়ালেই প্রপোজ হয়ে যায়। উনি এই তত্ত্বে নাকি বহুবার সফলকাম হয়েছেন।

ইফতি সেভাবেই প্রপোজ করেছিল। তাহলে গিট্টু টা লাগলো কেন? আচ্ছা গোলাপে কি কোন সমস্যা ছিল, কবিতাটাও তো ঠিকঠাক বলেছিল। তাহলে থাপ্পড় টা মারলো কেন? অনেক গভীর বিশ্লেষণের পর ইফতি বুঝলো মামুনীয় স্টাইল পুরাই ভুয়া, শাহরুখীয় বা রনবীরীর স্টাইলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি। পরের বার সেটাই ফলো করবে। (খ) তানিয়ার মন খারাপ।

ঘুম আসছে না। রাত ১টা বেজে ২০ মিনিট। এখন গভীর ঘুমে থাকার কথা। তবে আজ ঘুমোতো পারছে না। ইফতির কথা মনে পড়ছে।

ছেলেটা কে এতো জোরে থাপ্পড় মারা উচিত হয়নি। যদিও এটা তার প্রাপ্য ছিল। কোথায় কি করতে হয় এটা ঐ ছেলের মাথায় আজও ঢুকলো নাই। কোচিং থেকে বান্ধবীদের সাথে ফিরছিল, এমন সময় রাস্তায় দাড় করিয়ে কি সব ইনিয়ে বিনিয়ে বলে গোলাপের গুচ্ছ হাতে ধরিয়ে দিলো। এমনিই দিনটা ভালো কাটে নাই, পরে হঠাত এরকম অনাকাঙ্গিত প্রপোজাল পেয়ে টেম্পারটা কন্ট্রোল করতে পারলো না।

বসিয়ে দিলো একটা। তবে থাপ্পড় টা একটু বেশিই জোরে পড়ে গেছে। ব্যথা পেয়েছে নিশ্চয়ই। এরকম করা একটুও উচিত হয়নি। প্রেমের প্রস্তাবই তো দিয়েছে, পালিয়ে নিয়ে যাওয়া হুমকি তো আর দেয় নি।

কাল ক্লাসে গিয়েই ইফতির কাছে ক্ষমা চেতে হবে। নাহ কাজটা একটুও ঠিক হয়নি। রাতটা গভীর হয়। রাত জাগা পাখিগুলো জোছনা সাক্ষী রেখে আলাপ চালিয়ে। জোনাক পোকার আলোতে প্রেম পত্র লেখে তা বাতাসে ভর করে আদান-প্রদান করে।

কেউ বা কারও প্রতিক্ষায় থাকে। পৃথিবীর দুপ্রান্তে দুটি মন কাছে আসার অপেক্ষায়। খুব ধীরে ধীরে কাছে আসবে। খুব দ্রুত তৈরী হওয়া সম্পর্ক নড়বড়ে হয়। হালকা বাতাসেই পড়ে যেতে পারে।

ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা সম্পর্ক গভীরতা পায় বেশি। গভীর সম্পর্কে খাদ থাকে না। থাকলেও ছোটছোট। ছোট ছোট খাদে ভালবাসা কমে না।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।