সে পথের পথিক আমি যে পথ এখন ও সৃষ্টির অপেক্ষায় রিক্সায় উঠে জড়সড় হয়ে বসলো সাজিদ। এই প্রথম কোন মেয়ের এত কাছাকাছি বসা। রিক্সা না পেয়ে মোড়ের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় গলির ভেতর থেখে একটা রিক্সা এসে ঠিক ওর সামনে থেমে গেল। রিক্সার ওপর বসা মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,চলুন না একসাথে যাওয়া যাবে।
কিছু না বলে ধীরে ধীরে রিক্সায় উঠে বসে সাজিদ।
ওরা দুজনেই চুপ করে থাকে অনেক্ষন। সাত সকালে বাসা ছেড়ে খাবারের সন্ধ্যানে যাওয়া পাখ-পাখালির কিচির মিচির শোনা যায়। আর মসৃণ পিচঢালা পথে রিক্সা টেনে নেয়ার একঘেয়ে শব্দ। হালকা একটা বাতাস এসে এলোমেলো করে দেয় শ্রাবন্তির খোঁপাবিহিন চুল।
এক হাতে দিয়ে আবার যথাস্থানে সরিয়ে দেয় ও। সাজিদের চোখ নিচের দিকে,যেন ধূলার মাঝে কিছু একটা খুঁজে চলছে।
'কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন' সাজিদকে লক্ষ্য করে বলল শ্রাবন্তি।
'কি বলবো?' মাথা না তুলেই জবাব দেয় সে।
'সেটা আমি কি করে জানি,কিছু একটা তো বলুন।
আচ্ছা,থাক বলতে হবে না। '
সেই নীরবতা,রিক্সা টেনে নেওয়ার একঘেয়ে শব্দ। রাস্তায় তেমন একটা গাড়িঘোড়া নেই। একটু পরপর সাঁই করে পাশ দিয়ে কিছু প্রাইভেট কার চলে যাচ্ছে। সাজিদ ভাবছে আজ যখন সুযোগ পাওয়া গেছে তখন কি বলে ফেলবে।
এমন ভাগ্য হরহামেশা হয় না। কিন্তু লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারছে না কিছুতেই। না কিছু একটা বলা দরকার। মেয়েটা খারাপ ভাববে।
-আপনি কোথায় নামবেন? এ প্রশ্ন করার প্রয়োজন ছিল না,সাজিদ জানে প্রতিদিন এ সময়ে শ্রাবন্তি কোথায় যায়,তাও করলো।
শ্রাবন্তি ভাবছে,এত লজ্জা নিয়ে ছেলেটা চলে কি করে। প্রতিদিন কে ওর পিছু পিছু কলেজ পর্যন্ত আসে সেটা শ্রাবন্তিও জানে;সাজিদের প্রশ্নে অবাক হল না। ছেলেরা এমনই হয়। তাই জবাব দিল।
-আমি একটা কথা বলি,সাজিদ বলল।
-বলুন।
-না থাক রাগ করবেন। পরে বলবো।
-পরে বললেও ও তো রাগ করবো তাই নয় কি?
-হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।
কথাগুলো বলার সময় সাজিদ মাথা নিচু করে না রাখলে দেখতে পেত শ্রাবন্তি মিটিমিটি হাসছে।
রিক্সা কলেজের সামনে এসে পড়েছে।
-আমি এখানেই নামবো। নিজের পার্সটাতে সবে হাত ঢুখিয়েছে,সাজিদ আঁতকে ওঠার মত করে বলে উঠলো
-না,না,আপনি চলে যান। ভাড়াটা আমিই দিচ্ছি। এ কথাগুলোও ভীষণ লজ্জা মাখা।
তাও সাজিদকে বলতে হল। না বললে মেয়েটা সাজিদের সমন্ধে খারাপ ভাবতে পারতো।
শ্রাবন্তি পার্সটা বন্ধ করে চলে গেল। একবার ঘুরে বলল না,আসি। ইচ্ছে করেই বলল না।
প্রথম দেখায় এত কিছু বলতে নেই।
সাজিদকে নিয়ে রিক্সাটা একটু পর চলে গেল।
ফ্যানটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাজিদের ঘুম ভেঙে গেল। কয়েক মুহুর্ত সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থেখে বুঝল কারেন্ট চলে গেছে। বালিশের তলা হাঁতড়ে সিগারেটের খোঁজ করলো।
পেল না। বিছানা ছেড়ে গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বেরোল মোড়ের চায়ের দোকানের যাওয়ার জন্য।
সকাল হলেও এখনও মানুষ তেমন বেরোইনি। হয়ত ছুটির দিন বলেই। তার ওপর ঠাণ্ডা আবহাওয়া।
মাঝে মধ্যে দুএকটা খালি রিক্সা চলে যাচ্ছে।
আগুন ধরিয়ে সবে ফিল্টারে ঠোঁট ছুঁইয়েছে সাজিদ। গলির মধ্যে থেকে একটা রিক্সা বেরিয়ে আসতে দেখল ও। পাশাপাশি বসা দুটি মানব-মানবী। ভাল করে লক্ষ্য করতে হল না।
মেয়েটাকে চিনে নিতে এতটুকু দেরী করে না ওর চোখ দুটো।
-বুঝলেন মামা,অই গলির সালাম সাহেবের মাইয়ার হইল গিয়া কপাল। যে জামাই পাইছে লাখে একখান । কেতলিতে পানি ঢালতে ঢালতে বলল গফুর মিয়া।
-হু, উত্তরে এর বেশি বলল না সাজিদ।
। খুব পছন্দের মানুষগুলো চলে গেলে কিছু বলতে হয় না,শুধু ধোঁয়ার কুণ্ডলীর আড়ালে সুখ খুঁজে বেড়াতে হয়।
কাল রাতের স্বপ্নটা তো ভালই ছিল- ভেবে আপন মনেই হেসে উঠলো সাজিদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।