♠ ব্লগার ইমন জুবায়ের ♠ মেঘের আড়ালে থাকা একটি নক্ষত্রের নাম
******************এক********************
সেই দিবসে কাহার বদনখানা যে দেখিয়া চক্ষু খুলিয়াছিলেম তাহা এই দিনান্তের শেষে কিছুতেই মনে করিতে পারতেছি না। দিনের শুরুতেই ছিলো পাঠশালার সমাপনী পরিক্ষার এক কঠিনতম বিষয়ের একখানা পরিক্ষা। যে,সে পরিক্ষা নয় বাংলার ছেলের ইংরেজী পরীক্ষা।
পরীক্ষার খাতা হাতে তুলিবার ক্ষণ হইতেই বুঝিলেম এ যাত্রায় পাশ করিবার আর কোন উপায় নেই; আমাকে ফেলটুস হইতেই হইবে। কিন্তু তাই বলে পরীক্ষার খাতা হাতে লইয়া বসিয়া থাকিলে তো আর চলিবে না; তাই হাবিজাবি লিখিবার নিমিত্তে এক বুদ্ধি আটিলাম।
কেন যে আমি ফেলটুস মারিবো সেইটার গালগল্পখানা ফাদিয়া দিলেই তো হয়।
তাই মাথায় আইডিয়া আসা মাত্রই ক;ছত্র লিখিয়া ফেলিলেম সাদা পাতাটিতে। আরও ক’ ছত্র লিখিতেম কিন্তু সমুখে শিক্ষক মহোদয় বাশের মতো দন্ডায়মান হইয়া রহিলেন। ভাগ্যিস আমার খাতাখানা দেখিতেছেন না।
ইংরেজী পরীক্ষা চলিতেছে কিন্তু কিচ্ছু লিখিতেছি না; পারলে তো লিখিবো !!! তাই বঙ্গানুবাদ লেখার নিমিত্ত করিয়া পাতা ভর্তি নিম্নরুপ লিখিতেছি, স্যার সারাবছর বিভিন্ন কার্য নির্বাহে ব্যাস্ত থাকিয়া কিচ্ছু পড়িতে পারিনাই।
যদি দয়ামায়া করিয়া উত্তীর্ন করাইয়া দিতেন তাহা হইলে বোধহয় এ যাত্রা বাচিঁয়া যাইতাম।
আমি এইরুপ আরো হাবিজাবি মিশ্রিত লেখিয়া পাতা ভরিয়া ফেলিলেম।
পরীক্ষা হল হইতে বের হইবার সময় স্যার জিজ্ঞাসীল কি রে, মহানাম যজ্ঞ শুরু হইয়াছে শুনিলেম বিকেলে আসিব থাকিস। বাক্য শুনিয়া মাথা চুলকাইলাম এ আর এক যন্ত্রণা শুরু হইলো............
*********************দুই**************************
হরিদের বাড়ি যাইবার সমুখে যে মন্দিরখানা রহিয়াছে তাহাতে কদ্দিন যাবত মহানাম যজ্ঞ চলিতেছে তাহা আবার ছাপ্পান্ন প্রহর ব্যাপি। বৃদ্ধের দল যেন, এ কদ্দিন ঘরমুখো আর হইতেই চাহে না।
আহা কতো ভক্তি ঠাকুর দেবতার চরণে ; পারিলে লুটাইয়া পড়ে। যদিও শেষকালে এইরুপ ভক্তি পর্যায়ক্রমে চলিয়া আসে, তথাপি এই জাতীয় নামযজ্ঞে আজকাল ছেলেবুড়ো সকলেরই উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। বুড়োদের কথা না হয় বাদই দিলেম কিন্তু আজি এই অপরাহ্নে অষ্টাদশী আর অষ্টাদশ বয়সি বালক-বালিকাদের ভীড় দেখিয়া চমকিত হইতেছি।
নিবারন আসিয়া কহিল তা ছোড়দা চল, এ বেলা একটু হরিনাম শুনে আসি? আমি বলিলেম না, এ বেলা তো যেতে পারিবনা কিছু কাজ পড়িয়া রহিয়াছে। কে শুনে কার কথা,হস্তখানা ধরিয়া প্যান্টলুন পড়াইয়া নিয়া গেল।
তোরণ পাড় হইবার পর লোকারন্য দেখিয়া তো আমার চক্ষুচরক গাছ। আহা রে ! ভক্ত।
কুঞ্জন গুঞ্জন ঠেলিয়া কোনত্রমে দন্ডায়মান হইলেম; এ,কি আকাশ হইতে পড়িবার উপক্রম হইলো আমার। চতুর্দশ হইতে অষ্টদশ এইরুপ বয়সী ছেলে মেয়েতে একটা ছোটখাটো জনারন্যের সৃষ্টি হইয়াছে।
দেখিলাম এ হান্তে ও প্রান্তে খালি ছোট ছোট জটলা।
বুঝিলেম ইহাতে হরিনাম শ্রবণ করা নিমিত্ত মাত্র; মূলত চক্ষুদর্শন পর্ব চলিতেছে অষ্টাদশ বয়সী কন্যার দিকে নেত্র ক্ষেপন করিয়া।
একখানা পেন্নাম জানাইয়া সেইখান হইতে চলিয়া আসিলেম। নিবারন জোর করিয়া বলিলে বাহিরে গড়ের মাঠে মুড়ি-মুড়কির দোকান বসিয়াছে সেখানে যাইতে হইবে।
*******************তিন*************************
গড়ের মাঠে গিয়া দাড়াইলাম। চারিপাশে বসিয়াছে মুড়ি-মুড়কি আর পিতল-কাসার বাসন নিয়ে বসেছে।
হরি ঠাকুরের চিত্রপট কিংবা তুলসি মাল্য কোথাও বা ঝুলিতেছে আর পুরাণ বা শ্রীচৈতন্যনামা। এই সব ছোট্ট পসরাওলা দোকানগুলোতে ভীড়; পা ফেলিবার ঠায় মিলতেছে না
নিবারন কহিল তা দাদা তেলেভাজার দোকানে বসবে নাকি ? আমি বলিলেম চল। সেই মুখে যাইবার পথেই এক পিতল-কাসার দোকান দেখিয়া হঠাৎ কি যেন ভাবিয়া সেই দিকে চলিলেম। গিয়ে তো চক্ষু ছানাবড়া লবঙ্গ-লতিকায় ভরপুর। বাহিরে দাড়াইয়া ছিলেম কিন্তু কোন পাকারে লবঙ্গ চোখ মারলে এই অবেলায় তারই পিছু নিতে চাহিয়া, কিছু কিনিবার ভানের নিমেত্তে ঢুকিয়াই ফ্যাসাদে পড়িলেম।
একখানা পিতলের মালসা কিনিবার ছূতো করিলেম কিন্তু দরদামে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়ে গেলো দোকানির সহিত। ও ব্যাটা একশকুড়ি টাকার নিচে মালসা কিছূতেই দেবেনা কিন্তু পকেটে তো আছে শ’টাকা। আদ্তে আসিয়াছি যে লবঙ্গ-লতিকা ভাজতে সেটা কি করে বোঝাই। ড্যাব ড্যাব দৃষ্টি করে তাকাচ্ছে সামনের চক্ষুদ্বয়।
তাই ভাবিলেম আজি এ মালসা না লইয়াই চলিয়া যাই; কিন্তু বিধি বাম লবঙ্গ-লতিকারা হাস্যরসে বলিতে লাগিলো গাটে কড়ি নেই বাপুর হাতে থলে।
কথা শেষ না হইতেই সে, কি হাসি রে বাবা। নিবারন কহিল দাদা এ,যে নির্ঘাত গুতো খাইবার ধান্দা!! নিবারন তো মুখে আঙ্গুল দিয়া বসিলো এ,কি হচ্ছে
এই সময় সে হান্তে আমার সেই দন্ডায় শিক্ষক মহোদয় হাজির; হেড়ে গলায় কয়ে উঠলো কি,হে
কি জটলা পাকাচ্ছে এখানে ?
তুমি কি মনে করো হ্যা পরীক্ষার খাতা কি তোমার ইতিহাস লিখিবার পাতা। পাটশালায় পেলে তোমাকে তুলো ধুনো করা হইবে। এইখান হইতে বিদেয় হও। লজ্জায় মস্তকনাবত করিয়া ফেলিলেম লবঙ্গদ্বয় হাসিতেই লাগিলো।
ইচ্ছে করিতেছিলো সবক’টাকে একহাত ভেজে নিতে যদি পারিতেম আহা ! লবঙ্গদ্বয়।
________________সমাপ্ত__________________
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।