আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যু ও পরকাল



মৃত্যু ও পরকাল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। "তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে নাগালে পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করলেও। " (সুরা নিসা, ৪ ঃ ৭৮) এক বুযুর্গ ব্যক্তির নিকট তাঁর শিষ্য এসে বললেন, 'হুজুর আজ এক আশ্চর্য ঘটনা দেখে আসলাম। ' হুজুর বললেন 'কি ঘটনা?' শিষ্য বললেন, 'আমার পরিচিত এক যুবক রাতে সুস' অবস'ায় বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু সকালে তাকে মৃত পাওয়া গেছে। অথচ তার কোনো রোগ ছিল না।

কেউ তাকে হত্যাও করেনি। সে ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ টগবগে এক যুবক। তার এরকম মৃত্যুর ঘটনায় আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। ' বুযুর্গ বললেন, 'চিন্তা করে দেখো, মৃত্যুটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমাদের এই বেঁচে থাকাটা।

” এই যে জীবন না চাইতে পেয়েছি এটাই হচ্ছে সত্যিকারের আশ্চর্যের বিষয়। তোমার যখন জন্ম হয়েছে তখন তুমি জান যে, তোমাকে মৃত্যু বরণ করতেই হবে। কিন্তু তোমার জন্মের আগে কি তুমি জানতে যে, তোমাকে এরকম একটা সুন্দর জীবন গ্রহণ করতে হবে? তোমার জন্মের আগে কি তুমি জানতে যে, সুখ-দুঃখ আর হাসিকান্না ভরা একটা পৃথিবী তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে? তাহলে কোনটা বেশী আশ্চর্যের বিষয়- জীবনটা না মৃত্যুটা? শিষ্য বললেন, "আমি বুঝতে পেরেছি। ” তাই প্রিয় ভাইয়েরা আমার! চিন্তা করে দেখুন এই যে আমরা বেঁচে আছি- এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। কিভাবে সম্ভব হলো এই জীবন? আমি কি মহান স্রষ্টাতে বিশ্বাস না করে পারি? স্রষ্টাতে যার বিশ্বাস নাই এই জীবনে বেঁচে থাকাতে তার কোনো আশ্চর্যবোধ নাই।

যার আশ্চর্য বোধ নাই তার কোনো আনন্দ নাই। আর যে ব্যক্তি এই সুন্দর জীবন দানের জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানায়, শুকরিয়া আদায় করে তার মধ্যে আনন্দের ঝর্ণা বয়ে যায়। জান্নাতের শান্তি তার জন্য কায়েম হয়ে যায়। "আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আল-আমিন। আর রাহমানির রাহীম।

.....” এই জীবন যেমন কেউ চেয়ে পায়নি তেমনি না চেয়েও পায়নি। এ পৃথিবীতে কেউ নিজের ইচ্ছায় আসেনি তেমনি আসার ইচ্ছা ছিলনা বলেও আসেনি। আমার এই জীবন আমার আল্লাহর দান। আমার এই বেঁচে থাকা, আমার এই শরীর-মন, আমার জন্ম-মৃত্যু সমস্তই আমার আল্লাহর ইচ্ছা, আমার স্রষ্টার হুকুম যিনি সমস্ত বিশ্ব জাহানের মালিক। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করেন।

তিনি প্রবল ক্ষমতাধর। "তাহারা বলে, কে আবার আমাদেরকে একত্রিত করবে যখন আমাদের হাড়গুলি পচে গলে যাবে? বলুন, তিনি সেই আল্লাহ যিনি তাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি বিষয়ে সুনিপুণ-বিশেষজ্ঞ। (সুরা ইয়াসীন, ৩৬ ঃ ৭৮-৭৯) অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করত যে, কে আবার আমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন আমাদের মৃত্যুর পর? এ প্রশ্ন শুধু মক্কার কাফেরদের নয়, চিরকালের কাফের-অবিশ্বাসী-নাস্তিকদের প্রশ্ন এটা। এ প্রশ্ন সকল যুগের মুর্খ থেকে মহাপন্ডিত অনেক মানুষকেই বিভ্রান্ত করেছে এবং করছে। এ এক চিরকালীন প্রশ্ন।

তাই এ প্রশ্নের চিরকালীন উত্তর মহান আল্লাহ তায়ালা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন মহাগ্রন' আল-কুরআনে বুদ্ধিমান মানুষদের বুঝবার জন্য। ভাইয়েরা আমার! প্রশ্নটি যত কঠিন ও জটিল আমার আল্লাহর দেয়া উত্তরটি ততই সহজ ও সরল। মৃত্যুর পর কে আবার আমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন- এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি তাঁর নিজের ইচ্ছাতেই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। ভেবে দেখুন কি দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর! যারা পুনরায় সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করে তারা কি প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে না? যারা প্রথমবার সৃষ্টির কথা বেমালুম ভুলে যায়, প্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে যারা আশ্চর্য বোধ করে না তারা অবশ্যই জ্ঞানী হতে পারে না। প্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে যারা আশ্চর্যান্বিত বোধ করে না, মহান স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করে না তারা কাফের।

কারণ তারা নিজেরা নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে এসেছে বলে মনে করে। "তারা কি স্রষ্টা ছাড়াই সৃষ্ট হয়েছে নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? নাকি ওরা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছে?” (সূরা : তুর, ৩৫-৩৬) তারা নিজেদেরকেই নিজেদের স্রষ্টা বলে মনে করে। নিজেদের সৃষ্টি সম্বন্ধে তারা সত্য অস্বীকার করেছে এবং মিথ্যা অবলম্বন করেছে তাই তারা কাফের বা সত্য গোপনকারী। আর সত্য গোপনকারীদের নিকট কখনও মহাসত্যের পথ উন্মোচিত হয় না। সত্য উন্মোচিত হয় সত্য অবলম্বনকারী বা মু’মিন ব্যক্তিদের নিকট যারা বিশ্বাস করে যে, আমাদের এই জন্ম-মৃত্যু সমস্তই আমাদের আল্লাহর ইচ্ছা, আমাদের স্রষ্টার হুকুম।

তিনি সমস্ত বিশ্ব জাহানের মালিক। তিনি সৃষ্টি ও ধ্বংসের মালিক। তিনি পুনরায় সৃষ্টি করার মালিক। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করেন। তিনি প্রবল ক্ষমতাধর।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন এবং পথ প্রদর্শন করুন। আমাদের সকলের উপর তিনি তাঁর রহমত নাযিল করুন। আমীন। আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.