রহমান শফিক ভাই
আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? শুনেছি ওপারের সবাই সবকিছু দেখতে পায়, শুনতে পায়। যে কথা কখনও বলা হয়নি আজ সেটাই মনে পড়ছে বারবার। আমি সাইদুল। ডর্মিটির থ্রি তে আপনার পাশের বেডে থাকতাম। আপনি তখনও এলাহি হননি।
খাইবার হাউস ছেড়ে হুনাইন হাউসে আসতে হয়েছে। আপনি তুখোড় তার্কিক, সদা হাস্যময় আর স্টেযে অসাধারণ প্রেজেন্টার। আপনার জন্যে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে হুনাইন হাউস। অথচ আপনার মন পড়ে থাকে খাইবারে, যেখানে ক্যাডেট জীবনের শুরু আপনার, যেখানে হয়েছে আপনার প্রতিভার বিকাশ।
"রহমান শফিক ভাই" এতবড় নামে আপনাকে কেন ডাকতাম কে যানে।
বলা যেত কূদরত কিম্বা এলাহি যেহেতু কূদরত এলাহি রহমান শফিক আপনার নাম।
আপনাকে খুব বেশি পড়তে দেখিনি কোন দিন। খাইবার হাউসের বন্ধু দের সাথে আড্ডা মেরে অথবা কারো ডিবেটের স্ক্রিপ্ট লিখে আপনি যখন ঘরে ফিরতেন ততক্ষণে লাইটস্ আউট হয়ে যেত।
সাল টা মনে পড়ে? ১৯৭৯ সাল । আমরা টেন এ উঠেছি মাত্র।
আপনারা নতুন টুয়েলভ্। ঝিনাইদায় তখন হাড় কাঁপান শীত। পৌষ এসে চলে গেছে প্রায়। আপনি ফিরলেন লাইটস্ অফের পর। অন্ধকারে কম্বল খুঁজে পাচ্ছেন না।
বল্লেন ক্যান আই বরো এ ব্ল্যাংকেট ফ্রম এনি বডি? এনি বডি হ্যায এ্যন এক্স্ ট্রা ব্ল্যাংকেট?
কেউ সাড়া দিলনা আপনাকে। একটা পাতলা চাদর গায়ে রাত কাটল আপনার।
তারপর কেটে গেছে ৩০ বছর। আপনি সেনা বাহিনীতে গিয়েছেন। শুনেছি সোর্ড অব অনার পাওয়ার কথা ছিল আপনার।
তবে না পাওয়ার বেদনা হতদ্যম করতে পারেনি আপনাকে। মেধা, শ্রম আর যোগ্যতায় আপনি যখন ছাড়িয়ে গেছেন সহপাঠিদের প্রায় সকলকেই তখনই আপনার চলে যাওয়া। কিছুতেই মানতে পারছিনা । আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন এলাহি ভাই, ৩০ বছর আগে সেই শীতের রাতে আমার কাছে এক্সট্রা ব্ল্যাংকেট থাকা সত্বেও আপনাকে দেওয়া হয়নি। আর আজ খবর পেয়েও আপনাকে বাঁচাতে পারলাম না।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি ওইসব নর পশুদের যারা আপনাকে থাকতে দিল না। আর তাদেরকে যাদের জন্যে আপনার ঘাতকরা এখনও এদেশের আলো হাওয়ার স্পশ পাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।