আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রমশঃ আমার ছবির আর্কাইভে জমছে কষ্ট : ভাবিনি কর্নেল গুলজারের ছবি এভাবে পোস্ট করতে হবে

যা তুমি আগামিকাল করতে পার, তা কখনো আজ করতে গিয়ে ভজঘট পাকাবে না...

কবি শামসুর রাহমান যেদিন মারা গেলেন, সেদিন আমার আর্কাইভে খুঁজে বের করলাম কবির ছবি। কোনো এক দুর্লভ মুহুর্ত এসে ধরা দিয়েছিল আমার হাতে। শাটার টেপার সময় তখন বুঝেছিলাম এমন সময় আর আসবে না। বুঝতে পেরেছি জাগতিক নিয়মেই কবির জীবন প্রদীপ তখন পশ্চিম আকাশে। দিগন্তে হেলে পড়া সূর্যকে তাচ্ছিল্য করে কবি আমার লেন্সের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন।

আমি জানতাম, কখনো যদি শামসুর রাহমানকে মনে করার দরকার হয়, অনেক আশ্রয়ের মধ্যে আমার জন্য অন্তত একটি আশ্রয় হয়ে থাকবে তার এই হাসি। যারা ভাবেন ফটোগ্রাফারের জীবন একসাইটিং, থ্রিলিং এবং অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ, তারা সম্ভবত পুরোটা জানেন না। ফটোগ্রাফারের জীবন ক্রমশ কষ্টকর হতে থাকে, বিশেষ করে যদি আপনি পোরট্রেইট ফটোগ্রাফার হন। আপনি ছবি তুলে রাখবেন এবং একই সঙ্গে আপনার ছবির লোকজন একের পর এক অতীতে হারিয়ে যেতে থাকবেন। যতোবার আপনার ছবির আর্কাইভে আপনি হাত দেবেন ততোবার বুক থেকে বেরিয়ে আসবে দীর্ঘশ্বাস।

যতো দিন যাবে, সে বুক চাপা শ্বাস ক্রমশঃ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকবে। কারণ ততোদিনে আরো বেশ কিছু ব্যক্তি নাম লিখিয়েছেন অতীত নামের খাতায়। আমি যতোবার আমার বাবাকে দেখি, হয়তো সকালের রোদে পেপার পড়ছেন, হয়তো তার নাতনিটাকে কোলে নিয়ে দুষ্টুমি করছেন, কখনো বাসার পাশে চৌরাস্তায় আড্ডা দেয়া মহল্লার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছেন, আমি ছবি তুলে রাখি। বাবার বয়স এখন ৮০। আর কয়েক দিন পরেই তিনি চলে যাবেন আমেরিকায় বড় ছেলের কাছে।

প্রাণপন চেষ্টা করি বাবার যতোটুকু সম্ভব আমার কাছে রেখে দিতে। ঠিক একই রকম অনুভূতি হয়েছে যখন ছবি তুলেছি বহুমাত্রিক শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের, ৭১ সালে আকাশবাণীর বিখ্যাত সংবাদ পাঠক দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়ের, নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের, ম্যাগনামের বষীঁয়ান ফটোগ্রাফার আব্বাস কিংবা ইনডিয়ান কিংবদন্তীতুল্য ফটোগ্রাফার রঘু রাইয়ের। সে তালিকায় আরো যোগ হয়, আবদুল গাফফার চৌধুরী, ফাদার গাস্তোঁ রবের্জ কিংবা কবি আল মাহমুদের নাম। যাদের নাম বললাম, তাদের প্রত্যেকের বেলাতেই শাটার টেপার সময় আমি অনুভব করেছি একটি দায়িত্ব। এ মানুষদের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ধরে রাখার দায়িত্ব।

আমি চাই বা না চাই, তারা বেশিদিন থাকবেন না এবং এটাই বাস্তবতা। শাটার টেপার সময় আমার মন কেন্দ্রিভূত থাকে কেবল একটি বিষয়ে, মুহুর্তের সঙ্গে মানুষটিকেও ধরে রাখতে হবে। আমি চাই বা না চাই, তখন আমার শ্বাস অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আজ যখন এই লেখাটি লিখছি, খুব সচেতন হয়ে যখন ভাবছি তখন মনে পড়ছে কর্নেল গুলজারের ছবি তোলার সময় উল্লিখিত অনুভূতি আমার হয়নি। আমার মনেই হয়নি এ লোকটির আয়ু আছে আর মাত্র বছর তিনেক।

ছবিটি যখন তুলি, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্নেল গুলজার তখন সারা বাংলাদেশে হিরো। আগেরদিনই তিনি বাংলাভাই এবং শায়খ আবদুর রহমানকে ধরেছেন সিলেট এলাকা থেকে। পরদিন তিনি এলেন বিটিভিতে লাল গোলাপ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। হায়, কখনো আন্দাজ করিনি সেই কর্নেল গুলজারের ছবি এভাবে কখনো পোস্ট করতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.