বাড়ি ফেরা হলো না কর্নেল আফতাবের
কর্নেল আফতাব শুক্রবার বাড়ি আসতে চেয়েছিল। কিন্তু হায়! কে জানতো জীবত তো নইই এমনকি তার মৃত দেহও বাড়িতে পৌছলো না। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ বাড়ের মতো বাড়িতে এসে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে ভাইকে বলেছে, `আব্বা-আম্মার কবর ভালো করে পরিস্কার করিস, ইট দিয়ে ওয়াল দিস। আমি ফিরে আসছি। ' কবরের প্রসঙ্গ আসলে বড় ভাই বয়েস হওয়ায় নিজের মৃত্যুর কথা বললে তিনি বলেছিলেন, `কার কোথায় কবর হবে কে জানে।
' সেই কথাটিই সত্য হলো ঘাতকের বুলেটে বড় ভাইয়ের আগেই নিবে গেলো তার জীবন প্রদীপ। রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আফতাবের এই নির্মম পরিনতি কিছুতেই মানতে পারছেন না স্বজনসহ পরিচিত সকলেই। ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এই সেনা কর্মকর্তার লাশ শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয়েছে ঢাকার বনানী কবরস্থানে।
হাসিখুশি, সদালাপি ও বিনয়ী কর্নেল আফতাবের মৃত্যুর সংবাদে শোকের মাতম এখন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায়। রংপুর বিডিআর-এর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আফতাবুল ইসলাম বুলবুল কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ির কৃতি সন্তান জসিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মরহুম ফয়জার উদ্দিন ব্যাপারি ও মা আতরজন-এর ছোট সন্তান।
শুক্রবার দুপুরে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ফুলবাড়ী উপজেলা সদরে পৌছলে সকলের একই কথা, আহা বুলবুল ভাই খুব ভালো মানুষ। এই তো, ২০ ফেব্রুয়ারী গরিব দু:খী শীতার্ত মানুষের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করেছেন জসিমিয়া হাইস্কুল মাঠে।
বেলা ৩টার দিকে ফুলবাড়িস্থ কর্নেল আফতাবের পৈতৃক বাড়িতে গেলে এক হৃদয় বিদরক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাড়ির সকলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম আদম চোখের পানি ভাসিয়ে বলেন, ও আমাদের খুবই আদরের।
৭ ভাই বোনের সবার ছোট-বুলবুল। সে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা বেলা এসে আমাকে ৫হাজার টাকা দিয়ে সে বলল, ভাইজান, `আব্বা-আম্মার কবর ভালো করে পরিস্কার করিস, ইট দিয়ে ওয়াল দিস। ' আমি তখন বললাম, তুই, বেলাল ও হিলু বাইরে থাকিস। হায়াত-মউতের কথা বলা যায় না। আমি মারা গেলে বাবা-মায়ের কবরের পাশে আমার কবর দিস।
তখন বুলবুল আমাকে ধমক দিয়ে বলল, `কার কবর কোথায় হবে তুই কিভাবে জানিস?'
তিনি আরও জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা হলে বুলবুল জানায়, আমি ২৬ অথবা ২৭ তারিখ ঢাকা থেকে বাড়ি আসবো। তারপর আর তার সাথে ঢাকায় বিডিআর-এর বিদ্রোহের কথা শুনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। হুহু করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার আর বাড়ি আসা হলো না।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৮১ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৩ সালে এইচএসসি পাশ করে সেকেন্ড লেফটেনন্ট হিসাবে সেনাবাহিনীতে ঢাকায় যোগদান কেরন। চাকুরী জীবনে তিনি সাইপ্রাস, চীন, জাপান, ইরাক, সুদান, কুয়েত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিন গ্রহণসহ জাতিসংঘ বাহিনীতে সুনামের সাথে চাকুরী করেন।
১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার মিরপুরের বই ব্যবসায়ী মরহুম মোশাররফ হোসেনের একমাত্র কন্য বন্যা ইসলামকে বিয়ে করেন। অরহা নামের আট বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের ২য় শ্রেনীতে পড়ে। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম আদম কলেজ শিক্ষক, আনোয়ারুল ইসলাম দুলাল ব্যবসায়ী, ডা: আজিজুল ইসলাম বেলাল রংপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, ড. আইনুল ইসলাম হিলু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং দুই বোন স্কুল শিক্ষিকা।
গত ১১ ফেব্রুয়ারী তার সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয় এই লেখকের।
তিনি এসেছিলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্তের রামখানা সীমান্তের ওপারে ভারতের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় একটি বৈঠকে অংশ নিতে। বৈঠকটি ছিল ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিডিআর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক। পেশাগত কাজে এই লেখকের সাথে অনেকবারই যোগাযোগ হয়েছে। সেদিন ভারতে প্রবেশের পূর্বে এক সাথে রামখানা বিওপি ক্যাম্পে ২৭ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে, কর্নেল সুমন কুমার বড়ুয়া, দেশ টিভি'র কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি অলক সরকার, ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সভাপতি ইত্তেফাক সংবাদদাতা আনোয়ারুল হক, ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মন্টুসহ কয়েকজন। কয়েকদিন আগে এই প্রতিবেদকের করা এটিএন বাংলায় প্রচারিত সীমান্তে বিএসএফদের সাধারণ মানুষহত্যা বিষয়ক একটি সংবাদ নিয়ে কথা হয় তার সাথে।
সংবাদটিতে তার বক্তব্য ছিল। সংবাদ মাধ্যমে ঐটি ছিল তার শেষ সাক্ষাতকার।
দেখুন:- http://www.youtube.com/user/alamgir250205
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।