যুদ্ধকালীন অবস্থায় পরিস্থিতি কেমন হয় তার একটা প্রকাশ দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরে, যদি ৭১ এ প্রযুক্তি এমন হতো তবে আমরা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি নিয়ে কর্পোরেট উদ্যোগে মাথা ঘামাতাম না।
বিডিআর সদস্যরা দরবার হলে, ভাষ্যমতে প্রায় ১৩০ জন অফিসারকে হত্যা করেছে। এই হত্যা কোনো বিচারেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এইসব হত্যার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে, পরিকল্পিত উপায়ে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে, না কি এটা বহুদিনের পুরোনো ক্ষোভের উদগীরণ এবং পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে আগত সকল বিডিআর সদস্যই এটাতে সক্রিয় অংশগ্রহন করেছে?
যেকোনো অমানবিকতার বিরুদ্ধে সব সময়ই একটা চলমান মানবিকতার লড়াই থাকে, নৃশংসতা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিনতার অংশ নয়।
তবে দীর্ঘদিনের নিষ্পেষণ, এবং আবশ্যিক ভাবেই ভীতি মানুষকে সহিংস করে, মানুষের নৃশংসতার বিরুদ্ধে চলমান ভাবনাকে দমিয়ে সহিংস হতে সাহায্য করে অমানুষিক ভীতি। মরিয়া মানুষ সব সময়ই নৃশংস এবং ঘাতক।
গত দুদিনের অব্যহত গুজব আর রটনার বাইরে মানুষের ভেতরে উদ্বেগও প্রকট হয়ে উঠেছিলো, দেশের প্রতিটা স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রতি ঘন্টায় বিশেষ বুলেটিন প্রচার করেছে, সংবাদপত্রগুলোর শিরোণামও একই রকম সংঘাতের সংবাদই প্রচার করেছে। এর বাইরে জনমানুষের গণমাধ্যম ব্লগেও অনেক ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, তবে মিডিয়ার ভুমিকা এবার অনেক বেশী পরিপক্ক ছিলো, তারা গুজবের পেছনে ধাওয়া করে নি মোটেও। তবে ব্লগে গুজবের পরিমাণ বেশী ছিলো।
গতকালের ঘটনার পরে সারাদেশের বিডিআর ছাউনিগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিলো, এরপরও অবশ্য সন্ত্রস্ত বিডিআর সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই স্থানে স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলেছিলো সাম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেতে। খুব কম বিডিআর ক্যাম্পই শান্ত ছিলো। আগামী কালের সংবাদপত্রে আর বিস্তারিত পাওয়া যাবে ।
গত কাল রাতেই সামরিক বাহিনী বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছিলো পিলখানার আশেপাশে। তারা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিলো।
যদি রাত ৩টা পর্যন্ত চলমান শান্তি আলোচনায় বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত না থাকতেন তবে হয়তো গত রাতেই একটা সামরিক অভিযানে পিলখানা দখলের প্রচেষ্টা নিতো সামরিক বাহিনী। সেটা ঘটে নি।
সকাল থেকেই অবশ্য সামরিক বাহিনী ঢাকা শহরের অনেকগুলো রাস্তায় ব্যরিকেড দিয়ে রাখে। বিশেষত ধানমন্ডি এবং আজিমপুরের রাস্তাগুলো একমুখী করে দেওয়া হয়, সেখান থেকে মানুষ বাইরে আসতে পারছিলো , কিন্তু ধানমন্ডি ২ কিংবা নিউমার্কেটের রাস্তায় মানুষ প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছিলো।
শেখ হাসিনার ভাষণের পরে প্রকৃত পক্ষে অস্ত্র সমর্পনের কাজটা শুরু হয়, সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভবনা নাকচ করে দেন নি প্রধানমন্ত্রী।
৩টার ভেতরেই অস্ত্র সমর্পনের ব্যগ্রতা বৃদ্ধি পায়। একই সাথে সারা দিনেই বিডিআর সদরদপ্তরে আটকা পড়া মানুষদের মিছিল বের হতে থাকে , তবে কেউই সংবাদ মাধ্যমের সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলবার মানসিকতা নিয়ে ছিলেন না, এরপরও তাদের কয়েকজনের মন্তব্য নেওয়ার জন্য টিভি সাংবাদিকদের ব্যগ্রতা দেখে খারাপ লাগলেও মেনে নিতে হচ্ছে বিষয়টা।
যারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছে, তারা কেউই বলে নি সেখানে আটক বিডিআর সদস্যরা তাদের উপরে নির্যাতন চালিয়েছে।
কিন্তু ব্লগে কিংবা বিভিন্ন গণ মেইলে বিষয়টা এমন ভাবেই ছড়ানো হয়েছে, নীচু সারির সামরিক কর্মকর্তা, এবং সদ্য রিক্রুট সামরিক সদস্যদের জানানো হয়েছে তাদের বড় বড় অফিসারদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের পরিজনদের উপরে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
এই পরিকল্পিত প্রচারণা, আমার নিজের ধারণা বিডিআরের দাবিকে অগ্রাহ্য করে সেনাসদস্যদের ভেতরে ঘৃণা জাগানোর একটা প্রয়াস।
বিডিআর সদর দপ্তরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার জাওয়ান ছিলো, আমার মনে হয় না তাদের সবাই এই নৃশংসতায় সক্রিয় অংশগ্রহন করেছে। এদের একাংশ নিশ্চিত ভাবেই অপরাধী এবং তাদের উপযুক্ত বিচারও চাই আমি।
অস্ত্র সমর্পনের পরে নিরস্ত্র বিডিআর সদস্যরা পিলখানায় অবরুদ্ধ আছেন, তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য রয়েছে পুলিশ এবং র্যাব। তবে মৃত্যু ভয়ে পালানোর চেষ্টাও করছে ভীত বিডিআর সদস্যরা। তাদের র্যাব আটক করছে, সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও তাদের আটক করছে, নবীনগর থেকে ৫০ জন বিডিআরকে আটক করে র্যাব পাঠিয়ে দিয়েছে ।
তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না, তাদের দায় দায়িত্ব নিচ্ছে না পুলিশ।
আটক বিডিআরদের দফায় দফায় জমা করা হচ্ছে ধানমন্ডি এলাকায় অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্পে।
এখনও নিশ্চিত বলা যায়, সেখানে গণহত্যা ঘটছে না। সেখানের অধিবাসীদের পুলিশ বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এখন সবই মৃত্যুর সংখ্যা গোনা।
বিডিআরের হাতে নিহত ১০০ জনের বেশী সামরিক কর্মকর্তার লাশের অঙ্ক গুনা শেষ হলে আমাদের বর্তমানে নিরস্ত্র এবং বিদ্রোহী বিডিআর জাওয়ানদের মৃত্যুর সংখ্যা গুনতে হবে।
তাদের সবাই এই অপরাধে যুক্ত না থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যার তারতম্য ঘটবে না। এইটা আমার অনুমাণ। সেখানে উপস্থিত, কর্মরত এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল বিডিআর সদস্যদের উপরে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হবে।
আমি এই প্রতিহিংসার বিরোধীতা করি।
আমি বিডিআর সদস্যদের সাধারন আদালতে বিচারের পক্ষপাতি, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসহ তাদের আদালত গণহত্যা ও মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে ফাঁসির শাস্তি দিলেও আমি দুঃখিত হবো না।
কিন্তু এইসব সমর্পিত মানুষরা আদৌ বিচারের কাঠগড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে এমনটা আমার মনে হয় না। তবে এই প্রতিহিংসার সংবাদও একদিন প্রকাশিত হবে।
এবং এই পরিকল্পিত প্রতিহিংসার সাথে সকল সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকবে না, বরং হয়তো কয়েকশত কমিশনড অফিসার এবং অধিকাংশ জাওয়ান এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহন করবে। আমি সেইসব মানুষদের বিচার দাবি করবো প্রকাশ্য আদালতে।
আমি এমনিতে সামরিক বাহিনী রাখবার পক্ষপাতী নই, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এমন বড় মাপের সেনাবাহিনী পুষবার কোনো প্রয়োজন নেই, অনেক বেশী স্বেচ্ছাশ্রমনির্ভর সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিক চাই আমি। এবং আমি চাই আর্মি রেগুলেশনে এমন বিধানের উপস্থিতি, যেই বিধানের বলে, সুধুমাত্র সামরিক আদালতেই নয়, বরং সেনাসদস্যদের সকল অপরাধের বিচার সাধারণ আদালতেও করা যায়।
সামরিক নির্যাতিত সাধারণ নাগরিকও যেনো ন্যায় বিচারের অধিকার পায় এমন একটা বিধি সংযোজন করা কি খুব বেশী বড় দাবি হয়ে যাবে?
সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ ভাতাই আসে জনগণের ট্যাক্স থেকে। তবে তাদের সাধারণ মানুষের কাছেক কোনো জবাবদিহিতা নেই, পদাধিকার বলে সামরিক বাহিনীর প্রধন প্রধানমন্ত্রী তবে সামরিক বাহিনীর কল্পিত প্রধান হওয়া ব্যতিত অন্য কোনো ক্ষমতা তার নেই । সুতরাং তাদের দায়বদ্ধতা সাধারণ মানুষের কাছে নয়।
এবং এই দায়বদ্ধতার পরিমাণ বাড়াতে হবে , একই সাথে সামরিক তোষণ বন্ধ করতে হবে, বাংলাদেশের প্রচলিত ঐতিহ্য মেনে সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ সদস্যদের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের অলিখিত প্রধান করে দেওয়া, তাদের বিদেশী দুতাবাসের কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি প্রদান কিংবা বিভিন্ন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদানের প্রক্রিয়াটা রদ করা প্রয়োজন, সামরিক সদস্য হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো যোগ্যতার বলে যদি তারা সরকারের কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান সেটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু সাধারণ জনগণের ভেতরেও অনেক যোগ্য মানুষ আছে, যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময় উপেক্ষিত থাকেন শুধুমাত্র সামরিক সংশ্রব না থাকবার জন্য।
এই মুহূর্তে যারা সামরিক বাহিনীর হাতে আটক, তাদের উপরে নির্যাতন চলছে, এই নির্যাতন চলবে আরও অনেকদিন, ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চইত ভাবেই অনেক বিডিআর সদস্যকে হত্যা করা হবে। তবে আজ কাল পরশু যারা মারা যাবে তাদের মৃত্যু হবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে পরিকল্পিত ভাবেই। এবং অনেক সময় নিয়ে একটু একটু করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত সামরিক কর্মকর্তাগণ আটক ব্যক্তিকে হত্যা করবে ।
এমন নৃশংস এবং নিশ্চিত মৃত্যুর দায়েও আমরা কাউকে গ্রেফতার করতে পারবো না।
কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা বৈধ নয়, তবে আগামী ১ বছর অনেক বিচার বহির্ভুত হত্যা ঘটবে। এবং এইসব হত্যার কোনো বিচার হবে না বাংলাদেশে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।