তালেবানদের সাথে শরিয়া আইন চুক্তি: আমরা কিভাবে দেখতে পারি?
আপনার প্রশ্ন দেখে সাধারণভাবে আমার মনে হয়েছে সোয়াত নিয়ে চুক্তিতে আপনি একধরণের আশাবাদ, সাফল্য হিসাবে দেখছেন। যেটা ভুল রিডিং বা পাঠ। বরং বলতে পারেন আসন্ন আগামি প্রলয়ের আগের এটা একটা ক্ষুদ্র উদ্যোগ। এর তাৎপর্য হলো, প্রলয় এতে বন্ধ হবে না সত্যি। তবে চুক্তিতে আপোষ বা ছাড় দেয়া যাই করুক, এতে পাকিস্তান প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, যে পাকিস্তান রাষ্ট্র এখনও নাই হয়ে যায় নাই।
[প্রায় দিন দশেক আগে বাউচার ও প্রণবের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। নিক সমাজ্ঞী দেরিতে হলেও "সোয়াত ঘটনা" নিয়ে আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। তার উত্তরের উস্কানিতে এই নতুন পোষ্ট। এখানে প্রসঙ্গ একেবারেই ভিন্ন। প্রশ্নগুলো নিচে সবশেষে যুক্ত করেছি, আগ্রহী পাঠকরা দেখে নিতে পারেন।
]
আর, আমেরিকা বা ভারত এটা অপছন্দ করলেও, উদ্বিগ্ন হলেও - নিজের সমস্যা নিজের স্বার্থ বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পাকিস্তানের মাটিতে বসে আমেরিকার ছোড়া বোমা খাওয়ার চেয়ে তালেবানদের সাথে সাময়িক খারাপ চুক্তি করা ভাল। এটা হলো, দুটো খারাপের মধ্যে বিবেচনায় যেটা কম খারাপ মনে হয়েছে সেটা উঠিয়ে নেয়া। এটাই সেই নিজস্ব বিবেচনা। পাকিস্তান রাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ভুল, আপোষ, ফল না আনুক, যাই হোক - এটা তার নিজেরই বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত ।
এটাই এর একমাত্র ইতিবাচক দিক।
যেকথা বলছিলাম, "সোয়াত ঘটনা" বলতে আপনি যদি শরিয়া আইন চালুর বিষয়টাকে সাফল্য হিসাবে দেখতে পছন্দ করেন, এতে ইসলামি আন্দোলন কদম আগিয়েছে মনে করেন তবে আমি এর সাথে একমত নই।
শরিয়া আইন: আল কায়েদা বা এধরণের রাজনীতির ধারাগুলো শরিয়া আইনকে যতই তাদের আদর্শগত অবস্হান, লক্ষ্য বলে স্পষ্ট করবে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ততই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যারা বরাবর লড়েছে ফলে যারা এর বন্ধু সমর্থক হতে পারত তাঁরা দূরে সরে যাবে। শুধু দূরে সরে যাওয়া নয়, ততই এরা আমেরিকার সন্ত্রাস বিরোধী অনন্ত যুদ্ধের নীতি অপছন্দ করলেও ওর কোলেই আশ্রয় নেবে, সমর্থক হয়ে যাবে। এর সোজাসাপ্টা মানে হলো, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারভাবে জিততে গেলে শরিয়া আইনের ঝান্ডা খাড়া করা মানে এতে বিভেদ বাড়বে, জিতার সম্ভাবনা কমবে।
বরং শুধু তাই নয়, আমেরিকার সন্ত্রাস বিরোধী অনন্ত যুদ্ধের নীতি যা মুলত পুঁজির নোংরা স্বার্থ, একে আড়াল করতে হাতিয়ার হিসাবে এই শরিয়া আইন ব্যবহৃত হবে। এবং তাই হচ্ছে। আমাদের মত 'আধুনিক' জীবনে অভ্যস্ত শহুরে ও মধ্যবিত্তের চোখে শরিয়া আইন নিয়ে যে জেনুইন ভীতি আছে তাকে ব্যবহার করে আমেরিকা বলছে - দেখো, এই মোল্লা মৌলবির কান্ড। এরা তোমাদের অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে চায়। শরিয়া আইন ভালো কী মন্দ সেদিক থেকে আমি কথা তুলিনি।
সে প্রসঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে হবে।
তালেবান: তালেবান আলকায়েদার আলকায়েদা হবার আগের ফেজ বা স্তর, তবে এতে তালেবান বিলুপ্ত হয়ে যায় নাই। তালেবান প্রসঙ্গ আমার বক্তব্য সেদিকে নয়। আমার প্রসঙ্গ আলকায়েদা ও আমেরিকা (বা ন্যাটো) - এই দুইয়ের মাঝখানে বাফার হিসাবে তালেবানের ভুমিকা।
কোন রাজনৈতিক চিন্তা কোন পার্টি বা গ্রুপ আকারে যখন তার রাজনৈতিক কর্মসূচী কোন গণআন্দোলন ও প্রচারের ধারায় নয়, সরাসরি সশস্ত্র হয়ে রাষ্ট্রকে চ্যালেজ্ঞ করে বসে, উৎখাত করে পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা হয়ে উঠতে চায় - আমি কথা বলব সে প্রসঙ্গে।
গণআন্দোলন ও প্রচারের ধারার সঙ্গে এই সশস্ত্র ধারার মৌলিক তফাৎ হলো - সশস্ত্র ধারা বনাম রাষ্ট্র - এই লড়াইয়ে মাঠে নামার শুরু থেকেই এরা পরস্পরের যে কোন একজনের উৎখাত বা খতম (annihilate) করার চেষ্টা করে ও এর ভিতর দিয়েই এই লড়াইয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে। তুলনায় গণআন্দোলন ও প্রচারের ধারায় শুরু থেকেই উৎখাতের লাইন নয়, তবে প্রথমে আইনি সীমায় থেকে কাজ করে পরে তা সশস্ত্র উৎখাতের দিকে যেতে পারে। এপথের মাঝে বিভিন্ন সময়ে আপোষ আবার আন্দোলন -এভাবেই তার পথ চলা। কিন্তু সশস্ত্র ধারা বনাম রাষ্ট্র - এই লড়াইয়ে মাঝখানে কোন রফা বা আপোষ করে "তুমিও থাক আমিও থাকি" ধরণের কোন কিছু করার সুযোগ থাকে না। তুলনামূলক উদাহরণ হতে পারে - নকশাল আন্দোলন বনাম আমাদের রাষ্ট্র।
কোন আপোষের scope বা জায়গা ওখানে ছিল না। রাষ্ট্র নকশাল আন্দোলনকে দমন করে জিতে গেছে, টিকে আছে। পাঠক আশা করি ভুল বুঝবেন না। নকশাল আন্দোলন ভালো বা সঠিক রাজনীতি কীনা, এভাবে জেতা সম্ভব কীনা - এটা এখানে আমার বিবেচনার বিষয় নয় ফলে তা নিয়ে আমি কথা বলছি না। রাজনীতিটা কেমন তা নয়, রাজনৈতিক কাজের ধরণ কেমন তাই আমার বিষয়।
এবার আলকায়েদা বনাম আমেরিকা এই উদাহরণে বিচার করলে দেখব এক্ষেত্রে কেবল আমেরিকা রাষ্ট্র নয় সারা পশ্চিমা বিশ্ব ও তার স্বার্থ এখানে আলকায়েদার শত্রু। আলকায়েদার অবশ্য এটাকে খৃষ্টান বনাম ইসলামের লড়াই হিসাবে মনে করে মানে দিচ্ছে, প্রচার চালাচ্ছে। বিপরীতে পশ্চিমও এই ইঙ্গিত গ্রহণ করেছে, ফলে ক্রসেডের কথা এসেছে - কিন্তু মনে যাই থাক পশ্চিমা প্রচারের মূল ধারা এটাকে ইসলামিষ্ট "সন্ত্রাসবাদ" বলে আখ্যায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও আমি এটাকে অন্যভাবে দেখি; আন্তর্জাতিক পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সাম্রাজ্যবাদের সঙ্কট মনে করি যার মেনিফেষ্টশন বা প্রকাশটা ধর্মীয় বিরোধের খোলশে আবির্ভুত। এখানে উপেক্ষিত ও পিছিয়ে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সত্ত্বার ইসলামের পরিচয় ও ঝান্ডা তুলে সংগঠিত হবার চেষ্টা করছে।
দুনিয়া জুড়ে পুঁজির আধিপত্য ও এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো পশ্চিমের চিন্তাভাবনাকে যে চালেঞ্জ করছে। এভাবে পরিচয় দাঁড় করিয়ে আলকায়েদা রাজনীতি সঠিক ও জিতবে কী না, জেতা সম্ভব কী না - এগুলোর কোনটাই এখানে আমার আলোচনার বিষয় নয়। আমার বিষয় এটা সশস্ত্র লাইনের রাজনীতি; ফলে আলকায়েদা বনাম আমেরিকা (রাষ্ট্র, পশ্চিমা স্বার্থ, ন্যাটো, পুঁজির আধিপত্য দুনিয়া সব অর্থেই আমি মানে করছি) এই লড়াইয়ে এটা উৎখাত বা খতম (annihilate) এর লাইন। এখানে পরস্পরকে ছাড় দিয়ে লড়াইয়ে মাঝখানে কোন রফা বা আপোষ করে "তুমিও থাক আমিও থাকি" ধরণের কোন কিছু করার সুযোগ নাই। এটা আলকায়েদা শুধু নয়, আমেরিকাও জানে, বুঝে গিয়েছে।
আবার দুই এক মাস বা বছরের মধ্যে এই লড়াই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি যে ঘটবে না বা কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তমূলক ঘটনা ঘটবে না এটাও সবাই উপলব্দি করতে পারছে। আপোষের রাস্তাহীন এই পরিস্হিতিটা তালেবান ধরণের একটা সংগঠনের আকাঙ্খা তৈরি করেছে। আমেরিকার দিক থেকে দেখলে, ওবামার নতুন প্রশাসন বুশের যুদ্ধনীতির সাফল্য দূর অস্ত এটা বুঝে গেছে, বরং কীভাবে এই যুদ্ধ থেকে দেশকে বের করে আনা যায় বিশেষত যুদ্ধের খরচ, বিশ্বব্যাপী সীমাহীন অর্থনৈতিক মন্দাই তার হেরে যাবার কারণ হতে পারে - এসব বিবেচনায় "তুমিও থাক আমিও থাকি" ধরণের পরস্পরকে শ্বাস নেবার বাড়তি কিছুটা সময় দেবার মত কোন ব্যবস্হা বের করা যায় কীনা - এটা এর মূল লক্ষ্য। অতএব তালেবান, বাফার হিসাবে তালেবানের ভুমিকা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আলকায়েদার দিক থেকে দেখলে বাফার হিসাবে তালেবানের সাথে কোন সাময়িক আপোষরফা হলে সি কোন কিছুই হারায় না; না নিজের সংগঠন, না অস্তিত্ত্ব লক্ষ্য ।
বরং আবার চূড়ান্ত কোন লড়াইয়ে যাবার আগে নিজেকে গুছানোর সুযোগ আছে এতে।
কিন্তু মূল ব্যাপার আদৌ তালেবান বলে সাময়িক কিছু একটা খাড়া করা সম্ভব কীনা এটাই এখনও কেউই নিশ্চিত হতে পারেনি। আবার তালেবান বলে কিছু একটার সাথে আপোষরফা করে টিকে থাকার চেষ্টা করা এটাও বহু পুরানো। পাকিস্তানের মোশাররফ, নিজের পুরো শাসন আমলটাই কাটিয়েছে এভাবে। তাঁর ক্ষমতা দখলের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও বলছি।
বলা যায় আমেরিকার যুদ্ধনীতি ও স্বার্থের কবল থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে আলাদা করে বের করে আনার আপ্রাণ লড়াই করে গেছেন তিনি। তাই পাকিস্তানী তালেবানদের সাথে বহুবার "সোয়াত ঘটনার" মত এধরণের আপোষরফা করেছেন তিনি। যদিও এতে শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ আফগানিস্তানে ন্যাটোর উপস্হিতির ছয়-সাত বছর পরেও আলকায়েদা দমনে কোন কার্যকর ফল দেখাতে ব্যর্থতার যে আমেরিকান অফিসিয়াল মুল্যায়ন হয়েছিল গতবছরের শুরুতে, তাতে মোশাররফকেই দোষী করা হয় এই বলে যে, তিনি পাকিস্তানের মাটিতে বসে বা পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় বিমান বোমা হামলা করে আলকায়েদা খতমে সহায়তা করছেন না, দেখেই আফগানিস্তানে ন্যাটোর ব্যর্থতা। পাকিস্তানে আমেরিকান সৈন্য এসে অপারেশন, সামরিক তৎপরতা চালাবে বা পাকিস্তানের মাটিতে আমেরিকা বিমান হামলা চালাবে বোমা ফেলবে - এটা মোশাররফ একমত হননি।
তাঁর যুক্তি ছিল এটা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ত্বের লঙ্ঘন হবে। কিন্তু আমেরিকার বুশের চাপ তিনি সহ্য করতে পারেননি। ফলে বেনজিরের আবির্ভাব ও মৃত্যু, মোশাররফের ক্ষমতা হারানো থেকে জারদারীর প্রেসিডেন্ট হওয়া, ইদানিং আমেরিকানদের পাকিস্তান সীমান্তে বিমান হামলা - পরিশেষে আবার জারদারীর আমেরিকা ও ভারতের সমালোচনা সত্ত্বেও আবার তালেবানদের সাথে আপোষরফা চুক্তি করা - এসবই একসূত্রে গাথা। অর্থাৎ ব্যকটু জিরো স্কয়ার, আবার সেই মোশাররফ বিনা মোশাররফের রাস্তা।
এজন্য "সোয়াত ঘটনার" আমার কাছে আসন্ন আগামি প্রলয়ের আগের এটা একটা ক্ষুদ্র উদ্যোগ মাত্র।
এই হলো নিক "সমাজ্ঞী" আপনার প্রথম তিন প্রশ্নের সাধারণ উত্তর। আমি আশা করব - শরিয়া আইন চালুর বিষয়টাকে সাফল্য হিসাবে দেখতে পছন্দ করা, এতে ইসলামি আন্দোলন আগিয়ে যাচ্ছে, ইসলামের জয়জয়কার হচ্ছে এতে - কেন আমি এভাবে দেখছি না তা বুঝবেন।
আপনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রসঙ্গে আরও কিছু যোগ করব। বুশের সঙ্গে ওবামার তফাৎ কী? সেদিক থেকে বললে ওবামার সাধারণ যুদ্ধকৌশল হলো, ১. শ্বাস নেবার জন্য কিছু সময় বের করা, ২. যুদ্ধ থেকে দেশকে বের করে আনার কৌশল হিসাবে ইরাক থেকে যথাসম্ভব দ্রুত গুটিয়ে কেবল আফগানিস্তানে সব রিসোর্স জড়ো করা। অর্থাৎ তেল বা অন্য ভৌগলিক স্বার্থ এখন থাক, আলকায়েদার সাথে একধরণের মোকাবিলা, তাতে একটা তালেবান জাতীয় কিছু পাওয়া গেলে যুদ্ধ মোটামুটি একটু গুটিয়ে নেয়া যায় কীনা - সেটাই আপাত লক্ষ্য।
এটাই ওবামার বিশেষ দূত রিচার্ড হলব্রুকের টাস্ক। যদিও অনেকেই এতে প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে তেলের স্বার্থেই যদি ইরাকে যাওয়া হয়ে থাকে তাহলে সে স্বার্থের কী হবে? সেই মিশন কী আধুরা বা অপূরণীয় থেকে গেল না তাতে? কী লাভ হলো তাহলে যুদ্ধে এত খরচ করে? এটাই আপনার "অপরচুনিটি কষ্ট" এর প্রশ্ন। ওবামার কাছে কষ্টের প্রশ্নটা এখন টাকা বা অর্থের নয়, রাজনৈতিকভাবে আমেরিকার গুছিয়ে আবার খাড়া করার, টিকে থাকার। এতে ওবামা সফল হবে কীনা সে উত্তর আলাদা।
চাউল-প্রণবের বা ভারতের স্বার্থ: রিচার্ড হলব্রুক ও প্রণব শরিয়া আইন ইস্যুতে একটোনে বিবৃতি দিতে পেরেছে সত্য।
কিন্তু রিচার্ড হলব্রুক যদি ওবামার চাহিদা মত আগাতে সফল হয় তবে প্রণব ও তাঁর ভারতের হতাশ হবার সমূহ কারণ আছে। ভারতের অর্থনৈতিক দানব হয়ে উঠার স্বপ্নের ক্ষেত্রে, "ইসলামি টেররিষ্ট" বা "সীমা পারকে আতঙ্কবাদ" সত্যি সত্যিই বিশাল বাধা। আমেরিকার ঘাড়ে চড়ে এই বাধা অতিক্রমের চেষ্টা করছে সে। কিন্তু আমেরিকার নিজের সমস্যা সমাধানের পথ ক্রমশ ভারতের স্বার্থের থেকে আলাদা অর্থাৎ পরিপূরক না হওয়ার পথে যেতে পারে। ভারতের সমস্যা বেকুবের মত ভারত নিজেই নিজের ভেতরের দিকে দেখতে আগ্রহী নয়।
ধরা যাক, ভারতের "ইসলামি টেররিষ্ট" বা "সীমা পারকে আতঙ্কবাদ" এর সমস্যা আগামিতে নাই হয়ে গেছে কোন কারণে বা যাদু মন্ত্র বলে। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারতের বর্তমান নীতির কারণে সমাজে হিন্দু মুসলমানের বিরোধ, অবিশ্বাস যে জায়গায় চলে গেছে - সমাজের গাঠনিক তন্তুতে (social fibre) যে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে - এদিকে তো তার নজরই নাই। এই ক্ষত নিয়ে অর্থনৈতিক দানব হয়ে উঠার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেতে বাধ্য। সরকারী মহলে, রাজনৈতিক দলে এভাবনা ভাবার সীমাহীন অযোগ্যতা থাকলেও ভারতীয় সমাজের কোথাও না কোথাও ক্ষুদ্র গোষ্ঠি আকারে এদিকে মনোযোগ আছে বলেই আমার ধারণা। অন্তত, ভারতীয় কিছু সিনেমা দেখে আমি এই ইঙ্গিত ও ধারণা পেয়েছি।
"মুম্বাই মেরি জান", "ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট", বা "স্লামডগ মিলিয়েনিয়াম" দেখুন - ইঙ্গিতটা পাবেন। নিঃসন্দেহে এগুলো ভারতের সামাজিক সমস্যার উত্তর নয়। তবে সমস্যাগুলোকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা আছে এতে - তার লক্ষণ। এই কাজটুকুও কোন রাজনৈতিক সংগঠনে, রাষ্ট্রের নীতিতে প্রতিফলিত হতে এখনও আমাদের নজরে পড়েনি। শেষ করছি।
ভালো থাকবেন।
[নিচে আমার পুরান পোষ্টে Click This Link সমাজ্ঞীর প্রশ্ন গুলো পাঠকের সুবিধার্থে এখানে তুলে এনেছি]
সমাজ্ঞী বলেছেন: ধন্যবাদ পি মুন্সী ! আপনার সর্বশেষ কটি পোষ্ট পড়ে বেশ ভাল লাগলো। তার সুত্র ধরেই আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। সঙ্গে থাকলে বাধিত থাকবো।
প্রথমত: - দক্ষিন এশিয় রাজনৈতিক হালচালের মধ্যে আফগানিস্তান, বিশেষ করে তালিবান আন্দোলনের জায়গাটি কোথায় এবং কতটুকু ? বিশেষ করে সোয়াত ঘটনা ঘটার পর ?
দ্বিতীয়ত: - প্রতিটি যুদ্ধের অপরচুনিটি কষ্ট রয়েছে।
অতএব, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের অপরচুনিটি কষ্ট রয়েছে; যার দায় নিতে হচ্ছে আমিরেকার। আমার প্রশ্ন হলো, এই দুটি যুদ্ধের অপরচুনিটি কষ্টের মধ্যে আকাশ-পাতাল কোন তফাত রয়েছে কি- যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধ পাশে সরিয়ে রেখে আফগানিস্তানে পূর্ণ মনোনিবেশ করল ? এরকম কোন তত্ত্ব না থাকলেও মূলত: কোন কারণে আমেরিকার্ এই বেছে নেয়া- বিষয়টির খোলাসাকরণে আপনার বক্তব্য শুনতে পারলে খুশি হবো।
তৃতীয়ত: - সোয়াত ঘটনা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে গুনগত কোন পরিবর্তন তৈরী করবে কি ? হলে তার রূপ সম্ভাব্য কি হতে পারে ? রিচার্ড হলব্রুক ও চাউল দাদার সম্মলিত বক্তব্য ইতিমধ্যে আমরা শুনেছি।
চতুর্থত: - আপনার লেখার সুত্র ধরে বলছি, আপনি বলেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র অর্থনৈতিক পরাশক্তি হলে তার কিছু লাভ আছে ? একটু খোলাসা করবেন কি ? কারণ যেখানে ইতিমধ্যেই এর উল্টো অভিজ্ঞতাই লাভ করেছি, করে আসছি। তাই না ?
সবশেষে,-
ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাইনা।
আপনার ব্লগে বারবার হানা দিবো, তাতেই ওটি আপনি অনুভব করতে পারবেন- আশা করি। তবুও.......
ধন্যবাদ পি মুন্সী ! অসংখ্য ধণ্যবাদ ! আগামিতে ইস্যু কেন্দ্রীক এই ধরণের আরো যথার্থ পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।