মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। তা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন
আট
নিজের কাছে আমার অনেক প্রশ্ন থাকে। আমি কোনো সমস্যায় পরলে নিজেকে প্রশ্ন করি। কি করা উচিত? এমন করলে কেমন হয়? সহজ কথায় প্রশ্ন উত্তর পন্থায় সমস্যার সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান খোঁজা। তবে কিছু কিছু ব্যাপার থাকে, এইসব ব্যাপারে কোনো সমাধান খুঁজতে যাই না।
কারন এই সমস্ত সমাধান ডেকে আনতে পারে নতুন ভয়ংকর সমস্যা। এই ধরনের খুব বেশি ব্যাপার নেই। ঠিক এই মুহুর্তে এমন একটাই ব্যাপার আছে। সেটা হলো নীতু। নীতুর প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধাবোধ।
ওর ব্যক্তিত্ব আমার অনেক পছন্দ। ওর কষ্ট আমার মধ্যে অন্যরকম সহানুভূতির জন্ম দেয়। ওর জন্য কিছু একটা করতে পারার জন্য আমি ছটফট করি। এই বাক্য গুলোই আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরের জন্য যথেষ্ট নয়। আর এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আমার কিংবা নীতুর কারো জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না।
তাই আমি, জীবন যুদ্ধে পরাজীত সৈনিক, নতুন করে জেতার স্বপ্ন দেখি না। তার চেয়ে এইতো ভাল আছি। বেশ আছি।
আজকে নীতুর একটা পরীক্ষা আছে। নীতুর পরিবারের কেউ জানেনা।
নীতু অনার্স দিচ্ছে প্রাইভেট এ। যেখানে ওর পরিবারের কেউ জানেনা সেখানে আমার জানার কোন কারন নেই। তারপরও আমি জানি তার কারন হলো বেশ কিছুদিন ধরে আমি নীতুকে ছায়ার মতন অনুসরন করি। ও কোথায় যাচ্ছে কি করছে? একে কেউ নজরদারী ভাবলে ভুল করবে। আমি ওকে অনুসরন করি তার কারন যদি ওর কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়? যদি আমার কিছু করার থাকে।
সুযোগ যে একেবারে আসেনি তা না। অনার্সে ভর্তি নিয়ে একটা ঝামেলায় পরেছিল ও। আমার সুযোগ ছিল। সূযোগ কাজে লাগিয়েছি। কখনো যে ওর সামনে পরে যাইনি তা না।
এই পরিস্থিতি গুলো আমি সামলে নিতে পারি না। ভ্যাবচেকা খেয়ে যাই। কি বলবো বুঝতে পারি না। আর নীতু এত আশ্চর্য মেয়ে, এমন মুহুর্তে কখনো ভুল করেও জিজ্ঞেস করেনা আমি এখানে কি করছি? যেন আমার ওখানেই থাকার কথা। আমার প্রতি ওর কোনো রকম কৌতুহল আমি দেখিনি কখনো।
সকালের সময়টা পার করতে হবে। তারপর দুপুরের আগে আগে কলেজ। এই সকালের সময় কাটানো একটা কঠিন কাজ। উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে এটা কোনো ব্যাপার ছিল না।
আজকের সকালটা অতিরিক্ত রৌদ্রজ্জ্বল। খেলাধুলার জন্য চমৎকার কিন্তু ঘুরে বেড়ানোর জন্য না। তারপরো আর যাই হোক ঘরে বসে থাকা যায়না। ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় যাব এটা ঠিক করার জন্য সবচেয়ে আদর্শ যায়গা হলো মতি মিয়ার চায়ের দোকান।
“ মতি মিয়া কেতলিতে যেই চা টা আছে সেটার লিকার কি নতুন না পুরান?”
“ ভাইজান।
মতির দোকানে আইসা আপনের কুনোদিন জিগান লাগবো না লিকার নতুন না পুরান। আপনে শুধু কইবেন মতি চা দাও। আর চা নিয়া চুমুক দিবেন। ”
“ যেই প্রশ্ন করলাম তার উত্তর ছাড়া সব কথাই বললা। নতুন লিকারের চা আমার পছন্দ না।
তোমার এই কেতলির চায়ের লিকার যদি নতুন হয় তাইলে দিবা না। আর যদি লিকার পুরান হয় তাইলে এক কাপ চা দাও। ”
“ভাইজান। চায়ের লিকার নতুন। কিন্তু আইজকা আমি আপনেরে নতুন লিকারে চা দিমু।
আপনে খাইবেন। খাইয়া আমারে কইবেন চা কেমুন হইছে। ”
এই বলে সে শুরু করল এক বিশাল গল্প। তার বাবা তাকে এই স্পেশাল চা বানানো শিখিয়েছে। নতুন লিকারেও কিভাবে পুরনো লিকারের ফ্লেভার আনা যায়।
মতি মিয়ার বেশিরভাগ গল্প শোনার মত ধর্য্য আমার থাকেনা। আজ অবশ্য আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ ওর চা বানানোর গল্প শুনলাম আর দেখতে থাকলাম সে কি করে? চা বানানো শেষ হবার পর আমি আবিষ্কার করলাম এত সহজ একটা বিষয়কে মতি মিয়া এমন ভাবে বলেছে যেনো এটা অনেক সাধনার ব্যাপার। নতুন লিকারের চা টা কাপে ঢালার আগে ছাকনিতে কিছু কাঁচা পাতা দিয়ে দেয়া ব্যস।
চা খাওয়া শেষ করলাম।
চা অনেক ভাল হয়েছে বলবো না। তবে নতুন লিকারের মতন জঘন্য হয়নি। নতুন একটা ব্যাপার শেখা হলো। হয়ত কোনো একদিন কাজে লাগবে। এমন সময় পাগলিটা কাছে এসে দাড়ালো।
আমি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলাম “ কেমন আছিস ? ”। সে দাঁত বের করে মাথা ঝাকালো ভাল আছে। আমি দেরি না করে পকেট থেকে টাকা বের করে মতি মিয়াকে দিয়ে বললাম যেনো পাগলিটাকে কিছু খেতে দেয়। মতি মিয়ার চোখ মুখের ভাব দেখলেই বোঝা যায় সে এটা পছন্দ করে না। তরপর ও আমার ভয়ে কিছু বলতে পারে না।
ঘুরে হাঁটা শুরু করতেই দেখি দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে বজলু মিয়া। সেই ঘটনার পর ঠিক করেছি ওকে এখন থেকে বজলু মিয়া বলে ডাকব। আমি ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে তার দিকে আসতে দেখে একটু ভড়কে গেছে সে। অন্য দিকে তাকিয়ে আমাকে না দেখার ভান করল।
আমি কাছে গিয়ে বললাম
“ কেমন আছেন বজলু মিয়া সাহেব ? ”
সে কিছুক্ষন হতভম্ভের মত তাকিয়ে থেকে বললো
“ আমার নাম বজলু মিয়া না। আলিম চৌধুরী। আগে নাম বজলু মিয়া ছিল। নাম চেঞ্জ করেছি। ”
“ নাম চেঞ্জ করেছেন ভাল কথা।
আঁকিকা করিয়েছেন? আমিতো দাওয়াত পেলাম না?”
“ জ্বী না। এখনো করানো হয় নাই। ”
“ তাহলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা করেন। অনেকদিন ভাল খাওয়া দাওয়া হয় না। আর আমাকেতো সবসময় পাবেন না।
মতি মিয়ার দোকানে আমার জন্য কার্ড দিয়ে যাবেন। ”
“ জ্বী আচ্ছা। আপনাকে সময়মতন জানাবো। ”
“ আমি কিন্তু খাওয়া না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে বজলু মিয়া বলেই ডাকব। ঠিক আছে ? ”
“ ডাকবেন আপনি।
আপনার যেই নামে খুশি ডাকবেন। আমি বুঝলেই হইল যে আপনি আমারে ডাকতাছেন ”
“ এইতো ভদ্র মানুষের মতন কথা। আচ্ছা বজলু মিয়া চলি। আবার দেখা হবে। ”
এই বলে আমি রওনা হলাম।
আমি জানি আমি রওনা হবার সাথে সাথে বজলু মিয়া আমাকে একটা কুৎসিত গালি দিয়েছে। আর মনে মনে বলেছে “ হারামী আবার আকিকার খাবার খাইতে চায়। হারামী খাবার তোর............... ” তবে সামনা সামনি কিন্তু সে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি তার ঘাবড়ে যাওয়া মুখটাই দেখতে চাইছিলাম। দেখা হয়েছে।
এখন মনের আনন্দে নিজের কাজ করা যায়।
আমার হিসেবে আরো মিনিট পনের বাকি। যদি মোবাইলের ঘড়িটা ঠিক থাকে। আসলে ঠিক কেন যে অপেক্ষা করছি তাও বুঝতে পারছিনা। অপেক্ষা করে কি হবে? নীতু পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে চলে যাবে।
তারপর আমি কি করবো? কলেজে আসার সিদ্ধান্তটা খুবই বোকামি হয়েছে। কি করবো ভাবছি। এদিক ওদিক পায়চারী করছি। একটা খুপড়ি চায়ের দোকান আছে। এই অবেলায় আবার চা নিলাম এক কাপ।
চা খেতে খেতে বেশ পুরনো এক টুকরো পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি। এমন আহামরি কোনো খবর নেই। বিনোদনের পাতা। স্থুল দেহের একজন নায়িকার সাদা কালো একটা ছবির নিচে তার সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটা ছবির খবর। সাদা কালো হওয়ায় এটা যে একটা নায়িকার ছবি সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
লেখা গুলোও প্রায় মুছে গেছে। অনেক কষ্টে যখন মাত্র বুঝতে পেরেছি ছবির নাম কি তখন হঠাৎ শুনি
“ কেমন আছেন? ”
মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি নীতু। আমি খুব ভড়কে গেলাম। যেনো চুরি করতে এসে ধরা খেয়েছি। হাতের কাপ থেকে হাল্কা চা ছল্কে পরলো।
তাড়াতাড়ি কাপ টা রেখে দিলাম। উঠে দাড়ালাম। যেনো আমার শিক্ষক সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বললাম
“ ভালো আছি। তুমি কেমন আছ? ”
“ আমি? খুব ভালো আছি।
আমি আপনার পাশে এই বেঞ্চটাতে একটু বসি? ”
“ এখানে বসবে?”
“কেন? আপনার কোনো আপত্তি আছে? ”
“নাহ সেটা বলিনি। ”
“এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন? ”
“ এই অবেলায় চা খাবে? ”
“ আশ্চর্য লোকতো আপনি। নিজে এই মাত্র খেলেন আর যখনি আমি খেতে চাইছি আর অবেলা হয়ে গেল?”
“ এই এখানে আরেক কাপ চা দাও। ”
“ এক কাপ না। ২ কাপ চা দাও।
আমি বুঝি একা খাব? আর আপনিতো আমার ভয়ে সমস্ত চা ফেলে দিয়েছেন। ”
অন্য কেউ যদি এই ধরনের টিটকারী মাখা কথা বলতো তবে মুখের উপর কঠিন জবাব দিতাম। কিন্তু এখানে সম্ভব না। তাই চুপ করে রইলাম। একটু বেশি হতভম্ব হবার কারন নীতু কখনো আমার সাথে এভাবে কথা বলেনি।
আজকে ওর কথা শুনে মনে হবে আমি ওর কতদিনের চেনা। অথচ সবসময় এমন স্বরে কথা বলে মনে হবে এক্ষুনি প্রথম দেখল এবং আমি একটা জঘন্য লোক।
“ কি ব্যাপার বলেনতো? আপনি কি ঠিক করেছেন কোনো কথা বলবেন না?”
“ আমি কোনো কিছুই ঠিক করিনি। কোনো কিছু ঠিক করে ঘর থেকে বের হবার মতন লোক আমি না”
“ আচ্ছা তো আপনার কি ধারনা পৃথিবীর সব লোক আগে থেকে ঠিক করে রাখে কখন কি করবে? আমি কি ঘর থেকে বের হবার সময় ঠিক করে রেখেছিলাম আজকে এই সময়ে এখানে আপনার পাশে বসে চা খাব?”
“পৃথিবীর কোন মানুষ কিভাবে চলে এটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি আমার মতন চলি।
”
“শোনেন এই বিষয়ে আপনার সাথে ঠিক এই মুহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আমার মন মেজাজ খুব ভালো। আমি চাইনা এটা এ ধরনের ফালতু একটা বিষয়ে কথা বলে খারাপ হোক। ”
“ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে কথাটা কিন্তু তুমি তুলেছিলে।
”
“চায়ের দামটা দিয়ে দিন। এখন উঠব। ”
এই কথা শোনার সাথে সাথে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। নীতুর সাথে এরকম সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার কোনোদিন হয়নি। আবার হবে এমনটা ভাবার সাহস পাচ্ছি না।
একটু কষ্ট নিয়ে উঠে গিয়ে চায়ের দাম দিলাম। দেখলে যে কেউ ভাবতে পারে চায়ের দাম দিতেই আমার সব কষ্ট। দোকানদার ভাংতি দিতে পারছে না। ভাবছি সিগারেট নেব। নীতুর সামনে নিতে একটু অস্বস্তি লাগছে।
তারপরো সিগারেট নিলাম। কি মনে হলো শুধু নিলাম না...একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললাম। তারপর নীতুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে মোটামুটি কঠিন দৃষ্টিতে আমার হাতের সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু বলছে না। মনে হচ্ছে আজ সে কিছু বলবে না।
হয়ত মন ভালো ভাবটা নষ্ট করতে চায় না। আমি জিজ্ঞেস করলাম
“ তুমি এখন কোথায় যাবে নীতু?”
“কেন? আমি কোথায় যাব সেটা দিয়ে আপনার কি কাজ? ”
“ তুমি না এই মাত্র বললে তুমি যাবে?”
“আমি মোটেও যাব বলিনি। আমি বলেছি উঠব। এইযে উঠলাম। ”
আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে।
ওর সাথে কথায়ও পেরে উঠছিনা। তাই চুপ করে থাকাটা শ্রেয় মনে হলো।
“আপনার কাজ কি এখন?”
“আমার কোনো কাজ নেই”
“কোনো কাজ নেইতো এখানে কি করছেন?”
আমি কোনো কথা বললাম না।
“আমারতো ধারনা এখন আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও আপনি বলতেন কোনো কাজ নেই। ”
“তোমার এমন ধারনা হবার কারন জানতে পারি?”
“কোনো কারন নেই।
এমনি মনে হলো তাই বললাম। চলুন আগানো যাক। ”
আমার কাছে ব্যাপারটা অনেকটা স্বপ্নের মতন। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এমন একটা সময় আসবে। পথ ধরে হেটে যাচ্ছি আমরা দুজন।
আমি ও নীতু। আজকের নীতু একটু আলাদা অন্যদিনের চেয়ে। আমার খুব জানার কৌতুহল হচ্ছে কি কারনে নীতুর মনে এত আনন্দ। কিন্তু এই প্রশ্ন জিজ্ঞেশ করার নৈতিক অধিকার এবং সাহস কোনোটাই আমার নেই। তাই এই ব্যাপারে কোনো কথা বলা হলো না।
“ আপনি কি এত ভাবছেন? ”
“ আমিতো সবসময় ভাবি। এটাতো নতুন কিছু না। ”
“আপনার জন্য নতুন না। আমার কাছে ব্যাপারটা নতুন। আপনি সারাক্ষন ভাবেন না কি করেন সেটাতো আমার জানার কথা না।
”
“তেমন কিছু ভাবি না। আবোল তাবোল বিষয় নিয়ে ভাবি। এসব শুনলে তোমার মনভালো ভাবটা বিষিয়ে উঠতে পারে। ”
“হা হা হা। ভালো বলেছেন।
তবে ব্যাপার হলো আমি আপনাকে জিজ্ঞেশ করছিলাম মিলিয়ে দেখার জন্যা। আপনি কি ভাবছেন সেটা আমি জানি। আমার জানাটা সঠিক কিনা সেটা যাচাই করে দেখার জন্য। ”
আমি একটু সাবধানী হয়ে গেলাম। নীতুর কথা শুনে কেমন যেনো ভয় লাগছে।
মনে হচ্ছে সে বুঝতে পারছে আমি কি ভাবছি। এমনটা ভাবার কোনো কারন নেই। তারপরো একটা অজানা ভয় গ্রাস করছে আমায়। আমি চুপ করে থাকলাম। তারপর কি মনে করে বললাম...
“ থাক! আর নাই বা শুনলে।
তার চেয়ে তোমার ভাবনাটা তোমার কাছে ঠিক থাকুক। ”
“আপনার সবকিছুতে কেমন যেন একটা নাটকীয়তা। এরকম নাটকের ভাষায় কথা বলেন কেন?”
আমি প্রচন্ড অসহায় বোধ করতে লাগলাম। কারো সাথে কথা বলতে গিয়ে কখনো এতটা অসহায়বোধ করিনি। তাই প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম।
“তুমি এখন কোন দিকে যাবে? ”
“কোথায় আর যাব। বাসায় যাব। ”
“এখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় যাওয়াটা খুব সহজ হবে না”
“হেঁটে হেঁটে যাব কে বলল? ”
“রিক্সা ডাকবো? ”
“এখন না একটু পরে। আমার সাথে হাঁটতে যদি আপনার খুব বিরক্ত লাগে তাহলে আপনি আপনার কাজে যেতে পারেন। ”
পরের পাঁচ মিনিট কোনো কথা নেই।
আমিতো ভাবছিই আমার মতন। মনে হচ্ছে নীতু ও কথা সাজাচ্ছে, কিছু একটা বলবে।
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। ”
এবার ওর কন্ঠটা খুবই শান্ত শোনাল। আমি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম।
“বলো। ”
আরো কিছুক্ষন নীরবতা। তারপর
“ আপনিতো জানতেন আজ আমার পরীক্ষা তাই না?”
“হমম্। জানতাম। ”
“আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি? ”
“তোমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলে প্রশ্ন করো।
তবে আমি আগেই বলে রাখছি, শুধু মাত্র আমার উত্তর দিতে ইচ্ছে করলেই আমি উত্তর দেব। ”
“ঠিক আছে আপনার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না। তবে আমার কিছু কথা শুনুন। একটা মেয়েকে সমাজে বেচেঁ থাকতে হলে অনেক সচেতন থাকতে হয়। কতটা সেটা আপনি বুঝবেন না।
এই সাবধানতার পরিমান কোনো ছেলের সাথে তুলনা করা যাবে না। আমি অন্য যে কোনো মেয়ের চেয়ে একটু বেশি সাবধানী। আমাকে একজন মানুষ দিনের পর দিন অনুসরন করছে সেটা বুঝতে না পারার মতন বোকা আমি না। আমি যে বুঝতে পারছি সেটা আপনাকে বুঝতে না দেয়াটা ছিল একটা কঠিন কাজ। কিন্তু আপনি নিজে বোকা হয়ে আমার কাজ সহজ করে দিয়েছেন।
আপনার অজান্তে যদি কেউ আপনাকে এভাবে দিনের পর দিন অনুসরন করে, আমার মনে হয়না ব্যাপারটা আপনার ভালো লাগবে। আপনি ভাবুক মানুষ। অনেক ভাবুক মন আপনার। আশা করছি আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন। ”
আমি কিছু বললাম না।
চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। সত্য কথা বলতে কি আমার বলার মতন কিছু অবশিষ্ট ছিল না। আমি এক দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“এবার একটা রিক্সা ডাকতে পারেন। ”
আমি একটা রিক্সা দাড় করালাম।
নীতু রিক্সায় উঠল। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে সরে বসলো। আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। সে বলল
“কি হলো ? উঠুন।
আমাকে বাসায় পৌছে দেবেন না?”
আমি রিক্সায় উঠে বসলাম। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো। এতক্ষন চেপে ছিল বুকের ভেতর। আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি আকাশ মেঘলা। ঝির ঝির বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
সঙ্গে নিয়ে আসছে একটা সুন্দর সুবাস। বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম এটা কি ফুল?
“ হাসনাহেনা ” নীতুর জবাব। আমি চমকে উঠলাম। আর নীতু একটা রহস্যের হাসি হাসলো।
আমার প্রচন্ড গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু বেসুরে গলায় নীতুর সামনে গান গাইতে অনেক ভয় লাগছে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেশ করবো ভাবছি। এমন সময় নীতুই আমার হয়ে গেয়ে উঠল...ওর গানের কন্ঠ যে আমার চেয়ে অনেক ভালো তা না। তবে এই পরিবেশে বেশ মানিয়ে যাচ্ছে।
আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে
জানিনে জানিনে
কিছুতে কেন যে মন মানেনা
অল্প সময় পরে বৃষ্টি নামল।
একেবারে যাকে বলে ঝুপ বৃষ্টি। আমি রিক্সাওয়ালাকে বললাম
“মামা আপনার পলিথিন নাই? বৃষ্টিতে তো ভিজে গেলাম। ”
সে ময়লা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল
“সকালে ত রইদ ছিল তাই পলিথিন নিয়া বাইর হই নাই। ”
“ভালো করছেন। ” আমার উত্তর ।
নীতুকে দেখে মনে হচ্ছিল সে এই দুনিয়ায় নেই। আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে ভিজছে। আমি জিজ্ঞেশ করলাম রিক্সার হুড তুলে দেব কিনা। সে দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে বলল......নাহ্।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।