আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদী ড্রোন বিশ্বাসঘাতকতা

খট্‌। মধ্যরাতে মৃদু শব্দ শুনে কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করলাম শব্দের কারণ। আবার হলো। উঠে গিয়ে খুঁজে না দেখেই নিশ্চিত হলাম এটা তেলাপোকা বা ইঁদুরের কাজ। শুয়ে হঠাৎ মনে পড়লো কতক জনপদের অভাগা কিছু মানুষের কথা।

এরকম অগণিত মধ্যরাতের অন্ধকারে একটি শব্দেই ওদের ঘুম ভেঙেছে এবং আবার ঘুমিয়ে পড়তে হয়েছে। মৃত্যুর হিম শীতল ঘুম। আজ রাতেও হয়তো কোন মুসলিম পরিবার ধ্বংস হতে যাচ্ছে একটি বিকট শব্দ আর বিস্ফোরণে, যার কারণ ড্রোন হামলা। মানব বিহীন বিমান থেকে বিধ্বংসী বোমার আক্রমণ। সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অগণিত নিরপরাধ মুসলিম নারী-পুরুষ-শিশু মারা হচ্ছে এর আঘাতে।

এর কোন বিচার আর মানবাধিকার নেই। আল্লাহ্‌র রাসুল সাঃ এর পবিত্র ভূমি হিসাবে মক্কা ও মদীনা অধ্যুষিত আরবের জন্য একটা টান স্বভাবতঃ সব মুসলিমেরই থাকে। তবে যেদিন থেকে জাজিরাতুল আরব বদলে আল সৌদ বংশের নামানুসারে তা হয়ে গেলো সৌদী আরব, তখন থেকেই এর ভেতর একটা বড় ধরণের 'কিন্তু' ঢুকে গেলো। কিছু তাক্বওয়াবান ও ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভিক শাসক বাদে (যেমন বাদশাহ ফয়সাল) এই রাজবংশ ও এর অনুগত আলিমরা ইসলামের শত্রুদের সাথে গোপন আঁতাতের এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতার নজীর রেখে চলেছেন। ভিনদেশী গরীব মুসলিম ভাইকে মিসকিন বলে অবজ্ঞা করে সাদা চামড়াধারী কাফিরকে তোষামদের মতো সামান্য থেকে শুরু করে জাজিরাতুল আরবের পবিত্র মাটিতে কাফির সেনাদলের আশ্রয়দান ও লালন পালনের মতো বড় ইসলাম বিদ্বেষী অপরাধ এদের হাতেই সংগঠিত হয়েছে।

তবে গত পরশুদিন প্রকাশ পেয়েছে মুনাফেকী আর ভাতৃহননের সাংঘাতিকতম অভিযোগটি, আর তা প্রকাশ করেছে স্বয়ং কুফফার গোষ্ঠী। অভিযোগ হলো, সৌদী আরবে দুবছর ধরে মার্কিন গোপন ড্রোন ঘাঁটি চলছে। যেখান থেকে নানা যায়গায় ড্রোন হামলা হচ্ছে। নিউয়র্ক টাইমস ও ডেইলি টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছে, অজানা সংখ্যক অন্যান্য হত্যাকান্ডের সাথে এ ঘাঁটি থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে হত্যা করা হয়েছে ইয়ামেনী বংশদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আনোয়ার আল আওলাকীকে। আরো খবর দিয়েছে তারা যে, গত সপ্তাহে আওলাকীর ১৬ বছর বয়সী সন্তান আবদুর রাহমানকে এ ঘঁটি থেকে চালানো ড্রোন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

আওলাকীর লেকচার প্রথম আমি শুনি নেট থেকেই এবং তা ছিলো উমার ইবনুল খাত্তাবের জীবনীর উপর। আল্লাহ্‌র শপথ, এতো চমৎকার বক্তব্য আমি ইসলামের উপর আর শুনিনি সে সময়। অনেক তোষামোদী আলিমের মতো জিহাদের স্পর্শকাতর বিষয় তিনি গোপন করতেন না। সেটাই হয়তো তাঁকে মৃত্যু দিয়ে মাশুল দিতে হয়েছে। আওলাকীকে এবং অগণিত সাধারণ মুসলিমকে হত্যা করবে কুফফার গোষ্ঠী তা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

তবে এই হত্যাকান্ডে সাহায্য করবে কোন মুসলিম নামধারী শাসক বা ব্যক্তি-তা জঘন্য নিফাক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এসব অপকর্মকে ঢাকার জন্য আজ গোপন অত্যাচারের প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে সৌদী সরকার। সেখানে কবর-মাজার-তাবিজ ইত্যাদির শির্ক নিয়ে হাজার কথা বললেও কোন অসুবিধা নেই। কেবল বলা যাবে না শাসক দল, রাজা, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যাপারে। ইয়ামামা নামে আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ একটি যায়গা আছে।

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময়কালে এর ব্যাপ্তি ছিলো সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে। বর্তমানের সৌদী আরবের রাজধানী রিয়াদ যেখানে অবস্থিত, তখনকার ইয়ামামা ছিলো এরই অন্তর্গত, যার ব্যাপ্তি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের চেয়েও অনেক বড়। এই অঞ্চলের মূল দখল ও শাসন ক্ষমতা যে গোত্রটির হাতে ন্যাস্ত ছিলো তার নাম হলো বনু হানিফা। মক্কা বিজয়ের পর আরবের প্রায় সকল গোত্র রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে সাক্ষাত করে ইসলামে প্রবেশের ঘোষণা দেয়। সে সময়ই দশম হিজরীর কোন এক সময়ে সুবিশাল বনু হানিফা গোত্রটি তাদের একদল প্রতিনিধি রাসুল সাঃ এর কাছে পাঠিয়ে তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা জানায়।

এই দলের একজন ছিলো মুসায়লামা। মুসায়লামা ছিলো একজন চতুর ও ভয়ংকর জাদুকর। ব্ল্যাক ম্যাজিকের অনুসারী এই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নবুয়তে বিস্মিত হয়ে ইয়ামামা ফিরে গিয়ে নিজেকে নবী দাবী করে বসে। আর এর সপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ সে তাক লাগানো সব যাদু দেখিয়ে মানুষকে ঐশী ক্ষমতার মোজেজা বলে প্রকাশ করতে থাকে। এছাড়াও স্বভাব কবি হিসাবে দক্ষতার ঝলক দেখিয়ে নিজের কবিতা সে আল্লাহ্‌র বাণী হিসাবে চালিয়ে দিতে থাকে।

তবে কুরআনের আয়াতের সাথে তার বাণীর ভাষাগত ও গভীরতার বিস্তর তফাৎ থাকার জন্য সে অন্য পথ অবলম্বন করে। সে তার বাণীগুলোতে কুরাইশ বংশের তুলনায় বনু হানিফা বংশের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা বেশী প্রাধান্য দেয়, আর ফলে তার গোত্রের লোকেরা আরবের তীব্র গোত্রপ্রিয়তা বা জাতীয়তার কারণে সেসব নিঃসংকোচে মেনে নেয়। রাসুলের সাথে দেখা করা প্রতিনিধিদলে একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন নহর আর রাজ্জাল। দলের সবাই ফিরে গেলেও তিনি থেকে যান ও রাসুল সাঃ এর সান্নিধ্যে ইসলাম শিখতে থাকেন। তিনি দ্রুত কুরআন আয়ত্বে নেন ও ইসলামী জ্ঞানে গভীর বুৎপত্তি অর্জন করেন।

স্বল্প সময়েই তিনি রাসুল সাঃ এর একজন ঘনিষ্ট সাহাবা হিসাবে পরিগণিত হন। আরব উপদ্বীপের সবখানে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে মুসায়লামা তার নবুয়ত দাবী করে ফেলেছে। বনু হানিফার হাতে গোনা কয়েকজন বাদে পুরো গোত্র এমনকি পুরো ইয়ামামাবাসী তাকে নবী হিসাবে মেনে নিয়েছে। এমন অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাঃ বনু হানিফায় দাওয়া প্রচার ও মুসায়লামার অপতৎপরতা রোধ করার জন্য একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নহর আর রাজ্জাল ছাড়া এ কাজের জন্য উপযুক্ত আর কে হতে পারে? তিনি নহরকেই পাঠালেন তার নিজ গোত্র বনু হানিফায়, ইসলামের মিশন দিয়ে। নহর আর রাজ্জাল মুসায়লামার জাঁকালো দরবারে গেলো। কি হলো এরপর? নহর সবার সামনে ঘোষণা করলো মুসায়লামা সত্যিই আল্লাহ্‌র একজন নবী। সে বললো, আমি মুহাম্মাদকে এমনই বলতে শুনেছি। নহরের এ ঘোষণার ফলে অনেক ব্যক্তির সন্দেহ কেটে গেল।

বিপুল ক্ষমতা দিয়ে মুসায়লামা নহরকে তার প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিলো। বনু হানিফায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো মুসায়লামা-নহরের। এ ছিল আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে মুসলিমদের জন্য এক বড় উদাহরণ। যে কোন ব্যক্তি সে যতো বড় আলিম, আবিদ কিংবা সম্মানিত লোক হোক না কেন, সে বিশ্বাসঘাতকতা বা নিফাকে যুক্ত হতে পারে। আল্লাহ্‌ বর্তমান সময়ের দুর্ভাগা এ মুসলিম জাতিকে সৌদী রাজতন্ত্রের মতো এমনতর বিশ্বাসঘাতক শাসক ও আলিম এবং তাদের অনিষ্ট থেকে হিফাজত করুন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.