বিবর্ণ জীবনে কয়েক ফোটা রং......
৯ মাস ধরে নিজ পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রেখে চট্টগ্রামে গতকাল গণসংবর্ধনা নিলেন ৪৮বছরের কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী দৈনিক জনকন্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। গণসংবর্ধনা দিলেন আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামী চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। কি বিবেকবান মুক্তিযোদ্ধা !! দায়িত্ববান সম্পাদক !! জনদরদী মেয়র !!!আহা !!!!
অর্থাভাবে আর দিন কাটে না জনকন্ঠের সাংবাদিকদের। সর্বশেষ ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া হয়েছে। তারপর থেকে সব বন্ধ।
৭ম ওয়েজ বোর্ডের কোন খবর নাই। সব পত্রিকাতেই মোটামুটিভাবে বর্তমানে৭ম ওয়েজবোর্ড চালু করা হয়েছে। কিন্তু জনকন্ঠে এর কোন সম্ভভভবনাই নাই। উপরন্তু ৭ম ওয়েজবোর্ড দাবী করার অপরাধে চাকুরীচ্যুত করারও একাধিক ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি জনকন্ঠে। দিনে দিনে আভ্যন্তরীণ অনিয়মের এক আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই পত্রকা অফিসটি।
অথচ, আমরাই কাজ করছি জাতির বিবেক হিসেবে !! যাদের কি না নিজেদেরই বিবেক নাই !!!
সেই ২০০৬ সালে সাব-এডিটর হিসেবে জনকন্ঠে যোগ দেয়ার পর থেকেই এই অনিয়ম দেখে আসছি। চোখের সামনে নিজের অফিসের একের পর এক অনিয়ম সহ্য করেছি আমরা সাংবাদিকেরা। অথচ অন্যের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে নিজ হাতে খবর ছাপিয়েছি নিজেদেরই পত্রিকায়। হায় !! কি সাহসী আর নিবেদিত সাংবাদিক আমরা !! জাতির বিবেক !! সমাজের দর্পণ !!
সাংবাদিক হয়ে নির্যাতন সহ্য করে চলেছি মুখ বুজে। নির্যাতন যে বা যারা করে চলেছে তারাও সাংবাদিক নামধারী।
সরি, শুধু সাংবাদিক বললে ভুল হবে, সাংবাদিকদের বস। পত্রকার সম্পাদক। বীর মুক্তযোদ্ধা। কি অসহায় সাংবাদিক আমরা !!
বিশ্বাস করেন, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে কতটা কস্ট করে গত ২টি বছর পত্রকাটি টিকিয়ে রেখেছি আমরা জনকন্ঠ সাংবাদিকেরা। মালিক সম্পাদক জেলে, জনকন্ঠ ছড়া মালিকের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, কোম্পানীর সব কর্মকর্তা পলাতক।
এ রকম বিরুপ পরিস্থিতিতে সাংবাদিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গঠন করে অতি কস্টে প্রিয় পত্রকাটিকে বাচিয়ে রেখেছি আমরা। বিনা বেতনে খেটেছি মাসের পর মাস। আশা ছিল সম্পাদক মুক্তি পেলে অবস্থা পাল্টে যাবে। শেয হবে সব দুখের প্রহর। কিন্তু হায় কপাল !! কিছুই তো হয়ই নি উল্টো ভাগ্যে জুটেছে অনেকেরই চাকুরীচ্যুত্যি।
এ সব কথা বাইরে থেকে জানা যায় না। জানি শুধু আমরা অসহায় বলির পাঠারা।
গত ২০ জানুয়ারী জেল থেকে মুক্ত পেয়েছেন আমাদের সম্পাদক জনাব আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। প্রাণঢালা অভিনন্দন দিয়ে অফিসে সেদিন স্বাগত জানানো হয়েছিল তাকে। কিন্তু এর মুল্য তিনি দিয়ে চলেছেন, একের পর এক মাসের বেতন বকেয়া রেখে, ৭ম ওয়েজবোর্ড না দিয়ে, বেতন বহির্ভূত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে আর একের পর এক সাংবাদিকদের চাকুরীচ্যুত করে...
গত কয়েকদিন হলো, জনকন্ঠ অফিসে প্রতিদিন বেতন চাওয়া নিয়ে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে সাংবাদিক-কর্মচারীদের মধ্যে।
বেতন চাইলে সম্পাদকের বাহিণী উত্তর দেয়- বেতনের কোন খবর নাই। কবে হবে তাও জানিনা। আর সম্পাদক নিজে তার সংগে বেতনের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন সবাইকে। এমনকি বেতনের কথা শুনতেও নারাজ তিনি। না পোযালে চাকুরী ছেড়ে চলে যান- এমন কথাও সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন জনাব মাসুদ।
বেতন চাইলে টাকা নাই- এমন কথা যিনি বলতে পারেন, সেই সম্পাদক কে কিনা দেয়া হলো গণসংবর্ধনা। আর হবেই না বা কেন, তিনি তো শুধু জনকন্ঠ সম্পাদকই নন, তিনি একাধারে ৪৮ বছরের সজাপ্রাপ্ত আসামী, নকশা জালিয়াতকারী, বহু লোকের ফ্লাটের টাকা আত্মসাৎকারীও। আর দেখতে হবে তো, সংবর্ধনাটা কে দিল। তিনিও যে বহু মামলার আসামী। তার উপর আবার মেয়র।
এমনিতো আর লোকে বলে না, চোরে চোরে মাস্তুতো ভাই...
সত্যি, আমরা সাংবাদিকরা মহান !!! জয় সাংবাদিকের জয়...!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।