আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টেট টেররিজম বনাম চোরাগুপ্তা হামলা

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

রায়হান http://shodalap.com/R_state.htm র‌্যাডিক্যাল আস্তিক ও র‌্যাডিক্যাল নাস্তিকদের দিন ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। উভয় গ্রুপের অ্যান্টি-সোসাল ও উগ্রবাদী কর্মকান্ড সম্পর্কে মানুষ ইতোমধ্যে সচেতন হওয়া শুরু করেছে। প্রথম গ্রুপের শক্তি থাকাতে সরাসরি মাঠে নেমে অ্যান্টি-সোসাল ও উগ্রবাদী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপ শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল হওয়ার কারণে তাদের অ্যান্টি-সোসাল ও হেট-ক্রাইম কর্মকান্ড ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মিডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। একটা সময় ছিল যখন এখনকার মত কোন দেশের নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা ছিল না।

সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ছিল না। ইউনাইটেড নেশন ছিল না। আন্তর্জাতিক কোন আইন-কানুন ছিল না। গণভোট ছিল না। যে যার ইচ্ছেমত বিভিন্ন এলাকা দখল করে শাসন করেছে।

কিছুটা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি ফলো করা হত। সেই সময় মুসলিম বা অ্যারাব বাহিনী কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিরোর মত মিনিমাম ক্ষতিতে অত্যাচারী রাজা-বাদশাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়ে অত্যাচারীত সাধারণ মানুষের পাসে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের মনও জয় করেছে। তাদেরকে তেমন একটা বেগই পেতে হয়নি, যেহেতু তারা সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছিল। অন্যদিকে ইরাক ও আফগানিস্তানে দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণ জনগণই বুশ ও আমেরিকান সৈন্যদেরকে জুতাপেটা করে তাড়াচ্ছে! আর এ কারণেই ওয়ার্ল্ড সুপার পাওয়ার মিলেও চুনা পুঁটিদের সাথেই তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না, তাদেরকে হত্যা করা ছাড়া। পার্থক্যটা তাহলে বুঝতেই পারছেন।

কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। এখন প্রত্যেকটি দেশের নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার আছে। আন্তর্জাতিক আইন-কানুন আছে। আরো অনেক কিছুই আছে যেগুলো আগে ছিল না।

ফলে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বাধীন কোন দেশে আক্রমণ করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বিধায় ওয়ার ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা হচ্ছে, সুইসাইড ও কাপুরুষের মত সাধারণ মানুষের উপর চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা কোনভাবেই ইসলামিক বা মুসলিম ট্র্যাডিশন হতে পারে না। টেররিজম ও সুইসাইডকে কোরআনে কনডেম করা হয়েছে। মুসলিমরাও সুইসাইডকে কাপুরোষোচিত বিধায় ঘৃণার চোখে দেখে। তারা বরং না খেয়ে মারা যাবে কিন্তু আত্মহত্যা করবে না।

আর এ কারণেই মুসলিমদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক কম। অথচ টেররিজম ও সুইসাইড বোম্বিং ইসলাম ও মুসলিমদের পৈত্রিক সম্পত্তি হল কীভাবে, সেটাই দেখার বিষয়। "Narrated By Abdullah: During some of the Ghazawat of the Prophet a woman was found killed. Allah's Apostle disapproved the killing of women and children." (Sahih Bukhari, Vol. 4, Book 52, No. 257-8) "I advise you ten things. Do not kill women or children or an aged, infirm person. Do not cut down fruit-bearing trees. Do not destroy an inhabited place. Do not slaughter sheep or camels except for food. Do not burn bees and do not scatter them. Do not steal from the booty, and do not be cowardly." (Maliks Muwatta, Book 21, No. 8-10) ৯-১১ নাটকের পর থেকে কোথাও কোন বোমাবাজি বা চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার সাথে সাথে যারা বোমাবাজ ও সন্ত্রাসীদেরকে মুসলিম আখ্যা দিয়ে ‘ইসলামিক টেররিজম’ বলে পরিমরি করে কোরআনের আয়াত খোঁজাখুজি শুরু করে দেয়, তাদেরকে আগে ধরতে হবে। তাদেরকে রিম্যান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাদের সাথেই টেররিষ্ট ও সুইসাইড বোম্বারদের হট-লাইন আছে।

অন্যথায় টেররিষ্ট ও সুইসাইড বোম্বাররা যে মুসলিম, এমনকি খাঁটি মুসলিম, এবং তারা যে কোরআনের আয়াত ব্যবহার করে ইসলামের আলোকে টেররিজম ও সুইসাইড বোম্বিং চালিয়েছে, সেটা তো অন্য কারো জানার কথা নয়! কী বলেন পাঠক? ৯-১১ নাটকের পর থেকে কোথাও কোন চোরাগুপ্তা বোমাবাজি বা সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার সাথে সাথে যেহেতু সেটিকে ‘ইসলামিক টেররিজম’ আখ্যা দিয়ে ইসলাম ও দেড় বিলিয়ন মুসলিমদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেহেতু ইসলাম ও মুসলিমদের সামান্যতমও ভাল চায় এমন কেউ জেনে-শুনে এই ধরণের কাজ করতে যাবে না। কমনসেন্স! তাহলে এই ‘ইসলামিক’ টেররিজম ও সুইসাইড বোম্বিংকে কে বা কারা ম্যানুফ্যাকচার করছে, সেটা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইতোমধ্যে তার কিছু আলামত বেরিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে হয়ত আরও বেরিয়ে আসবে। বুশ যখন গডের নামে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ইরাক আক্রমণ করে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে উদ্বাস্তু করে (State terrorism) – যেটি দিনের আলোয় পুরো পৃথিবীবাসীর সামনে ঘটে – এবং এই সুযোগে তার ইভ্যাঞ্জেলিস্ট মিশনারিজ বাহিনী ইরাকিদেরকে ধর্মান্তরিত করারও চেষ্টা করে – তখন কেউ বাইবেল থেকে ভার্স কোট করে এগুলোর সাথে লিঙ্ক করার যেমন চেষ্টা করে না তেমনি আবার তাদেরকে ক্রিস্টিয়ান টেররিষ্ট বলারও সাহস পায় না।

তার মানে কি তারা বলতে চায় যে, বাইবেলের মধ্যে লিঙ্ক করার মত কিছুই নাই? এমনকি হিটলারের ইহুদি নিধনের সাথেও তার ধর্মের কোন লিঙ্ক করা হয় না। জায়নবাদীরা যখন অবৈধভাবে প্যালেস্টাইন দখল করে তাদের উপর যুগের পর যুগ ধরে গণহত্যা ও টর্চার চালায় (State terrorism) – ধীরে ধীরে তাদের সীমানাকে এক্সপ্যান্ড করে প্যালেস্টাইনীদেরকে একদম কোণঠাসা করে ফেলে – যেটি পুরো পৃথিবীবাসীর সামনে ঘটছে – তখনও কেউ জায়নবাদীদের ধর্মের সাথে কোন লিঙ্ক যেমন খুঁজে পায় না তেমনি আবার তাদেরকে ইহুদি টেররিষ্ট বলারও সাহস পায় না। তার মানে কি তারা বলতে চায় যে, বাইবেল ও তালমুদের মধ্যে লিঙ্ক করার মত কিছুই নাই? তথাকথিত সেক্যুলার ইন্ডিয়াতে যখন বিভিন্ন হিন্দু উগ্রবাদী দলের ব্যানারে মাইনরিটিদের উপর একের-পর-এক নারকীয় তান্ডব চালানো হয় (State sponsored terrorism) – যেটি মূলতঃ ধর্মভিত্তিক এবং যেটি পুরো পৃথিবীবাসীর সামনে করা হয় (মুসলিম মেজরিটি দেশে এমন ঘটনা বিরল) – তখনও কেউ হিন্দুইজমের ধর্মগ্রন্থ থেকে ভার্স কোট করে এগুলোর সাথে লিঙ্ক করার চেষ্টা করে না বা তাদেরকে হিন্দু টেররিষ্টও বলা হয় না। তার মানে কি তারা বলতে চায় যে, হিন্দুইজমের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে লিঙ্ক করার মত কিছুই নাই? ইন্ডিয়া হচ্ছে একমাত্র দেশ, যে দেশে সেক্যুলারিজমের আড়ালে বিজেপি, ভিএইচপি, আরএসএস, শিব সেনা, রাম সেনা, ও বজরং দলের মত ডজন ডজন উগ্র হিন্দুত্‌ভাবাদী জঙ্গী সংগঠন আছে; যাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নন-হিন্দুদেরকে ইন্ডিয়া থেকে বিতাড়িত করা অথবা হিন্দুইজমে ধর্মান্তরিত করা। তাদের দৃষ্টিতে নন-হিন্দুরা সবাই নাকি ইন্ডিয়াতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে! অতএব তাদেরকে ভারত মাতা থেকে তাড়াতে হবে।

ইন্ডিয়া হচ্ছে একমাত্র দেশ, যে দেশে সেক্যুলারিজমের আড়ালে ধর্মের নামে শত শত একপেশে রায়ট হয়েছে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের মৌন সমর্থন ছিল। শ্রীলংকায় তামিল টাইগার গেরিলাদের আত্মঘাতী হামলাকে ভুলেও ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয় না। কিন্তু নির্যাতিত-নিপীড়িত কাশ্মিরীদেরকে বার বার ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয়। বৌদ্ধ অধ্যুষিত বার্মার সামরিক জান্তাকে ভুলেও ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয় না। কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রসিয়ে রসিয়ে ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয়।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত থাইল্যান্ডে এত কিছু ঘটার পরও সেগুলোকে ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয়নি। ইস্রাইলী ইহুদিদেরকে ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয় না। বৌদ্ধ অধ্যুষিত তিব্বতীদেরকে ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয় না। কিন্তু প্যালেস্টাইনীদেরকে চানাচুর ভাজার মত রসিয়ে রসিয়ে ধর্মের সাথে লিঙ্ক করা হয়। এরকম আরো অসংখ্য প্রমাণ আছে।

এগুলো কি কাকতালীয়? না, মোটেও তা নয়। এগুলো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। অথচ কোথাও কোন সুইসাইড বোম্বিং বা চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার সাথে সাথে একটি মহল বুঝতে পারে যে : টেররিষ্ট ও সুইসাইড বোম্বাররা মুসলিম, এমনকি খাঁটি মুসলিম; তারা কোরআনের আয়াত ব্যবহার করে আক্রমণ চালিয়েছে; এমনকি কোরআনের কোন্‌ কোন্‌ আয়াত ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও তারা সাথে সাথে জেনে যায়! চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা হয় নিউইয়র্ক শহরে। অথচ সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার কুটিরে বসে কোরআনের কোন্‌ কোন্‌ আয়াত ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে সেটা সাথে সাথে জেনে যায়! চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা হয় মুম্বাই শহরে। অথচ আমেরিকা ও জাপানের কুটিরে বসে কোরআনের কোন্‌ কোন্‌ আয়াত ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে সেটাও সাথে সাথে জেনে যায়! এরা আসলে কারা? এরা টেররিষ্ট ও সুইসাইড বোম্বারদের নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানে কীভাবে! এরা ঘরের ভেতর হাতি দেখতে পায় না অথচ জঙ্গলের ভেতর সুঁচ দেখে কীভাবে! এদেরকে অতি সত্বর রিম্যান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত নয় কি?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.