মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। তা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন
আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের ছাত্র। শাহ্ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী বিষয়ে পড়াশুনা করছি। এলগরিদম কোর্স এ একজন মহান বিজ্ঞানীর নাম নিয়ে মহা যন্ত্রনায় পড়েছিলাম। কিছুতেই তার নাম উচ্চারণ করতে পারি না।
প্রথম প্রথম ভাবলাম আমার নিজের সীমাবদ্ধতা বোধহয়। পরে দেখলাম আসে পাশের সবাই বিদ্ ঘুটে সব নামে ভদ্রলোককে ডাকছে। তাই আমিও আড়ঁমোড় ভেঙ্গে চরম বিরক্ত হয়ে ভদ্রলোকের আবিষ্কৃত অসাধারণ এলগরিদমের নাম দিলাম ডিসগাসটিং এলগরিদম। আজকের এই লিখা ক্ষুদ্রতম পথের আবিষ্কারক কে উৎসর্গ করলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকেছে বছর দুয়ে হলো বলে।
ডিসগাসটিং এলগরিদমের আবেশ থেকে অনেক অনেক দূরে আমরা সবাই দেশের নানান প্রতিষ্টানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। অফিসে বসে সেদিন তুমুল আড্ডা হচ্ছিল। হঠাৎ এক কলিগ আমাকে একটা গানিতিক ধাঁধা জিজ্ঞেশ করলো। আমি তাকে বললাম, আমি তার ধাঁধার উত্তর দেব, যদি আগে সে আমার একটা ধাঁধার উত্তর দে। সে সানন্দে রাজি হলো।
আমিও বলতে শুরু করলাম, ধাধার নাম হলো, ‘দোষী কে?’
আমার ক্লাসমেট শিমুল, গ্রামীন ফোনে কর্মরত। সদ্য এম,বি,এ তে ভর্তি হয়েছে। এম,বি,এ ভর্তির জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে যেটা কিনা শাহ্ জালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলতে হবে। শিমুল তার এক বন্ধুকে দিয়ে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট উঠানোর ব্যবস্থা করলো। তারপর এটা শিমুলের কাছে পৌছানোর পালা।
ভাগ্যক্রমে তখন শিমুলের এক বন্ধু ইলিয়াস সিলেটে গিয়েছিল কাজে। তাই হিসেব সহজ। ইলিয়াস সিলেট থেকে ঢাকা আসার সময় শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে আসলো। কিন্ত ঢাকাতো ঢাকাই। ব্যস্ততম নগরী।
ইলিয়াস কিংবা শিমুল কেউই ফুসরত পাচ্ছিল না এটা হস্তান্তর করার। এমন সময় টিটু গিয়ে পৌছালো ইলিয়াসের বাসায়। তার কি যেন প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আনতে। অনেক সময় নিয়ে গুছিয়ে সব কাগজ পত্র নিয়ে বাসায় এসে টিটু আবিষ্কার করলো, সে ভুল বসত শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট টাও নিয়ে এসেছে। টিটু ইলিয়াস কে ফোন করতেই ইলিয়াস বললো সে যেন এটা শিমুলকে পৌছে দেয় যে কোন মূল্যে।
টিটু পড়লো একটা বিপদে। কারন শিমুলের সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ হয় খুব কম। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সে একটা সমাধান বের করলো। সেলিম আর শিমুল দুই জনই গ্রামীন ফোনে চাকরি করছে। তাই সে এটা সেলিমের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই এটা খুব সহজেই শিমুলের কাছে পৌঁছে যাবে।
আর এটাকে সেলিমের কাছে পৌছে দেবে রাকিব। কারন রাকিব আর সেলিম একি সাথে থাকে। এখন রাকিবের সাথেও যে তার প্রতিদিন দেখা হয় ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু রাকিবের সাথে রনির প্রতিদিন দেখা হয় কারন ওরা একি অফিসে চাকরী করে। অতএব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
টিটু রনির হাতে শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট টা দিয়ে বললো যেন এটা রাকিব মারফত সেলিমের কাছে পৌছে দেয়। রনি অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে সেলিম কে ফোন করে বলে দিল যেন রাকিবের কাছ থেকে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট টা নিয়ে শিমুলকে দিয়ে দেয়। তারপর রাকিবকে খামটা দিতে গিয়ে দেখলো রাকিব তার ডেস্কে নেই। আস পাশ থেকে জিজ্ঞেশ করতেই জানতে পারলো রাকিব মিটিং এ। তাই সে রাকিবের কোর্টের পকেটে খামটা রেখে দিল।
রাকিবের সেদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল। প্রায় রাত ৮টার দিকে সে যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিল হঠাৎ আবিষ্কার করলো তার কোর্টের পকেটে একটা খাম। সে নিশ্চিত যে খামটা তার না। তাই সে খামটা পকেট থেকে বের করে সবাই জিজ্ঞেশ করতে লাগলো খামটা কার। একেতো অনেক দেরি হয়ে গেছে অফিস থেকে বের হতে।
তার উপর আরেকটু দেরি করলে ততক্ষনে লিফট্ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই রাকিব খামটা টেবিলের উপর রেখে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো। তারপর পেরিয়ে গেলো দুটো সপ্তাহ।
দুই সপ্তাহ পরে সেলিম রাকিবকে জিজ্ঞেশ করলো “রনি কি তোকে শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট টা দিয়েছে?”
“রনি? আমাকে? কই নাতো। ”
“রনি তো বললো তোকে দিয়েছে।
নে কথা বল। ও লাইনে আছে। ”
“হ্যালো রনি। সেলিম কিসের কথা বলে? ”
“দোস্ত তোরে যে দিছিলাম শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট। ”
“আমারে তুই দিছিলি? কবে?”
“আরে তুই পাস নাই? তোর কোর্টের পকেটে? একটা খামের মধ্যে।
”
“দাড়া মনে করে দেখি। উমম্। মনে পড়ছে। একটা খাম পাইছিলাম পকেটে। কিন্ত দোস্ত আমি কিভাবে বুঝবো যে খামটা তুই রাখছিলি? আমিতো খামটা খুইলাও দেখি নাই।
কই যে রাখছি মনেও পড়তেছে না। ”
গত সপ্তাহে শিমুল সিলেট গিয়ে আবার তার মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট তুলে নিয়ে আসলো। এটা তুলতে গিয়ে আবার একটা ছোট খাট বিপত্তি ঘটে। মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কি করা হবে এই ব্যাপারে কোন এডমিনিস্ট্রেটিভ নিয়ম কানুন ছিল না। তাই একটা জরুরি এডমিন মিটিং ডেকে বিশেষ ব্যবস্থা করা হলো শিমুলের জন্য।
শেষতক এটাই আমাদের একমাত্র স্বান্তনা। যদি না শিমুলের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট টা হারাতো, তবে সিস্টেমের এই বাগ কিভাবে খুঁজে পাওয়া যেত?
শিমুলের সামনে দাঁড়িয়ে দুঃখিত বলার মতন সাহস আমাদের ছিল না। তারপরো আমরা নানান ভাবে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। ভুক্তভোগী শিমুলের এই দূর্ভোগের জন্য আসল দোষীটা কে। আজকে তাকে খুঁজে পেলাম।
আর কেউ নয়, ডিসগাস্টিং শর্টেস্ট পাথ এলগরিদম। কেউ যদি ভিন্ন মত পোষন করেন তবে জানালে খুশি হবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।