ভেনিসে পা রাখা মানে প্রকৃত অর্থে জলে পা রাখা। অন্য শহর থেকে রেলপথ বা আকাশপথ, যে পথেই আসা হোক না কেন, প্রথম অনুভূতিটা হবে বিস্ময়ের-কারণ ভেনিস রেল স্টেশন বা বিমানবন্দর বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে এক একটা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের ওপর জেগে আছে।
ভিনিৎশিয়া সান্তা রেল স্টেশন থেকে বেরলেই চোখে পড়বে সেই বিখ্যাত গ্রান্দে কানাল যা সাপের প্যাঁচে জড়িয়ে রেখেছে গোটা শহরটাকে। গ্রাণ্ড ক্যানাল হল ভেনিসের ব্রডওয়ে, শহরের ব্যস্ততম পথ যা থেকে অজস্র সরু গলিখাল বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে শহরের চারিদিকে। গ্রাণ্ড ক্যানালে সব সময়ই ব্যস্ত ট্রাফিক-শাঁ শাঁ করে জল কেটে পরবর্তী স্টেশনের দিকে ছুটে চলেছে ওয়াটার বাস ও ওয়াটার ট্যাক্সি।
এরই মাঝে ধীরলয়ে এগিয়ে চলেছে ছিপছিপে গন্ডোলা। আধুনিক ব্যস্ততম ভেনিস শহরে পুরাতনী সুরের রেশ বয়ে আনে এই গন্ডোলা। অবশ্য এই গন্ডোলায় চাপা আমাদের পক্ষে বেশ ব্যয়সাধ্য। ভাড়া খুব বেশি। সুতরাং গলিপথে গন্ডোলায় না চাপলেও একবার চড়তেই হবে অপেক্ষাকৃত সস্তার ওয়াটার বাসে- যা আপনাকে গ্রাণ্ড ক্যানাল বেয়ে এগিয়ে নিয়ে চলবে দু পারের চমৎকার দৃশ্য দেখাতে দেখাতে।
সকালের মায়াবী আলোয় অপরূপ সৌন্দর্যে একে একে দৃশ্যমান হবে ভেনিসিয়ান পধিক স্থাপত্যে তৈরি প্রসাদোপম অট্টালিকা। এদের । অধিকাংশই এখন আর্ট গ্যালারি বা মিউজিয়ামে পরিণত। ভেসিনস শহরের প্রাণকেন্দ্র সান মার্কো চত্বরের প্রধান আকর্ষণ বাসিলিকা দে সান মার্কো। গোল্ড মোজাইকে মোড়া এই বিশালকায় গির্জা বাইজ্যান্টাইন স্থাপত্যকীর্তির অনুপম নিদর্শন।
গম্বুজাকৃতি গির্জার সামনের দিকে বাইজ্যান্টাইন মোজেইক এবং মার্বেলর কিছু অসাধারণ পেন্টিংয়ে ধরা আছে যিশুখ্রিস্ট এবং সেন্ট মার্কের জীবনী। গোটা সান মার্কো চত্বর দখল করে রেখেছে অগুনতি পায়রা। ৩০০বছরের পুরানো ব্যয়বহুল ওপন-এয়ার রেস্তরাঁতে মধ্যাহ্ণভোজের ফাঁকে আপনার কানে আসবে বেঠোফেনের ফিফথ সিম্ফনি-একেবারে লাইভ কনসার্ট।
জলের ওপর ভেসে থাকা ভেনিস ১১৮টা ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়। ইতালির মূল ভূখণ্ড থেকে জলপথে এর দূরত্ব প্রায় ৪ কিমি।
মূল ভেনিস শহর থেকে ওয়াটার বাসে চেপে অবশ্যই যাওয়া উচিত অন্তত আরো দুটি দ্বীপে- ম্যুরানো আর ব্যুরানো। ব্যুরানো দ্বীপ পৃথিবীর ম্যাপে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে অসাধারণ লেসশিপ্লের সুবাদে। কাচশিপ্লের স্বর্গ ম্যুরানো দ্বীপে যাওয়ার একটা বিশেষ প্রাপ্তি, গ্লাস ব্লোয়িং চুল্লিতে কারিগরদের কাজ দেখবার সুযোগ। এবার ছুটে চলেছে দুর্বার গতিতে ইউরোপের তাক লাগানো ট্রেন ইউরোস্টার, ফ্লোরেন্স শহরের দিকে। চলচিত্রের পরদার মত নানা দৃশ্য ভেসে উঠছে জানলার কাচে।
ছবির মতো ছোট ছোট গ্রাম পেরিয়ে যাচ্ছে।
এই সেই ফ্লোরেন্স- ইউরোপের নবজাগরণের উৎসমুখ- যে শহর চতুর্দশ শতকের শেষভাগে সারা ইউরোপে সাহিত্য, শিল্প, ভাস্কর্য,স্থাপত্যে বিপ্লব এনে দিয়েছিল। সেই দান্তে, বোকাচ্চিও, পেত্রাকের শহর। কালজয়ী শিল্পী- ভাস্কর্য লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চি, মিকেলাঞ্জেলো জন্ম নিয়েছিলেন এই শহরে। বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক গালিলেয়ো জন্মেছেন এখানে।
আপাতদৃষ্টিতে ফ্লোরেন্স শহরটা ভেনিসের মত সুন্দর করে সাজানো নয়। এর সৌন্দর্যের সন্ধান পেতে আপনাকে পৌঁছেতে হবে ফ্লোরেন্স শহরের হৃৎপিণ্ড পিয়াৎজা দেল্লা সিনিওরিয়াতে। মধ্যযুগীয় অলিগলি বেয়ে চলতে চলতে আপনী স্পষ্ট অনুভব করবেন প্রাচীন ইতিহাসকে বিশাল সিনিওরিয়া চত্বর জুড়ে ছড়ানো ছিটানো ভাস্কর্য। আপনার দৃষ্টি আটকে যাবে খোলা চত্বরের দুটি বিশেষ ভাস্কর্যে। একটা চেলিন্নির বিখ্যাত কীর্তি, পারসিউসের মেডুসা বধের মূর্তি।
দ্বিতীয়টা মিকেলাঞ্জেলোর 'দিকলোসাল ডেভিড'। এবার দেখুন গ্যালারিয়া দেগলি উফিৎজি। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মাস্টারপিস '। অ্যাডোরেশন অফ দি ম্যাজাই' শোভা পাচ্ছে এই গ্যালারিতে। মিকেলাঞ্জেলোর 'হোলি ফ্যামিলি' এই গ্যালারির এক সম্পদ।
যুগ যুগ ধরে তিল তিল করে সঞ্চিত এ শিল্প সম্ভারের ঐশ্বর্য আবিষ্কার করতে হবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, রস আস্বাদন করতে। রসিকজনকে তাই ফিরে আসতে হবে ফ্লোরেন্সে একবার নয়, বার বার।
সূত্র -সানন্দা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।