আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাঙ্কি রুট পর্ব-৭(রিপোস্ট)

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

ডান্কি রুট- পর্ব ৭ বনের মাঝে জরাজীর্ন একটা দোতালা কাঠের বাড়ি নিঃসঙ্গ দাড়িয়ে আছে। হয়ত একসময় এটাকে কেউ সামার হাউস হিসেবে ব্যাবহার করত। এখন একনজর দেখেই বোঝা যায় এটা পরিত্যাক্ত বাড়ি। একতলার ভাঙ্গা সিড়ি বেয়ে দোতালায় উঠার মুখেই একটা বোঁটকা গন্ধ এসে চাপড় মারল নাকে মুখে। ভিতরে ঢুকে অবস্থা যতটুকু খারাপ মনে করেছিলাম দেখি তার থেকেও করুন! আমাদের দুজনের বসার জন্য ঠাই হল তুলো ও স্প্রিং বেরিয়ে যাওয়া একপাশে ভাঙা শতবছরে পুরোনো এক ডিভানে।

সম্ভবত এটাই এখানকার সবচেয়ে আরামদায়ক বসার জায়গা,আর ওরা বসল কাঠের মেঝেতে ছেড়া বিবর্ন কার্পেটের উপর। ড্রাইভার গুলো আমাদের বসিয়ে রেখে বাইরে চলে গেছে। আমার বন্ধু চোখ বুজে গভীর চিন্তায় মগ্ন। সবাই বসে আছি চুপচাপ। যেন তার ধ্যান কেই ভাঙ্গাতে চায় না সে জন্যই এই মৌনতা।

এভাবে কেটে গেল ঘন্টাখানেক, মনে হয় ঘুমিয়েই পরেছিলাম! হঠাৎ চাপা গুঞ্জনে তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি সবাই বের হওয়ার মুখে। আরে! এরা কি আমাকে রেখেই চলে যাবে? তড়ি ঘড়ি করে উঠে দাড়ালাম, বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থমকে দাড়ালাম। সে সদ্য আসা এক রোমানিয়ানের সাথে কি নিয়ে যেন গভীর আলাপে ব্যাস্ত। হঠাৎ কথা থামিয়ে সব আদম দের দিকে চোখ ফেরাল।

আদমরাও উৎসুক ও তটস্ত তার কথা শোনার জন্য। এ যেন যিশুর লাস্ট সাপারের ভাষন! ওই লোকটাকে দেখিয়ে বলল,' এ হল আপনাদের গাইড। এখন থেকে ইনি যা বলবেন আপনাদের তাই শুনতে হবে। ইনি যেখান দিয়ে নিয়ে যাবেন সে পথ যতই অগম্য হোক না কেন তাকেই অনুসরন করতে হবে। কোন প্রতিবাদ করা চলবেনা।

পথ চলতে গিয়ে কেউ মারা গেলেও তার দিকে ফিরে চাইবেন না। ' 'সামান্য অসাবধানতার জন্য যে কোন অঘটন ঘটতে পারে। পথে কোন খাবার দাবার দেয়া হবে না। বাই এনি চাঞ্চ যদি পুলিশে ধরে তাহলে তাদের সামনে বোবা সেজে যেতে হবে। আপনাদের কারো কাছেই পাসপোর্ট নেই আর সে কারনেই তারা ধরতে পারবেনা আপনারা কোন দেশের লোক।

ওরা যেভাষাই কথা বলুক না কেন ইশারায় বোঝাবেন,এভাষা আমরা বুঝি না। আর ভুলেও আমার নাম বলবেন না। এবার ভয় দেখাল ,‘ তাইলে সারাজীবন জেলের ভাত খাওয়াব। ’ ঠিক আছে এখন যান। রুমানিয়ায় এ -ই আপনাদের জায়গামত পৌছায় দিবে।

আদমরা সবাই বাধ্য ছাত্রের মত মাথা নেড়ে ছালাম দিয়ে বিদায় নিল। ওদের পিছু পিছু নিচে নামলাম। ট্যাক্সি গুলো উধাও সেখানে দাড়িয়ে আছে বিশাল এক তেলের লরি। আমি ভেবে পেলামনা,এই লরি দিয়ে কি হবে? আদমরাও একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। প্রশ্ন করার সাহস তাদের নেই।

লরির পিছনের মই বেয়ে সেই বিশাল দেহী রোমানিয়ান গাইড টাঙ্কির ছাদে উঠে গেল। সাবলীল হাতে খুলে ফেলল উপরের ভারি ঢাকনা। এবার ওদের কে ইশারা করল সেই খোলামুখ দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে সবার আত্মারাম যেন খাচাছাড়া হবার উপক্রম হল। সাহসী দুয়েকজন ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে পানসে মুখে জিজ্ঞেস করল ‘এর মধ্যে যেতে হবে ’।

ডাঙ্কারবন্ধু তাদের কথার ধরনে রেগে গিয়ে বলল‘ তাহলে কি আপনাদের সারা পথ ট্যাক্সিতে নিয়ে যাব। যান বেশী কথা না বলে উঠেন। ’ কথায় কাজ হল সঙ্গে সঙ্গে সবাই সুড় সুড় করে এগিয়ে গেল -তবে কাছে গিয়েও কয়েকজন বিগড়ে গেল। প্রচন্ড ক্ষোভ মনের মধ্যে রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল‘এর মধ্যি যাব না। ’ ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বুঝতে পেরে হঠাৎ গাইড ভদ্রলোক বাজখাই গলায় চিৎকার করে উঠল।

তার ভাষা ওরা কেউ না বুঝলেও কন্ঠস্বর আর ভঙ্গিতেই ভয় পেয়ে গেল আদমরা। সবাই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সেই মৃত্যু কুপের দিকে। এক এক করে বিশজন ঢুকতেই- গাইড দ্রুত হাতে ঢাকনা সেটে দিল। এবার সে লরির ছাদ থেকে নেমে থেকে এসে তেলের পাইপের কাছে নলের মাথার চাবি ঘোরাতেই গলগল করে পেট্রল বেরিয়ে এল। আমি ভয়ানক ভাবে চমকে উঠে আমার বন্ধুর দিকে তাকালাম ! তিনি হেসে আমায় শান্তনা দিয়ে বললেন,‘ ভিতরে অল্প কিছু তেল আছে।

বর্ডারে চেক করলে যাতে ধরা না পরে সে জন্যই এ সাবধানতা। বাসায় ফিরে এস সারারাত দুজনে নির্ঘুম কাটালাম। তবে দুজনে সম্পুর্ন দুটো ভিন্ন কারনে। ভোর হতেই ফোন বেজে উঠল। দ্রুত রিসিভার কানে ঠেকিয়েই সে খুশিতে চিৎকার করে উঠল কিন্তু পরক্ষনেই মুখের উপর নেমে এল কালো পর্দা।

রিসিভারটা নামিয়ে রাখার পর সে ঝিম মেরে কিছুক্ষন বসে রইল। কোন প্রশ্ন না করে আতংকিত মুখে আমি চেয়ে আছি তার মুখের দিকে। ‘ওরা সবাই বুখারেস্টে গিয়ে পৌছেছে। ’সে মুখ খুলল। এটা তো খুবই ভাল সংবাদ।

আর আমি ভাবছি না জানি কি। তাহলে এমন মুখ গোমড়া করার কারন কি? আমার বন্ধু কথাটা বলে কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে রইল। মানে আরো কিছু কথা আছে। কি কথা? উৎসুক হয়ে সপ্রশ্ন দৃস্টিতে তার দিকে তাকাতেই বলল , ‘কিন্ত একটা সমস্যা হয়ে গেছে!’ কি সমস্যা?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম। ‘ওদের মধ্যে থেকে একজনকে পাওয়া যাচ্ছে না।

.. হয়তো মারা গেছে?’ তার কথা শুনে যে তখন ভীষন কস্ট পেয়েছিলাম সন্দেহ নেই, কেননা তখনও এই ভয়ঙ্কর পৃথিবী এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। ...ক্রমশ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।