আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাঙ্কি রুট-শেষ পর্ব

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

২১ দিন পর .. আপেক্ষার আরেকটা প্রহর সাঙ্গ হল। খুব ভোরে ফোন এল সন্ধ্যে নাগাদ রেডি থাকতে। ডাঙ্কি হবে । তাও ভাল এরা আগেভাগে ফোন করে খবর দিয়েছে । বলেনি ওপারের সেই ব্যাপারির মত ’ ওঠ ছেমড়ি তোর বিয়া!’ ডাঙ্কারের ভাষায় এবারের জার্নিটা খুব গর্জিয়াস! মার্সিডিজ,ভলভো বা অন্য কোন বিলাসবহুল বাসে ভ্রমন।

ঢাকার রাস্তায় দুয়েকটা মার্সিডিজ প্রাইভেটকার দেখেছে অনেকে -সবাই বলত খুব দামী গাড়ি,কিন্তু এর যে বাসও হয় এই প্রথম শুনল ওরা! তবে এ যাত্রা আর সবার মত আরামদায়ক সিটে শরির এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে দিবা সপ্ন দেখতে দেখতে যাওয়া নয়। জার্নিটা একটু অন্য রকম। এসব বাসে যাত্রীদের পায়ের নিচে পেটের মধ্যে অনেকটুকু ফাকা জায়গা থাকে। যেটা যাত্রীদের লাগেজ রাখার জন্য ব্যাবহৃত হয়। সেটাকে ভাগ করে নতুন একটা চেম্বার করে সখোনে ঢোকার জন্য উপরিভাগের সিটের নীচ থেকে কিছু অংশ সুক্ষ ভাবে কেটে একটা দরজার মত বানানো হত।

সেখানটায় হাটুমুড়ে কস্টে সৃস্টে জনা ছয়েক লোক বসতে পারে। কিন্তু এমন অভিজাত ও ব্যায় বহুল জার্নিতে, মাত্র ছয়জন পাঠালে চলে? তারপর এরা তো আদমের দল। আদমের দল আর ছাগলের পাল একই। ঠেলে ঠুলে-চেপে চুপে ঢোকানো হয় সেখানে দশজন। তবে একটা সমস্যা আছে বাইরে থেকে আলো বাতাস ঢোকার কোন পথ নেই।

একটাই মাত্র ছোট্ট ছিদ্র আছে তাও আবার বর্ডারের কাছে এসে বন্ধ করে দিতে হয় কেননা সীমান্ত রক্ষীদের কুকুরগুলো খুব নচ্ছার এরা কেমনে কেমনে যেন আদমের গন্ধ পেয়ে যায়। আদমের কটু গায়ের গন্ধ যেন বাইরে সাহেবী কুকুরের নাকে না যায় সে জন্য দম আটকে মারার এমন উত্তম ব্যাবস্থা। তবে এরা মরে গেলে যে আবার পয়সা মিলবে না সেজন্য একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার মাস্ক সহ দেয়া হয়। বাইরের বাতাস বন্ধ হলেই সামান্য বিরতিতে এক এক করে সেই বিশুদ্ধ অক্সিজেন ফুসফুসে পুরে। তবে তখন কথা বলা নড়া চড়া একদম নিষেধ।

কেননা বর্ডরের কুকুর গুলো হাড়ে হারামজাদা এরা একটু খসকস আওয়াজেও বুঝ ফেলে ওখানে আদম আছে। সেগুলো নাকি আরো ভযঙ্কর! তবে তাদেরকে এভাবে সতর্ক না করে দিলেও চলত। গাড়ি চড়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই সামান্য নড়াচড়ার সুযোগ না পেয়ে ওদের হাতপা এমনিতেই অবশ হয়ে। ছত্রিশ ঘন্টা জার্নি শেষে কোন এক নির্জন পার্কে গিয়ে খালাস করার পরে হাত পায়ের খিল ছাড়াতে লাগে ঘন্টা কয়েক! কারো কারো স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে হয়। যাদের পরিচিত কেউ আছে তারা ব্যাপারির এজেন্টের বাকি পয়সা কড়ায় গন্ডায় শোধ করে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় কিন্তু যা কেউ নেই সে পরে মহা বিপদে।

তবুও শান্তি যে ভালয় ভালয় পৌছেছি। কখনো রুমানিয়া ইউক্রনে হয়ে কখনো গ্রীসের উপকন্ঠ দিয়ে কখনো পোলিশ সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাকি দিয়ে কিংবা অস্ট্রিয়ার ভয়ঙ্কর বর্ডার পেরিয়ে ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে তারা পৌছোয় নির্দিস্ট গন্তব্যে কেউবা ইতালী কেউবা জার্মনী ইংল্যান্ড সুইটজারল্যান্ড কিংবা অন্য কোন সপ্নের দেশে। সেখানে শুরু হয় আরেক জীবন। সে জীবন সংগ্রাম মুখর তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু অনেক কস্টের অনেক লজ্জা বা অপমানের ওদের ঘৃনায় উগড়ে দেয়া বমি খেয়ে বেচে থাকার জীবন । কেউ শুনবে ওদের সেই সংগ্রাম মুখর ঘৃন্য জীবনের কথা।

তৃতিয় বিশ্বের দরিত্রতম দেশের হতদরিদ্র নাগরিক হয়ে জন্মানোর সুবাদেই হয়তোবা তাদের এই সংগ্রামমুখর জীবন আর মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। (উপরের ছবিটা আমার ডাঙ্কার বন্ধু রিপনের –তার বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচছে অন্য এক সুন্দরী রমণীর হাত ধরে। ) শেষ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।